20 June 2025
কারা বেশী লুট করেছে = ইংরাজ না মুসলমান রা?
- ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
ইংরেজ রা এদেশে এসে আমাদের দেশের প্রচুর ধন সম্পত্তি নিয়ে গেছে ইংল্যান্ডে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। রানীর ধন সম্পত্তি রাখা আছে টাওয়ার অফ লন্ডনে। সেখানে কোহিনুরও আছে। দেখে এসেছি সব।।
আমার প্রশ্ন= যদি ইংরেজ না আসতো তাহলে আমরা থাকতাম ইসলামিক শাসনে। == তা সিরাজুদ্দৌলার ইতিহাস কী? হিরা ঝিল তো এখনো আছে।
সুলতান মাহমুদ ১৭ বার ভারতে এসে যে বিশাল সম্পদ লুট করে গজনীতে নিয়ে যায় তার পরিমাণ কতো? একমাত্র মথুরার মন্দির থেকে লুট করা সম্পদ নিতে ৪৪টা উট লেগেছিলো। মাহমুদের হিসাব রক্ষক উথবী লিখেছে= মাহমুদের লুটের শেষে এক দিনারের ভারতীয় টাকার মুল্য প্রায় শেষ পর্যায়ে নেমে এসেছিলো। তা সেই ৮০০ বছরের লুট ভুলে শুধু ইংরেজদের নিয়ে পড়লে কি সত্যের অপলাপ হয় না???
"মাহমুদের লুট করা হিন্দু সম্পত্তির খতিয়ান"
নীচের খতিয়ান আমার কল্পিত নয়। মাহমুদের হিসাব রক্ষক উথবীর তৈরী খতিয়ান, যা ঐতিহাসিক কে এস লাল এবং শ্রী বাস্তবের লেখা।
হিসাব কষার আগে এটা জানতে হবে ‘দিনার’ এবং ‘দিরহাম’ কাকে বলে। দিনার হচ্ছে এক একটি স্বর্ণ মুদ্রা যা সেই সময় প্রচলিত ছিলো আরবে। ভারতে সেটা স্বর্ণ মুদ্রা নামেই প্রচলিত ছিলো। একটি স্বর্ণ মুদ্রায় থাকতো ১২০ গ্রাম খাটি সোনা। সেই সময় ১ টাকায় ৪০ মন চাল বাজারে পাওয়া যেতো। তোমাদের মধ্যে যে বা যারা হিসাব পারদর্শী আমাকে একটূ বলো Inflation ইত্যাদি ধরে একটি স্বর্ণ মুদ্রার দাম কতো হয়???)
- ১) মাহমুদ ‘হিন্দু শাহী রাজ’ রাজা জয়াপাল এবং তার ১৫ জন আত্মীয়, সৈন্যাধক্ষ্যকে আটক রেখে ২৫০,০০০ (আড়াই লক্ষ দিনার ) এর মুক্তিপন আদায় করে।
- ২) রাজা জয়াপালার গলার নেকলেস টির সেই সময়কার দাম ছিলো ২০০,০০০ (দুই লক্ষ দিনার)। সেটি মাহমুদ নিয়ে যায়।
- ৩) রাজা জয়াপালার আত্মীয় স্বজনদের গায়ের গহনা ইত্যাদির মোট মুল্য ৪০০, ০০০ (চার লক্ষ ) দিনার
- ৪) ‘ভেরা’ শহর, যাকে মাহমুদের সেক্রেটারী ‘উথবী’ উল্লেখ করেছে, ‘মানুষ যতোটা কল্পনা করতে পারে তেমনি সম্পদশালী’ ছিলো। সেই ভেরা লুট করতে প্রায় ২ বছরে ২ বার মাহমুদকে আসতে হয়। (১০০৪ সালের প্রথম থেকে ১০০৫ সাল এর শেষ) সমস্ত ধন দৌলত নিয়ে যেতে কয়েকশো উট নিয়ে আসতে হয় ।
- ৫) ১০০৫ থেকে ১০০৬ সাল লেগে যায় ‘মুলতান’ লুট করতে । সেখান থেকে যে সম্পত্তি নিয়ে যায় তার মোট মুল্য ২০,০০০,০০০ (কুড়ি লক্ষ) ‘দিরহাম’ (রৌপ্য মুদ্রা)
- ৬) রাজা জয়াপালের এক সেনাপতি যাকে মাহমুদ মুসলমান বানিয়ে নাম দিয়েছিলো ‘নওয়াশা শাহ’, সে রাজা জয়াপালের আগুনে আত্মাহুতি দেবার পর পুনরায় হিন্দু হয়। মাহমুদ তাকে পরাজিত এবং আটক করে তাকে শুধু হত্যা করে তাই নয়, তার সব সম্পত্তি যার মোট মুল্য ৪,০০,০০০ (চার লক্ষ) দিরহাম (রৌপ্য মুদ্রা) নিয়ে নেয়।
- ৭) মাহমুদ “ভীম নগর” দুর্গ দখল করে সেখানকার ‘হিন্দু শাহী মুদ্রা’ র ৭০,০০,০০০ (সত্তর লক্ষ) লুট করে নিয়ে যায়।
- ‘ভীম নগর’ দুর্গে ছিলো একটি পুজা মন্ডপ। সেটি ছিলো ১৫ গজ (৪৫ ফুট) চওড়া, ৩০ গজ (৯০ ফুট) লম্বা। তার দুটি খুটি ছিলো সোনার,দূটি রুপোর, ওপরের ছাঊনি (গম্বুজ) রুপোর । মন্ডপটি খুলে রাখা যেতো। সেটিও নিয়ে যায়। তার মুল্য ‘উথবী’ উল্লেখ করে নি।
- ৯) ‘বারান’ (বুলন্দসর) থেকে মাহমুদ লুট করে ১০,০০০,০০০ (দশ লক্ষ) রৌপ্য মুদ্রা।
- ১০) ‘মথুরা’ মন্দির লুট করে ৫ টি সোনার ‘রাধা –কৃষ্ণ’ মুর্তি নিয়ে যায়, যার মোট ওজন ৯৮৩০০ মিসকাল (দশ মণ) । (আমি ব্যাংককে ৫ টনের বুদ্ধ মুর্তি দেখে এসেছি, সুতরাং ২ মণের রাধা-কৃষ্ণ মুর্তি অসম্ভব নয়)। তাছাড়া মোট ২০০ টি রৌপ্য নির্মিত নানা দেব দেবীর মুর্তি নিয়ে যায়।
- ১১) কনৌজ, মুঞ্জ, আশনি, সার্বা ইত্যাদি লুট করে অপরিমিত ঐশ্বর্য্য নিয়ে যায়।
- ১২) ‘সোমনাথ’ মন্দির থেকে মাহমুদ নিয়ে যায় এক বিপুল ঐশ্বর্য্য। তার পরিমাণ শুনলে পরম বিশ্বাসীর ও অবিশ্বাস হবে। কিন্তু ‘উথবী’ র লেখা বিশ্বাস না করে কার কথা বিশ্বাস করবো? সেই লুটের মোট অংক উথবী করেছে ২০,০০০, ০০০ স্বর্ন মুদ্রা বা ‘দিনার’।
- ১৩) লুটের বহর ৩০ বছরে এতো বিশাল ছিলো যে মাহমুদ, সেই অপর্য্যাপ্ত সম্পদ দেখভাল করা এবং সুষ্ঠ ভাবে গজনীতে নিয়ে যাবার জন্য দু জন হিসাব রক্ষক এবং ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করে। সেই দুজনের নাম ও উথবী বার বার উল্লেখ করেছে। সেই দুই মহাপুরুষ হচ্ছেন ‘আলতুন্টাস’ এবং ‘আশীক্তিন’।
- ১৪) শুধু মাত্র সুলতান নয়। তার সৈন্য সামন্ত হিন্দু রাজাদের মৃত হিন্দু সৈন্যদের দেহ তল্লাশী করে তাদের গয়নাপত্র, সাধারন হিন্দুদের ঘর বাড়ি লুট করে তাদের সম্পত্তি নিয়ে যায়। লুটের এই ‘মহা সুযোগ’ নিতে স্থানীয় হিন্দু লোকের মধ্যেও মাহমুদের সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেবার জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। অবিশ্বাস্য হলেও একেবারে খাটি কথা ‘উথবী’ লিখেছে।। দেশী গব্বরের অভাব কোনো কালেই ভারতে ছিলো না। মুসলমান ‘জিহাদী’দের আরবী /তুর্কি সৈন্যের সংখ্যা থেকেও দেশী হিন্দু লুটেরার সংখ্যা খুব কম ছিলো বলে আমার মনে হয় না। ইতিহাসে সে কথা, ফা-রিস্তা, আলবেরুনী লিখে রেখে গেছেন।
- ভুলে যাবেন না, আকবরের হয়ে রানা মানসিং ৭৭ টি যুদ্ধ করে যার মধ্যে ৫৭ টি যুদ্ধ সে জেতে এবং বিজিত রাজ্য আকবরকে দেয়,নিজে রাখে লুটের মাল। রানা প্রতাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আর কেউ করেনি ওই মানসিং। আমাদের বাংলাদেশ দখল আর কেউ করেনি, করেছিলো ওই শয়তান মানসিং এবং সে তিন তিন বার বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার প্রসাশক হয় আকবরের অধীনে। যশোরের বিখ্যাত ‘মা কালী’ র মুর্তি এখন শোভা পাচ্ছে মানসিং এর “অম্বর” দুর্গে। পা চাটা কুকুরের কোনো অভাব সেই রামায়ণের যুগ থেকে আজ অবধি ভারতে কম পড়ে যায় নি।
- ১৫) শাহী সাম্রাজ্য থেকে লুটের বহর এমনই ছিলো যে, রাজা জয়াপাল, আনন্দপাল, ত্রিলোচন পাল, কারো মুদ্রা আজো খুজে পাওয়া যায়নি। তাই আমাদের ঐতিহাসিকেরা ধরেই নিয়েছেন ওই বংশ ছিলোই না। তাহলে সুবিক্তিগীন এবং মাহমুদ ভুতের সংগে যুদ্ধ করেছিলো।
- ১৬) অর্থনীতিবিদেরা বলেন “মাহমুদের লুটের পর অর্থের বন্যা ভারত থেকে চলে গেলো সিন্ধুর পশ্চিম পারে। গজনীর এবং আরবী দুনিয়ার মুদ্রা (দিনার এবং দিরহাম) শক্তপোক্ত হয়ে শুধু স্থিরতা পেলো তাই নয়, হয়ে গেলো বিশেষ দামী। ভারতীয় স্বর্ণমুদ্রার সোনার পরিমান ১২০ গ্রামের জায়গায় নেমে এলো ৬০ গ্রামে আর রৌপ্য মুদ্রার দাম আর প্রায় রইলো না ব্যবসার জন্য। সারা দুনিয়ার কাছে ভারতীয় মুদ্রা আর খুব বেশী আকর্ষণীয় রইলো না”।
একা মাহমুদ এতো নিয়ে গেছে। তাহলে, এর আগে মুহাম্মদ বিন কাসিম এবং পরে যারা এসেছে সেই খলজী, দুররানী, ফারগানার বাবুর, এরা কতো লুট করেছে?
৮০০+ ২০০= ১০০০ বছর ধরে ভারত লুট হয়েছে।
সূত্র: ফেসবুক
0 Comments