বাংলাদেশ পুলিশ লোগো |
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ৫৪
শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘিরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ১ হাজার ৪১৫টি অভিযোগের মধ্যে ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশই হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রদায়িক কারণে। ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত এসব ঘটনা নিয়ে পুলিশের অনুসন্ধানে এই তথ্য উঠে এসেছে।
আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পুলিশের অনুসন্ধানের এ তথ্য এক বার্তায় গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ১০টি। পুলিশ জানিয়েছে, এসব ঘটনার মধ্যে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার অভিযোগ এসেছে ১ হাজার ৭৬৯টি।
পুলিশ জানিয়েছে, ১ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে ১ হাজার ৪১৫টি অভিযোগের অনুসন্ধান করে তারা। বাকি ৩৫৪টির অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান করা অভিযোগগুলোর মধ্যে ১ হাজার ২৫৪টির সত্যতা পাওয়া গেছে। বাকি ১৬১টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। যে অভিযোগগুলো সত্যতা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ১ হাজার ২৩৪টি (৯৮ দশমিক ৪%) ঘটনাই ঘটেছে রাজনৈতিক কারণে। ২০টি (১ দশমিক ৫৯%) ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রদায়িক কারণে।
পুলিশের অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, ১ হাজার ৪১৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট স্থান, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং প্রত্যেকটি স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ৬২টি মামলা এবং ৯৫১টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
পুলিশের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ১ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট এক দিনেই ১ হাজার ৪৫২টি ঘটনা ঘটেছে। যা মোট অভিযোগের ৮২ দশমিক ৮ শতাংশ। ওই দিন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছিল।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কে পুলিশ জানিয়েছে, ৫ আগস্ট থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশজুড়ে পুলিশের কাছে আরও ১৩৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ জমা পড়ে। পুলিশ এগুলো গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে ৫৩টি মামলা ও ৫৩টি সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত করে এবং ৬৩ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার পদক্ষেপের বিষয়ে পুলিশ জানায়, সরকার সব ধর্মীয়, জাতিগত ও সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সংবিধান ও আইন সংখ্যালঘুদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ-নির্বিশেষে দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছে। সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরাও অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র: প্রথম আলো
--------
তবে একই খবর বিষয়ে 'দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড' পত্রিকার বক্তব্য ভিন্নরকম। তারা ৯৮ শতাংশের কথা বলেনি। তারা ৭৭ শতাংশ হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছে। তাদের খবর নিম্নরূপ:-
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ৭৭ শতাংশই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: প্রেস উইং
টিবিএস রিপোর্ট, 11 January, 2025, 05:10 pm, Last modified: 11 January, 2025, 05:19 pm
পরিষদের কাছ থেকে অভিযোগের তালিকা সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী উল্লিখিত ব্যক্তি, ঘটনাস্থল ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদন্ত করে পুলিশ। এতে দেখা যায়, ১ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে ১৬১টি অভিযোগ মিথ্যা বা ভিত্তিহীন।
বিধ্বস্ত হিন্দু বাড়ি, ছবি: সংগৃহীত |
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনে উল্লিখিত সংখ্যালঘুদের ওপর হওয়া এক হাজার ৭৬৯টি হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার মধ্যে অন্তত ১৬১টি অভিযোগের সত্যতা পায়নি পুলিশ। এছাড়া বাকি ঘটনাগুলোর মধ্যে ৭৭ শতাংশই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পুলিশের এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আজ শনিবার (১১ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, সস্প্রতি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গত ৪ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর মোট ১ হাজার ৭৬৯টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন, সম্পদ ও উপাসনালয় মিলিয়ে ২ হাজার ১০টি অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
পরিষদের কাছ থেকে অভিযোগের তালিকা সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী উল্লিখিত ব্যক্তি, ঘটনাস্থল ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদন্ত করে পুলিশ। এতে দেখা যায়, ১ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে ১৬১টি অভিযোগ মিথ্যা বা ভিত্তিহীন। এছাড়া ১ হাজার ২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ২০টি ঘটনা সাম্প্রদায়িক। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬২টি মামলায় অন্তত ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার আরও জানান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তালিকার বাইরে গত ৫ আগস্ট থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ ১৩৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অন্তত ৫৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
'সব মিলিয়ে ৪ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে মোট ১১৫টি মামলা হয়েছে এবং অন্তত ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে', যোগ করেন তিনি।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দেশজুড়ে যেকোনো সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও লিঙ্গ নির্বিশেষে মানবাধিকারের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
পুলিশ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করেছে। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ এলে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি ফোকাল পয়েন্ট সেই অভিযোগ পরিচালনা করছে। প্রতিটি অভিযোগ সমাধানে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অভিযোগ অনুযায়ী, ১ হাজার ৪৫২টি ঘটনা অর্থাৎ মোট অভিযোগের ৮২.৮ শতাংশ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দিন ঘটেছে। আর ৪ আগস্ট ৬৫টি ও ৬ আগস্ট ৭০টি ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র: দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
0 মন্তব্যসমূহ