১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের একদিনে সবচেয়ে বেশী বুদ্ধিজীবীকে খুন করা হয়েছিল যে তারিখে - আহমাদ ইশতিয়াক

 

সবচেয়ে বেশী বুদ্ধিজীবীকে খুন করা হয়েছিল যে তারিখে - আহমাদ ইশতিয়াক

13 April 2025


আচ্ছা বলুন তো মুক্তিযুদ্ধের কোন দিনে পাকিস্তানী বাহিনী সবচেয়ে বেশী বুদ্ধিজীবীকে হ'ত্যা করেছিলো?


অনেকে বলবেন ১৪ ডিসেম্বর। কেউ কেউ বলবেন ২৫শে মার্চ রাতে! কিন্তু দুটির একটিও সঠিক নয়! শুনলে বিস্মিত হবেন যে মুক্তিযুদ্ধের আজকের রাতটিতে তথা ১২ই এপ্রিল রাতেই সবচেয়ে বেশী বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিলো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী।


তাও আবার একসঙ্গে। সেই বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ঢাকাতে সংঘটিত হয়নি। হয়েছে  রংপুর ক্যান্টনমেন্টের পার্শ্ববতী নিসবেতগঞ্জের বালারখাইলে। 


১২ এপ্রিল সেই রাতে একসঙ্গে ১০০'র ও বেশী বুদ্ধিজীবীকে ব্রাশফায়ার করে হ'ত্যা করেছিলো পাকিস্তানীরা। এদের মধ্যে ছিলেন চিকিৎসক, শিক্ষক, অধ্যাপক,  রাজনীতিবিদ, প্রকৌশলী, শিল্পী, সাহিত্যিক, অভিনেতা, সমাজসেবক সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। 


মুক্তিযুদ্ধে বালারখাইল গণহত্যাই ছিলো সর্বপ্রথম কোন সুপরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী গণহত্যার উদাহরণ।  কিন্তু আমরা অনেকে বালাইরখাল গণহত্যা সম্পর্কেই জানিনা, যারা জানি তারাও আবার এটিকে মুক্তিযুদ্ধের বাকি গণহত্যাগুলোর মতো একটি গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করি।


 অথচ এই গণহ'ত্যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো সৈয়দপুর শহরকে পুরোপুরি বুদ্ধিজীবী শূণ্য করা। বালারখাইল গণহত্যাকে বলা যায় পরিকল্পিত কায়দায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের ভয়াল নীলনকশা।


ব্রিটিশ আমল থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর ছিলো উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে অগ্রসরমান জনপদ। সৈয়দপুরে ছিলো শিক্ষিত ও প্রগতিশীল মানুষের বসবাস। কেবল শিক্ষা, প্রগতি, সাংস্কৃতিক দিক থেকেই নয়, ব্যবসায়িক দিক থেকেও সৈয়দপুর ছিলো গুরুত্বপূর্ণ শহর।

.

এই সৈয়দপুরে বাঙালী ও বিহারীদের পাশাপাশি ছিলো বহু মাড়োয়ারী জনগোষ্ঠীর বাস। বিহারীদের সঙ্গে বাঙালীদের সম্পর্ক তেমন ভালো না থাকলেও  এই মাড়োয়ারীদের সঙ্গে বাঙালীদেরও ছিলো দহরম মহরম সম্পর্ক। 


২৫ মার্চ রাতে সৈয়দপুরে অবাঙ্গালী বিহারি নেতাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা ১০০'র ও বেশী বুদ্ধিজীবীকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়।  তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর ক্যান্টনমেন্টে। সেখানে তাদের উপর চালানো হয়েছিলো ভয়াবহ নির্যাতন।


 টানা ১৮ দিন নির্যাতনের পর ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে বিহারী ও পাকিস্তানী সেনারা বুদ্ধিজীবীদের হাত ও চোখ বেঁধে ৩টা ট্রাকে তুলে তাদের নিয়ে যায় রংপুর ক্যান্টনমেন্টের পাশের নিসবেতগঞ্জের ‘বালারখাইল’ এলাকায়। 


সেখানে খালপাড়ে তাদের প্রথমে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তারপর  ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। সেদিনের হত্যাকাণ্ডে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন কমলা প্রসাদ। তাঁর দেয়া সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, সেদিন রাতে বালারখাইলে প্রায় ১৫০ জনকে হত্যা করেছিলো পাকিস্তানী সেনা ও বিহারীরা‌। শতাধিক  বুদ্ধিজীবীর পাশাপাশি ছিলেন ৫০ জনের মতো বাঙালী সেনা। যাদের সৈয়দপুর সহ রংপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে নিয়েছিলো বিহারি ও পাকিস্তানীরা। 


 এই বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত বুদ্ধিজীবী হলেন গণপরিষদ সদস্য প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. জিকরুল হক, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী তুলসীরাম আগরওয়ালা,  ডা. শামসুল হক, ডা. বদিউজ্জমান, ডা. ইয়াকুব আলী,  শিক্ষক যমুনা প্রসাদ, কেডিয়া, রামেশ্বর লাল আগরওয়ালা।



সূত্র: ফেসবুক

Post a Comment

0 Comments