বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা: বাংলা বর্ষপঞ্জীর প্রতিষ্ঠাতা: বাংলা নববর্ষের প্রতিষ্ঠাতা
বাংলা নববর্ষ বা বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা কে? কেউ বলেন গৌড়াধিপতি শশাঙ্ক আবার কেউ বলেন সম্রাট আকবর। আবার কেউ বলেন, তাঁদের একজনও না; বঙ্গাব্দ অনেক প্রাচীন। প্রাচীন নিয়ে বিতর্ক চলছে না। চলছে শশাঙ্ক আর আকবর নিয়ে। দুপক্ষের যেদিকে আমি মত দিই না কেন— অন্য পক্ষ নাখোশ হবেন। অনেকে জঘন্য অশালীন উক্তিও করে বসবেন। আসলে আমি জানি না, বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা শশাঙ্গ না আকবর না অন্য কেউ। তবে বঙ্গাব্দের অন্তর্ভুক্ত মাসসমূহের নাম দেখে মনে হয়— এগুলো অনেক পুরানো। পৌরাণিক গ্রন্থসমূহে বর্ণিত দেবীর নামে রক্ষিত নক্ষত্রের নাম বঙ্গাব্দ মাসের অন্তর্ভুক্ত। নামসমূহ শুধু আকবর নয়, শশাঙ্কেরও বহু পূর্বে প্রচলিত বিভিন্ন গ্রন্থ ও শিলালিপিতে পাওয়া যায়। গুপ্ত যুগে প্রচলিত সনের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। ভারতীয় উপমহাদেশে পঞ্জিকার প্রচলনের ইতিহাস বহু প্রাচীন। সিন্ধু সভ্যতার সময়ও বর্ষপঞ্জীর প্রচলন ছিল। বঙ্গাব্দের প্রবর্তক কে তা আমি বলব না। নিচে কিছু প্রশ্ন রাখলাম তা থেকে আপনারাই বের করে নেন পাল্লা কোনদিকে ভারি।
বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠায় শশাঙ্ক তথ্য: এখন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ। ২০২৩ থেকে ১৪২৯ বাদ দিলে পাওয়া যায় ৫৯৪। অর্থাৎ ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দ ছিল বঙ্গাব্দের প্রথম বছর। বঙ্গাব্দের প্রথম বর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে শশাঙ্কের সংশ্লিষ্টতা দেখা যাক। শশাঙ্ক ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল মতান্তরে ১৪ই এপ্রিল স্বাধীন শাসক হিসেবে গৌড়ের (বঙ্গ) সিংহাসনে আরোহন করেন। শশাঙ্ক ৫৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমার্ধ পর্যন্ত গৌড় (বাংলা) রাজ্যের রাজা ছিলেন। তন্মধ্যে ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমার্ধ পর্যন্ত গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীন পূর্বাঞ্চলীয় বর্তমান ভারতের কিয়দংশ-সহ গৌড় বা বঙ্গ অঞ্চলের সামন্ত শাসক ছিলেন। গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে শশাঙ্ক স্বাধীনতা ঘোষণা করে স্বাধীন রাজা হিসেবে গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। গবেষকদের মতে, দিনটি ছিল ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল সোমবার কিংবা ১৪ই এপ্রিল বুধবার। সিংহাসনে আরোহনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি তাঁর সিংহাসনে আরোহনের দিন-বছরকে প্রথম দিন-বছর ধরে সূর্যসিদ্ধান্তভিত্তিক বঙ্গাব্দ চালু করেন। সৌর বিজ্ঞানভিত্তিক হিসেবে অনুযায়ী ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল বা ১৪ই এপ্রিল সোমবার, সূর্যোদয়ের সময়ই বঙ্গাব্দের সূচনা।
বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠায় আকবর তত্ত্ব: আকবরপক্ষীয়দের অভিমত, খাজনা আদায়ের সুবিধা এবং রাজ্যাভিষেককে স্মরণীয় করে রাখা জন্য ১৫৮৪ খ্রিষ্টব্দে সম্রাট আকবর তাঁর শাসনামলের ২৯তম বর্ষে তারিখ-ই-ইলাহি নামের সৌর বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী ফসলি সন হিসেবে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করেন। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৯৬৩ হিজরিতে আকবর দিল্লির সিংহাসনে আরোহন করেন। সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৯৬৩ হিজরিকে ৯৬৩ বঙ্গাব্দ ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জী প্রবর্তন করেন।
আমার প্রশ্ন: খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে হোক বা রাজ্যাভিষেককে স্মরণীয় করে রাখার জন্য হোক— বঙ্গাব্দ ১ থেকে শুরু না করে ৯৬৩ থেকে শুরু করা হলো কেন? ৯৬৩ বর্ষকে ভিত্তি ধরার কোনো জোরালো কারণ নেই। পৃথিবীতে প্রবর্তিত সব বর্ষপঞ্জী শুরু হয়েছে ১ থেকে। আকবর কেন ৯৬৩ থেকে শুরু করলেন? সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তক হয়ে থাককে ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দকেই ১ বঙ্গাব্দ ধরলে তাঁর স্মরণীয় থাকার উদ্দেশ্য আরও বেশি সফল হতো। অধিকন্তু, আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে উল্লেখ করা রয়েছে আকবরের হিজরী সন অপছন্দ ছিল। এজন্যই তিনি তারিখ-ই-ইলাহি প্রবর্তন করেন। তিনি যদি বাংলা সনের প্রবর্তক হতেন তার নিজের প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী সঙ্গে হিজরি সনের মিল রাখতেন না।
আকবরের অভিষেক: ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৩ বছর বয়সে আকবর দিল্লির সিংহাসনে আরোহন করেন। ওই সময় বা তারিখ বা বর্ষ থেকে যদি বাংলা সন প্রবর্তন হলে পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ ১৪ বা ১৫ই এপ্রিল না হয়ে ১৪ই ফেব্রুয়ারি হওয়া কথা। কিন্তু ১৪ই ফেব্রুয়ারি হলো না কেন?
শিলালিপিতে বঙ্গাব্দ: শশাঙ্কপক্ষীয়দের দাবি, বঙ্গাব্দ (/বাংলা সন/) শব্দটি আকবরের শাসনামলের চেয়ে অনেক শতক পুরনো দুটি শিব মন্দিরে পাওয়া গিয়েছে। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে, আকবরের সময়ের অনেক আগে থেকেই বাংলা বর্ষপঞ্জি বিদ্যমান ছিল। তাহলে কীভাবে আকবর বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হতে পারে? মেদিনীপুরে শশাঙ্কের আমলের দুটি তাম্রলিপি আবিষ্কৃত হয়েছে। ওই তাম্র লিপি দুটিতে বর্ষ হিসেবে যথাক্রমে ৭ বছর ও ১৯ বছর লেখা ছিল। শশাঙ্কের আমলে ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দ ছিল ৫১৬ শকাব্দ মোতাবেক ২৭৫ গুপ্তাব্দ। সুতরাং ৭ ও ১৯ এ দুটি বর্ষপঞ্জীর একটিরও হিসাব নয়। তাই গবেষকদের ধারণা ৭ ও ১৯ বর্ষ মানে যথাক্রমে ৭ বঙ্গাব্দ ও ১৯ বঙ্গাব্দ। বিষ্ণুপুরে প্রাপ্ত একটি মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তরে শকাব্দের (১৬০৮) পাশাপাশি লেখা ছিল ১০৯৩ সন। গবেষকগণ বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করেছেন এটি বঙ্গাব্দ। ৭৮ খ্রিষ্টাব্দে শকাব্দ শুরু। সুতরাং, ১৬০৮ শকাব্দ হলো (১৬০৮+৭৮)= ১৬৮৬ খ্রিষ্টাব্দ। ১৬৮৬ এবং ১০৯৩ এর মধ্যে পার্থক্য হলো ৫৯৩, যা বঙ্গাব্দ ও গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর প্রবর্তন পার্থক্য। এ হিসেবে বলা যায় ১০৯৩ সনটি ছিল বঙ্গাব্দ। তা যদি হয় তাহলে বলা যায়, আকবরের অনেক আগে বঙ্গাব্দ প্রচলিত ছিল।
বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠাসম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য: আকবরের আমলে রচিত প্রামাণ্য গ্রন্থ “আইন-ই-আকবরি”। এই গ্রন্থে আকবরের রাজত্বকালীন গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব সামসময়িক ঘটনাই বিধৃত হয়েছে, কিন্তু বঙ্গাব্দ সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে ভারতবর্ষ-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন বর্ষপঞ্জীর ধারাবাহিক বিবরণ রয়েছে, অথচ আকবরের বঙ্গাব্দ বা ফসলি সন প্রবর্তনের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই । তবে ১০৭৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইরানে প্রচলিত ‘জেলালি সৌর পঞ্জিকা’ অনুযায়ী ভারতবর্ষে ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘তারিখ-ই-ইলাহি’ নামের সৌরপঞ্জিকা প্রবর্তনের বিবরণ পাওয়া যায়। বাংলা সনের প্রবর্তক যদি আকবর হতেন, তাহলে আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে তা উল্লেখ নেই কেন?
মাসের নামকরণ: ব্যতিক্রান্ত ক্ষেত্র ব্যতীত সংশ্লিষ্ট শাসকের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, উৎসভূমি, প্রিয়জন ইত্যদি নামকরণকে প্রভাবিত করে। শশাঙ্ক সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং সংস্কৃত ভক্ত ছিলেন। তাই তদ্কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বর্ষপঞ্জীর নাম হিন্দু পৌরাণিক দেবদেবীর নামানুসারে রেখেছেন। সম্রাট আকবর ছিলেন ফারসিভাষী মুসলিম। তিনি বাংলা জানতেন না। সংস্কৃতের প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না। তাঁর আমলে রাজকীয় তত্ত্বাবধানে ছোটো-বড়ো যা কিছু হয়েছে সে সবের নাম ফারসি ভাষা, পরিবারপরিজন, প্রিয় মানুষ, প্রভাবশালী আমাত্য বা ইসলামি সংস্কৃতিভিত্তিক হয়েছে। তাহলে কেন বঙ্গাব্দের বার মাসের নাম সংস্কৃত ভাষায় নামায়িত পৌরাণিক দেবীর নামানুসারে করেছেন? ওই বারো দেবী আকবরের কাছে কী কারণে প্রিয় হয়ে উঠেছিল তাও আমার একটি বড়ো প্রশ্ন।
- বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী বৈশাখ মাস।
- জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী জৈষ্ঠ মাস,
- উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী আষাঢ় মাস,
- শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী শ্রাবণ মাস।
- পূর্বভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী ভাদ্র মাস,
- অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী আশ্বিন মাস,
- কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী কার্তিক মাস।
- মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী অগ্রহায়ণ মাস,
- পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী পৌষ মাস,
- মঘা নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী মাঘ মাস,
- উত্তরফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী ফাল্গুন এবং
- চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী চৈত্র মাস।
ধর্ম ও সংস্কৃতি: মুসলিম শাসক-প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন বিষয়ে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের স্বতস্ফূর্ত উচ্ছাস এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়। কিন্তু বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানে দেখা যায় তার বিপরীত। নববর্ষ পালনকে মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকে পাপের কাজ বলে মনে করেন। কিন্তু মুসলিম-শাসক প্রতিষ্ঠিত অন্য কোনো কিছুতে এমন দেখা যায় না। মুসলিম শাসক আকবর বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হলে এমন হওয়ার কারণ কী?
ফসলি সন: বঙ্গাব্দ কি ফসলি সন? আকবর পক্ষীয়দের বক্তব্য, রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে আকবর বঙ্গের জন্য ফসলি সন হিসেবে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করেছিলেন। একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, বঙ্গাব্দ ফসলি সন নয়। যদি ফসলি সন হতো তাহলে বৈশাখ দিয়ে শুরু করা হতো না। শুরু করা হতো অগ্রহায়ণ বা ফসল উঠে এরূপ অন্য কোনো মাস দিয়ে। বৈশাখ মাসে কোনো ফসল উঠে না। এই মাসে রাজস্ব আদায়ের জন্যও অনুকূল নয়। বরং এটি একটি ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভরা একটি অভাবের মাস। ফসলি সন হলে কেন বৈশাখকে প্রথম মাস করা হলো? অনেকে বোরো চাষের কথা তুলবেন।
ইলাহি সন বনাম বঙ্গাব্দ: অনেকে বলেন, তারিখ-ই-ইলাহি সনই বঙ্গাব্দ। তাহলে কেন আরবি নামের বর্ষে সংস্কৃত নামের মাস অন্তর্ভুক্ত করা হলো? ফারসি বা আরবিতে কি নামের অভাব ছিল? ওই দুই ভাষায় অনেক খ্যাতিমান জ্যোতির্বিদ ছিলেন। ওই দুই ভাষায় অনেক নক্ষত্রের নাম আছে। আকবর বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হলে মাসের নামগুলো দেবী বা সংস্কৃত প্রভাবিত হতো না; ফারসি বা আরবি প্রভাতি হতো।
মা-হুয়ানের বৃত্তান্ত: গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের ( ১৩৯৩—১৪০৯ খ্রি.) সময় আগত চীনা পরিব্রাজক মা-হুয়ান তার ভ্রমণ বৃত্তান্তে বলে গিয়েছেন, দেশবাসী বাংলা ভাষায় কথা বলত, বাঙালিদের নিজস্ব দিনপঞ্জিকা ছিল। গবেষকদের অভিমত, এই দিনপঞ্জি ছিল বঙ্গাব্দের। যা আকবরের আনেক আগের।
বঙ্গে আকবরের নিয়ন্ত্রণ ও বঙ্গাব্দ: আকবর পক্ষীয়দের অভিমত, ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গাব্দ প্রবর্তিত। এসময় বাংলার খুব সামান্য অংশ মোগলদের অধীন ছিল। ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে শেষ পাঠান সুলতান দাউদের মৃত্যু হলে গৌড় রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা আকবরের হস্তচ্যুত হয়। তখন বাংলা ছিল বারোভুঁইয়াদের নিয়ন্ত্রণে। ইতিহাসবেত্তাদের মতে, ১৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে গৌড়রাজ্যে বা বঙ্গদেশে মোঘলদের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এ অবস্থায়, নিয়ন্ত্রণ প্রাপ্তির দশ বছর পূর্বে আকবর কেন রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে আওতাবহির্ভুত এলাকার জন্য বঙ্গাব্দ চালু করবেন? আকবর কি এত বোকা ছিলেন?**
এগারো সুবা বাদ কেন: আকবরের সাম্রাজ্য বারোটি সুবায় বিভক্ত ছিল। যথা: অযোধ্যা (Avadh), আগ্রা (Agra), আজমির (Ajmer), এলাহাবাদ (Illahabad), কাবুল (Kabul), গুজরাট (Gujarat), দিল্লি (Delhi), বাংলা (Bangal), বিহার (Bihar), মালব (Malwa), মুলতান (Multan) এবং লাহোর (Lahore)। তিনি ১১টি সুবা বাদ দিয়ে কেবল বাংলার জন্য কেন একটি আলাদা বর্ষপঞ্জী করলেন? অন্যান্য সুবাহ কী দোষ করেছিল? সেখান থেকে কি খাজনা আদায় করা হতো না? সেখানে কি ফসলি সনের প্রয়োজন ছিল না? বাকি ১১ সুবার জন্য কি তিনি এরূপ কোনো বর্ষপঞ্জী করেছেন?
পহেলা বৈশাখের সর্বভারতীয় বিস্তার: ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নববর্ষের উৎসব পালন করা হয়। তামিলনাড়ুতে পুথান্ডু, কেরালাতে বিশু, পাঞ্জাবে বৈশাখী, আসামে ভাস্করাব্দ উৎসবে পালন করা পহেলা বৈশাখ। বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক অবাঙালি উপজাতি পহেলা বৈশাখ বৈসাবি-সহ বিভিন্ন নামের ধর্মীয় উৎসব পালন করে থাকে। তাদের এই ধর্মীয় উৎসবের বয়স আকবরের সিংহাসনে আরোহনের সময় থেকে অনেক প্রাচীন। সম্রাট আকবর যদি বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হয়ে থাকেন, তাহলে একই সময়ের প্রায় একই দিনে উপমহাদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভিন্ন নামে ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পহেলা বৈশাখ পালন করা হতো কীভাবে? জন্মের আগে কেউ কি দৃশ্যমান হতে পারে?
দক্ষিণ এশিয়া ও পহেলা বৈশাখ: শুধু ভারত নয়, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে পহেলা বৈশাখ বাংলা সন পালন করা হয়। এসব অনুষ্ঠান তাদের সহস্র বছরের ঐতিহ্য। আকবর যদি ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করে থাকেন ওই সব এলাকায় কীভাবে এর বহু আগে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান পালন করা হতো?
0 মন্তব্যসমূহ