দেশের নাটক সিনেমায় নায়করাজ রাজ্জাক টু ফ্লপস্টার ডি এ তায়েব, সব হিরোরই একটা করে সিনেমা আছে, যেটার প্লট মুসলিম ছেলে হিন্দু মেয়ের প্রেম নিয়ে। তারা যদিও বলে সবার উপর মানুষ সত্য হচ্ছে থিম, কিন্তু কোনটাতেই হিন্দু ছেলে মুসলিম মেয়ে দেখিয়ে এটা বোঝাবে না।
মিউজিক ভিডিও তো অহরহ। তাহসানের মত রুচিশীল লোক হোক, কিংবা "সরি দীপান্বিতা"-র ওয়ান টাইমার হিট কম্পোজার হোক, তাদেরও কাজ আছে এমন।
নাটকে মডেস্ট গার্ল নুসরাত ইমরোজ তিশা বলেন, জোভান- মেহজাবিন বলেন, তানিয়া বৃষ্টি বলেন সবারই কাজ আছে।
আর এসবে অনুপ্রাণিত হয়ে বাস্তব ঘটনা- অজস্র! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই কত ঘটনা আছে। সবার যেন টার্গেট থাকে হিন্দু মেয়ে। কিছুদিন আগেই মৌলভীবাজারের এক হিন্দু মেয়েকে ভাগিয়ে এনে রোকেয়া হলে শেল্টার দিয়ে রেখে কনভার্ট করে বিয়ে করল। পরামর্শ চেয়ে ঢাবি শিক্ষার্থী সংসদে পোস্টও দিয়েছিল ছেলেটা। তখন আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে ফিলিংস মানুষজনের!
এইসবের বেলাতে সবাই স্পিকটি নট! কেউ বলছে না এটা অন্যায়, এটা দেখানো ঠিক না। এটা ধর্মবিরোধী কাজ। তখন কমেন্টে প্রচুর প্রশংসা থাকে।
কিন্তু একটা ছোট শহরের চুল কাটা নাপিত হৃদয় রবিদাস নাকি মুসলিম মেয়েকে ধর্মান্তরিত করে পাচার করবে। তাই তাকে হত্যা করা সঠিক কাজ।
আচ্ছা, পাচার যদি করে তো ধর্মান্তরিত করবে কেন? হিন্দুধর্মে তো ধর্মান্তরিত করলে পূণ্য হবে বা অন্যদের নিজের ধর্মে আকৃষ্ট করা পূণ্যের কাজ- এমনটা কোথাও নেই।
আর উপরের সব কেসে মানবতার জয়, প্রেমের জয়, ধর্মের জয়, কিন্তু এখানে "মা লাউনের এত বড় সাহস!"
আসলে নিজেদের ধর্মান্তরের পাতানো জাল প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে- তার কাউন্টার করতে এসব গল্প ফাঁদা। এই "সেভ আওয়ার সিস্টার্স"- এর গল্পের চক্করে পড়েছে আমার এক ক্লোজ মুসলিম বান্ধবীও৷ ওর এক হিন্দু ক্লাসমেটের সাথে কিছু ছবি নিয়ে পিছনে পূজামণ্ডপের ব্যাকগ্রাউন্ড লাগিয়ে দিয়ে বলে, এরা একসাথে পূজা ঘুরতে যাচ্ছে, প্রেম করছে।
হৃদয় রবিদাসের হত্যার উস্কানিদাতাও এই গ্রুপ। বেশি না, যেকোন জেলার কোর্টে আসেন, দেখবেন কত ১৮+ হিন্দু মেয়েকে প্রতি সপ্তাহে ভাগিয়ে এনে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করা হচ্ছে। একটুও বাড়িয়ে বলছিনা। কত মা বাপের আহাজারি। পুলিশ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলে, আপনারা মেয়েকে কীভাবে বড় করছেন!?
১৮'র নিচের গুলোতে জুভেনাইল কোর্টে গেলেও দেখবেন একই পরিস্থিতি। অথচ খতরে মে নাকি মুসলিম বোনরা!
এখন আমাদের কেউ যদি প্রতিরোধ করে, প্রতিবাদ করে, সেখানে হয়ে যাবে হাজারী গলির কেইস। আমাদেরই দোষী সাজানো হবে, উগ্রবাদী বলা হবে।
শুনেছি, নিশ্চিত নই, হৃদয় রবিদাসকে মারতে মারতে কেউ কেউ ধর্মান্তরিত হতে বলেছিল। বলেছিল সে কনভার্ট হলে সবকিছু মেনে নেওয়া হবে। সাড়ে পাঁচশ বছর আগে বাইশটা বাজারে চাবুক খেতে খেতেও হরিদাস কাজীর পেয়াদাদের থেকে একই প্রস্তাব পেয়ে বলেছিলেন, "যতক্ষণ দেহে আছে এক বিন্দু প্রাণ, ততক্ষণ লইব মুই এই হরিনাম।" হৃদয় রবিদাসও তার প্রতিধ্বনি করেছে। মানুষের বানানো বর্ণব্যবস্থাতে রবিদাসরা নাকি হিন্দুসমাজে অচ্ছ্যুত, নীচু জাতি। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া গোমাংস সেবনকারী শত শত ব্রাহ্মণ - কায়স্থ পরিবারের ছেলেমেয়ের গালে জুতার বাড়ি হৃদয় রবিদাসের স্বধর্ম আঁকড়ে মৃত্যুবরণ করা।
সারাদিন ভেবেছি এ নিয়ে লিখব না। কিন্তু না লিখলে হয়তো ঘুমাতে পারব না। যারা আমার মত অঞ্জন দত্তের "রঞ্জনা আমি আর আসবো না" গানটা শোনেন, তাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হৃদয় রবিদাসের হত্যার বিচার চাওয়া।
#হৃদয়_রবিদাসের হত্যার বিচার চাই!
© Sayantan Saykat Ray
0 মন্তব্যসমূহ