কেন আমরা ওঁ তৎ সৎ বলব - তুষার কান্তি সরকার

কেন আমরা ওঁ তৎ সৎ বলব - তুষার কান্তি সরকার

কেন আমরা ওঁ তৎ সৎ বলব সেটা শ্রীকৃষ্ণের বাণী থেকেই জেনে আসি। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার শ্রদ্ধা-ত্রয়-বিভাগ যোগ অর্থাৎ ১৭ অধ্যায়ে ২৩ থেকে ২৮ তম শ্লোক গুলো পড়লেই বিষয়টি পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যাবে। চলুন দেখি এই ৬ টি শ্লোকে কি বলা হয়েছে।


২৩ নাম্বার শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন,


  • (শাস্ত্রে) ‘ওঁ তৎ সৎ’ এই তিন প্রকারে পরব্রহ্মের নাম নির্দেশ করা হইয়াছে; এই নির্দেশ হইতেই পূর্বকালে বেদবিদ্‌ ব্রাহ্মণ, বেদ ও যজ্ঞ সৃষ্ট হইয়াছে। ২৩
  • এই হেতু ব্রহ্মবাদিগণের যজ্ঞ, দান ও তপস্যাদি শাস্ত্রোক্ত কর্ম সর্বদা ‘ওঁ” উচ্চারণ করিয়া অনুষ্ঠিত হয় । ২৪
  • যাঁহারা মোক্ষ কামনা করেন, তাঁহারা ফল কামনা ত্যাগ করিয়া ‘তৎ’ এই শব্দ উচ্চারণপূর্বক বিবিধ যজ্ঞ তপস্যা এবং দানক্রিয়ার অনুষ্ঠান করেন। ২৫
  • হে পার্থ, সদ্ভাব ও সাধুভাব অর্থাৎ কোন বস্তুর অস্তিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব নির্দেশার্থ সৎ শব্দ প্রযুক্ত হয়; এবং (বিবাহাদি) মঙ্গল কর্মেও সৎ শব্দ ব্যবহৃত হয়। ২৬
  • যজ্ঞ, তপস্যা ও দানে স্থিতি অর্থাৎ নিষ্ঠা বা তৎপর হইয়া থাকাকেও সৎ বলে এবং এই সকলের জন্য যে কিছু কর্ম করিতে হয় তাহাও সৎ বলিয়া কথিত হয়। ২৭
  • হে পার্থ, হোম, দান, তপস্যা বা অন্য কিছু যাহা অশ্রদ্ধাপূর্বক অনুষ্ঠিত হয়, সে সমুদয় অসৎ বলিয়া কথিত হয় । সে সকল না ইহলোকে না পরলোকে ফলদায়ক হয়। ২৮


এছাড়াও ওঁ তৎসৎ-এর মাহাত্ম্য লিখে গিয়েছিলেন আদিগুরু শঙ্করাচার্য যখন মহাভারত থেকে শ্রীম্দভগবদ্গীতা পৃথক করেছিলেন, সেই সময় একটি লাইন তিনি গীতার প্রত্যেক অধ্যায়ের সাথে সংযুক্ত করে যান। যার প্রথম লাইনটিই ছিল ওঁ তৎসৎ। এবং এই লাইনটি গীতার যথার্থতা বোধগম্য করতে সহায়তা করে৷ 

তা হল, 

“ওঁ (অ উ ম) তৎ সৎ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে অমুকযোগো অমুকধ্যায়ঃ”


পরমাত্মার নাম ওঁঙ্কার স্মরণ করে শ্রীকৃষ্ণ যোগশাস্ত্র দ্বারা অর্জুনকে উপনিষদের ব্রহ্মবিদ্যা প্রদান করছিলেন।


স্রষ্টা সৃষ্টির মূল উৎস। সৃষ্টির মাধ্যমেই তাহার পরিচিতি। সৃষ্টির মধ্যেই তাহার পরিপুর্ণতা। জীব ও জগৎ লইয়াই সৃষ্টি। ঈশ্বর, জীব ও জগৎ এই তিন মিলিয়া এক অখণ্ডতা অর্থাৎ ব্রহ্মের সমগ্রতা। এই সমগ্রতার প্রকাশক “ওঁ তৎ সৎ”- মন্ত্র।


ওঁ = প্রণব, ব্রহ্ম। তৎ = জীব। সৎ = জগৎ। ব্রহ্মের শ্রেষ্ট প্রকাশ বেদ। জীবের শ্রেষ্ট প্রকাশ ব্রহ্মজ্ঞ। জগৎ কর্মময়। কর্মের শ্রেষ্ট প্রকাশ যজ্ঞ। সুতরাং “ওঁ তৎ সৎ” মন্ত্রে বেদ, ব্রহ্মজ্ঞ ও যজ্ঞ বুঝায়। চলুন শাস্ত্র কি বলছে দেখি,


তৈত্তিরীয় উপনিষদের ১ম অধ্যায়, ৮ম অনুবাক, ১ম শ্লোকে বলা হয়েছে 


“ওঙ্কার দ্বারাই সমস্ত শব্দ-জগৎ পরিব্যপ্ত। ‘ওম’ এই শব্দটি সম্মতিজ্ঞাপক বলিয়া পরিচিত। ‘ওম শ্রবণ করাও’ এই বলিয়া যাজ্ঞিকেরা দেবতাদিগকে মন্ত্র শ্রবণ করাইয়া থাকেন; সামবেদীরা ‘ওম’ উচ্চারণপূর্বক সামগান করিয়া থাকেন। স্তোত্র পাঠকগণ ‘ওম শোম’ বলিয়া শস্ত্রনামক স্তোত্রসমূহ পাঠ করেন। যজুর্বেদিগণ প্রতিকর্মে ‘ওম’ উচ্চারণ করেন। ব্রাহ্মণগণ ‘ওম’ বলিয়া বেদাধ্যয়ন আরম্ভ করেন।”


ছান্দোগ্য উপনিষদ, ১ম অধ্যায়, ১ম খন্ডের ১ম শ্লোকে বলা হয়েছে, “ওম’ এই অক্ষরকে উদগীথরূপে উপাসনা করিবে; কারণ প্রথমে ‘ওম’ শব্দ উচ্চারণ করিয়া পরে উদগীথ গান করা হয়। 


একই উপনিষদের ১ম অধ্যায়, ১ম খন্ডের ৯ম শ্লোকে বলা হয়েছে, ওম’ উচ্চারণ করিয়া শ্রবণ করান হয়; ‘ওম’ উচ্চারণ করিয়াই মন্ত্রপাঠ করান হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ