আমাদের অর্থনীতি : 06.11.2016
অনির্বাণ বড়ুয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. ছায়েদুল হকের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফুঁসছে সোস্যাল মিডিয়া। ফেসবুকে অনেকেই এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দেখা গেছে অভিমান মিশ্রিত প্রতিক্রিয়া।
অর্চনা দাস সিকদার নামে একজন লিখেছেন,
‘এদেশে মালাউন একটা গালি হয়েই রয়ে গেলাম! আজও কেউ আমাদের মানুষ ভাবতে পারলনা!’
ফেসবুকে মালাউন লিখে সার্চ দিলেই বের হয়ে আসে অনেকের স্ট্যাটাস। সেখানে ধর্মীয় উস্কানিমূলক নানান কথা বলতে দেখা গেছে অনেককে। তবে চলমান ঘটনায় মন্ত্রী বা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের এমন আপত্তিকর কথাবার্তাই প্রথম নয়।
একজন লিখেছেন (নাম গোপন), ‘মালাউনের বাচ্চা’, ‘ডান্ডি ফট্টাশ’, ‘ডেডাইয়ার ফুয়া’ এ সমস্ত গালি শুনে শুনে তো জীবনের চব্বিশ বছর কাটিয়ে দিয়েছি। ছোটবেলা থেকে শুনতে শুনতে প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে গেছি, গায়ের চামড়া গ-ারের চামড়া করে ফেলেছি, নিজেকে নিজভূমে পরবাসী ভেবেছি। কাজেই মন্ত্রী ছায়েদুল হক যখন ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলে গাল দেয় তখন আর নতুন করে আর কি প্রতিক্রিয়া দেখাবো? কি হবে প্রতিবাদ করে? এই গালাগালগুলো তো আমার পিতৃপুরুষ আর উত্তরপুরুষের কপালে ছাপ্পা মারা আছে। মালাউন মানে অভিশপ্ত। আর এই দেশে হিন্দু হয়ে জন্মানো তো অভিশাপই বটে!
এদিকে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সুশান্ত দাস গুপ্ত যিনি আওয়ামী লীগার বলেই পরিচিত তিনিও নিজ দলের মন্ত্রীর এমন মন্তব্যে কষ্ট পেয়েছেন বলে লিখেছেন নিজ স্ট্যাটাসে। তিনি লিখেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো নেতা যখন মালাউন গালি দেয়, তার কষ্ট আমি জানি। আমি নিজে এর ভুক্তভোগী- যদিও কোনো বিচার পাইনি আমি। উলটো আমার অনেক প্রিয় অসাম্প্রদায়িক মানুষকে দেখেছি তাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে!
তিনি আরও লিখেছেন, মন্ত্রীর মুখে মালাউন গালি দেশের অসাম্প্রদায়িক সব মানুষের মনে আঘাত দিয়েছে বলেই বিশ্বাস করি। আসুন, প্রতিবাদ করি। আপনার প্রতিবাদ হয়তো বঙ্গবন্ধু কন্যার কানে কোনো না কোনোভাবে পৌঁছাবে; আর বঙ্গবন্ধু কন্যা এসব সাম্প্রদায়িক মানুষকে আসকারা দিবেন না বলেই আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
সেই সঙ্গে নাসিরনগরের ইউএনও সম্পর্কে খবর নিয়েছেন বলেও লিখেছেন তিনি। তিনি লিখেন, নাসিরনগরের ইউএনও সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে দেশে ফোন দিছিলাম। জানলাম ভাইসাবের বাড়ি সুনামগঞ্জে; এমনিতে নাকি ভালো মানুষ; সৎ অফিসার বলেই পরিচিত। তবে মন্ত্রী ছায়েদুলের আসকারায় তার মাথা খারাপের প্রবণতা লক্ষণীয় ছিল বেশ কিছুদিন ধরে।
এদিকে মন্ত্রীর এমন মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াও। তিনি তার ফেসবুকে লিখেন,
মাছমন্ত্রীকে যত দেখছি তত মুগ্ধ হচ্ছি। আগেকার দিনে বাঙালি রেগে গেলে নাকি ইংরেজিতে কথা বলত, এখন মালাউন বলে। কে যে মালাউন আর কে নয়, তা-ই ভেবে পাই না। আমি ষোল কোটি অভিশপ্ত মানুষ দেখি।
এদিকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হেনস্তা করার এ শব্দকে অভিধান থেকে বাতিল করার দাবি উঠেছে। একজন লিখেছেন, মালাউন শব্দটি বাংলা একাডেমির অভিধানে সংযেজিত করে আমরা পাকিস্তানিদেরই অনুসরণ করছি। শব্দটি বাতিলসহ অন্যকে উদ্দেশ করে উচ্চারণ করলে শাস্তি বিধানের দাবি জানাচ্ছি। অন্তত জয় বাংলার দেশে।
বাংলা একাডেমির অভিধানেও আরবি এই শব্দের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সেখানে এর অর্থে বলা আছে, লানতপ্রাপ্ত, অভিশপ্ত, বিতাড়িত, কাফের ও মুসলিম কর্তৃক ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোককে দেওয়া গালিবিশেষ। সম্পাদনা: হাসিবুল ফারুক চৌধুরী
0 মন্তব্যসমূহ