খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: প্রতিবাদ অব্যাহত, গ্রেপ্তার ৪

 

Daily Inqilab মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি থেকে),  ১৭ জুলাই ২০২৫, ০২:৫৫ পিএম | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৫, ০২:৫৫ পিএম


খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া এলাকায় ১৪ বছরের এক ত্রিপুরা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ভিকটিম কিশোরী বর্তমানে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।


লতিবান এলাকার এক ত্রিপুরা কিশোরী সম্প্রতি রথযাত্রা উৎসব দেখতে গিয়ে কয়েকজন বাঙ্গালি দুবৃত্ত কতৃক পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। নির্যাতনের শিকার তরুণী বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালালে পুরো ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।


স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপকালে জানা যাত, রথযাত্রা চলাকালীন সময় কিশোরীটি ভাইবোনছড়া এলাকায় মেলায় অংশ নিতে গিয়ে রাত হয়ে যাওয়ায় বাড়ি (পানছড়ি, লতিবান) ফিরতে পারেননি। এ অবস্থায় সে তার কাকার বাড়িতে রাত যাপন করে। সেখানেই রাতের অন্ধকারে চারজন বাঙ্গালি যুবক ওই বাড়িতে ঢুকে ‘অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক’ চলছে—এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে কাকার ছেলেকে বেঁধে রেখে কিশোরীটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।


গেলো রাত ১২ টার দিকে ভিকটিম কিশোরীর বাবা এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।


মামলা দায়েরের পরপরই অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরমান হোসেন (৩২), সদস্য ইমন হোসেন (২৫) ও এনায়েত হোসেন (৩৫) এবং শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন (৩২)।


 সদর থানা সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম কিশোরীর বাবা ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তন্মধ্যে চারজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাকি দু'জন পলাতক রয়েছে। পলাতক দুই আসামি হলেন ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মুনির ইসলাম (২৯) ও ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল ইসলাম (২৩)।


মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুন রথযাত্রার মেলায় অংশ নেওয়ার পর রাতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল ওই কিশোরী। সেখানে গভীর রাতে ছয়জন ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এ সময় ছাত্রীর আত্মীয়কে বেঁধে রাখা হয়েছিল।


ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা বলেন, 


সামাজিক লজ্জা ও ভয়ভীতির কারণে ওই ছাত্রী প্রথমে পরিবারকে কিছু জানায়নি। তবে এ ঘটনায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গত শনিবার বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে মেয়েটি। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মেয়েটি পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি জানায়।


জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, 


কিশোরী শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর। সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।


খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরোফিন জুয়েল বলেন, 


কিশোরীর বাবার মামলার পরপরই চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুজনকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।


এদিকে জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভিকটিম কিশোরীর চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে যান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার। এ সময় জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা, যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, অনিমেষ চাকমা রিংকু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসেম ভূঁইয়া, জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক কমল বিকাশ ত্রিপুরা, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আনিসুল আলম চৌধুরী, সদর উপজেলা যুবদলের সদস্য রানা ত্রিপুরা।


এসময় জনাব ওয়াদুদ ভূইয়ার পক্ষ থেকে মেয়েটির পরিবারকে ০১ লক্ষ টাকা চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়। ভবিষ্যতে মেয়েটি এবং তার পারিবারের পাশে থেকে যেকোন বিষয়ে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করা হয়।


ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলা শহরে।


সকালের দিকে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী, মানবাধিকারকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ অংশগ্রহণ করেন।


বিক্ষোভকারীরা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্বরের মুক্ত মঞ্চের সামনে সমাবেশ করে।


 সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব

Post a Comment

0 Comments