ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন, বিক্ষুব্ধদের হামলায় নিহত ২

আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ কালীমন্দির ও প্রতিমা
আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ কালীমন্দির ও প্রতিমা

এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ডিসি বলেছেন, সকালে বিজিবি মোতায়েন করা হবে।


ফরিদপুর প্রতিনিধি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, Published : 18 April 2024, 11:52 PM, Updated : 18 April 2024, 11:52 PM


ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় একটি মন্দিরে আগুনের ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ও পিটুনিতে পাশের একটি স্কুলের নির্মাণকাজে থাকা দুই শ্রমিকের প্রাণ গেছে; আহত হয়েছেন আরো পাঁচজন।


বৃহস্পতিবার রাতে ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী এলাকায় এ ঘটনার পর সেখানে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলেছেন ফরিদপুরের ডিসি কামরুল হাসান তালুকদার। 


তিনি বলেন,


“পঞ্চপল্লী মন্দিরে আগুনের ঘটনা ঘটে। এরপর স্থানীয় জনতা পাশের পঞ্চপল্লী স্কুলে অবস্থানরত নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়।”


রাত সোয়া ২টার পর ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দুইজনের মৃত্যুর খবর দেন ডিসি কামরুল।


তিনি বলেন,


 “একজন (হাসপাতালে) আাসর সাথে সাথেই মারা গেছে। আরেকজন এইমাত্র মারা গেলেন।


“আর দুইজন সিরিয়াসলি ইনজুরড। তাদের আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যদি ঢাকায় রেফার করার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা ঢাকায় রেফার করব। আর মধুখালী হাসপাতালে তিনজন ভর্তি আছে।”


হতাহতদের পরিচয় জানতে চাইলে ডিসি বলেন, 


“সবাই ফরিদপুর মধুখালীরই বাসিন্দা, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি। পরিবারের লোকজন আসতেছে, তখন নিশ্চিত হওয়া যাবে।”


স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লীর কালী মন্দিরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুনের ঘটনা ঘটে। ওই মন্দিরের পাশেই পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে নির্মাণশ্রমিকরা টয়লেট নির্মাণের কাজ করছিলেন।


বিক্ষুব্ধ জনতা তখন তাদের ওপর হামলা চালায়। তাতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।


তবে মন্দিরে কীভাবে আগুন লেগেছে সে বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম নিশ্চিত হতে পারেনি।


ঘটনার পর পরই সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকেও সক্রিয় দেখা যায়।


পুলিশ সুপার মোরশেদ আলম রাত দেড়টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, 


“পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে।”


ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন সাংবাদিকদের বলেন, 


“মাগরিবের নামাজ পড়ে আমি মাঠে বসেছিলাম। কিছু সময় পরে এই ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অজিত বাবু আমাকে ফোন দেন। বললেন, আপনি দ্রুত আসেন, এখানে মন্দিরে আগুন দিছে। কে বা কারা? বললেন, এখানে লেবাররা আগুন দিছে। তাদেরকে ধরে রাখছি।


“আমি তাৎক্ষণিকভাবে এখানে আসলাম। এসে দেখি হাজার হাজার জনতা। আমি জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু দেখলাম যে পরিস্থিতি বেগতিক। এখানে আসলে প্রশাসন ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব না।"


চেয়ারম্যান বলেন, 


“আমি সরে গিয়ে প্রশাসনকে ফোন দিই, ইউএনওকে ফোন দেই। পরে প্রশাসন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতটুকুই।”


স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন আসার পর তারাও জনতার বাধার মুখে পড়ে। পরে জেলা পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।


জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-মধুখালী সার্কেল) মিজানুর রহমান বলেন, 


“মন্দিরে কে বা কারা আগুন দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ লোকজন নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে, মারপিট করেছে।”


ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লী এলাকায় রাতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।


মধ্যরাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুরো এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংবাদকর্মীরা সেখানে রয়েছেন। তবে স্থানীয় লোকজনকে খুব একটা দেখা যায়নি। পুলিশ কিছুক্ষণ পর পর ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছিল।


জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তালুকদার জানান, তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের জন্য বলা হয়েছে। তারা শুক্রবার সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখতেই বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে।


পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জেলা পুলিশের সদস্যরা ছাড়াও রাজবাড়ী থেকেও পুলিশ সদস্যরা এসেছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।


সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ