এখন একটু আলোকপাত করতে চাই, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের অবস্থা নিয়ে। আপনারাও হয়তো এই বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে খেয়াল করে থাকবেন। মাত্র কয়েকটা ঘটনার কথা উল্লেখ করলাম এখানে।
এটা এখন আর অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে দেশ ধীরে ধীরে ইসলামিকরণের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এসব জায়গা থেকে পরিত্রাণের উপায় হতে পারতো সুন্দর শিক্ষা ও শিক্ষকদের মাধ্যমে। অথচ বর্তমান সময়ে আমাদের শিক্ষকেরা সুকৌশলে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।
একটা সামান্য ঘটনা বলি-
আমার বান্ধবীর ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া স্টুডেন্টকে তাদের ম্যাডাম ক্লাসে বলেছে মুসলিমরা কেবল মুসলিমদের সাথেই বন্ধুত্ব করবা। অমুসলিমরা কাফের এবং এদের সাথে বন্ধুত্ব করলে পাপ হয়। অথচ এই ম্যাডাম ঢাকার নাম করা খ্রিস্টান মিশনারী স্কুলের শিক্ষিকা। এই অল্প বয়সেই এদেরকে এভাবে বিদ্বেষমূলক আচরণ শেখানো হচ্ছে, এরা বড় হলে কেমন প্রকৃতির হবে ধারণা করে নিতে কষ্ট হয় না।
এটাতো গেল স্কুলের ঘটনা। এবার আসি মানুষ গড়ে তোলার অন্যতম প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের কথায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বান্ধবীর ভাষ্যমতে-
তার ডিপার্টমেন্টে কয়েকজন শিক্ষক আছেন যারা প্রকাশ্যে হিন্দুদের নিয়ে আজেবাজে কথা বলেন। একইসাথে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে এবং হিন্দু মেয়েদের দিকে তারা বিশেষ(***) নজর দেয়।
কিছুদিন আগেই ভিকারুননিসা থেকে পড়ে এসেছে এক দিদি তার শিক্ষা জীবনে ঘটে যাওয়া পুরোটা ঘটনা জেনেছি। কি ট্রমার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন তা ভাবাও যায় না। তিনি কিভাবে এসব উতরেছেন, তা তিনি ছাড়া কেউ বুঝতে পারবেন না। পুরোটা সময় কেবল হিন্দু হওয়ার দরুন পদে পদে অপদস্ত ও মানসিকভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। উনাকে আমার অন্তর থেকে শ্রদ্ধা; যিনি এতটা মানসিক যন্ত্রণার মাঝে থেকেও নিজের সেরাটা দিয়ে বের হতে পেরেছেন।
আবার ফিরে আসি মূল ঘটনায়-
আপনারা হয়তো জানেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের হিজাব বিতর্ক নিয়ে হাইকোর্টের আপিল বিভাগ রায় দিয়েছে। সেখানে সুন্দরমতো ব্যাখ্যা দেওয়া আছে কেন পরীক্ষার সময় হিজাব খুলে রাখতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের "কোড অব কনডাক্ট" না মানতে পারলে এখানে পড়ার দরকার কি ছিল?
আদ্ দ্বীন মেডিকেল কলেজে সবাইকে বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধান করতে হয়। কারণ তাদের কোড অব কনডাক্টও এমনই।
আরেকটা বিষয় আপনাদের মনে করিয়ে দেই, কয়েকমাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর, খুব সম্ভবত প্রাণরসায়ন অথবা অনুজীব বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। তিনি মানব কঙ্কালের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের ছবি দেখিয়ে বিভিন্ন আরবি অক্ষরের সাথে মিলিয়ে সেটাকে কোরান সম্মত প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন।
এরকম বহু ঘটনার কথা আমি বলতে পারি। শিক্ষাগুরু যদি এমন কট্টর মানসিকতার হয় তবে শিক্ষার্থীরা কেমন হবে একটু চিন্তা করেন। হিন্দু শিক্ষার্থীরা সেখানে কিভাবে সারভাইভ করে সেটা জাস্ট কল্পনা করেন, কি ভয়ংকর পরিস্থিতি।
শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই না, আপনারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রেও এই বিষয়টি দেখতে পান এবং এগুলোর মুখোমুখি হতে হয় নিয়মিত। যারা এসবের সম্মুখীন হয়েছেন তারাই সবচেয়ে ভালো বুঝবেন, কতটা মানসিক যন্ত্রণা দেয়।
এতকিছু বলার মূল কারণ একটাই, এগুলো সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হলেও সামগ্রিকভাবে সব ঘটনার সারাংশ কিন্তু একই। আমরা খুব সম্ভবত ট্রাপে পড়তে চলেছি, শিক্ষিত মানুষদের ট্রাপে। কৌশলে আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে দমন করার চেষ্টা করে চলেছে তারা। প্রতিটি জায়গায় তারা ইসলামি কায়দা ফলো করানোর চেষ্টায় আছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মত জায়গাতে যখন ধর্ম ঢুকে পড়ে তখন সেটা জ্ঞান বৃদ্ধির চেয়ে বিদ্বেষ বৃদ্ধি করে বেশি। এজন্যই আমরা জাতি হিসেবে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি।
সনাতন ধর্মের চেয়ে শান্তিপূর্ণ ধর্ম খুঁজে পাওয়া কঠিন ,আমরা নমনীয়তা ও উদারতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু এই উদারতার সুযোগ নিয়ে তারা আমাদেরকেই বিপদে ফেলছে, মানসিক অশান্তি দিচ্ছে। সুতরাং আমাদের উচিত শাস্ত্রজ্ঞানের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে কিছু বাস্তব জ্ঞানও প্রদান করা। যাতে কেউ এরকম সিচুয়েশনে পড়লে নিজেকে ধরে রাখতে পারে। এজন্যই আমাদেরকে পারিবারিকভাবে বাচ্চাদের ছোট্ট থেকে এসব বিষয় অল্প অল্প জ্ঞান দিতে হবে, যাতে বড় হয়ে এরা বাস্তবতা বুঝতে পারে।
সনাতনীরা পুনরায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হয়ে উঠবে; সাহসে, শৌর্যে, বীর্যে, দানে, ধ্যানে, শিক্ষায়, সবকিছুতেই। পরিবর্তন আসবেই; কেবল আমরা একটু পরিবর্তন হলেই।
সংগৃহিত
0 মন্তব্যসমূহ