রামায়ণের সবচেয়ে বেশী প্রভাব কোথায়? আপনি যদি ভেবে থাকেন উত্তরটা উত্তরপ্রদেশ কিংবা বিহার হবে তাহলে একদমই ভুল। আপনি হয়তো জানেন না তাহলে, রামের নামে পৃথিবীতে আজও একটা দেশ শাষন হয়!!
হ্যাঁ সত্যিই তাই। রামের নামে, রামরাজ্যকে স্মরণ করে এখনো প্রতিদিন শাসন কার্য চলে থাইল্যান্ডে। আর সত্যি কথা বলতে কি, ভারতের থেকেও আজ রামায়ণের প্রভাব বেশী দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে। ধর্মে বৌদ্ধ হলেও হিন্দু ধর্মের প্রভাব থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ধর্মে অত্যন্ত বেশী। অতীতের শ্যামদেশ কিংবা বর্তমানের থাইল্যান্ড এই পৃথিবীতে ভারতের নিকটতম সাংস্কৃতিক আঁত্মীয়। হিন্দু ত্রিদেব আজও পুজিত সেই দেশে। আর ভগবান বিষ্ণু "ফা নারাই" (নারায়ণ) নামে অনেক থাই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত।
শুধু ইন্দোনেশিয়াতে নয়, থাইল্যান্ডেও গরুড় জাতীয় প্রতীক।
বৌদ্ধমতে রাম বৌদ্ধজাতক। রামের সূর্য/ইক্ষ্বাকু বংশেই গৌতম বুদ্ধ জন্মেছেন বলে মনে করা হয়। আর সেই সূত্রে এবং "ফা নারাই" এর অবতার রূপে রাম এত গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অংশ। আর থাই রামায়ণের ভার্সান "রামাকিন" সেই দেশের জাতীয় মহাকাব্য। আজও সেই দেশে জন্ম-মৃত্যু- বিবাহের অনুষ্ঠানে রামায়ণ পাঠের আসর বসে। আজও সেই দেশের রাজারা রামের নামে, যেমন রামা ১, রামা ২ প্রভৃতি উপাধি নিয়ে বংশপরম্পরায় সিংহাসনে আরোহন করেন। আজও থাই দেশের সাংস্কৃতিক ক্রীড়া মুয়াং থাইয়ের প্রতিযোগিতায় ক্রীড়াবীদরা তিনজনকে স্মরণ করে প্রতিযোগিতা শুরু করেন - বুদ্ধ, নিজের গুরু এবং শ্রী রাম।
থাইল্যান্ডের অসংখ্য শিল্পে - স্থাপত্যে রামায়ণ প্রবল ভাবেই উপস্থিত। থাই নৃত্য কলা থেকে নাটক অনেক কিছুই অনুষ্ঠিত হয় আজও রামায়ণকে কেন্দ্র করেই। আমাদের দেশের অনেক স্থানের নামের সাথে যেমন রামায়ণের কাহিনী জুড়ে আছে। তেমনই সেই দেশেও আছে। সেখানেও অযোধ্যা নগরী আছে, আছে লব পুরী কিংবা কিস্কিন্ধা। নামগুলো অবশ্যই বর্তমানে থাই অপভ্রংশে কিছুটা পরিবর্তিয়।
রামাকিনের গল্প প্রায় মূল রামায়ণের সমান। কিছুটা তামিল কম্বো রামায়ণের প্রভাবে পরিবর্তিত। মূল পরিবর্তনটা সীতাকে নিয়ে। রামাকিন অনুসারে সীতা রাবন আর মন্দোদরীর কন্যা। বিভীষণ ভবিষ্যৎ বানী করেছিলেন এই কন্যার জন্য অনেক বিপদ হতে পারে, সেইজন্য রাবন সীতাকে নদীতে বিসর্জন দেন। আর রাজা জনক তাকে উদ্ধার করে কন্যা রূপে প্রতিপালিত করেন। হনুমান রামাকিনে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য চরিত্র আর সেখানে সে ব্রহ্মচারী নন। এছাড়া বাকি গল্প যেমম সীতা হরন, জটায়ুর যুদ্ধ, সেতু নির্মান প্রভৃতি প্রায় অনুরূপ।
ভাবতেও অবাক লাগে, যখন ভারতে আমাদের রাম এবং রামের লিগ্যাসী নিয়ে প্রতিমূহুর্তে তথাকথিত লিবেরালদের মতাদর্শগত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। দক্ষিণ কিংবা পূর্ব ভারতের একদল স্বার্থন্বেষী মানুষ প্রতিনিয়ত রামকে "উত্তর ভারতের দেবতা" রূপে চরিত্র করে আমাদের এই হাজার হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যকে ভাঙতে চাইছে, তখনই আমাদের থেকেও আরও দক্ষিণ পূর্বের একটা অঞ্চল রামের ঐতিহ্যর মধ্য দিয়ে আজও বহমান আমাদের থেকেও অনেক বেশী করে।
তথ্যঋণ: বই- "রামায়ণ - দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর পদচিহ্ন" লেখিকা: Anita Bose
প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কিত পেইজ থেকে সংগৃহিত
0 মন্তব্যসমূহ