![]() |
মুসলমানদের হিন্দুবিদ্বেষী মনোভাব 'হাহা' ইমোজি নিয়ে লেখক বিনোদ ঘোষালের মতামত |
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ২০০০ সালের দিক থেকে। জানা মতে প্রথমে শুরু হয় ডায়াল-আপ ইন্টারনেট দিয়ে। তারপর ২০০৫ সালের পর মোবাইল ব্রডব্যান্ড দিয়ে শুরু হয় দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ব্যবহার। প্রায় সমসাময়িক সময়ে চালু হয় ফেসবুক। বাংলাদেশে ফেসবুকের প্রসার ঘটতে শুরু করে ২০১০ সালের পর থেকে আর ব্যাপক ভাবে শুরু হয় ২০১৫ সালের পর থেকে। সেই সময় থেকেই বাংলাদেশে হিন্দুবিদ্বেষ নতুন মাত্রা পায়। ফেসবুকে হিন্দুদের বিভিন্ন খবরে মুসলমানরা খারাপ মন্তব্য করতে শুরু করে। হিন্দুদের পূজা, বিবাহ, জীবনে সফলতা প্রায় প্রত্যেকটি খবরে মুসলমানরা হিন্দুবিদ্বেষী উস্কানীমূলক আরবীয় সাম্রাজ্যবাদী মন্তব্য করতে থাকে। বাংলাদেশীরা এই আচরণ বিদেশী মুসলমানদের কাছ থেকে শিখেছে। অর্থাৎ মুসলমানরা সারাবিশ্বেই অন্যধর্ম এবং নামুসলমানদের সম্পর্কে প্রকাশ্যে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে আজেবাজে উস্কানীমূলক বিদ্বেষমূলক মানসিক আঘাত দেয়ার মত কথা প্রকাশ করে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই ফেসবুক কোম্পানী মন্তব্যের রিপোর্টগুলোকে আমলে নেয়। এর ফলে মন্তব্যের ঘরগুলো কিছুটা সভ্য মার্জিত হয়। মুসলমানরা নামুসলিমদের সম্পর্কে সরাসরি উস্কানীমূলক বেয়াদপি মন্তব্য করতে না পেরে গ্রহণ করে অন্য পদ্ধতি। তারা ফেসবুকের ইমোজি ব্যবহার করে হিন্দুদের জীবনের নানা ঘটনাকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা শুরু করে। ফেসবুকের 'হা হা' ইমোজিকে তারা নেয় অস্ত্র হিসেবে। সনাতন ধর্মাবলম্বী কারও মৃত্যুর খবরে, সনাতন ধর্মাবলম্বী কারও হারিয়ে যাওয়ার খবরে, কারও কোন অর্থনৈতিক বা সামাজিক ক্ষতির ঘটনায় মুসলমানরা 'হাহা' রিয়াকশন দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করা শুরু করে। এসবের প্রতিবাদে কোনো কোনো হিন্দু প্রতিবাদমূলকভাবে মুসলমানদের খারাপ খবরে 'হা হা' দেয়া শুরু করে। তবে তা কখনও দলবদ্ধভাবে ঘটেনি।
হিন্দু ধর্মের জীবনদর্শন অন্য মানুষের দুঃখে খুশী হওয়ার শিক্ষা বা উস্কানী কোনটাই দেয় না। ফলে দু'একজন হিন্দুর কাজকে সবসময়ই শিক্ষিত হিন্দুরা এভয়েড করে গেছেন। কিন্তু মুসলিমদের জঘন্য কাজের প্রতিবাদ কখনও কোন মুসলিম শিক্ষিত ব্যক্তিকে করতে দেখা যায় নি। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষিত মুসলিমরা অন্য মুসলিমদেরকে হিন্দুবিদ্বেষী শিক্ষা দিয়েছেন। যেন তেন উপায়ে হিন্দুদের ক্ষতি করার জন্য উস্কানী দিয়েছেন। আবার নিজেরা কেউ কেউ হিন্দু নামে ফেসবুক একাউন্ট খুলে হিন্দুদের ভাবমূর্তির ক্ষতি করেন। ফলে ২০২৫ সালে এসেও মুসলমানদের হিন্দুবিদ্বেষ কমেনি। তারা সমানতালে হিন্দু ধর্মের মানুষদের কোনোরকম ক্ষতির খবরে উল্লাস প্রকাশ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ১২ই জুন ২০২৫ তারিখে ভারতে একটি প্লেন দুর্ঘটনা হয়ে ২৫০ জনেরও অধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে এই খবরের নিচে যারা 'হাহা' ইমোজি দিয়ে উল্লাশ প্রকাশ করেছেন, দেখা গেছে তাদের সকলেই মুসলমান।
ভারতীয় লেখক বিনোদ ঘোষাল তার ভ্যারিফায়েড ফেসবুকে ১৩ই জুন ২০২৫ তারিখে নিচের লেখাটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি খেয়াল করেছেন যে হিন্দু বা তার দেশ ভারতের কোন ক্ষতির খবরে যারা 'হাহা' ইমোজি দিয়ে মনোভাব প্রকাশ করে তারা সবাই একটি বিশেষ ধর্মাবলম্বীর। আর সেগুলো ফেক একাউন্ট হলেও সেগুলোর পিছনে কোনো না কোনো মানুষ তো থাকে। লেখক বিনোদ ঘোষালের সম্পূর্ণ পোস্টটি নিম্নরূপ।
আমেদাবাদের ফ্লাইটটির ভেঙে পড়া এবং এতজন নিরীহ মানুষের অপমৃত্যু সকল মানুষকে শোকাহত করেছে। করারই কথা। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার নিউজপোর্টালে খবরগুলি দেখছিলাম। নজরে এল স্যাড ইমোজির সঙ্গে বেশ কিছু হাসির ইমোজি। অবাক হলাম। তারপর পরপর এই বিষয়ক নিউজগুলির রিয়াকশন ক্লিক করে দেখলাম প্রতিটি শোকের খবরেই বেশ কিছু হাসির ইমোজি। বলা বাহুল্য সেই হাসির ইমোজিগুলি একটি নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বী প্রোফাইলধারী দিয়েছেন। স্তম্ভিত হলাম। ভাবলাম এরা কেন এমনটা করল? কাফের মা/রা গেছে বলে? কিন্তু ফ্লাইটে নিশ্চয়ই সেই ধর্মের মানুষও ছিলেন। তাহলে কি ভারতীয়র মৃত্যু হয়েছে বলে? তাও নয়, কারণ বিমানটিতে অন্যদেশেরও মানুষ ছিলেন। তাহলে কী? এমনই উল্লাস মানুষ মা/রা গেছে বলে? শুনেছিলাম শয়তান নাকি নরকে থাকে। এখন বুঝি শয়তান শুধু নরকে নয় আমাদের আশপাশের দেশেও থাকে মানুষের ছদ্মবেশে। উদারপন্থীরা বলতেই পারেন ওই হাসির ইমোজি দেওয়া প্রোফাইলগুলি ফেক। ঘৃণাসৃষ্টির জন্য এমনটা তৈরি করা হয়। কিন্তু একটি প্রোফাইলও যদি সত্যি হয় তাহলেও আমি তাকে ধিক্কার জানাই। উদারতা ততক্ষণই ভাললাগে যতক্ষণ আমি নিরাপদ।
বিনোদ ঘোষালের এই পোস্টের নিচের মন্তব্য ঘরে কতিপয় মুসলমানের মন্তব্য লক্ষণীয়। দেখা গেছে, তারা হিন্দু নামীয়দের 'হাহা' রিয়াকশনের ছবি দিয়ে স্ক্রীনশট দিয়ে নিজেদর ভাই ব্রাদার দের আচরণকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছে। অর্থাৎ তারা বলতে চেয়েছে যে, হিন্দুরাও এমন করেছে, অতএব মুসলমানের এমন করা ঠিক আছে। সমানে সমান হয়ে গেছে। এই বিষয়ে আমাদের মন্তব্য যে শুরু করেছে মুসলমানরা, আর হিন্দুরা যা করছে তা শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়া। সনাতন ধর্ম বা শিক্ষিত হিন্দুরা কখনও এই কাজকে কোনভাবেই জাস্টিফাই করতে যাবে না, যেমনটা শিক্ষিত মুসলমানরা করে।
বিনোদ ঘোষালের পোস্টের লিংক এখানে। আগ্রহীরা লিংকে ক্লিক করে সরাসরি ফেসবুক পোস্টে যেতে পারবেন।
শিক্ষিত মুসলমানরা এই জাতীয় ঘটনার ছাফাই দেন এটা বলে যে, এসব ফেক আইডি বা নকল বা ভুয়া বা নাম গোপন করা একাউন্ট থেকে করা হয়। কাজটির জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ না করে শুধু ফেক একাউন্টের কথা বলে পাশ কাটিয়ে যান। তাদের এই পাশ কাটানো মনোভাবের জন্য হিন্দুরাও দিন দিন প্রতিবাদী হয়ে উঠছে। তারাও কখনও কখনও নিজেকে সামলাতে না পেরে মুসলিমদের ক্ষতির সংবাদে 'হাহা' রিয়াকশন দেন। আমরা মনে করি কারও দুঃখে আনন্দিত হওয়া সনাতন ধর্মের শিক্ষা নয়। অর্থাৎ সনাতন ধর্মীয় দৃষ্টি থেকে তাদের এই আচরণ কাঙ্ক্ষিত নয়। কিন্তু গত কয়েকশত বৎসর ধরে হিন্দুরা ঠকতে ঠকতে, অপমানিত হতে হতে মুসলমানদের ভণ্ডামী শিখে গেছে। হিন্দু ধর্ম ও সমাজ নিয়ে মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি তাদেরকে সচেতন করেছে। আমরা এটাকে বলি 'ইসলাম-২'। অর্থাৎ ইসলাম বা মুসলমানরা সনাতন ধর্ম ও হিন্দুদের নিয়ে যেমন আচরণ করবে, তাদের সাথেও তেমন আচরণ করা হবে। ইসলাম-১ যেসব আচরণ করবে, তাদের সাথেও ঠিক একই আচরণ করা হবে। মুসলমানরা খুনের বদলে খুন নীতিতে বিশ্বাসী হলেও হিন্দুরা এমন নয়। মহাত্মা গান্ধীর 'চোখের বদলে চোখ' নীতি নিয়ে বলেছিলেন যে তাহলে তো সারা পৃথিবীর সকল মানুষ অন্ধ হয়ে যাবে। আমরা মহাত্মা গান্ধীর নীতিকে সম্মান করি। কিন্তু মুসলমানরা মহাত্মা গান্ধীর নীতিকে সম্মান করে কি? না, করে না। সারা পৃথিবীব্যাপী তারা যেভাবে না-মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিংসা, বিদ্বেষ, খুন, রক্তপাত যেভাবে ছড়িয়েছে, যেভাবে চর্চা করেছে, তার ফলাফল তারা কি পাবে না?
আমরা মুসলমানদের মতো হিংসা-বিদ্বেষের চর্চা করি না। প্রতিশোধেও বিশ্বাস করি না। শুধু সচেতনতার জন্য ভারতের যোগী আদিত্যনাথের পরামর্শগুলো খেয়াল রাখতে পারি। তিনি বলেছেন:-
- ১। আমি একজন মুসলিমকে ততটাই ভালোবাসি, যতটা একজন মুসলিম একজন হিন্দুকে ভালোবাসে।
- ২। আমি একজন মুসলিমকে ততটাই মানুষ মনে করি, যতটা একজন মুসলিম একজন হিন্দুকে মানুষ মনে করে।
- ৩। আমি একজন মুসলিমকে ততটাই বন্ধু মনে করি, যতটা একজন মুসলিম একজন হিন্দুকে মনে করে।
- ৪। আমি ইসলাম ধর্মকে ততটাই ভালোবাসি, যতটা একজন মুসলিম আমার হিন্দুধর্মকে ভালোবাসে।
- ৫। আমি মসজিদকে ততটাই ভালোবাসি/ শ্রদ্ধা করি, যতটা একজন মুসলিম আমার মন্দিরকে ভালোবাসে/ শ্রদ্ধা করে।
- ৬। আমি কাবা শরীফকে ততটাই ভালোবাসি, যতটা একজন মুসলিম, হিন্দুর শ্রীক্ষেত্র-বৃন্দাবনকে ভালোবাসে।
- ৭। আমি কোরান-হাদিসকে ততটাই ভালোবাসি/ সম্মান করি, যতটা একজন মুসলিম আমার বেদ-গীতাকে ভালোবাসে/ সম্মান করে।
- ৮। আমি রমজান মাসকে ততটাই গুরুত্ব দিই, যতটা একজন মুসলিম আমার দামোদর মাসকে গুরুত্ব দেয়।
- ৯। আমি নবী মোহাম্মদকে ততটাই মান্য করি বা শ্রদ্ধা করি যতটা একজন মুসলিম আমার শ্রীচৈতন্য দেবকে মান্য করে বা শ্রদ্ধা করে।
- ১০। আমি রোজা রাখাকে ততটাই যৌক্তিক মনে করি, যতটা একজন মুসলিম একাদশীকে যৌক্তিক মনে করে।
- ১১। আমি ঈদকে ততটাই আমার উৎসব মনে করি, যতটা একজন মুসলিম দুর্গাপূজাকে তার উৎসব মনে করে।
- ১২। আমি আযানকে ততটাই মধুর মনে করি, যতটা একজন মুসলিম শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনিকে মধুর মনে করে।
বাকী কয়েকটি পরামর্শ পড়তে ক্লিক করুন
ইসলামের দানবীয় গ্রাস থেকে বাঁচতে হিন্দুদের জন্য যোগী আদিত্যনাথের ২৫টি মূল্যবান সূত্র
0 Comments