ভিমের পান্টি

ভিমের পান্টি
ভিমের পান্টি, ছবি: উইকিপিডিয়া
 

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে


ভিমের পান্টি নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন একটি স্তম্ভ ও সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। এটি উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।


অবস্থান

নওগাঁ জেলা সদর থেকে ৬৭ কিলোমিটার দূরত্বে ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত। ধামইরহাট উপজেলা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে উপজেলার একেবারে পূর্বপ্রান্তে জয়পুরহাট জেলার সীমানা ঘেঁষা ৬নং জাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১ কি.মি দক্ষিন দিকে মুকুন্দপুর-হরগৌরী একালায় ভিমের পান্টি অবস্থিত।


স্থানাঙ্ক: ২৫°০৬′১৯.৩″ উত্তর ৮৮°৫৬′০৪.৩″ পূর্ব



ইতিহাস

১৭শ শতকের কোন একসময় জাহানপুর ইউনিয়নের আশেপাশে বেশ কিছু মন্দির ও অন্য স্থাপনার অস্তিত্ত্ব পাওয়া গিয়েছিল। তবে সেগুলো কে বা কারা তৈরি করেছিলেন সে ব্যাপারে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। জনশ্রুতি অনুসারে, বীরেশ্বর-ব্রহ্মচারী নামক একজন সাধক এখানে এসে বসবাস শুরু করেন ও তিনি বেশ কয়েকটি ঢিবি পরিষ্কার করেন। অনেক স্থাপনাই বর্তমানে খুঁজে পাওয়া যায় না তবে ১৯৭৮ সালের দিকে একটি স্থানে কালো পাথরের তৈরি একটি মূর্তি পাওয়া যায়। বীরেশ্বর-ব্রহ্মচারী কোন একটি ঢিবির উপর ছোট আকারের ৪ টি মন্দির নির্মাণ করে উক্ত মূর্তিটি স্থাপন করেছিলেন বলে জানা যায়।


ঢিবির পাশেই একটি ভাঙা দেয়াল ছিল বলে ধারণা করা হয়। দেয়ালে উত্তরাংশে বর্তমানে ফসলি জমির মাঝে একটি কালো পাথরের লম্বা খন্ড হেলানোভাবে রয়েছে, সেটিই ভিমের পান্টি নামে পরিচিত।


ভিমের পান্টি সম্পর্কে স্থানীয় জনশ্রুতি হল, মহাভারতের ভীমের সাথে স্তম্ভটির সম্পর্ক আছে। ভীম রাতভর জমিতে হাল চাষ করতেন। সূর্য উঠার আগেই তার ফিরে যাওয়ার নিয়ম ছিল। কোন এক রাতে হাল চাষ দেরিতে শেষ হওয়ায়, তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় ভীম হাতের পান্টিটি ফেলে যান। সেটিই বর্তমানের স্তম্ভ।


 ভীমের পান্টি কৈবর্ত রাজা ভীম দ্বারা দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত বলে ঐতিহাসিকদের মত।


অবকাঠামো

ভিমের পান্টি পাথরের লম্বা খন্ডটি বীরেশ্বর-ব্রহ্মচারী ঢিবি থেকে দক্ষিণে ৮১ দূরত্বে অবস্থিত। ভিমের পান্টির আকৃতি অনেকটা প্রলম্বিত মোচার ন্যায়। মসৃণ এ খণ্ডটির ৩.৭৯ মিটার উঁচু ও গোড়ার দিকে এর ব্যাস ১.৮০ মিটার। পূর্বে এই খণ্ডটির মাথায় একটি পাখির মূর্তি বসানো ছিল। বজ্রপাতের ফলে মূর্তিটি উপর থেকে ভেঙে গিয়েছিল এবং স্তম্ভটি একদিকে একটু হেলে গিয়েছিল।


ভিমের পান্টির উপরের দিকে সংস্কৃত ভাষায় ২৮ লাইনের একটি লিপি খোদাই করা রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদগণদের মতে, পাল সাম্রাজ্যের নারায়ণ পালের মন্ত্রী ভটুগুরুভ(৮৯৬-৯৫০) এই পাথর খন্ডটি স্থাপন করেন।


বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পরবর্তীতে ভিমের পান্টির চারিদিকে ইট দিয়ে বাধিয়ে দিয়েছে।


সূত্র: উইকিপিডিয়া (এ পৃষ্ঠায় শেষ পরিবর্তন হয়েছিল ১৮:৩৬টার সময়, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে।)


----------



এই ভীমের পান্টিতে কী লেখা হয়েছে তা অনেকের অজানা। ফেসবুক একটি এই বিষয়ক লেখা পাওয়া গেল। ফেসবুকের ওই পোস্টের মতে ভী‌‌মের পা‌ন্টিতে যা লেখা হয়েছে তার বাংলা অনুবাদ নিম্নরূপ:-


ভী‌‌মের পা‌ন্টির বাংলা অনুবাদ
******************

[ ভীমেরপান্টি বাদালস্তম্ভ গরুড়স্তম্ভ মঙ্গলবাড়ীস্তম্ভ ] কথা দিয়ে ছিলাম গরুড়স্তম্ভ’র লিখা গুলোর একটি সরল বাংলা আনুবাদ আপনাদের কাছে উপস্থাপন করব। ছোট্টবেলা থেকে শুনেছি এই লেখাগুলো কেউ পড়তেই পারেনি। গতকাল (০৯ জুন ২০২৫ খ্রিঃ) শেষ বার দেখে আসার সময়ও উপস্থিত দর্শনার্থীরা  ঐ একই কথা বলেন, “এটা কেউ পড়তেই পারেনি!” কথাটি সত্য নয়। ১৭৮০ খ্রিঃ স্যার চার্লস উইলকিন্স এটি আবিষ্কার করেন (স্যার চার্লস উইলকিন্স ”বাদাল কঠির” (নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার ঈসবপুর ইউনিয়নে বাদাল আশেকিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বদিকে কাচারীভিটা নামে  একটি উচুঁ ডিবি আছে ও সেখানে কুঠিপুকুর নামে একটা পুকুরও বর্তমান।)  অধ্যক্ষ ছিলেন।) তিনি পাথরের এই স্তম্ভটি  দেখতে পাওয়া পর এর লিখাগুলোর পাঠ উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তার সম্পাদনায় ১৭৮৫ সালের ১৪ জুলাই এই স্তম্ভলিপির একটি ইংরেজী অনুবাদ Asiatic Researches কর্তৃক প্রকাশিত হয়। সেখানে লিপিটির মুল ভাষা (সংস্কত) সংযুক্ত করা হয় নাই। নানাবিধ কারনে তাঁর অনুবাদটি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তাঁর চেষ্টা প্রসংসার দাবি রাখে। স্যার চার্লস উইলকিন্স ‘র অনুবাদটি পুনঃবার ১৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দে এসিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল (?)। এর প্রায় একশ বছর পর  দিনাপুরের ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর (বের্তমানের জেলা প্রশাসক পদ মর্যাদা) মিঃ ওয়েষ্টমেক্‌ট এর অনুপ্রেরনায় সংস্কৃত পন্ডিত মান্যবর হরচন্দ্র চক্রবর্ত্তি -র সম্পাদনায় এসিয়াটিক সোসাইটিতে প্রেরণ করলে তা ১৮৭৪ খ্রিঃ প্রকাশিত হয়। একই সাথে শ্রীযুক্ত প্রতাপচন্দ্র ঘোষজ কতৃক লিপিটির ইংরেজী অনুবাদও প্রকাশিত হয়। এই অনুবাদেও বেশ কিছু শ্লোকের অনুবাদ ও আনুষাঙ্গিক বিয়য়ে পন্ডিতগনের মধ্যে সঠিক অনুবাদ হয়নি বলে মতানৈক্য তৈরী হয়। এরপর বিখ্যাত লিপি বিশারদ প্রফেসর কিলহর্ণ  উইলকিন্স, পন্ডিত হরচন্দ্র চক্রবির্ত্তি পাঠটি সংষ্করণ করে ১৮৯৩ সালে (ইংরেজী ভাষায়) Epigraphia India পত্রিকায় পকাশিত হয়। প্রফেসর কিলহর্ণের এই পাঠটি অধিকাংশ পন্ডিতগন গ্রহনযোগ্য বলে মেনে নিয়ে ছিলেন।  কিছু ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হয়, তা নিয়ে বিজ্ঞজনদের সংশয় দেখা দিলে ”বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি”  অক্ষকুমার মৈত্র মহাশয়কে এর একটি বিশুদ্ধ পাঠ সংকলনের  গুরুদায়ীত্ব অর্পণ করেন। দায়ীত্ব প্রাপ্ত হয়ে মৈত্র মহাশয় “গরুড়স্তম্ভ-লিপি” নামে এই স্তম্ভের লিপিগুলোর একটি বাংলা পাঠ সংকলন করে ১৯০৫(?) সালে প্রাকাশ করেন। আমি এসব তথ্য-উপাত্ত্ব অনুসন্ধান করে  এই সংস্কৃত লিপির একটি সরল বাংলা অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি মাত্র। আমার ইচ্ছা ভীমের পান্টি নামে খ্যাত এই স্তম্ভলিপিটির ২৮ টি স্তবকে কি লেখা আছে তা সাধারণ জানুক ও তাদের কৌতুহল মেটাক। 

এখন ধারাবাহিক ভাবে প্রতিটি লাইন ও স্তববকের অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। আজকে প্রথম লাইন প্রথম স্তবকের মুল সংষ্কতলিপি পাঠ ও আমার সম্পাদিত সরল বাংলা পাঠ উপস্থাপিত করলাম।

প্রথম স্তবকঃ (মুল সংষ্কৃত ভাষা লিপি)
शाण्डिल्यवंशेभूद्वीरदेव स्तदन्व
पाञ्चालो नाम तद्गीत्रे गर्ग स्तस्मादजायत॥
शक्रः पुरोदिशि पति र्न दिगन्तरेषु
तत्रापि दैत्यपतिभि र्जित एव

প্রথম স্তবকঃ (আমার সরল বাংলা অনুবাদ)
শান্ডিল্য বংশ-গোত্রে’র বীরদেব, তার গোত্রে পঞ্চাল এবং পঞ্চালের পুত্র গর্গ জন্ম গ্রহণ করেন।।

বিঃ দ্রঃ গর্গদেব গৌড়রাজের বিগ্র ও সান্ধিক ( বর্স্বতমান সময়ের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মন্ত্রী ছিলেন। গর্গদেব এর বাড়ী এই পাশেই হরগৌরী মন্দির। 

Post a Comment

0 Comments