নেতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা প্রত্যাহার দাবিতে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশে নেতারা। |
চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে এই বিক্ষোভে যোগ দিতে আসা মানুষদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাধা দিতে দেখা গেছে।
তারা চায় ঔপনিবেশিক শক্তি আসুক: সনাতন মঞ্চ
চট্টগ্রাম ব্যুরো, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, Published : 01 Nov 2024, 09:04 PM, Updated : 01 Nov 2024, 09:06 PM
চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চ সমাবেশ করতে গিয়ে প্রথমবারের মত আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে পড়েছে।
তবে বাধা মুখেও শনিবার বন্দরনগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে সমাবেশ করে নেতারা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক শক্তি আনার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জাতীয় পতাকার ওপর গেরুয়া রঙের পতাকা টানানোর ঘটনায় করা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার ডিসির মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি প্রদান এবং সোমবারে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণাও দেওয়া হয় জমায়েত থেকে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ ৮ দফা দাবিতে গত ২৫ অক্টোবর লালদিঘীর ময়দানের সমাবেশে সেই পতাকা টানানো হয়েছিল।
সেই জনসভার কথা উল্লেখ করে সনাতন জানগণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাশ ব্রহ্মচারী বলেন, “স্মরণকালের বৃহৎ শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ আমরা সুশৃঙ্খলভাবে শেষ করেছিলাম। কিন্তু ওই শান্তি ও দেশের অগ্রযাত্রা একটি গোষ্ঠীর পছন্দ হচ্ছে না।
“তারা চায় এ দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হোক, ঔপনিবেশিক পরাশক্তিগুলো বাংলাদেশে আসুক, দেশটি একটি জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত হোক। তারা হীন প্রচেষ্টায় আন্দোলনের ওপর দোষ চাপাতে চেয়েছে। আমরা ধৈর্যের মধ্যে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।”
গত ২৫ অক্টোবর জাতীয় পতাকার ওপরে গেরুয়া রঙের এই পতাকা টানানোয় সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন ফিরোজ খান নামে একজন। এর প্রতিবাদে এই সমাবেশ করা হয়। |
৫ অগাস্ট পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন,
“তারা বলছে বাংলাদেশে নাকি হিন্দুদের কিছু হয়নি। প্রথম আলো এক হাজার ২৮টি ঘটনার ডকুমেন্টারি বর্ণনা দিয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গবেষণায় তিন হাজারের বেশি ঘটনা উঠে এসেছে। সারা বিশ্বের সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমগুলো শিকার করেছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে।”
জমায়েতে আসতে বাধা
চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা টাঙানোর অভিযোগে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী, প্রবর্ত্তক ইসকন শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ দাশ ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহের মামলা হয়েছে।
ফিরোজ খান নামের এক ব্যক্তি বুধবার গভীর রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানায় দণ্ডবিধির ১২০(খ)/ ১২৪(ক)/ ১৫৩(ক)/ ১০৯/৩৪ ধারায় মামলাটি করেন।
মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার চট্টগ্রামসহ দেশের ৬৪ জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় সনাতনী জাগরণ মঞ্চ।
চেরাগী পাহাড় মোড়ে এই বিক্ষোভে যোগ দিতে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সী হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা আসতে থাকে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে চেরাগীপাহাড় মোড়ে জড়ো হতে দিতে বাধা দিতে দেখা গেছে।
সমাবেশে থেকে বারবার মাইকে বলা হচ্ছিল জামালখান, বৌদ্ধমন্দির, আন্দরকিল্লা মোড়ে সমাবেশে আসা মিছিলগুলো আটকে দেওয়া হচ্ছে।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে চেরাগী পাহাড়ের পাশাপাশি নগরীর বৌদ্ধমন্দির, জামালখান, আন্দরকিল্লা মোড়ে পুলিশ, সেনা বাহিনী, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল।
এই সমাবেশে আসতে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মঞ্চ থেকে। |
বেলা চারটার দিকে বৌদ্ধ মন্দির মোড় দিয়ে একটি মিছিল আসার সময় দায়িত্বরত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আটকে দিতে দেখা গেছে। মিছিলকারীরা স্লোগান দিয়ে বাধা ঠেলে চেরাগী পাহাড়ের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
“কোনো সমাবেশ করার আগে মেট্রোপলিটন অধ্যাদেশ অনুযায়ী কমিশনারের অনুমতির প্রয়োজন। কিন্তু কোনো অনুমতি ছাড়া এ সমাবেশ করা হয়েছে।”
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা নিয়ে ‘নাটকের’ অভিযোগ
মামলা নিয়ে গৌরাঙ্গ দাশ ব্রহ্মচারী বলেন,
“তারা বলছে দুইজন সাধুকে বাদ দেবে।। বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা থাকবে। আমরা এ কথাটা মানতে পারি না। সনাতনী সম্প্রদায়ের অধিকারের জন্য যারা এসেছে তারা সকলে নিঃস্বার্থভাবে জীবন বাজি রেখে এ জাতির জন্য এগিয়ে এসেছে। সুতরাং সাধুসন্তদের বাদ দিয়ে আমরা এ মামলা প্রত্যাহার চাই না।”
যদি প্রধান দুই আসামির নাম বাদ যায়, তাহলে মামলা আর থাকে না মত দিয়ে তিনি বলেন,
“আর নাটকের দরকার নেই। অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাধার পরেও বিপুল সংখ্যক মানুষ সনাতন জাগরণ মঞ্চের এই সমাবেশে অংশ নেয়। |
‘বৈষম্যহীন সমাজ আমাদের জন্য নয়’
গত অগাস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সব ধর্মের লোকজন অংশ নিয়েছিল উল্লেখ করে গৌরাঙ্গ দাশ বলেন,
“আমরা দেখলাম বৈষম্যহীন সমাজ আমাদের জন্য নয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন আমরা যেন নিজেদের বাংলাদেশি ভাবি। আজকের পরিস্থিতি দেখুন। আমরা কীভাবে নিজেদের বাংলাদেশি ভাবতে পারি? সাধু সন্তদের মিথ্যা মামলা দিয়ে আপনারা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছেন।”
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠকের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলে,
“ধর্মীয় দলগুলো বলেছিল, ‘একটা গোষ্ঠী আপনাদের সাথে আমাদের মতভেদ তৈরি করেছিল। একজন প্রকৃত মুসলিম ও একজন হিন্দুর মধ্যে কোনো বিভেদ থাকতে পারে না।’ আমরা সেটা বিশ্বাস করেছিলাম।
“এটাও বলেছে, ১৬ বছর মানুষ কথা বলতে পারেনি। এখন সবাই কথা বলতে পারবে।’ কিন্তু আমরা যখন ন্যায্য দাবি নিয়ে আসলাম, আন্দোলনে নস্যাৎ করার জন্য, সত্যকে লুকায়িত করার জন্য তারা অপতৎপরতা শুরু করেছে।”
সূত্র: বিডিনিউজ২৪
-০-০-০-০-০-০-০-০-
এই প্রসঙ্গে আরও কয়েকটি খবর
0 মন্তব্যসমূহ