মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা সম্পর্কে বিভ্রান্তির বিপরীতে একটি হিন্দুগ্রামের চিত্র - আরিফ রহমান

আরিফ রহমানের ফেসবুক পোস্ট
আরিফ রহমানের ফেসবুক পোস্ট
 



২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের ছয় তারিখ আমরা একাত্তরে সংগঠিত গণহত্যার জরিপ করতে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামে যাই। হিন্দু গ্রাম, গ্রামটায় একটা পুরুষ মানুষও দেখলাম না গায়ে কাপড় আছে, খুবই দরিদ্র এলাকা। 


সেই গ্রামে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরেটুরে দেখি কেউ আমাদের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না। না মানে একেবারেই না। আমরা ভাবলাম হয়তো আমরা ভুল গ্রামে এসেছি, অথবা আমাদের কোন ভুল হচ্ছে, এখানে কোন গণহত্যা হয়নি।


মন খারাপ করে একটা মাচার তলায় বসে বিড়ি খাচ্ছি, বিড়ি খেয়ে চলে যাবো। এর মাঝেই এক মধ্যবয়সী লোক আমাদের সামনে এসে বলল 'আপনারা যেইটা খুঁজতেছেন সেইটা তো আমার কাছে'। বলে বাম হাতের একটা আঙ্গুলের দিকে নির্দেশ করলেন। একাত্তরে তার বয়স ছিলো মাত্র এক, ছিলেন মায়ের কোলে, পাকিস্তানিদের গুলিটা লেগেছিলো তার হাতের একটা আঙুলে, একাত্তরের সেই ক্ষত এখনো বহন করে চলছেন। কোন স্মৃতি তার মনে নাই। তবে স্মৃতি যাদের মনে আছে তাদের তিনি চেনেন।সেই মানুষ গুলোর কাছে নিয়ে গেলেন। 

হরিণখোলা গ্রামের একজন হিন্দু ব্যক্তি
হরিণখোলা গ্রামের একজন হিন্দু ব্যক্তি


দশ মিনিট আগে এই মানুষগুলোর সাথে আমরা কথা বলে এসেছি, কেউ কিচ্ছু বলেননি। আবারও ফিরে গেলাম, এবার সেই ভদ্রলোক সাথে আছেন।


অনেক কষ্টে কিছু কথা বের হলো। বের হল ক্ষোভের ইতিহাস। এই হিন্দু গ্রামের প্রতিটি পরিবারের পিতাদের ধরে ধরে হত্যা করা হয়েছিলো। আজ সেই সন্তানেরা বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন কিন্তু অভিমানটা এখনো ছাড়তে পারেননি। পিতাদের হারিয়ে বিচলিত শৈশব আর কিশোর বয়স থেকেই তাদের সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। অভাব তাদের নিত্য সারথী। 


ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন দেখে তারা ছুটে ছুটে আসেন না। তারা বিরক্ত। তারা বললেন প্রতি বছর কেউ না কেউ আসে। কি লাভ? খাইতি পারি না।


সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামে কে শহিদ হইলো সেইটা নিয়ে ৫৩ বছরে কোন চেতনার সরকারের কিছু আসে যায় নাই। আমরা কেবল যুদ্ধটাকে উদযাপন করছি, শহিদদের শোক তর্পণ করি নাই। তারা কেবলই তিন লাখ আর তিরিশ লাখের মাঝখানের একটা নাম্বার হইয়া রইয়া গেছেন।


সূত্র: আরিফ রহমানের ফেসবুক পোস্ট

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ