৪ঠা জুলাই ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী শিক্ষক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী তাঁর পদোন্নতির পরীক্ষা দিতে গিয়ে ইসলামী দলগুলোর ছাত্রসংগঠন কর্তৃক মব আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এই ঘটনায় বাংলাদেশের কয়েকটি পত্রিকার খবর প্রকাশ করা হলো।
চবিতে শিক্ষককে ঘিরে বিক্ষোভ, ‘মব’ সৃষ্টির অভিযোগ
“পদোন্নতি বোর্ডে গিয়ে আমি জঘন্য একটা ঘটনার শিকার হয়েছি। তারা আমার সাথে মব সন্ত্রাস করেছে,” বলেন অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তী
চবিতে শিক্ষককে ঘিরে বিক্ষোভ, ‘মব’ সৃষ্টির অভিযোগ
চট্টগ্রাম ব্যুরো, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, Published : 04 Jul 2025, 09:34 PM
পদোন্নতি বোর্ডে এক শিক্ষকের উপস্থিতির প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল শিক্ষার্থী।
পরে ওই শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদোন্নতি বোর্ডের কার্যক্রম স্থগিত করার কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে সংস্কৃত বিভাগের দুই শিক্ষকের পদোন্নতি বিষয়ক বোর্ডের সভা ছিল।
এর আগে থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ জানাতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতারের কার্যালয়ে যান।
এক পর্যায়ে পদোন্নতি প্রত্যাশী সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তীও উপাচার্যের কার্যালয়ে উপস্থিত হন। এ সময় উপাচার্যের উপস্থিতিতেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন শিক্ষক কুশল বরণ।
পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক কুশল বরণকে প্রশাসনিক ভবনের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যান। এরপর প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলতে থাকে।
পরে সন্ধ্যায় ওই পদোন্নতি বোর্ড স্থগিত করার ঘোষণা দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ফিরে যান।
ওই ঘটনার সময় উপাচার্যের কার্যালয়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক কুশল বরণকে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে দাবি করে নগরীতে বিক্ষোভও করে একটি সংগঠন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী ‘স্বৈরাচারের দোসর’ এবং ‘মামলার আসামি’। এ ধরনের একজন শিক্ষক কীভাবে পদোন্নতি বোর্ডের সভায় হাজির হয়, সেই প্রশ্ন তাদের।
বিপরীতে শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তীর দাবি, তিনি ‘মবের শিকার’ হয়েছেন। ‘মিথ্যা তথ্য’ ছড়িয়ে তাকে উপাচার্যের সামনে হেনস্তা করা হয়েছে। তার দাবি, তিনি কোনো মামলার আসামি নন।
শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থায় নিয়ে ‘ফ্যাসিবাদের সঙ্গী’ শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনাকারীরা।
তাদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্র শিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ আরো কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনকারীদের একজন শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
“কুশল বরণ চক্রবর্তী আওয়ামী স্বৈরাচারের দালাল। তিনি আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলার আসামি। আজ শিক্ষকদের পদোন্নতি বোর্ডের সভা ছিল, সেখানে তিনি কীভাবে আসতে পারেন? কোনো স্বৈরাচারের ঠাঁই এই ক্যাম্পাসে হবে না।
“কুশল বরণ সাহস কীভাবে পায় সেখানে আসার? কারা তাকে নেপথ্যে থেকে শেল্টার দিচ্ছে? স্বৈরাচারের দালালদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আমরা অবস্থান করছিলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে।”
সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ নামে একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
“পদোন্নতি বোর্ডে গিয়ে আমি জঘন্য একটা ঘটনার শিকার হয়েছি। তারা আমার সাথে মব সন্ত্রাস করেছে।
“আমি প্রশাসনিক ভবনের সামনে যখন সিএনজি থেকে নামি তখন কয়েকজন সেখানে স্লোগান দিচ্ছিল। সিএনজিতে বসা অবস্থায় আমি ভিসি ও প্রোভিসি স্যারকে ফোন দিই। উনারা ফোন না ধরায় আমি উপরে উঠি।”
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেন,
“সেখানে গিয়ে দেখি তারা আগে থেকেই ভিসি স্যারের রুমে আছে। তখন তারা আমাকে ঘিরে ধরে। আমি বলেছি, আসুন একসাথে কথা বলি। যত প্রশ্ন আছে আমি জবাব দিতে চাই।
“কিন্তু তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকে। আমার নামে কোন মামলা নেই। তারা ছাত্র কিনা আমি চিনি না। তবে তাদের আচরণ ছাত্রের মত মনে হয় না। আমি তাদের শান্ত হতে বলেছি। কিন্তু তারা আমার সাথে মব করে। আমাকে বের হতে দেয়নি।”
সন্ধ্যার দিকে ‘নিজ দায়িত্বে’ প্রশাসনিক ভবন থেকে এবং পরে ৭টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বের হন জানিয়ে কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেন, “শুনেছি পদোন্নতি বোর্ড নাকি স্থগিত করা হয়েছে। এখানে সব সম্ভব। ৫০ জন মিলে উচ্চবাচ্য করল আর পদোন্নতি বোর্ড স্থগিত হয়ে গেল।
“ভিসি স্যার একজন সিনিয়র শিক্ষক। আমিও শিক্ষক। কিন্তু অনেকবার ফোন করেও আমি ভিসি স্যারকে পরে আর পাইনি। প্রোভিসি স্যারের সাথে কথা বলে আমি প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হয়ে এসেছি।”
আলিফ হত্যা বা এ সংক্রান্ত কোনো মামলার আসামি নন জানিয়ে কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেন,
“ওই ঘটনার সময় আমি চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ছিলাম। এবং সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটিও নিয়েছিলাম চিকিৎসার জন্য। আমি চট্টগ্রামে ছিলামই না। আমার নামে কোন মামলা নেই।”
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আবু নাসিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
“শুক্রবার বন্ধের দিনে পদোন্নতি বোর্ডের সভা সাধারণত হয় না। কিন্তু আজ সেই সভা কেন বসানো হলো আমরা জানি না। খবর পেয়ে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল দলের শিক্ষার্থীরাই প্রশাসনিক ভবনে যাই।
“তখন আমরা প্রশাসনের কাছে জানতে চাইছিলাম, কেন শুক্রবার বোর্ড বসালেন এবং কুশল বরণের মত একজনকে বোর্ডে ডাকলেন। তারা বিভিন্ন অজুহাত দেবার চেষ্টা করেন। এসময় কুশল বরণ হাজির হন ভিসি স্যারের রুমে।”
আবু নাসিম বলেন,
“তখন আমরা ক্ষুব্ধ হই। কক্ষে ভিসি-প্রোভিসি থাকাকালে তিনি কীভাবে ভিসির রুমে ঢোকেন? এরপর আমাদের শিক্ষার্থীদেরই একপক্ষ উনাকে সেইভ করে অন্য রুমে নিয়ে যায়। তিনি সেখানেই ছিলেন।
“এরপর আমরা নিচে নেমে যাই। আরো দেড় ঘণ্টা পর আমরা ফটকে তালা দিই। পরে ভিসি স্যার প্রতিনিধি পাঠিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করেন। প্রশাসন আশ্বাস দেয় যে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”
গত বছরের ৪ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে একটি মৌন মিছিল হয়েছিল জানিয়ে আবু নাসিম বলেন,
“যারা ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং যারা স্বৈরাচারের দোসর তাদের সবার বিরুদ্ধে ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে, এটা ছিল আজ আমাদের অন্যতম দাবি। প্রশাসন সে বিষয়ে আশ্বাস দেওয়ায় আমরা আজ আন্দোলন শেষ করেছি।”
বিকালে আন্দোলনকারীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকেও দেখা গেছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুশল বরণ চক্রবর্তীর নামে কিছু ঘটনা উঠে আসে এবং ছাত্রদের দাবির মুখে আজকের পদোন্নতি বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে।”
ঘটনার বিষয়ে জানতে উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার এবং উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তারা ধরেননি।#
সূত্র: বিডিনিউজ২৪
----------
চবিতে শিক্ষকের পদোন্নতির সাক্ষাৎকার ঘিরে হট্টগোল, প্রশাসনিক ভবনে তালা
![]() |
প্রসাশনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা |
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০০:০৩
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কুশল বরণ চক্রবর্তী নামে এক শিক্ষকের পদোন্নতির সাক্ষাৎকারকে ঘিরে ব্যাপক হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ের ভেতর এ ঘটনা ঘটে। ওই শিক্ষককে নিয়ে ছুটির দিনে পদোন্নতি বোর্ড বসায় প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদোন্নতি বোর্ডের কার্যক্রম স্থগিত করার কথা জানায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুর আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শুরু হয় এ বিক্ষোভ। পরে সাড়ে ৩টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের তিনটি গেটে তালা দেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা, ‘বাহ! ভিসি চমৎকার, স্বৈরাচারের পাহারাদার’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জেলে ভর’ স্লোগান দেন।
সাক্ষাৎকার দিতে আসা কুশল বরণ চক্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি সনাতনী জাগরণ জোট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সঙ্গে যুক্ত। শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে তার সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপকে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার ছিল।
কুশল বরণ চক্রবর্তীর অভিযোগ, তাকে পরিকল্পিতভাবে ‘মব’ সৃষ্টি করে হেনস্তা করা হয়েছে। প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতির সাক্ষাৎকারের খবর পেয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে একে একে এসে উপস্থিত হন শিক্ষার্থীরা। অবস্থান নেন শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ আরও কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ অবস্থান কর্মসূচি থেকেই বিকাল ৪টার দিকে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়। তারা কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতি বোর্ড বাতিল করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্তের দাবি করেন। এ সময় প্রশাসনের কোনও প্রতিক্রিয়া না দেখে বিকাল ৩টার দিকে ভিসি কার্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে এসে উপস্থিত হন স্বয়ং কুশল বরণ চক্রবর্তী। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী এবং ওই শিক্ষকের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও উচ্চবাচ্য হয়। তখন শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে স্লোগান দিতে থাকে। এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উচ্চবাচ্যের সময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য ও দুই উপ-উপাচার্য। পরে কুশল বরণ চক্রবর্তীর বোর্ড বাতিল ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বেরিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।
জানতে চাইলে কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেন,
‘বিকাল ৩টায় পদোন্নতির সাক্ষাৎকার ছিল। এ কারণে তিনি আড়াইটার দিকে যাই। তবে একটা দল আগে থেকে পরিকল্পনা করে বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করে। কয়েক দিন ধরেই আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল। আমাকে নিয়ে যেসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু আমাকে প্রশ্ন করা হয়নি। আমাকে হেনস্তা করা হয়েছে।’
এদিকে, আজ শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা হাবিবুল্লাহ খালেদ উচ্চস্বরে কথা বলছেন। তার সঙ্গে থাকা অন্যরা হইচই করছেন। তাদের সামনে শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী। উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহইয়া আখতার, সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গত বছর ২৬ নভেম্বর এনামুল হক চৌধুরী নামে একজন চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে হামলার শিকার হন। এ সময়ে তিনি কিরিচের কোপে মাথায় গুরুতর জখম হন এবং তার ডান হাত ভেঙে যায়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে তিনি গত ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণকে প্রধান আসামি করে ১৬৪ জনের নামে মামলার আবেদন করেন। এই মামলার ২০তম আসামি হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তী।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সংগঠক আশিকুর রহমান বলেন,
‘আমরা জানতে পারি, জুলাইয়ের সঙ্গে গাদ্দারি করে প্রশাসন একজন হত্যা মামলার আসামির পদোন্নতি বোর্ড বসিয়েছে। যা কোনোভাবেই জুলাই যোদ্ধারা বেঁচে থাকতে হতে পারে না। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে যাই। তবে সেখানে কুশল বরণ গিয়ে উপস্থিত হন। সে এখানে সংখ্যালঘু কার্ড খেলতে চেয়েছিল, তবে আমরা ওর সঙ্গে কথা বলিনি। আমরা ভিসি, প্রো-ভিসি স্যারকে আমাদের ক্ষোভের বিষয় জানিয়েছি। তারা পরে বোর্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন,
‘আজ যে বোর্ড বসার কথা ছিল সংস্কৃত বিভাগের কুশল বরণ চক্রবর্তী- তার বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সার্বিক বিষয় বিবেচনায় এই বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন,
‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেকোনও ব্যক্তিকে কোর্টের মতো বিচার করতে পারে না। আমরা কারও জেল-জরিমানাও করতে পারি না। এটা আমাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়।’
সূত্র: বাংলাট্রিবিউন
----------
চবি শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে কুশল চক্রবর্তীর পদোন্নতির বোর্ড বাতিল
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ড. কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতি বোর্ড বাতিল করেছে প্রশাসন।
![]() |
চবি শিক্ষক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী (বামে) ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত |
মেহেরিন রিনি, ২১ টা ৩৪ মিনিট, ৪ জুলাই ২০২৫
শুক্রবার (৪ জুলাই) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ড. কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতি বোর্ড বসার কথা ছিলো বিকাল ৩ টায়। এর প্রতিবাদে দুপুর আড়াইটা থেকে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরপর বিকাল ৩ টায় প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয় তারা।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুই উপ-উপাচার্য ও কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের একাংশের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পদন্নোতি বোর্ড বাতিল করে প্রশাসন।
পাশাপাশি আরও তিনটি দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। তারা কুশল বরণসহ ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদের বাকি দোসরদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার দাবি জানায়।
আগামী ২৪ জুলাই সিন্ডিকেট মিটিংয়ের মাধ্যমে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানায় প্রশাসন।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তদের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া এবং ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাইয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে জড়িত সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায়।
এসকল বিষয়ে প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে বিকেল ৫ টায় তালা খুলে দেয় শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গতবছর ২৬ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের কর্মী এনামুল হক চৌধুরী চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীদের হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ২০ নম্বর আসামি হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী।
এ ছাড়াও গতবছর ২৬ অক্টোবর 'বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর গণহত্যা' বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন কুশল বরণ চক্রবর্তী। ভারতের প্রেসক্রিপশনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতারের দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা।
কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদন্নোতি বোর্ডের বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, কুশল বরণের বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে। সংবাদপত্রে ওর বিষয়ে কিছু সংবেদনশীল নিউজ হয়েছে। এজন্য বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে।
উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন,
‘শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে। জুলাই আন্দোলনে যারা আন্দোলন বিরোধী ভূমিকা পালন করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইসহাক ভূঁইয়া বলেন,
হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতির জন্য আজ বোর্ড বসানোর কথা ছিল। এজন্য আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। তার বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও আমরা কুশল বরণ, রন্টু দাসসহ যারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল তাদেরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা ও ৫ আগস্টের মধ্যে বিচারের আওতায় আনার কথা জানিয়েছি। প্রশাসন এসকল দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়।
সূত্র: সময়নিউজ
----------
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে আসা শিক্ষককে ঘিরে হট্টগোল, ‘মব’ সৃষ্টির অভিযোগ
![]() |
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ফাইল ছবি |
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম, আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০: ৫৭
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার দিতে আসা শিক্ষককে বরখাস্তের দাবিতে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
ওই শিক্ষকের নাম কুশল বরণ চক্রবর্তী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। আজ বেলা তিনটা থেকে তাঁর সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপকে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার ছিল। কুশল বরণ চক্রবর্তীর অভিযোগ, তাঁকে পরিকল্পিতভাবে ‘মব’ সৃষ্টি করে হেনস্তা করা হয়েছে। প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাড়িতে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতির সাক্ষাৎকারের খবরে আজ দুপুরের পর থেকেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদকে ওই অবস্থান কর্মসূচিতে দেখা গেছে। এ অবস্থান কর্মসূচিতে থেকেই বিকেল চারটার দিকে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়। তাঁরা কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতি বোর্ড বাতিল করে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্তের দাবি করেন।
এ আন্দোলন চলার মধ্যেই কুশল বরণ চক্রবর্তী সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য উপাচার্যের কার্যালয়ে যান। ওই কার্যালয়েই তাঁর সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা ছিল। কুশল বরণ চক্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি সনাতনী জাগরণ জোট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সঙ্গে যুক্ত।
জানতে চাইলে কুশল বরণ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, বেলা তিনটায় তাঁর পদোন্নতির সাক্ষাৎকার ছিল। এ কারণে তিনি আড়াইটার দিকে গিয়েছিলেন। তবে একটা দল আগে থেকে পরিকল্পনা করে তাঁর বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করে। কয়েক দিন ধরেই তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল।
কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেন,
‘আমাকে নিয়ে যেসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু আমাকে প্রশ্ন করা হয়নি। আমাকে হেনস্তা করা হয়েছে। সহ-উপাচার্য (অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন) উল্টো আমাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন।’
আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা হাবিবুল্লাহ খালেদ উচ্চ স্বরে কথা বলছেন। তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যরা হইচই করছেন। তাঁদের সামনে শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী। উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহইয়া আখতার, সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় উপাচার্য নির্লিপ্তভাবে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ফ্যাসিবাদের সহযোগী ও দোসরদের বিচারের দাবিতে আগেই তাঁরা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। কুশল বরণ চক্রবর্তী অভ্যুত্থানের আগে ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিলেন। পরে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে—এমন অপপ্রচার বিদেশে চালিয়েছেন। তাই তাঁর পদোন্নতির খবরে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মো. শামীম উদ্দিন খান ও সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা কেউ সাড়া দেননি।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন,
মব সৃষ্টি করে হেনস্তার অভিযোগ মিথ্যা। বরং কুশল বরণ চক্রবর্তী চেয়েছিলেন যে তিনি হেনস্তার শিকার হন। এ কারণেই শিক্ষার্থীরা যখন দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলতে গেছে, তখন তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়েছেন। কুশল বরণের আজকের এ অবস্থার জন্য তাঁর অতীত কর্মকাণ্ড দায়ী।
সূত্র: প্রথমআলো
----------
‘আপনাকে আমরা বসিয়েছি, আপনি আমাদের কথা শুনতে বাধ্য’, উপাচার্যকে বললেন শিক্ষার্থীরা
![]() |
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইয়াহইয়া আখতারের কার্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেলে উপাচার্যের কার্যালয়ে, ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া। |
চট্টগ্রাম ব্যুরো ও চবি সংবাদদাতা, প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ | ১৮:৫৮
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগ্বিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, উপাচার্যের কক্ষে তার আসন ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। চলছিল বাগ্বিতণ্ডা। এ সময় একজন বলেন, ‘আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি, আপনাকে আমরা বসিয়েছি। আপনি আমাদের কথা শুনতে বাধ্য।’
শুক্রবার বিকেলের এই ঘটনাটির একটি চার মিনিটের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
জানা যায়, চবি সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতি সংক্রান্ত সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনার সূত্রপাত। সাক্ষাৎকার বাতিল ও শিক্ষককে বরখাস্তের দাবিতে দুপুরের পর থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে তারা উপাচার্য কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক দুই নেতা শাখাওয়াত হোসেন ও তাহসান হাবীব সরাসরি উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দেন। তাহসান হাবীব বলেন,
‘স্যার, আপনাকে আমরা বসিয়েছি। আপনি এখানে নিজ যোগ্যতায় বসেননি।’
এ সময় উপাচার্য প্রতিবাদ করে বলেন, ‘না’,
এরপর ছাত্রনেতারা উচ্চস্বরে চিৎকার শুরু করেন। শাখাওয়াত হোসেন বলেন,
‘এখানে আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি।’
বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তাহসান হাবীব উপাচার্যকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন,
‘আপনি কেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রমোশন দিচ্ছেন? আমাদের রক্তের সঙ্গে, আমাদের বিপ্লবের সঙ্গে বেইমানি করে?’
ঘটনার সময় উপাচার্য উপস্থিত সাংবাদিকদের ফোন বন্ধ রাখতে বলেন। এ বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্যের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এদিকে, নিজের মন্তব্য নিয়ে পরে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাহসান হাবীব। সমকালকে তিনি বলেন,
‘উপাচার্য যোগ্য নন, এমনটা বলিনি। বলতে চেয়েছি, তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসেননি। আন্দোলনের ফসল হিসেবে এসেছে এই প্রশাসন। সেই শহীদের রক্তকে অস্বীকার করলে সেটা আমরা মেনে নেব না। পরবর্তীতে বিষয়টি উপলব্ধি করে আমি উপাচার্যের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।’
এদিকে তাহসান হাবীব বর্তমানে ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে আর জড়িত নন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির বর্তমান আহ্বায়ক তামজিদ উদ্দিন। তিনি বলেন,
‘অন্য একটি সংগঠনের প্রভাব থাকায় তাহসানকে অনেক আগেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
সাবেক শিবির নেতা শাখাওয়াত হোসেনও বলেন, ‘
উত্তেজনার বশে কথাগুলো বলে ফেলেছেন তাহসান। সেভাবে ভেবেচিন্তে বলা হয়নি।’
ভিসি অফিসে উত্তেজিত ব্যক্তি ইসলামী ছাএশিবিরের অফিস সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খালেদ সমকালকে বলেন, ‘আমরা ভিসি অফিসে ঢোকার পরই, স্যারের থেকে ভালো ব্যবহার পায়নি। তারপর আমরা থাকা অবস্থায় কুশল বরণ চলে আসে, তখন আমি উত্তেজিত হয়ে বলি, খুনি কেন আপনার অফিসে আসলো, স্যার।’
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিনই পদত্যাগ করেন উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা, পরিবহন প্রশাসক, প্রক্টরিয়াল বডির ১০ সদস্য ও ১৪টি হলের প্রাধ্যক্ষ। পরে নতুন উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যান। একপর্যায়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। চবি অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার কথা সিনেটের মাধ্যমে। তবে তা দীর্ঘদিন ধরেই উপেক্ষিত। কয়েক মেয়াদ ধরে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় নয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র: সমকাল
----------
----------
0 Comments