ডাসারের শশিকর শহীদ স্মৃতি কলেজের সমস্যা সমাধানে বৈঠক [ভিডিও]

ডাসারের শশিকর শহীদ স্মৃতি কলেজের সমস্যা সমাধানে বৈঠক
শশিকর শহীদ স্মৃতি কলেজ, ছবি: সংগৃহীত
 

 মাদারীপুর প্রতিনিধি, প্রকাশিত: ১৭:৪২, ২০ নভেম্বর ২০২৪


মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার শশিকর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।


বুধবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, হেফাজত ইসলামের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সংস্থার লোক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।


একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ডাসার উপজেলার শশিকর শহীদ স্মৃতি কলেজে গত ৯ নভেম্বর কিছু শিক্ষার্থী মিলে ওই কলেজের মসজিদে আজান দেওয়ার জন্য একটি মাইক লাগানোর প্রস্তুতি নেন। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বহিরাগত ৩০ থেকে ৩৫ মিলে হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে আহত হন আলভী রহমান, আফজাল, হাসিবুর ও নাহিদসহ কমপক্ষে ৭ জন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় অধ্যক্ষের রহস্যজনক ভূমিকা রয়েছে এমন অভিযোগ এনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অধ্যক্ষের অপসারণের দাবি জানান। গত সোমবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পুনরায় শিক্ষার্থীরা ওই কলেজের আজান দেওয়ার জন্য একটি মাইক লাগাতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে বহিরাগতদের কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মাঝে বিরোধ দেখা দেয়।


প্রত্যক্ষদর্শী লিটন বিশ্বাস বলেন, মাদারীপুর থেকে কিছু ছাত্র এসে নিজেদের সমন্বয় পরিচয় দেন। এ সময় তারা স্যারদের সঙ্গে কথা বলে কলেজের মসজিদে মাইক লাগাতে যান। এরই মধ্যে স্থানীয় অনেক লোকজন ও স্যাররা আসলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে ডাসারের উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ওসিকে জানানো হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজের অধ্যক্ষ দূর্লাভনন্দকে ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম মাসুম প্রধান গাড়িতে করে উপজেলা পরিষদের অফিস কক্ষে নিয়ে যান। এ সময় শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে ওই অধ্যক্ষ পদত্যাগপত্রে সই করেন। পরের দিন অধ্যক্ষ অভিযোগ করেন, তাকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে।


অপরদিকে, একাংশ দাবি করেন অধ্যক্ষের কারণে ওখানকার আবাসিক ছাত্ররা নামাজ পড়তে পারেন না। এছাড়াও অধ্যক্ষ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এসব অভিযোগ এনে তার পদত্যাগ দাবি করেন। এতে করে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাতে ও আজ সকালে দু’পক্ষের সঙ্গে জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়ামিন রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে হেফাজত ইসলামের আমির আলী আহম্মদ চৌধুরিসহ ছাত্র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কলেজ এলাকায় ছাত্রদের জন্য নামাজের ঘর নির্মাণ করা হবে এবং অধ্যক্ষকে দুই মাসে ছুটি প্রদান করা হবে। অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত মেনে না নিলে আবারো উত্তেজনা দেখা দেয়। হেফাজত ইসলাম কলেজ এলাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের অনুরোধে সমাবেশ বন্ধ রাখা হয়। পরে তাদের দু’পক্ষকে নিয়ে দুপুরে ডাসার উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে আবারো বৈঠক করে উপজেলা প্রশাসন। বৈঠকে দু’পক্ষকেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় তার জন্য অনুরোধ করা হয়।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ইসরাফিল বলেন, আমি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলাম। অধ্যক্ষকে কেউ জোর করে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করা হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করছেন। পদত্যাগ পত্র দেওয়ার সময় ইউএনও ও প্রশাসনের লোকজন ছিল। তাদের সামনে কেউ তাকে জোর করতে পারে না।


তবে শশিকর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ দূর্লাভনন্দ দাবি করেন, যে ঘটনাটি ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত। সন্ধ্যায় ইউএনও অফিসে আমাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে ইউএনওর সামনে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে লোকজন আমাকে ঘিরে ধরেছে এবং একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে জোর করে বাধ্য করেন ও আমাকে পদত্যাগ বলতে বাধ্য করেন। আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করিনি।


এ বিষয়ে ডাসার ইউএনও রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, দু’পক্ষকে নিয়ে সমাধনের চেষ্টা চলছে। গণ্যমান্য যারা আছে তাদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছি। সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।


ডেইলি-বাংলাদেশ/এমআই


=-=-=-=-=-=-=-=-=


ফেসবুকে এই ঘটনা নিয়ে আরেকটি ব্যাখ্যা নিম্নরূপ।


শতভাগ হিন্দুদের গ্রা‌মের ক‌লে‌জে মাইক লা‌গি‌য়ে আযান দি‌তে না দেয়ায় পদত‌্যা‌গে বাধ‌্য করা হ‌লো, শশিকর "শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় কলেজ" এর অধ্যক্ষ দূর্লভানন্দ মহাশয়‌কে।


শতভাগ হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের গ্রাম শশিকর। মাদারীপু‌রের ডাসার (পূর্বের নাম কালকিনি) উপ‌জেলার এই গ্রাম‌টি‌তে র‌য়ে‌ছে দক্ষিণ বঙ্গের নাম করা কলেজ, শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়।


হিন্দু‌দের উদার নী‌তি‌ ও মহানুভবতায় দূর-দুরা‌ন্তের বিভিন্ন এলাকা থে‌কে ভিন্ন ধর্মী ছাত্ররাও শিক্ষার্থী হি‌সেবে এখা‌নে আসে এবং হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে।


তারা‌তো যেখা‌নে যায়, সেখা‌নেই ধর্ম বিস্তার ক‌রে, সো প্রথ‌মে সেই নামাজ পড়া দি‌য়ে শুরু ক‌রে‌ছি‌লো।


হিন্দুরা মহান সাজ‌তে ও সম্প্রী‌তি দেখা‌তে কলেজ ভবনের এক‌টি অংশে তা‌দের নামাজ পড়ার একটা রুম দেয়।


তারা‌তো নি‌জেরাও ধর্ম পালন ক‌রে, অন‌্যদেরও দাওয়াত দেয়, তাই ‌আযা‌নের মাধ‌্যমে তা‌দের আহ্বান ক‌লে‌জের সবার কা‌ছে ছ‌ড়ি‌য়ে দি‌তে কিছু‌দিন পর তা‌দের চা‌হিদা অনুযায়ী নামাজের রুমে সাউণ্ড বক্সও দেওয়া হলো।


কিছুদিন পর তা‌রা আরও বে‌শি সওয়াব অর্জনের ল‌ক্ষ্যে পাশের গ্রামগু‌লো‌তে এবং অনলাইনে ত‌দের জাত ভাইদের সা‌থে এই শতভাগ হিন্দুর গ্রা‌মে ধর্ম বিস্তা‌রের মহাষড়যন্ত্র তৈরী কর‌লো। তারই অংশ হি‌সে‌বে বহিরাগত শিক্ষার্থী প‌রিচ‌য়ে তা‌দের জাত ভাইয়েরা আসে ক‌লে‌জের ঐ রুমটা‌তে মাইক লাগাতে। কলেজ প্রশাসন তাদের বুঝিয়ে বলে, কিন্তু তারা মান‌তে নারাজ। শুরু হয় উত্তেজনা ও হিন্দু ছাত্রদের সা‌থে তা‌দের বি‌রোধ।


গ্রামের ও ক‌লে‌জের লোকজন‌দের বিরু‌দ্ধে ইসলাম সম্পর্কে কটুক্তি ও ধর্ম অবমানার বি‌ভিন্ন অভিযোগ তুলে অনলাইনে উস্কানী ও ধর্মঅবমাননার ব্যানার প্রচার ক‌রে সমাবেশের ডাক দেয়। সামা‌জিক মাধ‌্যমে সেসব ছড়া‌তে থা‌কে। সবাই সওয়া‌বের ভাগীদার হ‌তে অংশ নেয় এই গুজ‌বে।


সেটার জের ধ‌রে মাদারীপুরের সমন্বয়ক দাবী করে মাইক লাগাতে আসে তা‌দের কিছু অনুসারী। তারা মাইক লাগা‌নোর চেষ্ঠা ক‌রে এলাকাবাসীর প্রতিরো‌ধে ব‌্যর্থ হ‌য়ে চলে যায়।


পরক্ষণেই আসে প্রশাসনের গা‌ড়ি। অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষককে নিয়ে যাওয়া হয় ইউএনও এর কার্যালয়ে। সেখানে সমন্বয়ক প‌রিচয়দানকারীরা অধ্যক্ষকে বলে- "হয় আামীকাল আপনি মাইক লাগাবেন অথবা পদত্যাগ করবেন",


অধ্যক্ষ দূর্লভানন্দ পদত্যাগ করে চলে আসেন...


অধ্যক্ষের পদত্যাগের ভিডিও


লিঙ্ক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ