‘তিউনিশিয়া স্টোরী’ (চার কন্যা) সৌদি আরব প্রদর্শন করতে পারলে ‘কেরেলা স্টোরী’তে সমস্যা কি? - সুষুপ্ত পাঠক
‘কেরেলা স্টোরী’র মত একই রকম একটি সিনেমা তিউনিশিয়ার নারী পরিচালক বেন হানিয়ার ‘চার কন্যা’ (Four Daughters) আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভাল কান-এ প্রদর্শিত হয়েছে। এটি সৌদি সরকারের ‘রেড সি ফিল্ম’ পৃষ্টপোষকতা করছে। চার কন্যা সিনেমার কাহিনীও কেরেলা স্টোরীর মত তবে এই কাহিনী মুসলিম পরিবার কি করে তাদের সন্তানদের উগ্রবাদে চলে যেতে অসচেতনভাবে সহযোগীতা করে সেই গল্প। গল্পে দেখা যায় একজন মা তার মেয়েদের চলাফেরা নিয়ে বিরক্ত। তিনি তাদেরকে ‘বেশ্যা’ হবে নাকি ধর্মের মধ্যে থাকবে সেটি বেছে নিতে বলে। এভাবেই স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্থ মেয়েরা ধর্মে মনোযোগী হতে বাধ্য হয়। তিউনিশিয়ার মুসলিম ধর্মভীরু সমাজেরই চিত্র এটি। এবং সেই মায়ের চার মেয়ের প্রথম দুটি ধর্মে কর্মে এতখানিই মনোযোগী হয়ে পড়ে যে শেষে তাদের কর্তব্য গিয়ে ঠেকে সিরিয়াতে গিয়ে আইএসের হয়ে জিহাদের যোগদান করা। তারা ঘর ছেড়ে পালিয়ে সিরিয়াতে চলে যায়। সিনেমায় উঠে এসেছে কি করে মেয়েরা ধর্মীয় গুরুদের ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে মগজধোলাইয়ের শিকার হয়। বেন হানিয়া সত্যিকারের একটি কাহিনীকে তার সিনেমায় তুলে ধরেছেন। উপন্যাস বা সিনেমায় গল্পের জন্য কল্পনার কিছু আশ্রয় নেয়া হয় যা শৈল্পিক স্বাধীনতা। লেখক বা নির্মাতা শুধু খেয়াল রাখেন সেই কল্পনা যেন ঐতিহাসিক সত্যকে বিকৃত না করে। কিন্তু কেরেলা স্টোরী সিনেমার প্রচারের সময় ৩২ হাজার মেয়ে সিরিয়া যাবার বিজ্ঞাপন কেন দেখালো সেটা বলেই আইএসে যোগদানের পিছনে যে ইসলামিক লিডার ও তাদের আইডলজি কাজ করেছিলো সেটিকে চাপা দিতে মার্কসবাদী, মুসলিম লীগাররা কেরেলা স্টোরী বন্ধ করতে বহু চেষ্টা করেছে। এদিকে সৌদি সরকার এরকম সিনেমা নির্মাণের জন্য টাকা ঢেলেছে! কারণ সৌদি আরবে কোন ‘লেনিন ধর্ম’ নেই। ‘মাও ধর্ম’ নেই। নেই চমেস্কির কোন সার্গেদ! সৌদি আরবের রাজতন্ত্র খোদ এই জিহাদীদের নিশানায় পড়ে যাবার পর ভয়ে আছে। সৌদি জানে কেবল ইসলামীপন্থীরাই নয়, ‘ইসলামিক সমাজতন্ত্রীরা’ যারা মিশর-ইরাকের রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করেছিলো তারা আইএস প্রজাতীরই একটি অংশ। ফলে একদা সারা বিশ্বে নিজেদের তেল বেচা টাকায় মাদ্রাসা বানিয়ে কট্টর ইসলামপন্থী তৈরীতে ভূমিকা রাখা সৌদি আরব নিজেদের সুরক্ষার জন্যই এ ধরণের সিনেমা নির্মাণকে সহযোগীতা করছে।
ভারতে যে কোন জঙ্গিবাদ বিরোধী অবস্থানের বিরুদ্ধে মার্কসবাদীরা দাঁড়াবে অবধারিতভাবে। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি বা কংগ্রেস, আঞ্চলিক বিভিন্ন কথিত ধর্মনিরপেক্ষবাদী দলের ভেতর আছে মুসলিম লীগের ভোট। ফলে ভারতে ইসলামী জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিদের পক্ষে মানবাধিকার প্রদর্শন, ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে মাদ্রাসা হিজাব বোরখার পক্ষে থাকার পেছনে সেই ভোটের হিসাব কাজ করে। এদেরই কেরেলা স্টোরী সিনেমা দেখলে তাদের মাথায় রক্ত উঠে যায়। এটাকে ইসলাম বিদ্বেষ বলে মনে হয়। সৌদির রেড সি ফিল্ম যখন ‘চার কন্যা’ প্রদর্শন করে তখন ইসলাম বিদ্বেষ বলার কেউ থাকে না! শব্দ দূষণের কারণে সৌদি আরব মসজিদের মাইক খুলে নেয়ার পরও তারা ইসলামের রক্ষক। কিন্তু ভারত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় করলেই সেটা মুসলিম নির্যাতন। এ বছর ‘৭২ হুর’ সিনেমা মুক্তি পাবে ভারতে। সেই সিনেমা নিয়েও মুসলিম লীগার ও মার্কসবাদীরা ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ বলে চেঁচাচ্ছে। কি আছে সে সিনেমায়? কি করে মুসলিম তরুণদের জিহাদের কারণে মরলে ৭২ হুর পাওয়া যাবে সেই ইসলামিক আদর্শবাদের দীক্ষা ধর্মীয় গুরুরা দেন সেটিই দেখানো হবে। এই সিনেমার প্রডিউসার সৌদি আরবকে করা গেলো ভালো হতো। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কথা বলতে ‘মার্কস ধর্মের’ লোকদের মধ্যে আগ্রহ কম!
0 মন্তব্যসমূহ