পহেলা বৈশাখে মুসলিম আপত্তির বিপরীতে 'রহমান বর্ণিলে'র ফেসবুক পোস্ট

পহেলা বৈশাখে মুসলিম চুলকানীর বিপরীতে 'রহমান বর্ণিলে'র ফেসবুক পোস্ট

প্রত্যেক বৎসরে পহেলা বৈশাখ এলেই মুসলমানদের আপত্তি শুরু হয়ে যায়। তারা সরাসরি বৈশাখী উৎসবের সাথে ইসলামকে সাংঘর্ষিক করে তোলে। এবারও ১৪৩০ সালের ১লা বৈশাখ - এর ব্যতিক্রম নয়। মুসলিম তথা আরবীয় চেতনার মানুষদের আস্ফালনের বিপরীতে বাঙালি বোধসম্পন্ন মানুষদের প্রতিবাদ লক্ষ্যনীয়। এরকম একজন মানুষ 'রহমান বর্ণিল' এর পোস্ট প্রাসঙ্গিক বিধায় প্রকাশ করা হল।


এভাবে হিন্দুয়ানী বর্জন করতে গেলে বাঙালি মুসলমান অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। মুসলমানের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, আচরণ, অভ্যাস, পরিধেয় পোশাক, খাদ্যাভাস, সামাজিক রীতিনীতি, প্রথা; মোদ্দাকথা যাপিত জীবনের কোনো একটি বিষয়ের সাথেই বাঙালি মুসলমানের এই বিষয়াবলীর কোনো মিল নেই। আপনি এক মঙ্গল শোভাযাত্রা বাদ দিলে তো মুসলমান হতে পারবেন না। আপনাকে শার্ট-প্যান্ট খুলতে হবে। কোট, বুট, টাই ছাড়তে হবে। আপনাকে সপ্তাহের সাতদিনের বাংলা এবং ইংরেজি নাম, বছরের বারো মাসের বাংলা এবং ইংরেজি নাম বাদ দিতে হবে। কারণ এগুলোর বাংলাগুলো হিন্দুয়ানী, ইংরেজিগুলো খৃস্টীয়। আপনি ডাইনিং টেবিলে খেতে পারবেন না, টিভি দেখতে পারবেন না, পত্রিকা পড়তে পারবেন না। কারণ কুরাইশদের মতবাদ এগুলোকে স্বীকৃতি দেয়নি। আপনি যাবেন কোন দিকে!

এই যে আপনি মুসলমান মুসলমান করে অমুসলিমদের একেবারে অস্পৃশ্যের মতো করে নাক সিটকচ্ছেন, বলুন তো আপনার কোন পূর্বপুরুষের ওপর ইসলাম সরাসরি আসমান থেকে পড়েছিল। আপনি কয়েক প্রজন্ম পেছনের দিকে গেলে দেখবেন আপনার দাদার দাদা না হোক, সেই দাদার দাদার নাম ছিল হরিপদ, কালিপদ। পরিতোষ নইলে আশুতোষ। উপমহাদেশে ইসলামি সম্রাজ্যবাদ বিস্তার তো সেদিনের ঘটনা। আপনি কলিমুল্যাহ, রহিমুল্যাহ হতে পারেন, কিন্তু আপনার শিরায় শিরায় পরিতোষ, আশুতোষদের রক্ত। 

বাঙালি জাতীয়তাবাদকে অটুট রেখে বাঙালি কখনোই সহি মুসলমান হতে পারবে না। বাঙালিকে মুসলমান হতে হলে বাঙালিত্ব বাদ দিতে হবে। কারণ বাঙালি জাতিগতভাবেই হিন্দু। মুসলমান পরিচয় তো আলগোছে সেদিন বাঙালির পিঠে যুক্ত হয়েছে। আরব থেকে আমদানিকৃত নাম আর কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাদ দিলে বাঙালি আপাদমস্তক হিন্দুই। আপনি যতই এক মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ করতে চান, আপনার আষ্টেপৃষ্টে লেগে থাকা হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি আপনি কিছুতেই বাদ দিতে পারবেন না। কারণ এভাবে বাদ দিতে শুরু করলে আপনার পিতৃপ্রদত্ত নামটি বাদে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আপনি অস্তিত্ব সংকটে পড়বেন।

ইসলাম আরবে নাজিল হয়েছে। তাদের যাহাই ধর্ম তাহাই সংস্কৃতি। তাই ইসলাম গ্রহণ করায় তাদের কিছুই ছাড়তে হয়নি। ভারতবর্ষে ইসলাম নাজিল হলে আরবরা কিছুতেই তাদের ঐতিহ্য ছেড়ে সম্রাজ্যবাদী একটা ধর্মীয় সংস্কৃতিকে আপাদমস্তক বরণ করতো না। ধর্ম হয়তো তাদের কেউ কেউ করতো, কিন্তু সেটা তাদের জাতীয়তাবাদ এবং সংস্কৃতির সাথে প্যারালালি করতো। তাহলে অনারবীয়দের কেন ইসলাম ধরতে হলে জাতীয়তাবাদ এবং নিজস্ব সংস্কৃতি ছাড়তে হবে! ধর্ম কেউ পালন করুক, কিন্তু যেখানেই ধর্ম আর জাতীয়তাবাদ সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়াবে সেখানে আমি ধর্মকে ছাড় দেয়ার পক্ষে, জাতীয়তাবাদকে নয়। কারণ এই ধর্মের সাথে আমাদের সম্পর্ক খুব গভীরে প্রোথিত নয়। কিন্তু সংস্কৃতির সাথে কম্প্রোমাইজ করা যায় না। কারণ এটা আমাদের শেকড়। শেকড়ের একটা ক্ষুদ্র অংশকে বাদ দিলেও অস্তিত্বে টান পড়ে।


সূত্র

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ