চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তীর মব সন্ত্রাসের শিকার হওয়া প্রসঙ্গে কয়েকজনের মতামত

৪ঠা জুলাই ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী তাঁর পদোন্নতির পরীক্ষা দেবার জন্য ভিসির কক্ষে গেলে কতিপয় ইসলামী দল দ্বারা মব সন্ত্রাসের শিকার হন। এই বিষয়ে কয়েকটি পত্রিকার খবর পড়ুন এখানে


এদিকে তার ওপর হামলা হাঙ্গামার খবরে ফেসবুকে বেশ কয়েকজন নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের মতামত প্রকাশ করা হলো:-



----------


Zulkarnain Saer

জুলকারনাইন শায়েরের ফেসবুক পোস্ট
জুলকারনাইন শায়েরের ফেসবুক পোস্ট

তিনি ২০২২ সালের ২৫শে জুন তারিখে ড. কুশল বরণ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে কল্পিত অভিযোগের একটি পোস্ট শেয়ার করেন। পোস্টটি শেয়ার করে তিনি লিখেছেন:-


আজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যা ঘটেছে সেটা এই কুশল বরণ চক্রবর্তীকে কেন্দ্র করে, জানা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কুশল'কে পদোন্নতি দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, যা ছাত্ররা প্রত‍্যাখান করে।


সূত্র

----------


Elias Hossain

ইলিয়াস হোসেনের ফেসবুক পোস্ট
ইলিয়াস হোসেনের ফেসবুক পোস্ট


একটিভিস্ট 'ইলিয়াস হোসেন' তার ফেসবুক একাউন্টে ড. কুশল বরণ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মব উস্কে দিয়েছেনন। তিনি তার নিজের ভেরিফাইড একাউন্টে কুশল বরণ চক্রবর্তীর বিভিন্ন ছবি পোস্ট করে লিখেছেন:


ওরে যেখানে পাবেন সেখানেই আপ্যায়ন করার অনুরোধ থাকলো৷


সূত্র: ফেসবুক


----------


আবরার শাহরিয়ার


তিনি লিখেছেন:-


শিক্ষক গেছেন পদোন্নতির ভাইভা বোর্ডে এটেন্ড করতে। প্রশাসনিক ভবনের সামনে রিক্সা থেকে নামতেই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকা মব সন্ত্রাস উনাকে ধাওয়া করে। দৌড়ে গিয়ে শিক্ষকটি আশ্রয় নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তা ভিসির কক্ষে। মবও এবার ভিসির কক্ষে উপস্থিত হয়। এক ভিসি ও দুই প্রো ভিসির সামনে উত্তেজিত হয়ে কটূক্তি করতে থাকে বারবার। মব সন্ত্রাসীরা কতটা উত্তেজিত ও মারমুখী ভঙ্গিতে ছিলো সেটা ভিডিওতে দ্রষ্টব্য। সেই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তা তিন ভিসির দায়িত্ব কি ছিলো না আগে উনাদেরই সহকর্মী, স্বজন আক্রান্ত শিক্ষকটিকে সেইভ করা? মব থেকে আলাদা করে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে দরকারে আলাদা কক্ষে মব সন্ত্রাসিদের দাবিদাওয়া নিয়ে মুখোমুখি বসা? অথচ কি ঘটলো? আমরা অবাক হয়ে দেখলাম মূল ভিসি আরাম কেদারায় হেলান দিয়ে বসে আছেন। উনার দৃষ্টি মাথার উপরে কড়িকাঠের দিকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মাথার উপরের ছাদে কড়িকাঠ না থাকায় উনি সম্ভবত শীতলীকরণ যন্ত্রের সক্ষমতা নিয়ে ভাবছিলেন। 

আরেক উপ ভিসিকে দেখা গেলো দিকশূন্যহীন হয়ে ডাইনে বামে হাতপা ছুড়াছুঁড়ি করতে।


সবচেয়ে মারাত্মক ও মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারণা হলো এরপর। উদ্যত, উত্তেজিত মব সন্ত্রাসীদের  রোষানল ও ক্ষোভাগ্নি উদগীরণ হচ্ছিল দীর্ঘক্ষণ ধরে। এক পর্যায়ে আক্রান্ত শিক্ষক ডক্টর কুশল বরণ চক্রবর্তী পরিস্থিতি লঘু করতে উদ্ধত শিমারদের কিছু একটা বলতে চাইলেন। হাসি মুখেই তীর্যক অভিযোগ ও অবমাননার ব্যাখ্যা দিতে চাচ্ছিলেন হয়তো। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই কালো পাঞ্জাবি পরিহিত প্রো ভিসি কামাল উদ্দিন গর্জে উঠলেন। গর্জনের অভিমুখ মব নয় বরং সম্মানহানি হওয়া শিক্ষক বরাবর। আঙুল উঁচিয়ে শরীর দুলিয়ে মুখে রক্তিম আভা ফুটিয়ে ' চুপ একদম চুপ ' বলে তেড়ে গিয়ে থামিয়ে দিলেন কুশল বরণ চক্রবর্তীরকে! অথচ একই একশান ও এক্সপেশান নেওয়ার কথা ছিল মব সন্ত্রাসী বরাবর। তাহলে শিক্ষককেও জনসম্মুখে নাজেহাল হতে হয় না, আর উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের আনিত অভিযোগেরও একটা শান্তিপূর্ণ সুরাহা হয়। কিন্তু বিচারক নিজেই যদি দাঁড়িপাল্লা হাতে নিয়ে নিপীড়কের পক্ষে রায় দেওয়ার মনস্থির করে রাখে তাহলে এমন অভূতপূর্ব, অচিন্তনীয় ও অবিশ্বাস্য দৃশ্যের মঞ্চায়ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। 


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকে যা হলো এবং ভিসিগং যেভাবে নজিরবিহীন অমেরুদণ্ডী প্রাণীর ভূমিকায় রোল প্লে করলো, তাতে এই রায় দেওয়াও খুব অযৌক্তিক হবে না যে ডক্টর কুশল বরণ চক্রবর্তীর সাথে ঘটে যাওয়া বহুমুখী প্রোপাগাণ্ডার উপর নির্মিত সফল প্রহসনের পিছনে মূল কুশীলব হিসেবে স্বয়ং ভিসি গংই মূল কলকাঠি নেড়েছে।


সূত্র

এই পোস্টে বলা ভিডিওটি রয়েছে এখানে

----------

Imtiaz Mahmood


প্রখ্যাত আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে লিখেছেন:-


কুশল বরণ চক্রবর্তীকে আমি পছন্দ করি না। কেন করি না? কারণ তিনি সম্পদে হিন্দু নারীর উত্তরাধিকার নিয়ে আমাদের যে দাবী বা প্রস্তাব সেটার বিরোধ করতে গিয়ে আমার বন্ধুদের আক্রমণ করেছেন। বাচনিক আক্রমণ, শারীরিক আক্রমণ নয়- তথাপি আক্রমণের ধরণ খুবই তীব্র ছিল। পুলক ঘটকের মনে থাকার কথা, কেননা যতদূর মনে পড়ে পুলক ওর আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য ছিলেন।  

 

তথাপি কুশল বরণের সাথে যে অন্যায় হয়েছে সেটার নিন্দা করি, প্রতিবাদ করি। দাবী করছি, কুশলকে যারা হেনস্থা করেছে ওদের বিচার করা হোক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজেদের শৃঙ্খলা বিধি আছে, সেই বিধান অনুযায়ীই ওদের বিচার করা দাবী করছি। একজন অধ্যাপক তাঁর প্রমোশন বিষয়ক সভায় যোগ দিতে এসছেন সেখানে তাঁকে বাঁধা দেওয়া, গালাগালি করা, ভয় দেখানো এটা তো অন্যায়। 


না, কুশল আওয়ামী লীগের সমর্থক হতে পারে, নাও হতে পারে, সেটা তো ওর চাকুরীর প্রমোশনের জন্যে কোন প্রাসঙ্গিক তথ্য নয়। আর সেটা যদি প্রাসঙ্গিক তথ্য হয়ও, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই বিষয়টা বিবেচনা করবে, ছাত্ররা কেন তাঁকে এইভাবে হেনস্থা করবে। ছাত্ররা যদি তাঁকে না চায়, ওরা আন্দোলন করুন, বিক্ষোভ করুন, স্মারকলিপি প্রদান করুন ভিসি বরাবর। সেগুলি ঠিক আছে। কিন্তু রাজনৈতিক মতামতের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হয়রানী করা তো ঠিক না। 


এখানে আরেকটা বিষয় আছে যেটা চাইলেও আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। আমি যতটুকু জানি কুশল বরণ সেই অর্থ আওয়ামী লীগের সমর্থক না, তিনি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবীতে আন্দোলনের সাথে যুক্ত, এটা নিয়ে লেখালেখি করেন, বক্তৃতা দেন, টক শো করেন। এইটাই তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে দেশে সর্ব মহলে এবগ্ন দেশের বাইরে। অনুমান করি এই কারণেই ওর উপর এই হামলা। 


কুশল বরণ চক্রবর্তীর উপর আক্রমণের নিন্দা করি। দোষীদের বিচার দাবী করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও বহুমুখী মতপ্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করুন। যেই কথাগুলি আমি পছন্দ করিনা, কুশল এবং অন্য সকলে যেন সেই কথাগুলি স্পষ্ট করে নির্ভয়ে বলতে পারে সেইটা নিশ্চিত করুন। আমি ওদের কথার বিরোধ করবো, কিন্তু ওদেরকে আঘাত করবেন, আমি গিয়ে ওদের পাশে দাঁড়াবো।


সূত্র

----------

Pulack Ghatack


ইমতিয়াজ মাহমুদের উপরের পোস্টটি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করে পুলক ঘটক লিখেছেন:-

পুলক ঘটকের ফেসবুক পোস্ট
পুলক ঘটকের ফেসবুক পোস্ট


নারীবিরোধী সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে কুশলরাও তালেবান, হেফাজত, জামাতের কাছাকাছি –মধ্যযুগীয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কুশল চক্রবর্তী একজন হিন্দু; বাংলাদেশের বিপন্ন সংখ্যাঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। আক্রমণকারীরা এর বিপরীত। 


কুশলকে টার্গেট করা হয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন নেতা হিসেবে। যে কারণে চিন্ময় কৃষ্ণদাসকে অন্যায়ভাবে জেলে রাখা হয়েছে, সে কারণেই কুশলের উপর আঘাত করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক আঘাত। 


বাংলাদেশে নিপীড়িত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পক্ষে কুশলের সাহসী উচ্চারণ আছে, লড়াই আছে। একারণে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদীরা তাঁর উপর ক্ষিপ্ত। তাঁর উপর অন্যায় ও অপরাধমূলক এই আক্রমণের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 


উগ্রবাদ আত্মঘাতী। কুশল চক্রবর্তী মরবে না; উগ্রবাদের অভ্যুত্থান বাংলাদেশকে আত্মঘাতী করবে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় "জয় বাংলা" বলে ঘুরে দাঁড়াও মানুষ।


সূত্র

----------


সুষুপ্ত পাঠক


কুশল বরণ চক্রবর্তী বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা নিয়ে সরব হওয়ার পর তাকে আরএসএস বিজেপির এজেন্ট বানানোর জন্য আমার দেশ, জুলকারনাইন সায়ের চেষ্টা করছেন।  আমার ধারণা কুশল বরণ চক্রবর্তী একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে পারেন এই মুহূর্তে। কারণ তিনি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে যে হিন্দু গণহত্যা হয়েছিল তা নিয়ে লেখালেখি করেছেন সেই বিষয়টিও উঠে এসেছে। এটা নিয়ে লেখালেখি করার কারণে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের গবেষকদের হাতে আমিও বিজেপি আরএসএস এজেন্ট হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন অস্বীকার বিষয়ে  জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠে সব মত পথের মানুষের মাঝে। 


কুশল চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথের ছবি দেখিয়ে তার উপর মব হওয়াকে জাস্টিফাই করা বা মবকে ন্যায্য করার চেষ্টা যদি সঠিক হয় তাহলে আসিফ নজরুলের আফগান ফেরত মুজাহিদ হারুন ইজহারের সঙ্গে মিটিংয়ের ছবি নিয়ে কি করা উচিত?  কুশল তো বলেছেন তিনি ভারতে পড়াশোনা করার সময় একটা পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগি আদিত্যনাথের সঙ্গে তার ছবি তোলা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলা যদি হয় আরএসএস এজেন্ট তাহলে হারুন ইজহারের সঙ্গে ছবি তোলাকে কি বলা হবে? হারুন ইজহার তো প্রধানমন্ত্রী না! কুশল চক্রবর্তী বলেছেন, যোগি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, তার সঙ্গে দেওবন্ধের মাওলানারা গিয়ে ছবি তোলেন তাহলে কি তারা আরএসএস এজেন্ট? 


আসলে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করাই হচ্ছে সে হিন্দুত্ববাদী! একই চিত্র। আওয়ামী লীগ আমলে পীযুষ বন্দোপাধ্যায় ও রানা দাশগুপ্ত ভারত সফরের সময় বিজেপির সঙ্গে এক মিটিংয়ে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার ছবি ছাপা হওয়ার পর লীগের প্রতিক্রিয়া এমনই ছিল। মুনতাসীর মামুন জনকণ্ঠে এটাকে এজেন্ট রাজনীতি বলেছিলেন। এখন তফাত ডাইরেক্ট মব দিয়ে ঠান্ডা করে দেয়া হয়। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মামলা দিয়ে ঠান্ডা করা হয়েছে। এবার কুশলের পালা। কিছু বোকা লোক প্রশ্ন তুলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কুশলের উপর মব হামলার পর শিক্ষক নেটওয়ার্ক কেন কথা বলছে না। তা শিক্ষক নেটওয়ার্কের কি ধর্ম নাই? তারা কি মুসলমান না? 


সূত্র

Post a Comment

0 Comments