ধর্ম শব্দটি একান্তভাবেই সনাতন ধর্মের নিজস্ব - রাজ ঘোষ

ধর্ম শব্দটি একান্তভাবেই সনাতন ধর্মের নিজস্ব। ধর্ম কথাটির প্রতিশব্দ রূপে religion বহুল প্রচলিত হলেও তা সত্যের অপলাপ বৈ নয়। কোন অভারতীয় ভাষাতেই ধর্ম কথাটির যথাযথ প্রতিশব্দ আছে বলে মনে হয় না। কারণ ধর্ম শব্দটির মধ্যে যে বৃহত্তর জীবনবোধের দ্যোতনা রয়েছে, জড়বাদী, ইন্দ্রিয়পরায়ণ কোন চিন্তাধারায় তার গভীরতা অনুধাবন করা দুঃসাধ্য। তবুও, যদি কোন পশ্চিমী/অভারতীয়  চিন্তাধারায় লালিত কোন ব্যক্তিকে ধর্ম কি তা বুঝিয়ে বলতে হয় তবে তার সংজ্ঞা দেব এইভাবে : Dharma is the justification of one's existence in this vast cosmic pattern. Dharma defines where we stand in relation to this seemingly incomprehensible universe.


মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ Milky Way বা আকাশ গঙ্গা নামক ছায়াপথ বা নীহারিকার একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ নিয়ে আমাদের সৌরজগত। সেই সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ পৃথিবী। আর বিজ্ঞানের যাবতীয় অভাবনীয় অগ্রগতি সত্ত্বেও পৃথিবীর বাইরে অনত্র কুত্রাপি প্রাণের অস্তিত্ব মানুষের অজ্ঞাত। বলাই বাহুল্য, অন্যত্র বলতে সৌরজগতের অন্যত্র। সৌরজগতকে অতিক্রম করে যে মহাবিশ্ব তা আজও মানুষের কাছে দুর্জ্ঞেয়। সুতরাং বিজ্ঞানের সীমা পৃথিবীর এবং তার বাইরে যৎসামান্য সৌরজগতের মধ্যেই সীমিত। আর প্রকৃত জ্ঞানী, বিজ্ঞানীরা এই সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন। তাঁরা কখনই বিজ্ঞানকে কোন নাস্তিক মতবাদের হাতিয়ার রূপে ব্যবহারের কথা বলেন না। মুশকিল হচ্ছে সেই সব অজ্ঞানী, অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী পন্ডিতমন্যদের নিয়ে, যারা তাদের সঙ্কীর্ণ মানসিকতার কারণে ধর্মের তাৎপর্য অনুধাবনে অক্ষম, অথচ ধর্মকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে তৎপর! এ যেন অবোধ শিশুর নিজের ছায়ার সঙ্গে লড়াই করার মতো! কেন ধর্ম বলতে শুধুমাত্র বৈদিক সনাতন ধর্মকেই বোঝায়? কারণ বৈদিক সনাতন ধর্ম কোন ব্যক্তিবিশেষের মস্তিষ্কপ্রসূত নয়। সনাতন ধর্ম কখনও মানুষের কাছে প্রশ্নহীন আনুগত্য দাবী করে না ; বা যারা সেই আনুগত্য পোষন করে না তাদের জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তির বিধান দেয় না। যা কিনা আব্রাহামিক মতবাদগুলির বৈশিষ্ট্য। এমনকি ধর্মহীন কম্যুনিস্টদের সঙ্গে আব্রাহামিকদের এই বিষয়ে দারণ মিল! কম্যুনিজমও তার অনুগামীদের কাছ থেকে প্রশ্নহীন  এবং বিবেকহীন আনুগত্য দাবী করে। অন্যথায় ভয়ঙ্কর শাস্তির ব্যবস্থা! মৃত্যুপরবর্তী নরকের চেয়েও মারাত্মক গুলাগের মতো কম্যুনিস্ট নরক! যেখানে মানুষের শেষ বিন্দু জীবনিশক্তি থাকা পর্যন্ত তাকে বাধ্যতামূলক শ্রমদান করতে হয়! 

সনাতন ধর্ম পথ দেখায়। জীবনবোধ তৈরী করে দেয়। মানুষকে দ্বিপদ পশু থেকে দেবত্বে উন্নীত হবার প্রেরণা যোগায়।


"আহারনিদ্রাভয়মৈথুনঞ্চ সামান্যমেতৎপশুভির্নরাণাম্।

ধর্ম হি তেষাম অধিকো বিশেষো ধর্মেন হীনা পশুভিঃ সমানাঃ।।"


অর্থাৎ, জৈবিক প্রবৃত্তিগুলি তো মানুষ এবং পশুর একই রকম। ধর্মই মানুষকে পশুত্ব অতিক্রম করে মনুষ্যত্বে উন্নীত করে। আর মনুষ্যত্ব জাগ্রত হলে তো মানুষ কোন ভয়ঙ্কর বদরাগী নিরাকার ওপরওয়ালার ভয়ে কুঁকড়ে থাকবে না, বা তথাকথিত আশমানি কিতাবের নির্দেশে সেই  বিশেষ মতবাদটি ব্যতীত অন্য সমস্ত মতবাদকে ঘৃণা করতে শিখবে না! সেই বিশেষ মতবাদটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে নরপিশাচ হয়ে ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসা, লালসায় পৃথিবীকে ক্লেদাক্ত করে তুলবে না! ফলতঃ আব্রাহামিক মতবাদ এবং কম্যুনিজম কাজ করে একটি fear psychosis এর ভিত্তিতে। যা তার অনুগামীদের মগজধোলাই করে বুঝিয়ে দেয়, হয় তুমি আমার সাথে, নয়তো বিরুদ্ধে -- মাঝামাঝি কোন জায়গা নেই! 


তাই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিশ্বচরাচরের সঙ্গে একাত্মতার উপলব্ধির কথা বলা সনাতন ধর্মকে ওদের বেজায় ভয়! অন্ধকারের কীট যেমন আলো সহ্য করতে পারে না, ধর্ম সম্পর্কেও ঐসব political and religious bigot দের তেমনই বিতৃষ্ণা। ওরা বিজ্ঞান পড়েনি, পড়লেও তা অনুধাবনে অক্ষম। ওরা আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞানীদের কিছু বক্তব্যের কিছু অংশ অপ্রাসঙ্গিক ভাবে তুলে এনে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ