হৃদয় পালের ঘটনাটা একই স্ক্রিপ্টে তৈরি। এ পর্যন্ত যত হিন্দু কিশোর তরুণদের ফেইসবুক পোস্টে ইসলাম ও নবী নিয়ে পোস্টের জেরে তৌহদী জনতা উত্তেজিত হয়েছে সব ক’টার স্কিপ্ট একটাই। হৃদয় পাল ছয় মাস আগে একই অভিযোগে তৌহদী জনতার রোষে জেলে যায়। তখনো সে দাবী করেছিল আইডিটা তার হ্যাক হয়েছে। সে এরকম পোস্ট দেয়নি। তারপর থেকে সে মোবাইল ফোন আর ব্যবহার করছিল না। ছয়মাস পর স্কুল থেকে সে কলেজে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু হৃদয় পালের পিছনে নেকড়া লেগেছিল। সেদিন সে কলেজে গেলে একটা পুরোনো পোস্ট কেউ শেয়ার করে তার বিরুদ্ধে অন্যান্য নেকড়েদের উত্তেজিত করা হয়। তারা চাপা গড়গড় শব্দ তুলে আশু আক্রোশে ফেটে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেদিন সে কলেজে যাবার পর কি ঘটেছিল হৃদয় পালের কাদিরদী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান মোল্যা ডয়চে ভেলেকে বলেন,
"পুরো কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রসহ কয়েক হাজার লোক উত্তেজিত অবস্থায় সমবেত হলে তার জীবন রক্ষায় আমি তাকে আমার কক্ষে আশ্রয় দিই। তাকে আশ্রয় না দিলে উত্তেজিত লোকজন তাকে মেরে ফেলতো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে আমিই সেনাবাহিনীকে খবর দিয়ে তাদের হাতে তুলে দিই। তারা তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়।”
ওয়াও! এই হচ্ছে আপনাদের কোমলমতি ধর্মভীরুর সংজ্ঞা? এদেশের মানুষ নাকি শান্তশিষ্ট ল্যাজ বিশিষ্ট। ইংরেজেরা এসেই নাকি দাঙ্গা লাগিয়েছিল। নেকড়ের দল কিছু শুনলেই কোন সত্য মিথ্যা যাচাই করতে চায় না? কারণ হিন্দুদের প্রতি জাতক্রোধ! আহমদ ছফা থেকে আহমাদুল্লাহ- মানে অশিক্ষিত মাদ্রাসার মুসলমান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বইটই পড়া মুসলমান- হিন্দু বিরোধী ন্যারেটিভে হিন্দুদের ঐতিহাসিক ভিলেন বানিয়ে মানুষের মনে যে ঘৃণার জন্ম দেয়া হয়েছে এখন নাম শুনলেই হয়। নইলে যে পোস্টের জন্য তারা হৃদয় পালের বলে তাকে মারতে এসেছিল সে আইডিই তার নয়! স্থানীয় সাংবাদিক কাজী আল আমীন বলেন,
"যে আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে, সেই আইডির নাম কৃষ্ণা দাস রাহুল। আর ওই ছেলের নাম হৃদয় পাল। আমি এটা নিয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছি যে, কৃষ্ণা দাস রাহুল নামে ফেসবুক আইডি সে চালায় কিনা। আমাকে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি যে ওই আইডি তার।”
আসলে নেকড়ে দলের মূল লক্ষ্য কিন্তু রসরাজ, উত্সব মন্ডল, টিটো রায় বা হৃদয় পাল নয়। ব্যক্তিগত কোন সম্পর্ক থেকে এসব ঘটছে না। একই স্ক্রিপ্ট থেকে ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে একটাই কারণে, যেন এরকম একের পর এক ঘটনা ঘটলে এদেশের হিন্দুরা দেশ ছাড়ার জন্য মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। দেশটা একশোভাগ মুসলমানদের দেশ করার একটা মিশন এটা। হৃদয় পালের গ্রেফতারের ভিডিও দেখে বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আমাকে মেসেজে বলেছেন তাদের দেশে বসবাস করা নিয়ে রীতিমত আতংক সৃষ্টি হচ্ছে। কবে কোথায় কে তার নামে আইডি খুলে ফাঁসাবে কি ঘটবে কেউ জানে না। এই “তৌহদী জনতা”কে দেশের সেনাবাহিনী পর্যন্ত সন্মানিত চোখে দেখে! তারা উত্তেজিত হয়ে পড়লে সরকার প্রধান পর্যন্ত আইসব্যাগ নিয়ে ছুটে! অতিতে এসব ঢের দেখা হয়েছে। এর যেন কোন শেষ নেই সমাধানও নেই। কেউ চায়ও না যেন শেষ হোক!
0 মন্তব্যসমূহ