1989 সালে প্রফেসর পি.এন.অক (Taj Mahal: The True Story বই এর লেখক) দাবী করেন যে তাজমহল মমতাজ বেগমের সম্মানে নির্মিত প্রেমের সমাধিস্থল নয়,বরং এটা প্রাচীন দেবতা শিব এর মন্দির যেখানে আগ্রার রাজপুতরা পূজা অর্চনা করত।পরে শাহজাহান তাঁর মৃত স্ত্রীর স্মরণে স্মৃতিশালা হিসেবে গড়ে তোলেন। এই বই থেকেই শুরু হয় তাজমহল বিতর্ক। তারপর থেকে প্রচুর কারণ উঠে এসেছে এই বিতর্কের।দেখে নেয়া যাক কারণগুলি।
☢ বিতর্কের কারণসমূহ
1. নাম এবং অস্তিত্বের বিতর্ক
“তাজমহল” নামের উল্লেখ মোগল আমলের (এমনকি সম্রাট শাহজাহানের আমলেও) দলিলাদি ও কোর্টের নথিপত্রে কোথাও নেই।তাছাড়া ওই সময়ে কোন মুসলিম দেশে কোন প্রাসাদ/ভবনের নাম “মহল” রাখার প্রচলন ছিল না।ইউরোপিয়ান পর্যটক(নাম অনির্দিষ্ট) যিনি ১৬৩৮ সালে আগ্রা ভ্রমন করেন (মমতাজ মারা যাওয়ার মাত্র সাত বছর পর) তিনি তার গ্রন্থে সেসময় তাজমহল তৈরির কোন সূত্র বা সেই নিয়ে কোনরূপ সংবাদ উল্লেখ করেননি।
অনেকে বলেন তাজমহল নাম এসেছে মমতাজ মহল থেকে।কিন্তু তার প্রকৃত নাম কখনই মমতাজ বেগম ছিল না। তার প্রথম প্রকৃত নাম ছিল মমতিয়াজ-উল-জামানি।যদি ধরেও নেওয়া হয় তার নাম ছিল মমতাজ বেগম কিন্তু কারো নামের প্রাসাদের নামকরন করতে চাইলে তার নামের প্রথম দুই অক্ষর বাদ দিয়ে (মমতাজ থেকে “মম” বাদ দিয়ে তাজ) নাম রাখার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র তাজমহলের ক্ষেত্রেই দেখতে পাওয়া যায়।
তাজমহল এর প্রকৃত নাম "তেজ মহালয়" যা একটি সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে।এটি অগ্রেশ্বর মহাদেবের মন্দির ছিল যা আগ্রার রাজপুত রাজাদের। পরে রাজা জয় সিং উত্তরাধিকারসূত্রে মন্দিরটি পান। সম্রাট শাহজাহান জয়পুরের মহারাজার (জয় সিং) কাছ থেকে সমাধিসৌধ নির্মাণের জন্য দখল করেন। সম্রাট শাহজাহান তাঁর নিজস্ব দিনপঞ্জীতেও (বাদশাহনামা) উল্লেখ করেছেন যে,জয় সিং এর কাছ থেকে আগ্রার এক চমৎকার প্রাসাদোপম ভবন মমতাজ মহলের সমাধিস্থলের জন্য বেছে নেওয়া হয়। এবং এর জন্য জয় সিংকে অনত্র কিছু জমি দিয়ে দেয় সম্রাট শাহজাহানের।নিচে সেই চুক্তির ছবি দেওয়া হলো এবং শাহজাহান এর পুত্র ওরঙ্গজেবও একটি চিঠিতে লিখেছিল এই বিষয়ে তাও দেওয়া হলো।
2. কার্বন ডেটিং
নিউ ইয়র্কের আর্কিওলজিস্ট মারভিন মিলার (Marvin Miller) যমুনা নদীর তীর সংলগ্ন তাজমহলের দেয়ালের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে যে কার্বন পাওয়া যায় তা সম্রাট শাহজাহনের শাসনামলেরও ৩০০ বছরের পুরানো বলে দাবি করেন।(গবেষণা অনুযায়ী 1152 খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি নির্মিত হয়েছিল তেজ মহালয়)।
(https://www.myindiamyglory.com/.../taj-mahal-shiva.../)
3. প্রবেশমুখ
তাজমহলের প্রবেশমুখ দক্ষিণ দিকে মুখ করা কিন্তু ইসলামিক স্থাপত্য নির্মাণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তা পশ্চিমমুখী হতে হয় অর্থাৎ মক্কার দিকে মুখ করে থাকতে হয়। কিন্তু তাজমহলের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি।
4. মমতাজ বিতর্ক
মমতাজ তার তৃতীয় অথবা চতুর্থতম স্ত্রী ছিল বলে জানা যায়, তবে এই তথ্য নিয়েও বিতর্ক আছে। এবং শাহজাহান এর প্রায় 9 জন(মতান্তরে ১০ এর অধিক) স্ত্রী ছিল এবং অনেক দাসী ছিল।তাহলে হঠাৎ মমতাজের জন্যই তাজমহল কেন?
ভালবাসার গল্প মুলতঃ রূপকথা যা ওই সময়ের লোকদের মুখ থেকে সৃষ্ট।কারন ওই সময়কার কোন সরকারী নথিপত্রে বা গ্রন্থে মমতাজ-শাহজাহানের প্রেমের কথা উল্লেখ নেই।
অনেকের দাবি মমতাজের মৃত্যু অপঘাতে হওয়ায় এই ধরনের সৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত।
মমতাজ কে শাহজাহান বিয়ে করেন 15 বছর বয়সে যখন তার নিজের বয়স ছিল কুড়ি বছর।15 থেকে 38 অর্থাৎ মাত্র 23 বছরের মধ্যে 13 খানা বাচ্চা প্রসব করার পর 14 তম বাচ্চার প্রসব যন্ত্রনায় মমতাজের মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুকে কি অপঘাতে মৃত্যু বলা যায়?
5. মমতাজের কবরস্থান
মমতাজের মোট তিনটি কবরস্থান পাওয়া যায়। একজন ব্যক্তির তিনটি কবরস্থান কিভাবে হতে পারে?
এই কবরস্থান গুলির মধ্যে শিব লিঙ্গের অস্তিত্বকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
6. একাধিক জায়গা গুপ্ত রাখা
তাজমহলের অনেক কামরাই শাহজাহানের আমল থেকেই তালবদ্ধ করে রাখা হয়েছে যা এখনও জনসাধারনের অজানা রয়ে গেছে।
তাজমহলের নিচের একটি বিশাল চেম্বার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে সবদিক থেকে।1934 সালে নিরাপত্তার অভাবে দিল্লির এক ছাত্রদল সেই দরজা খুলে সেখানে বৈদিক সভ্যতা থেকে বর্তমান পর্যন্ত সনাতনী দের বিভিন্ন মূর্তির চূর্ণ অবস্থা দেখতে পান বলে তারা দাবি করেন এবং তারা সেখান থেকে একটি মহাদেব এর ভগ্ন মূর্তির ছবি পর্যন্ত তুলে আনেন।
কিন্তু তখন ব্রিটিশ সরকার কোন গুরুত্বই দেয়নি এই বিষয় এবং স্বাধীনতার পর এই বিষয়ে আলোচনাও বন্ধ হয়ে যায়।
7. অদ্ভুত সিড়ি
তাজমহলের বিভিন্ন অংশে অদ্ভুত সিড়ি দেখা যায়। কোথাও হঠাৎই সিড়ি তিনধাপ এগিয়ে শেষ হয়ে গেছে তো কোথাও একধাপ এর পরই আর কোন ধাপ নেই। মনে করা হয়, এই সিড়িগুলো দিয়েই সেইসব ঘরগুলোতে যাওয়া যেত যেখানে সনাতনী সংস্কৃতির বিভিন্ন চিহ্ন পাওয়া যেতে পারে কিন্তু এই চিহ্ন অপ্রকাশিত রাখার জন্যই এই ধরণের অদ্ভুত কাজগুলো করা হয়েছে।
8. গানের ঘর
মসজিদ ইসলামের জন্ম থেকেই সাইলেন্ট প্লেস হিসেবে পরিচিত সেখানে গান চর্চা করার ঘর আসলো কিভাবে?
- ১.তাজমহল একটি গম্বুজাকৃতি স্থাপত্য কিন্তু ইসলামিক সমাধি চৌকো আকৃতির হয়।
- ২.তাজমহলের শীর্ষে একটি অর্ধাকৃতি চাঁদ আছে। ইসলামিক স্থাপত্যে এই চাঁদটি সাধারণত বাঁকা থাকে। কিন্তু তাজমহলের চাঁদ বাঁকা নয়। এই চাঁদ আসলে হিন্দু দেবতা শিবের সঙ্গে সম্পর্কিত।
- ৩.এছাড়া এই সৌধ চূড়ায় একটি কলসও আছে। সেখানে আমের পাতা এবং উল্টে রাখা নারকেলও আছে। এগুলো হিন্দু প্রতীক। ইসলামী সংস্কৃতিতে ফুল,পশুর প্রতিকৃতি নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরও তাজমহলে এসব ব্যবহার করা হয়েছে।
- ৪. তাজমহল এর বিভিন্ন জায়গায় ত্রিশূলের প্রতিমূর্তি দেখা গেছে।
- ৫. তাজমহল এর বিভিন্ন জায়গায় পশু এবং উদ্ভিদের ছবি দেখা যায় কিন্তু ইসলামে ছবি আঁকা হারাম তার ওপর আবার পশু উদ্ভিদের ছবি??
- ৬. তাজমহল এর ভেতরের উপরের ছাদের দিকে তাকালেই বৈদিক সূর্য দেবতার চিহ্ন দেখা যায়।
- ৭. তাজমহল এর কিছু কিছু জায়গায় বৈদিক ওম মন্ত্রের নিদর্শন পাওয়া গেছে।
- ৮.পাওয়া গেছে গণেশ রেখা এবং গনেশ দেবতার বিভিন্ন ছোট ছোট কারুকার্য।
- ৯. এগুলি ছাড়াও বহু হিন্দু ঐতিহ্যের চিহ্ন পাওয়া গেছে তাজমহল এর মূল সৌধের বাইরেও(আশেপাশের বিভিন্ন গাছপালার মধ্যে বৈদিক শব্দ এর চিহ্ন পাওয়া যায়)
- ১০. এইসব বৈদিক এবং সনাতনী হিন্দু সংস্কৃতির নকশা গুলিকে মিটিয়ে আরবি শব্দ লেখার চেষ্টা করায় হওয়া ক্ষত গুলিকেউ খুব সহজেই শনাক্ত করা যায়।
- 1 ম ভিডিও: https://youtu.be/5bTLvf9TVjM
- 2 য় ভিডিও: https://youtu.be/xQR07ma9luM
- 3 য় ভিডিও: https://youtu.be/QCyyxKBWssk
- 4 য় ভিডিও: https://youtu.be/J_JNKBORv5E
0 মন্তব্যসমূহ