প্রেম করায় তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়

প্রেম করায় লালমনিরহাটে হিন্দু তরুণকে কুপিয়ে হত্যা

 

আদালতে জবানবন্দি

নিহত তরুণ হলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার কিং বিদ্যাবাগিস গ্রামের বিনোদ চন্দ্র রায়ের ছেলে স্বপন চন্দ্র রায়।


প্রথম আলো । প্রতিনিধি, লালমনিরহাট, বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯


মেয়ের অভিভাবকেরা নিষেধ করার পরেও প্রেম করায় খুন হয়েছেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের কিং বিদ্যাবাগিস গ্রামের তরুণ স্বপন চন্দ্র রায় (২৫)। এ ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলার চার আসামি আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক  জবানবন্দিতে গত সোমবার এসব কথা বলেছেন।


গতকাল বুধবার লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে স্বপন চন্দ্র রায় হত্যার বিষয়ে এসব তথ্য দিয়েছে। বিকেল চারটায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) মোহাম্মদ হাসান ইকবাল চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালমনিরহাট সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোজাম্মেল হক।


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এএসপি(এ-সার্কেল) মোহাম্মদ হাসান ইকবাল চৌধুরী বলেন, 


সদর উপজেলার কিং বিদ্যাবাগিস গ্রামের বিনোদ চন্দ্র রায়ের ছেলে স্বপন চন্দ্র রায় একজন দিনমজুর। এলাকার এক মেয়ের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে মেয়ের বাবা তাঁর মেয়ে ও স্বপন চন্দ্রকে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলেন। এরপরও তাঁরা প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে আসছিলেন। ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় স্বপন চন্দ্র তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়ির সামনে যান। মেয়ের মা তাঁদের একসঙ্গে দেখে রাগারাগি করেন। মেয়ের বাবা বাড়িতে ফিরলে মেয়ের মা বিষয়টি তাঁকে জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়ের বাবা প্রতিবেশী আবদুল মজিদ ওরফে উড়ি মজিদ (৪৮), মাহবুবার রহমান (৩৯) ও নরেশ চন্দ্র রায়কে (৪২) ডাকেন। এই সময় মেয়ের বাবা স্বপন চন্দ্র রায় হিন্দু হওয়ায় তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।


 সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এএসপি মোহাম্মদ হাসান ইকবাল আরও বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী আবদুল মজিদ, মাহবুবার রহমান ও নরেশ চন্দ্র রায় ৭ জানুয়ারি রাত নটার দিকে স্বপন চন্দ্রকে তাঁর বাড়ির সামনে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গ্রামের এক ব্যক্তির কৃষিজমিতে যায়। সেখানে মেয়ের বাবা গোশত কাটার চাপাতি নিয়ে হাজির হন। এই সময় মাহাবুবার স্বপনকে পেছন দিক থেকে ধরেন এবং মেয়ের বাবা চাপাতি  দিয়ে স্বপনের মাথায় দুটি কোপ দেন। পরে মেয়ের বাবা আবার স্বপনের মাথার বাঁ পাশে আরও দুটি কোপ দেন। এতে স্বপন মারা যান। পরদিন স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং সেখান থেকে স্বপনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় স্বপনের বড় ভাই গোবিন্দ চন্দ্র রায় ওই দিন লালমনিরহাট সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।


এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম বলেন, 


গত সোমবার লালমনিরহাটের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মেহেদী হাসান মণ্ডলের আদালতে মেয়ের বাবা ও তাঁর প্রতিবেশী আবদুল মজিদ স্বপন হত্যার সঙ্গে জড়িতে থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত মঙ্গলবার একই আদালতে এ মামলায় গ্রেপ্তার অপর দুই আসামি মাহাবুবার রহমান ও নরেশ চন্দ্র রায়ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ