লাভজিহাদ ও তার পরিণতি নিয়ে একটা ছোট গল্প

লাভজিহাদ ও তার পরিণতি নিয়ে একটা ছোট গল্প

আমাদের মেডিকেলের স্যার। ভীষণ কুল, হ্যান্ডসাম। অনেক বড় ডাক্তার। মুসলিম। ছাত্রজীবনে তুখোড় বামপন্থী নেতা ছিলেন। প্রেম করে বিয়ে করেছেন তার মেডিকেলের একজনকেই। 


ম্যাম হিন্দু। এত ভালবাসতেন স্যার ম্যামকে, আমরাই অবাক হয়ে যেতাম।


ম্যাম যেদিন ডিপার্টমেন্টে স্যারের সাথে দেখা করতে আসতেন, ওইদিন স্যারের মুড এতটাই ভাল হয়ে যেত যে ওইদিন আইটেমে স্যারের কাছে ফেল করাই কঠিন ছিল!

তাদের প্রেমের কাহিনী রূপকথার চেয়ে কম নয়।


তারা একসাথে আসতেন দেখতাম সরস্বতী পূজায়, একসাথে ঈদ করতেন।

কি সুন্দর সাজতো ম্যাম। কি হাসিখুশি!

দুটো দেবশিশুর মত বাচ্চাও তাদের আছে....


আমরা ভাবতাম, বাহ। ভালোই তো। কেউ কাউকে কিছুতে ফোর্স করছেনা। সমস্যা কি!


তারপর দুটো বছর গেলো। দেখলাম স্যার শার্ট ছেড়ে পাঞ্জাবি পরা ধরলেন। মুখে বড় বড় দাড়ি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন নাকি তখন।

ম্যামকেও নাকি হিজাব পরতে বলেন।

ম্যাম কালচারাল ফ্যামিলির মেয়ে। সেক্যুলার টাইপ।

খুব ভাল ডাক্তার।

প্রথমে মেনে নেন নাই ম্যাম।

কানকথা শুনলাম, তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে। কারণ স্যার এখন আর ম্যামের বা বাচ্চাদের পূজোতে আসা পছন্দ করেন না। ম্যামের হিজাব ছাড়া চলা পছন্দ করেন না!


তারপর?


নাহ! ছাড়াছাড়ি হয়নাই তাদের।

কিন্তু ম্যামকে ছাড়তে হয়েছে। নিজের সবটুকুই ছাড়তে হয়েছে। বাচ্চাদের পূজোয় আসা বন্ধ হয়েছে। তাদের মাথায় আজকাল সাদা টুপি থাকে বেশিরভাগ সময়।

ম্যাম এখন পুরোদস্তুর হিজাবি। ম্যামের সাথে বেশ কয়বার দেখা হয়েছে তারপর। 

তার চোখেমুখে সেই আনন্দ, খুশি আমি আর দেখিনাই।

পরিবার, নিজের শেকড় ছেড়ে যার কাছে এসেছিলেন, তিনি তাকে তার স্বকীয়তাটুকুও খুব নিখুঁতভাবে ছাড়িয়ে দিয়েছেন। ম্যাম কে দেখে আমার ক্যামন যেন মায়া হয়🙂


আজ একটা মেডিকেলের এক ছোট্টবোন গ্রুপে একটা পোস্ট দিয়েছে, যে তার  ভালবাসার মানুষটাকে সে ছাড়তে পারছেনা।


আমি তাকে জাজ করব না। ও ছোট মানুষ, বুঝেনা অনেককিছুই হয়ত।


শুধু কিছু প্রশ্ন করব ওকে আর ওর মত যারা ভাবছে সব মেয়েকে--


  • ১. কয়েকবছরের ভালোবাসা ছাড়তে এত কষ্ট হচ্ছে বোন, যখন নিজের সমস্ত শিকড়টাকে ছাড়তে হবে, সহ্য করতে পারবে তো?
  • ২. তোমার জন্যে তোমার ভালোবাসার মানুষটার যেটুক অবদান, তোমার বাবা মায়ের অবদান কি সেই তুলনায় অনেক কম?
  • একটা বাচ্চারে নয় মাস পেটে রাখতে,জন্ম দিতে, ছোট্ট থেকে এত বড় করতে কি তাদের কিছুই স্যাক্রিফাইস করতে হয়নাই?
  • ৩. যদি কখনো মানুষটাকে রঙ বদলাতে দেখো, কি বলে সান্ত্বনা দেবে নিজেরে ঠিক করে রেখেছো তো?


(হ্যাঁ, এইটা ভেবোনা যে আমার মানুষটা আলাদা, সে চেইঞ্জ হইতেই পারেনা, কারণ তোমার মত যারাই বাবা মা নিজের শেকড়-- সব ছেড়ে এসেছিলো, তারাও তোমার মতই তার মানুষটাকে বিশ্বাস করত বলেই সব ছেড়ে এসেছিলো। কম ভালবাসা, বিশ্বাস থাকলে তো আর সব ছেড়ে আসেনা কেউ।


তাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিও বইন। একটা মেয়েরে বড় করতে বাপ মা যে কি কি স্যাক্রিফাইস করে, তা একদিন বুঝবা হয়ত, কিন্তু তখন হয়ত বাবা মার মুখ মনে পড়লেও একদিন এসে জড়ায় ধরে কান্না করতেও পারবা না।)


আমি তোমাকে চিনিনা। জানিনা এইটা তুমি পড়বা কিনা।


কিন্তু ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, ভগবান তোমার বাবা মায়ের কোল শূন্য হওয়া থেকে তাদেরকে রক্ষা করুন। কোনো বাবা মা কষ্ট পাচ্ছে বাচ্চার জন্যে-- এই জিনিসটা সহ্য করা যায়না।


সংগৃহিত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ