সারোয়ার প্রতীক সারোয়ার প্রতীক, ডেস্ক রুবাইদ ইফতেখার ১৭ অক্টোবর, ২০২২ ২০:৩৭
ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
একাত্তরে-গণহত্যা-নিয়ে-আমেরিকান-পার্লামেন্টে-তোলা-প্রস্তাবে-কী-আছে?
আমেরিকান দুই আইনপ্রণেতার তোলা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ’বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ৯ মাসে বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দোষ চাপিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে নিধন অব্যাহত রাখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এ সময় আওয়ামী লীগের সমর্থক, বাঙালি সেনা ও পুলিশ সদস্য, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র এবং পেশাজীবীদের বেছে বেছে নিপীড়ন ও হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিম ও সংখ্যালঘিষ্ঠ অমুসলিম জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।’
বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার স্বীকৃতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে।
প্রভাবশালী দুই আইনপ্রণেতা স্টিভ চ্যাবট এবং রো খান্না ১৪ অক্টোবর এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
এই প্রস্তাবে কী রয়েছে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা। স্টিভ চ্যাবট এবং রো খান্নার উত্থাপন করা প্রস্তাবের শিরোনাম- ‘বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে গণহত্যার স্বীকৃতি।‘
৮ পৃষ্ঠার প্রস্তাবটি ভাষান্তর করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে, জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের। পাকিস্তান দেশটি দুটি আলাদা ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত হয়; পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান অঞ্চলটি পূর্ব বাংলা নামেও পরিচিত।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর শীর্ষ পদে পশ্চিম পাকিস্তানিদের আধিক্য ও আধিপত্য ছিল। পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করে সমস্ত সম্পদ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন অব্যাহত রাখা হয়।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা নানা তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে বাঙালিবিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করতেন। তারা বিশ্বাস করতেন, বাঙালিরা এমন একটি নিচু জনগোষ্ঠী যারা অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড ও আচরণে দুষ্ট।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের দাবি নিয়ে ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, নতুন সরকার গঠনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টোর সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের আলোচনা ব্যর্থ হয়।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানের ৩০ লাখ মানুষ হত্যায় শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন ইয়াহিয়া খান। তিনি বলেন, ‘তাদের ৩০ লাখকে মেরে ফেললে বাকিরা আমাদের পোষ্য হয়ে যাবে।’
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাবন্দি করে পাকিস্তান সরকার। সেই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সহযোগিতায় নির্বিচারে হত্যা চালায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। সাংকেতিক নাম ‘অপারেশন সার্চ লাইটের’ আওতায় পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ৯ মাসে বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দোষ চাপিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে নিধন অব্যাহত রাখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এ সময় আওয়ামী লীগের সমর্থক, বাঙালি সেনা ও পুলিশ সদস্য, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র এবং পেশাজীবীদের বেছে বেছে নিপীড়ন ও হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিম ও সংখ্যালঘিষ্ঠ অমুসলিম জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, জাতিগত বাঙালি এবং হিন্দুদের ওপর চালানো নিপীড়ন বিংশ শতাব্দীতে হওয়া গণহত্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই গণহত্যার স্বীকৃতি না পাওয়ার ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ, যারা নৃশংসতার কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, নৃশংসতায় নিহতদের সংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে। তবে বাংলাদেশ সরকারের হিসাবে সংখ্যাটি ৩০ লাখ।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ২ লাখের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। সামাজিক ট্যাবুর কারণে প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত কখনোই জানা যাবে না। মনে থাকবে না ভুক্তভোগীদের কথা।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, নৃশংসতা এবং যুদ্ধের কারণে প্রায় ১ কোটি উদ্বাস্তু ভারতে পালিয়ে যান। ৫০ শতাংশ বা তার চেয়েও মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হন।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ভারত সরকার এবং দেশটির জনগণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উদ্বাস্তুদের অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে দেখভাল করেছিল।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ১৩ জুন দ্য সানডে টাইমসে ‘গণহত্যা’ শিরোনামে এক কলামে সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লেখেন, “এটা পরিষ্কার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব বাংলার গভর্নরশিপ গ্রহণ সময় থেকেই পরিকল্পনামাফিক ‘তালিকা’ করা শুরু হয়। এটা চলমান ছিল।
সেনাবাহিনীর ইউনিটগুলো ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকায় যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন প্রাথমিকভাবে পরদিন সকাল পর্যন্ত একটি প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। ওই সময়ে সেনা ইউনিটগুলোর হাতে ছিল ওই তালিকা; যাতে হিন্দুদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মুসলমান, ছাত্র, আওয়ামী লীগার, অধ্যাপক, সাংবাদিক এবং শেখ মুজিবের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় থাকা রাজনীতিকদের নাম ছিল।”
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড ওয়াশিংটনে ‘বেছে বেছে গণহত্যা’ শিরোনামে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। এতে তিনি লেখেন, ‘সেনাদের সমর্থনে অবাঙালি মুসলমানরা পরিকল্পিতভাবে দরিদ্র জনগণের বাড়িঘরে হামলা এবং বাঙালি ও হিন্দুদের হত্যা করছে। ঢাকা ছাড়তে মরিয়া হিন্দু জনগোষ্ঠীসহ অন্যদের স্রোতে রাস্তা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অনেক বাঙালি আমেরিকানদের বাড়িতে আশ্রয়প্রার্থনা করেছিলেন, যাদের অধিকাংশ দীর্ঘদিন ওই আশ্রয়েই ছিলেন।’
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিরব অবস্থানের বিরোধিতা করে ২০ জন আমেরিকান কূটনীতিকের সইসহ একটি বার্তা স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠান কনসাল জেনারেল ব্লাড, যা ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ নামে পরিচিতি পায়। কূটনৈতিক কনস্যুলেট জেনারেল ঢাকার কর্মীরা লেখেন, ‘আমরা হস্তক্ষেপ না করার উপায় বেছে নিয়েছি, নৈতিকভাবেও। এ কারণে আওয়ামী সংঘাত, যেখানে দুর্ভাগ্যবশত অত্যধিক শক্ত শব্দ গণহত্যা প্রযোজ্য, এটি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে সাধারণ আমেরিকানরা বিরক্তি প্রকাশ করেছে।’ এই আপত্তিতে ব্লাড একমত হয়ে বলেন, ‘আমি এই কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারছি। তারা পূর্ব পাকিস্তানের সেরা আমেরিকান কর্মকর্তা। আমেরিকান সম্প্রদায়ের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা তাদের মাধ্যমে প্রতিধ্বনিত হয়। তাদের মতামতগুলো গ্রহণ করলেও, যতদিন আমি এই পদে প্রিন্সিপাল অফিসার আছি ততদিন তাদের বিবৃতিতে সই করা আমার পক্ষে উপযুক্ত মনে হয় না।’
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল কনসাল জেনারেল ব্লাড আরেকটি টেলিগ্রাম পাঠান যেটায় লেখা হয়, নগ্নভাবে ‘গণহত্যা’ চলছে। বাছাই করে হিন্দুদের বিশেষভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। শুরু থেকেই হিন্দু গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া, ঢাকায় হিন্দু ছিটমহল এবং পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে হিন্দুদের গুলি করার প্রত্যক্ষদর্শী আমেরিকান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সদস্যরা। অনেকে আবার পরবর্তী প্রভাব প্রত্যক্ষ করেছেন, যা আজ সারা ঢাকায় দৃশ্যমান।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, শরণার্থী ও পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে সংযুক্ত সমস্যাগুলো তদন্ত করার জন্য সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির উপকমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর এডওয়ার্ড এম. কেনেডি ১৯৭১ সালের ১ নভেম্বর কমিটির কাছে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন, যেখানে বলা হয়েছে “এর চেয়ে পরিষ্কার কোনো কিছুই নয় বা এর চেয়ে সহজে নথিভুক্ত করা সম্ভবও নয় যে, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পদ্ধতিগত আতঙ্কের এক অভিযান চালিয়েছিল যার ফল ছিল গণহত্যা। আমেরিকান সরকারের কাছে ফিল্ড রিপোর্ট, অগণিত প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকের ভাষ্য, বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট ও অতিরিক্ত তথ্য উপলব্ধ উপকমিটির নথিতে আতঙ্কের ক্রমাগত রাজত্ব যা পূর্ব বাংলাকে গ্রাস করে তার বর্ণনা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি আঘাত করা হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের। তাদের জমি ও দোকান লুট করা হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং কিছু জায়গায় হলুদ ছোপ দিয়ে ‘এইচ’ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সবই ইসলামাবাদ থেকে সামরিক আইনের অধীনে সরকারিভাবে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধ শেষ হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭২ সালে “দ্য ইভেন্টস ইন ইস্ট পাকিস্তান” শিরোনামে প্রকাশিত একটি আইনি সমীক্ষায় আন্তর্জাতিক আইন কমিশনের সচিবালয় বলেছে, ‘হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছিল এবং তারা হিন্দু বলে তাদের বাড়িঘর এবং গ্রামগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছিল।’
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৯৪ সালে যুদ্ধ কভার করার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক সিডনি শ্যামবার্গ লিখেছেন, “পরবর্তী সময়ে আমি পাকিস্তানের কীর্তিকলাপ সরাসরি দেখার জন্য সড়কপথে দেশটি ভ্রমণ করি। শহরের পর শহরে আমি এমন সব জায়গা দেখেছি যেখানে মৃত্য কার্যকর করার জন্য এলাকা নির্দিষ্ট ছিল। যেখানে লোকজনকে বেয়নেট ও বুলেট দিয়ে বা পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কয়েকটি শহরে প্রতিদিন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক মাস পরেও (১৯৭২ সালের জানুয়ারি) মানুষের হাড়গোড় রাস্তার ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। রক্তের দাগযুক্ত পোশাক এবং মানুষের চুলের অংশগুলো মৃত্যুর এ উপত্যকায় হত্যাকাণ্ডের স্বাক্ষী হয়ে পড়েছিল। অল্পবয়সী শিশুরা মাথার খুলি নিয়ে ভীতিকর খেলায় মেতেছিল। অন্যান্য অনুস্মারকের মধ্যে পাকিস্তানি মুসলিম সেনাবাহিনীর বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া হিন্দুদের বাড়িতে হলুদ রঙের ‘এইচ’ আঁকা ছিল।”
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচ ‘বাংলাদেশ গণহত্যার ৫০তম বার্ষিকী স্মরণে ঘোষণাপত্রে’ বলেছে, ‘পূর্ব পাকিস্তানে তাদের স্বাধীনতাবিরোধী দখলদারত্বের ৯ মাসে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালি সংস্কৃতি ও পরিচয়বাহক কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, অধ্যাপক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, লেখক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও তাদের প্রতিনিধিদের নিপীড়ন, নির্যাতন এবং হত্যা করেছে।’
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর প্যারিসে স্বাক্ষরিত গণহত্যার অপরাধের প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশন এ ঘোষণা দেয় যে, গণহত্যার অর্থ হলো, সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে, একটি জাতি, জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠী ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত নিম্নোক্ত যেকোনো কাজ; ক) গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা; (খ) গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা; (গ) ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে শারীরিক ধ্বংস ঘটাতে গণনা করা জীবনের গোষ্ঠীগত অবস্থার উপর আঘাত করা; (ঘ) গোষ্ঠীর মধ্যে জন্ম রোধ করার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা আরোপ করা; (ঙ) গোষ্ঠীর শিশুদের জোর করে অন্য গোষ্ঠীতে স্থানান্তর করা।
এবং নিম্নলিখিত কাজগুলো শাস্তিযোগ্য হবে: (ক) গণহত্যা; (খ) গণহত্যার ষড়যন্ত্র; (গ) গণহত্যা করার জন্য প্রত্যক্ষ ও জনসাধারণকে প্ররোচনাদান; (ঘ) গণহত্যা করার চেষ্টা; (ঙ) গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকা।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচ ও লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়েছে; এবং
যেহেতু ভবিষ্যত প্রজন্ম প্রয়োজনে, নিহতদের স্মৃতি রক্ষার্থে ও আগামীতে নৃশংসতা রোধের স্বার্থে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার ইতিহাস স্মরণ ও সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; সেহেতু এটি সমাধানকল্পে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস:
১। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সংঘটিত নৃশংসতার নিন্দা জানায়।
২। বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নৃশংসতাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
৩। এ ধরনের নৃশংসতায় অগণিত মানুষের মৃত্যু ও যন্ত্রণার কথা স্মরণ করে ও তাদের কষ্টের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে।
৪। স্বীকার করে যে, নিজেদের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য সমগ্র জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মীয় সম্প্রদায় দায়ী নয়৷
৫। ১৯৭১ সালে জাতিগত বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সংঘটিত নৃশংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানায়।
৬। ব্যাপক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পাকিস্তান সরকারকে এ ধরনের গণহত্যায় তার ভূমিকা স্বীকার করে নিতে, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যেকোনো অপরাধী যারা এখনও জীবিত আছেন তাদের বিচারের আহ্বান জানায়; এবং
৭। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধির জন্য এবং জাতীয়, জাতিগত বা ধর্মীয় পটভূমি নির্বিশেষে এ অঞ্চলে বসবাসকারী সব মানুষের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, ধর্মের স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
সূত্র: www.newsbangla24.com
================
The Bangladesh Genocide of 1971 must not be forgotten. With help from my Hindu constituents in Ohio’s First District, @RepRoKhanna and I introduced legislation to recognize that the mass atrocities committed against Bengalis and Hindus, in particular, were indeed a genocide.
— Rep. Steve Chabot (@RepSteveChabot) October 14, 2022
**********
0 মন্তব্যসমূহ