বঙ্গে শারদীয় দূর্গাপূজার ইতিহাস!

বঙ্গে শারদীয় দূর্গাপূজার ইতিহাস!

 

দেওয়া হবে অপপ্রচারেরও জবাব।


দুর্গাপূজা এলেই দুর্গাপূজা নিয়ে যবনকুলে নানারকম অপপ্রচার চালু হয়। এগুলো মধ্যে অন্যতম হলো 'হুদুড় দুর্গা' যেখানে নারীলিপ্সুক মহিষাসুরক নায়ক বানানোর অপচেষ্টা করা হয়। এখন আবার শুরু হয়েছে নতুন অপপ্রচার। একজন বামপন্থী ইতিহাস বিকৃতিকারী তপতী বসুর বরাত দিয়ে বলার চেষ্টা করা পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের পরাজয়কে উদযাপন ও হিন্দুদের খুশী করার জন্য ইংরেজ লর্ড ক্লাইভ শরৎ কালে দুর্গাপূজার প্রচলন করেন। আমরা আজ এই অপপ্রচার সম্পূর্ণ খণ্ডন করে দিবো। 


১। বহু পূর্ব হতেই বঙ্গে দুর্গাপূজার প্রচলন ছিলো। তবে ঐতিহাসিক প্রামাণিকতা বিচারে বঙ্গীয় দেশে প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেন তাহিরপুরের জমিদার কংস নারায়ন চৌধুরী। এছাড়া মায়ের বর্তমান কাঠামোর এই মৃন্ময়ী প্রতিমার প্রচলনও করেন তিনি। ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে (১৫৮০ সাল) রাজা কংস নারায়ণ সাড়ে আট লাখ টাকা ব্যয়ে বর্তমানে প্রচলিত শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রবর্তন করেন। উৎসবটি হয়েছিল বারনই নদের পূর্ব তীরে রামরামা গ্রামের দুর্গামন্দিরে। শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর "বাংলা ও বাঙালী" গ্রন্থে বলেছেন, কংসনারায়ণ পাঠান যুগে প্রথম দুর্গা পূজা প্রচলন করেন এবং এতে তিনি সাত লক্ষ টাকা খরচ করেন।


২। আরেকটি ঐতিহাসিক মত রয়েছে। ১৭২৮ সালে নদিয়ার সিংহাসনে বসেন রুদ্র রায়ের প্রপৌত্র কৃষ্ণচন্দ্র রায়। কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আগে তাঁর পূর্বপুরুষেরা দুর্গাপূজা করতেন, কিন্তু তাঁর হাত ধরেই জাঁকজমক সহকারে দুর্গাপূজার প্রচলন হয়। সেই সময় থেকেই আড়ম্বরের সঙ্গে দুর্গাপূজা চালু হয় রাজবাড়িতে। বারোয়ারি পুজোরও উদ্ভব এই সময়েই। কালীপ্রসন্ন সিংহ লিখেছেন, “বোধহয় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমল হতেই বাংলায় দুর্গোৎসবের প্রাদুর্ভাব বাড়ে।”যদিও কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের পূজা ৪০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। 


দুর্গাপূজার জন্য কৃষ্ণচন্দ্র রায় কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে এক সুবিশাল নাটমন্দির তৈরি করেন। এত বড় নাটমন্দির সম্ভবত বাংলায় আর নেই। কৃষ্ণচন্দ্রের সময়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত হত ১০৮ মণ গঙ্গামাটি এবং ১০৮ ঘড়া গঙ্গাজল। নাটমন্দিরে বাজত ১০৮টি ঢাক। পূজায় ব্যবহৃত হত ১০৮টি পদ্ম। ১০৮ জন বাহক দেবীমূর্তিকে বহন করে নিয়ে যেত। তোপধ্বনির সাথে সন্ধিপূজা শুরু হত এখানে। 


সেই ধারাবাহিকতায়ই বাংলায় আজ আড়ম্বরে পালিত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব কলকাতার দুর্গাপূজা ২০২১ সালে UNESCO এর Intangible Cultural Heritage এ স্থান করে নিয়েছে। এই স্বীকৃতি কিন্তু প্রাচীন পরম্পরা হতে প্রচলিত শারদীয় দুর্গাপূজার ঐতিহাসিকতা বিচারেই।


৩। এছাড়া আরেকটি শাস্ত্রীয় প্রমাণও রয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজার পক্ষে। দেবীভাগবতের সপ্তম স্কন্দ, ৩৮তম অধ্যায়ের ৪১-৪২নং শ্লোকদ্বয়ে শরৎকালীন দুর্গাপূজার স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়।

তবে দক্ষিণ ভারতে দুর্গাপূজা আরও প্রাচীন। যার ধারাবাহিকতায় আজও নবরাত্রি পালিত হয়৷ দক্ষিণ ভারত, হাম্পি, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের ইলোরা গুহার বিভিন্ন মন্দিরে  দ্বিভুজা, অষ্টভুজা ও দশভুজা দুর্গার প্রতিমা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে আজও টিকে আছে। যেহেতু প্রায় ১৮০০-২০০০ বছরের প্রাচীন মন্দিরেও মা দুর্গার প্রতিমা দেখা যায় তাহলে ধারণা করা যায় দুর্গাপূজার প্রচলন আরও প্রাচীন। 


উপরোক্ত সবগুলো প্রমাণ বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট যে পলাশীর যুদ্ধেরও কয়েকশো বছর পূর্ব থেকেই বঙ্গে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রচলন ছিলো যা আজও পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। তাই বামপন্থী তপতীর বসুর দাবীটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। 


(লেখাটি প্রচার করে ছড়িয়ে দিন, অপপ্রচার রুখে দিন)


©Swastika-স্বস্তিকা 

সত্য ও সুন্দরের পথে স্বাগতম।।


# লিংক

======


আরও পড়ুন প্রসঙ্গিক দুইটি লেখা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ