একজন সাধারণ হিন্দু এবং মুসলিম এর মধ্যে কথোপকথনের সাথে শাস্ত্র জ্ঞানী হিন্দুর সাথে মুসলিম এর মাঝে কথোপকথন এর পার্থক্য

একজন সাধারণ হিন্দু এবং মুসলিম এর মধ্যে কথোপকথনের সাথে শাস্ত্র জ্ঞানী হিন্দুর সাথে মুসলিম এর মাঝে কথোপকথন এর পার্থক্য

একজন সাধারণ হিন্দু এবং মুসলিম এর মধ্যে কথোপকথনের সাথে শাস্ত্রজ্ঞানী হিন্দুর সাথে মুসলিম এর মাঝে কথোপকথন এর পার্থক্য। আশা করি উপকৃত হবেন।


একজন সাধারন হিন্দু এবং মুসলিমদের মাঝে কথোপকথনঃ-


মুমিনঃ আচ্ছা তোমরা কার ইবাদত করো?

হিন্দুঃ আমরা ভগবান এর পূজা করি ।


মুমিনঃ তোমাদের তো অনেকগুলো ভগবান। তুমি কার পুজা করো ?

হিন্দুঃ আমি শ্রীকৃষ্ণের পূজা করি ?


মুমিনঃ তাহলে তুমি অন্য ভগবানের পূজা না করলে তারা রাগ করবে না?

হিন্দু: যে কোন একজনের পূজা করলেই হয় ।


মুমিনঃ তোমাদের ৩৩ কোটি দেবতা এত দেবতার পূজা কিভাবে করো?

হিন্দুঃ আমি এই বিষয়ে বেশি জানিনা ।


মুমিনঃ হা হা। শ্রী কৃষ্ণ ১৬০০০ বিয়ে করল। শ্রী কৃষ্ণ মেয়েদের কাপড় চুরি করত, ১৬০০০ বিয়ে করছে তোমরা তাকে কিভাবে ভগবান মান ?

হিন্দুঃ আমি জানি না এসব নিয়ে ।


মুমিনঃ তোমাদের তো মূর্তি পূজা করা নিষেধ।  তোমরা কেন শিরক কর?

হিন্দুঃ আমরা প্রতিমার মাধ্যমে ঈশ্বরের পূজা করি ।


মুমিনঃ নিজ হাতে মাটি দিয়ে বানিয়ে তাকেই নদীতে ভাসিয়ে দেও।

হিন্দুঃ আমরা মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তারপর পূজা করি। এর বেশি কিছু জানি না ।


মুমিনঃ এসব শিরক। দেখ আমরা এক আল্লাহর ইবাদত করি আমাদের মুসলিম দের মাঝে কোন ভেদাভেদ নাই । একসাথে নামাজ পরি , একসাথে খাওয়া দাওয়া করি। কিন্তু ব্রাম্মনরা তোমাদের সম্মান দেয় না। তোমাদের ঘরে খায় না।

হিন্দুঃ কিছুক্ষন চুপ থেকে - আমি এসব জানি না । আমি যাই


মুমিনঃ ঠিক আছে। তুমি চাইলে ইসলাম গ্রহন করতে পার। তাহলে জান্নাত পাবে, মৃত্যুর পর অনেক সুখ পাবে ।

হিন্দুঃ আজকে যাই অন্য দিন কথা হবে ।


মুমিনঃ মনে মনে খুশি হয়ে বাড়ি ফিরে গেল ।


>>>>>>>>>>>


অন্যদিকে একজন শাস্ত্রজ্ঞানসম্পন্ন হিন্দু এবং মুসলিম এর কথোপকথনঃ-


মুমিনঃ আচ্ছা তোমরা কার ইবাদত করো?

হিন্দুঃ আমরা ঈশ্বরের উপসনা করি।


মুমিনঃ তোমাদের ৩৩ কোটি দেবতা এত দেবতার পূজা কিভাবে করো ?

হিন্দুঃ এটা ৩৩ কোটি না তেত্রিশ প্রকার। ৮ বসু, ১১ রুদ্র, ১২ আদিত্য, ১ ইন্দ্র, ১ প্রজাপতি। 

  • ৮ বসুগণ :-অগ্নি, পৃথিবী,বায়ু, অন্তরীক্ষ, আদিত্য, দ্যৌ, চন্দ্র, নক্ষত্র। 
  • ১১ রুদ্র হল :- প্রাণ (নিঃশ্বাস), অপ্রাণ (প্রশ্বাস), ব্যন, সমান, উদাম, নাগ, কুর্ম্ম, কৃকল, দেবদত্ত, ধনন্জয় এবং জীবাত্মা।
  • ১২ আদিত্য হল ১২ মাস, ইন্দ্র, প্রজাপতি অর্থাত্‍ মোট ৩৩টি।


মুমিনঃ একটু ভেবাচেকা খেয়ে বলল, ও আগে জানতাম না। তাহলে শিব, দুর্গা, শ্রী কৃষ্ণ উনারা কারা ?

হিন্দুঃ শিব, দুর্গা হচ্ছে এক ঈশ্বরের ভিন্ন নাম। এরকম অনেক নাম আছে- শিব, বিষ্ণু , ব্রম্মা, ইন্দ্র , সরস্বতী ইত্যাদি ।


মুমিনঃ শ্রী কৃষ্ণ ১৬০০০ বিয়ে করল। শ্রী কৃষ্ণ মেয়েদের কাপড় চুরি করত , ১৬০০০ বিয়ে করছে তোমরা তাকে কিভাবে ভগবান মান ?

হিন্দুঃ শ্রী কৃষ্ণ একটি মাত্র বিয়ে করেছে মাতা রুক্মিণীকে। এসব টিভি সিরিয়াল কল্প কাহিনি মিথ্যা। শ্রী কৃষ্ণ কখনো মেয়েদের অসম্মান করে নি। উনি যোগী পুরষ ছিলেন। বেদ জ্ঞানী, শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা, রাজানীতি সব দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন।


মুমিনঃ ও। তাহলে তোমরা মূর্তি পূজা কেন কর।

হিন্দুঃ একটু চিন্তা করে বলল আমরা নিরাকার এবং সাকার দুই ভাবেই ঈশ্বরের উপাসনা করি। আমি নিরাকার উপাসনায় বিশ্বাসী। যে যেভাবে ঈশ্বরের উপাসনা করে ঈশ্বর তাকে সে অনুযায়ী ফল প্রদান করে। যারা সাকার উপসনা করে তারা তো অন্য কারো ক্ষতি করছে না। তাহলে তোমাদের সমস্যা কেন?


মুমিনঃ মূর্তি পূজা তো হিন্দু ধর্মে নিষিদ্ধ তাহলে হিন্দুরা মূর্তিপূজা কেন করে ?

হিন্দুঃ মুসলিমরা মাজার পূজা কেন করে? মাজারে গিয়ে পীরদের কবরের সামনে সেজদা কেন দেয়?


মুমিনঃ চুপ।

হিন্দুঃ কাবা ঘরে কাল পাথর মুসলিমরা পূজা করে তাহলে এটাও বন্ধ করা উচিত । এটাও মূর্তি পূজার মধ্যে পরে।


মুমিনঃ একটু রেগে বলল দূর মিয়া কি বলতেছ ।

হিন্দুঃ মুসলিমদের মাজার পূজা এবং কাবা পূজা বন্ধ করতে বল তারপর হিন্দুদের নিয়ে কথা বলো।


মুমিনঃ চুপ। ইসলাম সত্য, আল্লাহ সত্য আমরা নিরাকার আল্লাহর ইবাদত করি ।

হিন্দুঃ ইসলাম ১৪০০ বছর আগে কোথায় ছিল? আল্লাহ নিরাকার নয় সাত আসমানের উপর বসে আছে।


মুমিনঃ চুপ। এক্টু রেগে বলল। তুমি জান না কিছুই। দেখো হিন্দুদের মাঝে কতো বিভাজন। ব্রাম্মন, শুদ্র, ক্ষত্রিয় আরো কত কি। তোমরা একজন আরেকজন হাতে খাও না। ব্রাম্মনরা অন্য হিন্দুদের সম্মান করে না । আর মুসলিমরা এক সাথে চলা ফেরা করে। এক সাথে নামাজ পরে ।

হিন্দুঃ বেদ অনুযায়ী ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র সবাই সমান। গুণ কর্ম অনুযায়ী বর্ণ নির্ধারণ হয়। যেমন ডাক্তার এর কাজ কৃষক করতে পারবে না। কিন্তু কেউ ছোট না সবাই মানুষ। ঈশ্বরের চোখে ব্রাহ্মণ, শুদ্র, বৈশ্য সবাই সমান।


মুমিনঃ ও। মুসলিম রা সবাই জান্নাতে যাবে। তোমরা যেতে পারবে না।

হিন্দুঃ তুমি তো মিথ্যা কথা বলেছ। মুসলিমদের মধ্যে অনেক বিভাজন আছে । শিয়া, সুন্নি, হানাফি আরো কত কি। শিয়া, সুন্নিদের মসজিদে বোমা মারে ।


মুমিনঃ একটু রেগে চুপ ।

হিন্দুঃ পৃথিবীর বাইরে জান্নাত বা জাহান্নাম বলতে কিছু হয় না। স্বর্গ নরক সব এই পৃথিবীর মধ্যেই ভোগ করতে হয় ।


মুমিনঃ তোমরা মৃত্যু গ্রহন করলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। আর মুসলিমদের কত যত্ন করে গোসল করিয়ে কবর দেয়। মৃত্যুর পর তোমাদের কত কষ্ট দেয়।

হিন্দুঃ এটাকে অন্তষ্টিক্রিয়া বা দাহ বলে। মৃত্যুর পর মৃতদেহের কোন অনুভুতি থাকে না। তাই তাকে দাহ করলে তার কোন ব্যথা অনুভুতি হয় না। তোমরা যখন মাটির নিচে কবর দেও কতো সাপ, বিছা, পোকামাকড় থাকে, সেগুলো মৃতদেহকে কামড়ে খায়, কত কষ্ট একটু চিন্তা করে দেখ। তারপর কঠিন ভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিকে দাহ করা উত্তম ।


মুমিনঃ চুপ। একটু রেগে বলল। সময় থাকতে ইসলামের পথে চলে আস। জান্নাতে যেতে পারবে ।

হিন্দুঃ ধর্ম একটাই সেটা সনাতন ধর্ম। ধর্ম ত্যাগ করলে অধর্ম গ্রহণ করা পাপ। তোমাকে সনাতন ধর্মে স্বাগতম ।


মুমিনঃ মন খারাপ করে বলল, যাও যাও। আমি গেলাম। পরে দেখা যাবে।

হিন্দুঃ ঠিক আছে। নমস্কার। মুচকি হাসি দিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।


সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ