হিন্দুদের দ্বারা বাংলাদেশের পতাকার অবমাননার অভিযোগ প্রসঙ্গে সত্যি ঘটনা

 

হিন্দুদের দ্বারা বাংলাদেশের পতাকার অবমাননার অভিযোগ প্রসঙ্গে সত্যি ঘটনা


অগ্নিবীর ফ্যাক্টচেক: চট্টগ্রামে জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া পতাকা লাগানো হয়নি ।


প্রযুক্ত ছবিতে স্পষ্ট লক্ষণীয় যে, জাতীয় পতাকার উপরে নয় বরং জাতীয় পতাকার পাশে আলাদা স্ট্যান্ডে লাগানো হয়েছে গেরুয়া পতাকা।


কিন্তু জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া পতাকা লাগানো হয়েছে বলে একটি গুজব ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেটিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রদ্রোহের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে অনেক সনাতনীদের বিরুদ্ধে।


© বাংলাদেশ অগ্নিবীর ৷


সূত্র: অগ্নিবীর ফেসবুক


--- 


বাংলাদেশ অগ্নিবীরের পক্ষ থেকে জাতীয় পতাকার অবমাননা প্রসঙ্গে আরও একটি বক্তব্য-


চট্টগ্রামে লালদিঘী ময়দানে গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল একটি রাষ্ট্রদোহ মামলা হয়েছে যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশ সরগরম। এই মামলা কেন হলো, অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত কিনা সেইসব বিষয় দেখার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। তবে বাদী ফিরোজ আহমেদের মামলার যে 'Key Point' সেটির বিষয়ে একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা জরুরী মনে করি।


People's Republic Of Bangladesh Flag Rules 1972 এ বাংলাদেশের পতাকার সাথে অন্য কোন রঙীন পতাকা এবং অন্য কোন দেশের পতাকা উড়াতে হলে কী কী নিয়ম অনুসরণ করতে হবে এবং বাংলাদেশের পতাকাকে কোন কোন অবস্থায় ব্যবহার করা যাবেনা সে সব বিষয়ে বলা রয়েছে। বাংলাদেশে অতীত সময়ে এবং সাম্প্রতিক সময়ের অনেকগুলো ঘটনা উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে সেই নিয়মগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।


১) সেদিন লালদিঘী ময়দানে আমরা দেখেছি বাংলাদেশের পতাকার পাশে একটি পৃথক বাঁশের দণ্ডে একটি গেরুয়া পতাকা পাশাপাশি কিছুটা আড়াআাড়িভাবে লাগানো হয়েছে একটি পাকা স্মৃতিস্তম্ভ দেয়ালের বিপরীতে। দেখা গেছে উড্ডীয়মান বাংলাদেশের পতাকাটি ডানে এবং গেরুয়া পতাকাটি বামে ছিল ( সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কোন মানুষের জন্য বাংলাদেশের পতাকা বামে এবং গেরুয়া পতাকা ডানে)


People's Republic Of Bangladesh Flag Rules 1972 এর ৭ নং অনুচ্ছেদে "পতাকার সম্মান বজায় রাখা" শিরোনামে ৬ নং উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-

"যেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকা অন্য পতাকার সহিত আড়াআড়িভাবে কোন দণ্ডে দেয়ালের বিপরীতে উড্ডয়ন করা হয় সেইক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকা অন্য পতাকার ডানদিকে আড়াআড়িভাবে থাকিবে (আড়াআড়িভাবে যুক্ত পতাকা দুইটির দিকে মুখ করিয়া দণ্ডায়মান ব্যক্তির বামদিকে)"


অর্থাৎ জাতীয় পতাকা উত্তোলন বিধি অনুসারে উড্ডয়নকারীরা কোন আইন লঙ্ঘন করেন নি।


ফিরোজ আহমেদের করা মামলার অভিযোগে তিনি বলেছেন-


"লালদীঘি মাঠের সমাবেশের দিন নিউ মার্কেটে জাতীয় পতাকার ওপর ‘সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের’ গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা স্থাপন করে দেওয়া হয়, যা রাষ্ট্রের ‘অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার শামিল’।"


  • ১) ইস্কনের কোন পতাকা নেই, গেরুয়া পতাকা ইস্কনের পতাকা নয়। ঐতিহ্যগতভাবেই সনাতন ধর্মে সাধুসন্তের পোশাক বা ধর্মীয় কাজে বা কোন কিছু নির্মাণে/ডিজাইনল গেরুয়া রং ব্যবহার করা হয়। তাই সনাতন ধর্মীয় যে কোন অনুষ্ঠানে গেরুয়া রং এর পতাকা ব্যবহার করা হয়।
  • ২) সাম্প্রদায়িক বলতে আমরা বুঝি অন্য ধর্মকে ইংগিত করে কোন নেতিবাচক বক্তব্য। সনাতন ধর্মীয় ধর্মগুরু বা বড় সংস্থারা যেমন রামকৃষ্ণ মিশন, ইস্কন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, সৎসঙ্গ আশ্রম, স্বামী নারায়ণ মঠ, শংকর মঠ ইত্যাদির ধর্মগুরুরা কখনও অন্য রিলিজিয়নের বিষয়ে কোন শব্দই উচ্চারণ করেন এটাই অতি দূর্লভ, আর সেই দূর্লভ ঘটনা যখন ঘটে তারা সাধারণত সেই রিলিজিয়নের গুণগান গান। ইস্কন কখনও অন্য রিলিজিয়ন নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য জানিয়েছে, তাদেরকে ধর্মান্তরিত হবার নিমন্ত্রণ দিয়েছে এমনটি দেখা যায়নি। এই কাজগুলো আবার ফিরোজ আহমেদের আশেপাশের লোকেরা নিয়মিতই করে থাকেন। তাহলে কীভাবে ইস্কন সাম্প্রদায়িক হলো?
  • ৩) ৩ নং পয়েন্টটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ফিরোজ আহমেদ দাবী করেছেন গেরুয়া পতাকা বাংলাদেশের পতাকার উপরে লাগানোয় পতাকার অবমাননা হয়েছে, অখণ্ডতাকে অস্বীকার করা হয়েছে।ইতিমধ্যেই আপনারা ছবিতে দেখেছেন পতাকা পাশাপাশি আলাদা স্ট্যান্ডে লাগানো হয়েছে খানিকটা আড়াআড়িভাবে, তাই উনার ৩ টি দাবীই অসত্য। 


এবার আসা যাক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই জাতীয় পতাকা নিয়ে কিছু ঘটনা ও People's Republic Of Bangladesh Flag Rules 1972 অনুযায়ী সে সব ঘটনার আইনি ভিত্তি।


২) বাংলাদেশে প্রায়ই দেখা যায় বিশেষ করে আন্দোলনে বা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকার উপরে দাঁড়িয়ে কিছু মানুষ নিজ রিলিজিয়নের প্রার্থনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন। পতাকাটা নিচে রাস্তায় বা মাঠে বিছানো এবং এর উপরে দাঁড়িয়ে তারা প্রার্থনা করছেন।


People's Republic Of Bangladesh Flag Rules 1972 এর ৭ নং অনুচ্ছেদে "পতাকার সম্মান বজায় রাখা" শিরোনামে ১৫ ও ১৬ নং উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-


  • ১৫) পতাকা কোন ব্যক্তি বা জড়বস্তুর দিকে নিম্নমুখী করা যাইবে না।
  • ১৬) পতাকা কখনোই উহার নিচের কোন বস্তু যেমন মেঝে, পানি বা পণ্যদ্রব্য স্পর্শ করিবেনা।


অর্থাৎ এটি স্পষ্ট পায়ের নিচে, রাস্তায় বা মাঠে বিছিয়ে তার উপর দাঁড়িয়ে কোন কার্যক্রম যেমন প্রার্থনা ইত্যাদি করা বেআইনি। কিছুদিন আগে খুব সম্ভবত মতিঝিল আইডিয়ালের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল যেখানে সবাই ফিলিস্তিনের পতাকা ধরে পোজ দিচ্ছে এবং বাংলাদেশের পতাকা একদিকে কোণায় খুব দৃষ্টিকটুভাবে মাটিতে পড়ে ছিল। এটি আইনত ও নৈতিকত উভয়ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন বিধির পরিপন্থী।


আবার কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি ভাইরাল হলো একই স্ট্যান্ডে নিচে ফিলিস্তিনের পতাকা, মাঝখানে বাংলাদেশের পতাকা এবং উপরে কালো একটি পতাকা যা দেখতে প্রায় হুবহু নিষিদ্ধ আন্তর্জাতিক জংগী সংগঠন আইসিস এর মতো। পতাকাটা দেখতে কাদের মতো, সেটা কত বড় অপরাধ সেদিকে না ই গেলাম, কিন্তু বাংলাদেশের পতাকার উপরে অবস্থিত পতাকা সম্পর্কে People's Republic Of Bangladesh Flag Rules 1972 এর ৭ নং অনুচ্ছেদে "পতাকার সম্মান বজায় রাখা" শিরোনামে ৭ নং উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-


" বাংলাদেশের পতাকার উপরে অন্য কোন পতাকা বা রঙীন পতাকা উত্তোলন করা যাইবেনা।" 


অর্থাৎ এই কাজটিও ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন বিধির পরিপন্থী। 


এছাড়াও ফুটবল বিশ্বকাপের সময় অনেকেই একই স্ট্যান্ডে বাংলাদেশের পতাকার উপরে বিভিন্ন দেশের পতাকা লাগান। এটিও আইন পরিপন্থী কাজ। তবে ইতিমধ্যেই দেখলাম বাংলাদেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলন বিধির পরিপন্থী কাজগুলো নিয়মিতই দীর্ঘসময় ধরে হয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের দেশে বিষয়টি কেউ আমলে নেননা। ফিরোজ আহমেদ সাহেবের উচিত সেইসব আসল আইন লংঘন সমূহ নিয়ে মামলা করা। তা না করে ৩ টি মিথ্যা কথা সম্বলিত এই মামলা বরং এটাই কি প্রমাণ করেনা যে ইস্কন নয় বরং ফিরোজ আহমেদ সাহেবরাই সাম্প্রদায়িক? 


সূত্র: ফেসবুক


-০-০-০-০-০-০-


মুসলিমদের দ্বারা তথা ইসলামী অজুহাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার কয়েকটি চিত্র নিচে দেয়া হল:- 


বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে ইসলামী কলেমা লেখা কালো পতাকা ও নীচে ফিলিস্তিনের পতাকা
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে ইসলামী কলেমা লেখা কালো পতাকা ও নীচে ফিলিস্তিনের পতাকা



ইসলামের অজুহাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে পায়ের নীচে পদদলিত করা হয়েছে
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে পায়ের নীচে পদদলিত করা হয়েছে ইসলামী কারণে

ইসলামের অজুহাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে পায়ের নীচে পদদলিত করা হয়েছে। মুসান্না আল ফাইয়াজ নামক ব্যক্তির এই পোস্টে লেখা

জাতীয়তাবাদের পতাকা মুমিনের বুকে নয়, পায়ের নিচেই শোভা পায়


বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে পায়ের নীচে পদদলিত করে একজন মুসলিম নামাজ পড়ছেন
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে পায়ের নীচে পদদলিত করে একজন মুসলিম নামাজ পড়ছেন



বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে পায়ের নীচে পদদলিত করে চারজন মুসলিম নামাজ পড়ছেন
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে পায়ের নীচে পদদলিত করে চারজন মুসলিম নামাজ পড়ছেন



মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে মাটিতে রেখে দেয়া হয়েছে
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে মাটিতে রেখে দেয়া হয়েছে


মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে মাটিতে রেখে দেয়া হয়েছে (ছবির ডানপাশে, গোল চিহ্নিত)। আর সম্মানের সাথে উচ্চে তুলে ধরা হয়েছে ইসলামী কলেমা লেখা কালো পতাকা। দুইহাতে তুলে ধরা হয়েছে প্যালেস্টাইনের পতাকা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ