আজ অফিসে গরুর মাংস রান্না করলো। আমরা যারা সনাতনী তাদের জন্য সম্মানহেতু সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশনায় চিংড়ি আর ডিম রান্না করে। খাওয়ার সময় একজন বলে উঠলো...
ভাই ইসকন্ কি? এরা কি আসলে জংগী সংগঠন?
উত্তরে বললাম: তাহলে আমার বলা শেষ না হওয়া অব্ধি কিছু বলতে পারবেন না।
কলিগ: ওকে ঠিক আছে বলুন।
আমি: এই ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে আমাদের সনাতন বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রচারে কেউ যায়নি পূর্বে। গৌতম বুদ্ধ যদিও গিয়েছিল,কিন্তু তার মতবাদ পরবর্তীতে অন্য একটা ধর্মে রুপ নিল। মাঝখানে স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকায় দারুন একটা বক্তৃতা দিয়ে বেশ আলোড়িত হলেও তিনি সেখানে ধর্ম প্রচারে সচেষ্ট হননি। এই ইসকন্ সর্বপ্রথম বাইরের দেশে সনাতন ধর্মের প্রচার শুরু করে।
কলিগ: এটার প্রতিষ্ঠাতা কি ইহুদি?
আমি: না। প্রভুপাদ, উনি কলকাতার লোক,পেশায় শিক্ষকতা ছিল। উনি উনার গুরুদেবের নির্দেশে বৃদ্ধ বয়সে আমেরিকায় ইসকন্ প্রতিষ্ঠা করে, যার ফুল ফর্ম - International Society for Krishna Conciousness.
কলিগ: কিন্তু ইসকনকে তো প্রায় দেশে নিষিদ্ধ করেছে।
আমি: না। এই কথার সাপক্ষে কোন প্রমান কেউ দেখাতে পারবেনা। উপরন্তু এটা বিশ্বের প্রায় সব দেশে তাদের ধর্ম প্রচার করছে। পাকিস্তান আফগানিস্তান সহ চিন, ইউক্রেন, রাশিয়াতেও যেখানে স্বাভাবিক ধর্ম পালন ও নিষিদ্ধ।
কলিগ: ওরা মূলত কি কাজ করে?
আমি: ওদের কয়েকটা মূলনীতি আছে, যেমন আমিষ খাওয়া যাবেনা, অবৈধ সংগ করা যাবেনা, নেশা করা যাবেনা এবং জুয়া খেলা যাবেনা৷।
কলিগ: তাহলে ওরা করেটা কি? ওরা কি সনাতনীদের বাইরে আলাদা কিছু করে।
আমি: না। ওরা আমাদের ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ এবং তার বানী শ্রীমদ্ভগবগীতা এবং ভাগতম নামক শাস্ত্রের উপর কাজ করে। আর হরে কৃষ্ণ নামক একটা মহামন্ত্র জপ এবং কীর্তন করে ।
কলিগ: কিন্তু আমি শুনেছি সাধারন সনাতনী আর ওরা নাকি এক না..?
আমি: হ্যাঁ। তা ঠিক। তবে ইস্কনের সাথে সনাতনীদের পার্থক্য বিয়ে আর খাওয়া দাওয়ায়। ওরা সাধারন সনাতনীদের থেকে কোন খাবার গ্রহন করে না। কারন ওরা কোন খাবার গ্রহনের আগে শ্রীকৃষ্ণকে অর্পন করে তাই প্রসাদরুপে খায়। আর যেহেতু ওরা নিরামিষ আহারি, তাই তারা তাদের মতে যারা চলে তাদেরকেই বিয়ে করে। এই দুইটা ছাড়া সনাতন এবং ইসকন্ একই দেবতার উপাসনা করে। কিন্তু সনাতনীরা কৃষ্ণসহ অনেক দেবতার উপাসনা করে কিন্তু ইসকন্ শুধু কৃষ্ণ কেন্দ্রীক।
কলিগ: ওদের এত ফান্ড দেয় কে?
আমি: ওরা নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। ওদের মন্দিরে গেলে দেখবেন ওখানে হোটেল আছে, যেখানে নিরামিষ খাবার পাওয়া যায়, বেকারি আছে, লাইব্রেরি আছে, থালা বাসন-কাপড়ের দোকান আছে। এমনকি গরুর ফার্ম ও আছে। এছাড়া যারা ওদের অনুসারী তারা ভগবানের নামে মাসিক প্রণামী দেয়।
কলিগ: এইবার বলো গেরুয়া পতাকার সাথে তোমাদের সম্পর্ক কি? এটা ইসকনের নাকি বিজেপির পতাকা?
আমি: গেরুয়া রংগের সাথে পতাকার কোন সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে যেমন অনেক মুসলিম সংগঠন আছে, ইন্ডিয়াতেও অনেক হিন্দুত্ববাদি সংগঠন আছে, যেমন: বিজেপি, শিবসেনা, বজরং দল। কিন্তু এদের পতাকা ভিন্ন। বিজেপির পতাকায় পদ্মফুল থাকে।
কলিগ: তাহলে গেরুয়া রংগের কেন সব?
আমি: গেরুয়া আমাদের ধর্মের একটা পবিত্র রং। আমাদের ব্রহ্মচর্য, গার্হস্ত্য, বানপ্রস্থ এবং সন্যাস নামের ৪ টি আশ্রম আছে। সবার শেষের এবং ত্যাগের আশ্রম প্রথা হলো সন্যাস। এই আশ্রম যারা গ্রহন করে তারা সবাই গেরুয়া রংগের কাপড় পরিধান করে। তাই পবিত্রতা হেতু হয়ত এই রং সবাই ব্যবহার করে।
কলিগ: তাহলে ইসকন্ কে সবাই জংগী সংগঠন কেন বলছে?
আমি: বেহুদা। একজন কান নিয়ে গেছে বলল, আর সবাই দৌড়াচ্ছে। জংগী বলতে আমরা যা বুঝি বোমা ফাটানা, অস্ত্র মজুদ, কাউকে হত্যা কিংবা গুম এসবের কোন কাজেই ইসকন্ আছে বলে এখনো অব্ধি কেউ প্রমাণ দিতে পারেনি কিন্ত সবাই চিল্লাছে।
কলিগ: ভাই তুমি যা বলছো আমি শুনে নিজেই ইসকনের ফ্যান হয় গেছি। এটা তো একটা পবিত্র সংগঠন। যেখানে সবাই নিরামিষ আহারি, শুধু ধর্ম প্রচারে ব্যস্ত, কাউকে আঘাত করছেনা।
আমি: এরকম বলা শুরু করলে আমাদের প্রতিটি জিনিস নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বলতে পারি। কিন্তু বলিনা, সেটা বললেও দোষ।
কলিগ: যাই বলো যদি তোমার কথা মত ইসকন্ চলে তাহলে সমস্ত হেটস অফ।
আমি: ভাই তেমন কিছুই বলিনি। ওদের দৈনন্দিন কার্যক্রম, সমস্ত কামনা বাসনা আমিষ আহার করে ঈশ্বরের কাছে পুরা জীবন আত্মসমর্পণ করা, তা চারটি খানি কথা না।
কলিগ: আসলেই। যাক অন্তুত ইসকন্ সম্পর্কে আমার ধারণা চেঞ্জ হলো।
0 মন্তব্যসমূহ