৩৩৭ নম্বর কালভার্ট - এলিজা বিনতে এলাহী

প্র ছুটির দিনে, জীবন যেমন, প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১

ঐতিহ্যের সন্ধানে রেলের শহর সৈয়দপুরে গিয়েছিলাম গত জুনে। চষে বেড়িয়েছি পুরো নীলফামারী জেলা। সে যাত্রায় এক করুণ ইতিহাসের মুখোমুখি হয়েছিলাম গোলাহাটে গিয়ে। এলাকাটা সৈয়দপুর শহরের কাছেই। গোলাহাটেই রেললাইনের ৩৩৭ নম্বর কালভার্ট। এই কালভার্টের কাছেই ট্রেনের ৪টি বগির ৪৪৮ জন ট্রেনযাত্রীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, যা ট্রেন গণহত্যা নামে পরিচিত।

 
সৈয়দপুরের গোলাহাটে ঐতিহাসিক ৩৩৭ নম্বর কালভার্ট ছবি: লেখক
সৈয়দপুরের গোলাহাটে ঐতিহাসিক ৩৩৭ নম্বর কালভার্ট ছবি: লেখক

কালভার্টের কাছে রেললাইনের ধার দিয়ে যখন হাঁটছিলাম, বারবার রেলপথের দিকে তাকিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করছিলাম সেই দিনের ভয়াবহতা, অসহায় মানুষদের আকুতি, নারী-শিশুর চিৎকার। এখানেই শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। গোলাহাটের সেই জায়গা এখনো কিছুটা নীরব, রেলপথের দুই ধারে এখনো বিস্তীর্ণ মাঠ। পড়ন্ত বিকেলের নীরবতায় বুকের মাঝের হাহাকারটা টের পাচ্ছিলাম। চোখ বন্ধ করে অনুভব করার চেষ্টা করছিলাম নিদারুণ সেই সময়কে। 


সেটা ১৯৭১ সালের ১৩ জুনের ঘটনা। কদিন ধরে সৈয়দপুর শহরে মাইকে একটি ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল। পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছিল ওই ঘোষণা। বলা হচ্ছিল, শহরে যেসব হিন্দু মাড়োয়ারি আটকা পড়ে আছেন, তাঁদের নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ জন্য একটা বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেনটি সৈয়দপুর রেলস্টেশন থেকে ভারতের শিলিগুড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।


গোলাহাটে ট্রেন গণহত্যায় শহীদ স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ
গোলাহাটে ট্রেন গণহত্যায় শহীদ স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ

কথামতো সকাল ১০টার দিকে সৈয়দপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রী নিয়ে ট্রেন যাত্রা করে। হিন্দু মাড়োয়ারিদের আলাদা করে ৪টি বগিতে ওঠানো হয়। কিছুক্ষণ পর ট্রেনটি গোলাহাট এসে থেমে যায়। পাকিস্তানি সেনারা ট্রেনের ভেতরে গিয়ে হত্যা শুরু করে। কেউ কেউ জানালা দিয়ে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বেঁচে আছেন এখনো। 


গোলাহাট হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথম আলোর সৈয়দপুর প্রতিনিধি এম আর আলমের একটি প্রতিবেদনে কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা পড়ে ভয়ে শরীর কাঁপছিল। সেই দিনের সেই সব মানুষের আহাজারি, চিৎকার যেন শুনতে পাচ্ছিলাম জায়গাটি পরিদর্শন করার সময়। 


ওই হত্যাযজ্ঞে শিশু, বৃদ্ধ, নারীরাও রেহাই পাননি। বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়, ওই ট্রেন হত্যাযজ্ঞে ৪৪৮ জনকে একে একে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ৩৩৭ নম্বর কালভার্টের আশপাশের জায়গায় ছিল রক্ত আর লাশ। পরবর্তী সময়ে গোলাহাটের যে স্থানে স্মৃতিসৌধ করা হয়েছে, সেখানে পড়ে ছিল স্তূপীকৃত সর্বাধিক মৃতদেহ।


সূত্র: প্রথম আলো

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ