কিছুদিন আগে ট্রেনে করে রাজশাহী যাচ্ছিলাম। আমার সামনের সিটে বসা ছিল এক হুজুর টাইপ ব্যাক্তি । তবে হুজুরটি মডারেট আর কথাবার্তা শুনে বেশ শিক্ষিত মনে হলো। তার সহযাত্রী হিন্দু ভদ্রলোকটি বোধহয় তার দীর্ঘদিনের বন্ধু। দুজনের সাথেই আলাপ-পরিচায় আর কথাবার্তা হলো।
অবধারিতভাবেই , এক পর্যায়ে হুজুর ধর্মের প্রসঙ্গ টানলেন। আমি এই আলোচনায় যুক্ত হইনি। ফোনের স্ক্রীনে নজর দিলাম। এই দীর্ঘসময়ের যাত্রায় কোনো ধরনের ঝামেলা বাঁধানোর ইচ্ছা ছিল না বলেই।
কিন্তু হুজুর তার হিন্দু বন্ধুর সাথে আলোচনা চালিয়ে গেলেন।তাদের বেশিরভাগ কথপোকথনই ইংরেজিতে হচ্ছে। কামরায় হিন্দু প্যাসেঞ্জারই বেশি ছিল। তারপরও কেউ কিছু বলছে না। সবার ভাবখানা এমন যে, "যেহেতু হুজুর ইংরেজি বলছেন সঠিক তো হবেই! "
আর হিন্দু ভদ্রলোকটি নাকাল হচ্ছেন তার নিজের দেওয়া প্রতি যুক্তিতে। যেভাবে আমাদের পৌরাণিক ভ্রাতারা হয়ে থাকেন। তারা বাড়ি থেকে যা মুখস্থ করে যান এবং বিপক্ষের কাছ থেকে যেসব উত্তর প্রত্যাশা করেন সেগুলো কোনো এক বিগত যুগের চরায় আটকে রয়েছে।
এক পর্যায়ে হুজুর ব্যাক্তিটি বললেন,
"এটা Fairy Tale ছাড়া কিছু নয় । দুর্গার দশ হাত! যত্তোসব বুজরুকি। পিতামহীর আমলের গালগপ্প "
অনেকক্ষণ ধরে এনার ঢপবাজি শুনেছি। এরপর আর মুখ না খুলে পারলাম না।
-"আঙ্কেল, আপনি *বুখারী শরীফ পড়েছেন?"
ভদ্রলোক থতমত খেয়ে বললো, " হ্যাঁ , অবশ্যই পড়েছি। পড়বো না কেন? "
- " সেখানে বলা হয়েছে যে, আপনাদের ফেরেশতা জিবরাঈল এর ৬০০ ডানা আছে। " [ বুখারী(তাওহীদ) ৩২৩২]
- "হ্যাঁ, তো তাতে কি হয়েছে? "
- " হয়েছে এটাই যে, দুর্গার দশ হাত থাকা যদি পিতামহীর আমলের গপ্প হয়। তাহলেও ফেরেশতার ৬০০ ডানা আছে এটা প্রপিতামহীর আমলের গল্প "
পুরো কামরায় পিনপতন নীরবতা। কেবলমাত্র ট্রেনের ঝক্ ঝক্ শব্দ ছাড়া।
এরপর সারাদিনের যাত্রায় হুজুর একটি কথাও বলেননি।
বি.দ্র : হিন্দু ভদ্রলোকটিও আমার সাথে কথা বলেননি। কারণ কিছুক্ষণ পরেই তিনি আমার ফোনের স্ক্রীনে "সত্যার্থ প্রকাশ" এর পিডিএফ দেখেছিলেন । উল্লেখ্য তিনি একটি বিখ্যাত সনাতনী "সংসদের" সদস্য যারা সত্যার্থ প্রকাশ পছন্দ করেন না।
0 মন্তব্যসমূহ