তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ - প্রমোদ কুমার চট্টোপাধ্যায় |
লিখেছেন: সৌভিক রাতুল বসু, ১৫ জানুয়ারী, ২০২২
হিন্দু নারীদের ওপর মুসলিমদের অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরনো। সুলতানি কিংবা মুঘল আমল তো ছেড়েই দিলাম । এই সেদিনের বাংলাতেও আমরা প্রায় একই চিত্র দেখতে পাই। 1905 সালেৱ বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করেছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা। হিন্দুরা এর বিরোধিতা করেছিল; মুসলিমরা কুমিল্লা জামালপুর সহ বহু জায়গায় হিন্দুদের ওপর তীব্র আক্রমণ নামিয়ে এনেছিল। খুন অগ্নিসংযোগ লুটতরাজের পাশাপাশি ছিল হিন্দু নারী অপহরণ ও ধর্ষণও। উৎসাহী পাঠকরা এর বিস্তারিত বিবরণ পেতে পারেন ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদারের লেখা 'History of The Freedom Movement In India' বইটির দ্বিতীয় খণ্ডে।
রমেশ বাবুর লেখার সমর্থন পাওয়া যায় সমকালীন সাহিত্যেও। বাংলায় লেখা ভ্রমণকাহিনীর ইতিহাসের একেবারে প্রথম যুগে থাকবে প্রমোদ কুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ' বইটি (তিন খণ্ড একত্রে)। পেশায় চিত্রশিল্পী এই ভদ্রলোক যৌবনের প্রারম্ভে সদগুরু অনুসন্ধানে সমগ্র উত্তর এবং পূর্ব ভারত পরিভ্রমণ করেছিলেন। সংস্পর্শে এসেছিলেন বহু তন্ত্রসাধকের। বইটিতে তন্ত্রের দার্শনিক উপলব্ধির অনেক কথা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি সন্ধান মেলে অনেক অলৌকিক ক্রিয়াকর্মেরও। উনার ভ্রমণ কাল মোটামুটি 1911 সাল থেকে 1918 সাল অবধি।
প্রমোদ বাবু আদ্যন্ত অরাজনৈতিক ব্যক্তি। সেই প্রমোদ বাবু তার 'উমাপতি বাবা ও এলোকেশী' গল্পে হিন্দু নারীদের ওপর মুসলিমদের অত্যাচার তুলে ধরেছেন। পূর্ববঙ্গে হিন্দু নারী হরণ ধর্ষণ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সেখানে দেখতে পাবেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে কিভাবে একশ্রেণীর হিন্দুরা ব্যাপারগুলোকে অস্বীকার করেছেন। এলোকেশীর বয়ানে বলা হয়েছে --
"প্রথমে এতটা ছিল না -- আমাদের গ্রামে মুসলমানেরা হিন্দুর ঘরের মেয়েদের জোর করে ধরে নিয়ে যেভাবে অত্যাচার করে তা আপনাদের কলকাতার বাবু ভায়াদের জানা নেই। কলকাতার বাবুরা কেউ কেউ বিশেষত ওখানকার সমাজপতি যারা গ্রামের ওই সব অত্যাচারের কথা খবরের কাগজে পড়েন, অনেকেই পড়েন না, আমি জানি, ওসব তারা জানতেও চান না। কাজেই আপনাদের কোন ধারনাই নেই যে আমাদের পূর্ববঙ্গে যেখানে ওরা দলে বেশি --- হিন্দু সমাজের মেয়েদের ওপর তাদের সমাজের কি অদ্ভুত অত্যাচার। এই পর্যন্ত হিন্দুরা তার কোনো প্রতিকার করতে সমবেতভাবে চেষ্টাও করে না। আরো আমার সর্বাঙ্গ জ্বলে যায় যখন কাপুরুষেরা আদালত এই নিয়ে নালিশ মোকদ্দমা করে। তার কোনটা ফেঁসে যায়, কোনটা বা আসামী দু এক মাস জেল খাটে, তারপর ফিরে এসে আবার তাদের ধর্মে-কর্মে মন দেয়। আর যে পোড়া কপালিকে একবার ঘর থেকে নিয়ে গেল তার আর ঘরে স্থান হবে না, তাকে হয় মুসলমানদের ঘরে যেতে হবে, না হয় বেশ্যাবৃত্তি।"
এর একটু কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যাক ।
712 খ্রীস্টাব্দে রাজা দাহিরকে পরাজিত করে মহম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধ দখল, ভারতীয়দের যুদ্ধ সম্পর্কে একটি নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছিল। এর আগে ভারতীয়রা যুদ্ধজয়ের সঙ্গে নারী হরণ, নারী ধর্ষণ কিংবা বলপূর্বক ধর্মান্তকরণের সঙ্গে পরিচিত ছিল না।
জরায়ু দখল আমাদের (হিন্দুদের) সংস্কৃতি নয়, আরবীয় সংস্কৃতি। ফলে ওদের কাছে রণক্ষেত্রে বিজিত পক্ষের মহিলাদের ধর্ষণ কিংবা সাধারণ কোনো গন্ডগোলেও বিরুদ্ধ ধর্মের মহিলাদের ধর্ষণ করাটা খুব সহজলভ্য ব্যাপার। এর কারণটা নিহিত রয়েছে ধর্মের উৎপত্তির মধ্যেই।
M. Mujeeb 'The Indian Muslims' বইয়ে লিখছেন -
"there was never any doubt in the minds of the Muslims of their right to spread over earth.... The Hidayah is quite explicit about the legality of Jihad against infidels even when they have not taken the offensive ..... The Muslim Turks found the moral justification for their advance into India in the injuction to propagate Islam. As this could not, in the opinion of Kings and Warriors, be achieved without the subjugation of non-Muslims and occupation of their territory, the propagation of Islam became identical with war and conquest."
অর্থাৎ
যুদ্ধ জেতার সঙ্গে ধর্মান্তরকরণ ছিল সমার্থক। বলতে গেলে মুসলিমদের কাছে ধর্মান্তরকরন ছিল মূল উদ্দেশ্য, যুদ্ধ জয় ছিল এর মাধ্যম মাত্র।
জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিকাশের একই স্তরের মধ্যে দিয়ে যায়। নানান বয়সে তারা পূর্ণতাপ্রাপ্তি থেকে ধ্বংস, একই সংকটের মুখোমুখি হয় -- অভিজ্ঞতার হেরফেরটা মূলত হয় জলবায়ু এবং জীবনধারণের অবস্থা অনুযায়ী। এই অভিজ্ঞতার হেরফেরটাই তৈরি করে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে গড়ে ওঠা সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার পার্থক্য। নিজের শরীরের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন কোন বস্তুর সম্বন্ধে ব্যাক্তিগত অধিকারের ধারনাও সেইভাবে গড়ে না ওঠার কারনে সেই গোষ্ঠীর থেকে পৃথকভাবে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রও গড়ে ওঠে না। ফলে বিচ্ছিন্নভাবে বেঁচে থাকাটা হয়ে পড়ে কার্যত অসম্ভব। যদি কোরান বা ওল্ড টেস্টামেন্টের Verse গুলো দেখেন তাহলে আন্দাজ করা যায়। দুটোতেই এক ধরনের আহ্বান ---- হয় ঈশ্বর স্বার্থপর (শুধু সেই গোষ্ঠীরই), নয়তো গোষ্ঠীর ধর্মীয় চেতনার বাইরের মানুষ মানেই শত্রু।
এর কারন অনুসন্ধান করলে দেখতে পাওয়া যায় যে এই দুটি ধর্মের জন্ম -বেড়ে ওঠা দুটোই নোমাডিক ট্রাইব বা যাযাবর উপজাতি থাকাকালীন। কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠে নি, উঠলেও ছিল প্রাথমিকস্তরে। পশুপালন ছিল মূল জীবিকা। তাছাড়া বাসস্থান অঞ্চলে অনুর্বর জমির আধিক্যের জন্য এদের পশুদের খাদ্যর জন্য নির্ভর করতে হত আপাত উর্বর ঘাস জমি। এই একটুকরো জমির জন্য বিভিন্ন প্রজাতিদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম হত। এই সংগ্রামে জেতার জন্য প্রধান যে অস্ত্রটি প্রয়োগ করা হত তা হল নিজের Clan এর জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিরুদ্ধ Clan এর জনসংখ্যা হ্রাস করা। নারী সন্তানের জন্মদাত্রী। তাই এটি করতে গেলে বিরুদ্ধ দলের নারী দখল করে গর্ভে সন্তান আনা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না। জরায়ু দখলের ধারনাটি এখান থেকেই এসেছে।
জলদস্যুতা ছিল আরেকটি সন্মানীয় বৃত্তি। লুণ্ঠিত দ্রব্যের মধ্যে থাকত নারী -পুরুষেরাও। ধৃত পুরুষরা দাস ও সর্বজনীন সম্পত্তিতে পরিণত হত। আর নারীরা পরিচারিকা থেকে যৌন দাসী।
ভারতীয়দের ধর্মীয় চিন্তার রূপটি পরিপূর্ণ কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠার সঙ্গে সমসাময়িক। ফলে Clan বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তাই সেই অর্থে ছিল না। তাই বিজিত পক্ষের মহিলাদের গনিমতের মাল হিসেবে দেখতে আমরা কখনই শিক্ষা পাইনি।
2 মন্তব্যসমূহ
shov gola fao kiso kotha
উত্তরমুছুনami bangladesh a thaki ar bangladesh a hinndo thikka moslim ra sovche vashi
kharav ovosta
misa kotha komaya kon
jotto sov fao kotha
Malaun ka bachha, kavi nehi sachcha
উত্তরমুছুন