পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের মহান কীর্তি | ধর্মীয় হিংস্রতা: ১৯৫০ এর পূর্ব পাকিস্তান ধর্মীয় দাঙ্গা [উইকিপিডিয়া]

পূর্ববঙ্গে ১৯৫০ এর দাঙ্গা - মুনতাসীর মামুন, মুর্শিদা বিনতে রহমান
পূর্ববঙ্গে ১৯৫০ এর দাঙ্গা - মুনতাসীর মামুন, মুর্শিদা বিনতে রহমান
 


হায়াত-মৌওত নাকি আল্লাহ করেন। সে জন্যই কি পূর্ববঙ্গের মুসলমানগন হিন্দুদের হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন ও তাদের বাড়িঘড় পুরানোতে লিপ্ত হয়ে ছিলো, যাকে পঞ্চাশের পূর্ব পাকিস্তান দাঙ্গা বলা হয়।


আমরা এ ইতিহাস পড়িনি। আমাদেরকে পড়ানো হয়নি। তাই আমরা তা জানিনা। তাই আমরা মানুষ হতে পারিনি।


এটি ১৯৫০ সালের সময়কালে পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল মহাদাংগা, যার ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, ১৯৪১সালের আদমশুমারি অনুসারে, পূর্ব বাংলার ২৮%  জনসংখ্যা ছিল অমুসলিম ও তাদের অধিকাংশই ছিল বাঙালি হিন্দু। তখন পশ্চিমবঙ্গের ৩০.২% জনসংখ্যা ছিলো মুসলিম আর বাকিরা হিন্দু। আজ বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৮% হিন্দু ও ২০২১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জন সংখ্যার ২৯% মুসলিম। 

পূর্ববঙ্গে, বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ নিয়ে গঠিত এলাকাগুলোতে ভারত ভাগের আগের দশকগুলোতে ধর্মগত সহিংসতার সাক্ষী অসংখ্য দাঙ্গা ও সহিংস্রতার ঘটনা।

১৯৪০-এর দশকে, পাকিস্তানের জন্য আন্দোলনে সে দাঙ্গার ঘনত্ব এবং তীব্রতা অযাচিত ভাবে বৃদ্ধি পায়।

১৯৪৬ সালের শেষ প্রান্তিকে নোয়াখালী ও ত্রীপুরা জেলার বাঙালি হিন্দুরা একের পর এক গণহত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও অপহরণের শিকার হয় ও অনেককে জোর করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়। যা নোয়াখালী দাঙ্গা নামে পরিচিত হয়।

পাকিস্তান হবার এক মাসের মধ্যেই ঢাকায় জন্মাষ্টমীর মিছিলে হামলা হয়, ১৯৪৮ সালে ধামরাই রথযাত্রা ও জন্মাষ্টমী মিছিল বন্ধ করা হয়, ১৯৪৯ সালে, দুর্গাপূজার বিরুদ্ধে সারা ঢাকা জুড়ে পোস্টার লাগানো হয় ও বিজয়াদশমীর দিন শত শত হিন্দু বাড়িতে আগুন দিয়ে প্রায় ৭৫০ হিন্দু পরিবারকে গৃহহীন করা হয়।

এ সংবাদ গোপন রাখার জন্য পাকিস্তান সরকার প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (পিটিআই) এর একজন সংবাদদাতা, সন্তোষ চ্যাটার্জিকে ২৫ই নভেম্বর, ১৯৪৯, কোনো অভিযোগ ছাড়াই কারারুদ্ধ করে এবং এক মাস পর মুক্তি দেয়।

এ নৃশংসতা ১৯৪৯ সালের আগস্ট থেকে তিন মাস ধরে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে অমুসলিমদের উপর সচল থাকে।

আগস্ট মাসে, সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা থানা এলাকার কয়েকটি হিন্দু গ্রামে পুলিশ ও আনসারদের সাথে মুসলিম জনতা একত্রে হামলা চালায়, বাড়িঘর লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে, হিন্দু গ্রামবাসীদের লাঞ্ছিত ও হত্যা করে ও হিন্দু নারীরা পুলিশ কর্তৃক ধর্ষিতা হয়।

এরপরই বরিশাল জেলার ভান্ডারিয়া গ্রামে হিন্দুদের উপর পুলিশ ও মুসলিম জনতা হামলা চালায়। ইতিমধ্যেই রাজশাহী জেলায়, ফাদার থমাস ক্যাটানিও রিপোর্ট অনুসারে পুলিশ সাঁওতাল গ্রাম আক্রমণ করে সাঁওতাল গ্রামবাসীকে গ্রেপ্তার করে এবং সাঁওতাল নারীদের ধর্ষণ করে।

১০ই ডিসেম্বর, ১৯৪৯, রাজশাহী বিভাগের পুঠিয়া রাজবাড়ী প্রাসাদে একটি মুসলিম জনতা আক্রমণ করে এবং বাড়ি ও ধন-সম্পদ দখল করে নেয়।

কালশিরা গণহত্যা

১৯৪৯ সালের ২০শে ডিসেম্বর, গভীর রাতে চারজন পুলিশ কনস্টেবল কমিউনিস্টের খোঁজার নামে খুলনা জেলার বাগেরহাট মহকুমার মোল্লাহাট থানার অন্তর্গত কালশিরা গ্রামে জয়দেব ব্রহ্মার বাড়িতে অভিযান চালায়।

কনস্টেবলরা ব্রহ্মার স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তার কান্না শুনে তার সঙ্গীরা মরিয়া হয়ে তাকে বাঁচাতে গিয়ে দুই কনস্টেবলকে আক্রমণ করে এবং যাদের একজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বাকি দু'জন কনস্টেবলের ডাকে প্রতিবেশীরা এসে তাদের উদ্ধার করে।

পরের দিন, জেলা পুলিশ সুপার সশস্ত্র পুলিশ দল এবং আনসারদের সাথে নিয়ে কালশিরায় আসে ও কালশিরা এবং অন্যান্য পার্শ্ববর্তী হিন্দু গ্রামে নির্দয়ভাবে আক্রমণ করে। তারপর তারা পার্শ্ববর্তী গ্রামের মুসলমানদেরকে হিন্দুদের সম্পত্তি লুট করতে বলে। ফলে অনেক হিন্দুকে হত্যা করা হয়, নারী-পুরুষকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়, মূর্তি ভাঙ্গা হয় ও হিন্দু ধর্মালয় অপবিত্র করা হয়।

সেখানে তিনটি গ্রাম ছাড়া, বাকি সকল গ্রামের ৩৫০টি বসতবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়, গবাদি পশু ও নৌকা কেড়ে নেওয়া হয়। এ গণহত্যার এক মাসের মধ্যে খুলনা থেকে প্রায় ৩০,০০০ জন হিন্দু ভারতে পালিয়ে যায়।


নাচোলে গণহত্যা


নাচোল ছিল রাজশাহী জেলার নবাবগঞ্জ মহকুমার একটি থানা। ভারত ভাগের সময় ভারতের মালদা জেলা থেকে সমগ্র নবাবগঞ্জ মহকুমা রাজশাহী জেলায় স্থানান্তর করা হয়। তার নাচোল থানাধীন এলাকাটি ছিল অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানে সাঁওতাল এবং বাঙালি হিন্দু জাতি যেমন ক্ষত্রীয়, ভুইন্দাস এবং কৈবার্তাদের বসবাস করত।

১৯৪৯ সালের শরৎকাল থেকেই মুসলিম নেতারা সেখানে নানা প্রকার প্ররোচনা, জবরদস্তি এবং কিছু ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে অমুসলিমদের উপর তে-ভাগা নীতি বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। তা সাঁওতাল গন প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করে।

১৯৪৯ সালের ৫ই জানুয়ারী, সাঁওতাল গন তাদের একজন গ্রামবাসীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চাঁদিপুর গ্রামে জড়ো হলে নাচোল থানার পুলিশ তাদের উপর গুলি ছোঁড়ে ও এ সময় ধস্তাধস্তিতে পাঁচজন পুলিশ গ্রামবাসীর কাছে প্রান হারায়।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়়য়ন পাকিস্তান সরকার ৭ই জানুয়ারি, ১৯৫০, ২০০০ সৈন্যের একটি শক্তিশালী দল এবং পুলিশ ও আনসারদের পাঠিয়ে বারোটি গ্রাম ভষ্মীভুত করে, তাদের কুঁড়েঘর ভাংচুর করে এবং চন্ডিপুর যাওয়ার পথে বহু গ্রামবাসীকে হত্যা করে। চণ্ডীপুরে তারা পুরুষদের ওপর নির্যাতন চালায়, নারীদের ধর্ষণ করে এবং বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। শত শত সাঁওতাল ও হিন্দুকে হত্যা করে। 


ইলা মিত্র


তারপর তারা রোহনপুর গ্রামের আন্দোলনের অন্যতম নেতৃ ইলা মিত্রকে সহ শতাধিক কৃষককে গ্রেফতার করে ও তাদের নাচোল থানায় নিয়ে পুলিশ তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। এতে প্রায় ১০০ জন কৃষক পুলিশের হাতে মারা যায়। ইলা মিত্রকে নাচোল থেকে নবাবগঞ্জ থানায় স্থানান্তর করার পূর্বে চার দিন ধরে পুলিশ তাকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করে।

"ইলা মিত্র, ইলা মিত্র, 

তুমি বেঁচে ছিলে তাই,

জীবনে সব হারিয়ে

বাঁচার গন্ধ পাই।"


নোয়াখালীর ফেনী মহকুমায়, ঢাকায় হামলা শুরু হওয়ার আগেই, ২রা ফেব্রুয়ারি, ১৯৫০, হিন্দুদের ওপর হামলা হয়।

এতে একজন হিন্দু নিহত ও সাতজন আহত হয় ও নয়টি হিন্দু দোকান লুট করা হয়।


ঢাকা জেলা


১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব সুকুমার সেন তার পূর্ববঙ্গের প্রতিপক্ষ আজিজ আহমেদের সাথে মুখ্য সচিব পর্যায়ের সংলাপ করতে ঢাকায় গিয়েছিলেন। ১০ই ফেব্রুয়ারি, সকাল ১০ টার দিকে, যখন আলোচনা চলছে, তখন রক্তমাখা পোশাক পরা এক মুসলিম মহিলাকে সচিবালয় ভবনে প্যারেড করতে আনা হয়েছিলো এই বলে যে কলকাতায় তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।


আর যায় কোথা!


সচিবালয়ের কর্মীরা অবিলম্বে কাজ বন্ধ করে হিন্দু বিরোধী স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করে ও নবাবপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তখন তাদের সাথে সাথে আরও অনেকে মিছিলে যোগ দেয়, যা ভিক্টোরিয়া পার্কে গিয়ে শেষ হয়। দুপুর ১২ টায় পার্কে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় যেখানে বক্তারা ও সচিবালয়ের কিছু কর্মচারীরা উগ্র হিন্দু বিরোধী বক্তৃতা করেন।

দুপুর ১ টার দিকে, জনসমাবেশ বড় হওয়ার সাথে সাথে জনতা হিন্দুদের দোকান ও বাড়ি লুট করতে শুরু করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। হিন্দুদের যেখানেই পাওয়া গেছে সেখানেই তাদের হত্যা করা হয়।

সেদিন সন্ধ্যা নাগাদ ঢাকার ৯০% হিন্দু দোকান লুট হয়ে যায়, অনেক পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ অফিসারদের উপস্থিতিতে হিন্দু গহনার দোকান লুট করা হয়। সাত ঘন্টার মধ্যে প্রায় ৫০,০০০ হাজার হিন্দু বাস্তুচ্যুত হয়। পিটিআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বনগ্রাম এবং মাকিমস লেন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। 

এ দুটি হিন্দু অঞ্চলের বেশিরভাগ বাড়ি সম্পূর্ণ লুট করা হয়েছিল, অনেকগুলি সম্পূর্ণরূপে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং উপাসনালয়গুলিকে অপবিত্র করা হয়েছিল।

তখনকার তরুণ নেতা তাজউদ্দীন আহমদ দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এ সকল ঘটনার তথ্য সংগ্রহের জন্য ঘুরছিলেন।  তিনি নবাবপুর, সদরঘাট, পাটুয়াটুলি, ইসলামপুর, ডিগবাজার, ইংলিশ রোড, বংশাল ও চক বাজার এলাকায় মুসলমানদের দ্বারা হিন্দুদের ধ্বংস ও ক্ষয়ক্ষতির জীবন্ত সাক্ষী হোন।

তারপর ১২ই ফেব্রুয়ারি বিকেলে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে ভারতগামী ৬০ জন হিন্দু যাত্রীর ওপর হামলা করা হয়।তেজগাঁও বিমানবন্দরে আগত সকল অমুসলিম যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

ঢাকায় গণহত্যা শুরু হওয়ার তিন দিন পর বিক্রমপুর ও লৌহজং গ্রামে আক্রমণ করা হয়। ১৫ই ফেব্রুয়ারি সিমুলিয়া মার্কেটে আগুন দেওয়া হয়, হিন্দুদের দোকান লুট করা হয়। ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১লা মার্চের মধ্যে, দিঘলী এবং লৌহজং থেকে হিন্দুদের উপর ছুরিকাঘাতের ১৫টি ঘটনা ঘটে। ২৮শে ফেব্রুয়ারি দিঘলী বাজারে সকল হিন্দুদের দোকান ভষ্মীভুত করা হয়। কালীগঞ্জ থানার অন্তর্গত পারুল্লা গ্রামে হিন্দুদের সব বাড়ি লুট করা হয়। তাছাড়াও খসাওয়ালা, গজারিয়া, কারার চর, চর সিন্দুর, পালাস ও সদরের চর গ্রামের সমস্ত হিন্দু বাড়ি লুট করা হয়।

ভারত সরকার সূত্রে জানা গেছে, সহিংসতার প্রথম দুই দিনে ২০০ হিন্দু নিহতদের মৃতদেহ দাহ করা হয়। তারা আরও দাবি করেছে যে ঢাকার ৮০,০০০ হিন্দুদের মধ্যে ৫০,০০০ কে হামলার সময় তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল।

১৯৫০ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী, ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্কিন পররাষ্ট্র সচিবকে চিঠি লেখেন যে ঢাকা এলাকায় ৬০০ থেকে ১,০০০ হিন্দু নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার আহত হয়েছে।


বরিশাল


১৩ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৫০, বরিশালে দাঙ্গা শুরু হয়। হিন্দুদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও অপহরণ করা হয়। পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রেসনোট অনুযায়ী, ১৩ই ফেব্রুয়ারি বিকেলে বরিশাল শহরে অজ্ঞাত দুই যুবক উস্কানিমূলক গুজব ছড়াতে শুরু করে। ফলে বাজারের অনেক দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। আরেকটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ফজলুল হককে কলকাতায় খুন করা হয়েছে। তাতে রাতে আটটি স্থানে আগুন দেওয়া হয়।

এর ফলে ৩০ টি বাড়ি ও দোকান ছাই হয়ে যায় এবং দশজন লোক মারাত্মকভাবে পুড়ে যায়। ১৬ই ফেব্রুয়ারির পর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয় যখন বরিশাল জেলার সদর মহকুমার গৌরনদী, ঝালকাটি ও নলছিটিতে নির্বিচারে হিন্দু সম্পত্তি লুট ও অগ্নিসংযোগ শুরু হয়।

বরিশাল-ঢাকার মধ্যবর্তী নৌপথে হিন্দু যাত্রীদের স্টিমারের মধ্যে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। বরিশাল জেলার মুলাদী নদী বন্দরে কয়েকশ হিন্দু বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পর হিন্দুরা থানায় আশ্রয় নেয়। মুসলমানেরা পুলিশ স্টেশন চত্বরের মধ্যে হামলা চালায় এবং আশ্রয়প্রার্থী হিন্দুদের অধিকাংশই থানার চত্বরে নিহত হয়।

স্কুলের একজন হিন্দু শিক্ষককে তার মুসলিম ছাত্ররা জীবন্ত অবস্থায় অগ্নীদাহ করেছিল, ও তারা আগুনের চারপাশে নেচে ছিল।

বর্তমান বাবুগঞ্জ উপজেলার বাবুগঞ্জ থানার অন্তর্গত মাধবপাশা গ্রামে দুই থেকে তিন শতাধিক হিন্দুকে এক মুসলিম জনতা ধরে নিয়ে যায় ও তাদেরকে সারিবদ্ধভাবে স্কোয়াট করে রামদা দিয়ে তাদের মাথা এক এক করে কেটে ফেলে।  মাধবপাশা জমিদার বাড়িতে ২০০ হিন্দু নিহত এবং ৪০জন আহত হয়।

ভোলা শহর থেকে ৭ মাইল দূরে ভোলা দ্বীপে মেঘনার তীরে ইলসাঘাট একটি স্টিমার স্টেশন। এটি বরিশাল ও চট্টগ্রামের মধ্যে স্টিমার রুটে পড়ে। ১৯৫০ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি, রয়্যাল স্টিম নেভিগেশন কোম্পানির এসএস সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ইলসাঘাটে নোঙর করে।

ইলসাঘাটে, এসএস সীতাকুণ্ডে আরোহণকারী বেশ কয়েকজন হিন্দু যাত্রীকে ক্রুরা গণহত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। এ গণহত্যায় ৩০ জন হিন্দু নিহত হয় ও তিনজন বেঁচে যায়।

সমসাময়িক মুসলিম প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, শুধুমাত্র বরিশাল জেলা থেকেই কয়েক হাজার হিন্দুকে হত্যা করা হয় এবং প্রায় দুই হাজার হিন্দু নিখোঁজ হয়।

গবেষক শুভশ্রী ঘোষ বরিশাল জেলায় নিহত বাঙালি হিন্দুর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার বলে উল্লেখ করেছেন।

ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র নির্মাতা সুপ্রিয় সেন অনুমান করেছেন যে প্রায় ৬,৫০,০০০ হিন্দু বরিশাল থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং পথে তাদের লুটপাট, হত্যা এবং অপহরণ করা হয়েছিল।


চট্টগ্রাম জেলা


১২ই ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে হিন্দুবিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়। ফজলুল কাদের চৌধুরী এ দাঙ্গার প্ররোচনা দেয় ও তা সংগঠিত করে। তখন রাতে শহরৈ আগুনে জ্বলে ওঠতো ও চট্টগ্রাম ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা যেমন নোয়াপাড়া, চৌধুরীর হাট, পটিয়া, বোয়ালখালী ও সীতাকুণ্ডে হিন্দুদের এ সময় হত্যা করা হতো।

একটি ঘটনায় পাহাড়তলীতে ট্রেনের প্রায় সব হিন্দু যাত্রীকে হত্যা করা হয়। মহা শিবরাত্রি উপলক্ষে সীতাকুণ্ডে জড়ো হওয়া হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর মুসলিম জনতা হামলা করে।

চট্টগ্রামের পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নেলি সেনগুপ্ত চট্টগ্রামে হিন্দু বিরোধী দাঙ্গার বিষয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে চিঠি লিখেছিলেন। তবে তাতে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়েছিলো বলে কোন তথ্য নেই। 

চট্টগ্রাম জেলায় পুলিশ পরিদর্শকসহ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের চারজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল ও তাদের মঠ ভেঙে ফেলা হয়েছিলো।

ফটিকছড়ি থানা এলাকার কয়েকটি বৌদ্ধ পরিবার এবং রাউজান থানার লম্বুরহাটে এক বৌদ্ধ জমিদারের বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফলে বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ লোক ভারতের লুসাই পাহাড়ে চলে যায়। 

এ গণহত্যার সংবাদ পেয়ে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ চট্টগ্রাম সফরে যান। প্রাক্তন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী সঞ্জীব প্রসাদ সেন তাকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে নিয়ে যান। প্রাক্তন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী এবং বীরেন্দ্র লাল চৌধুরীর সহায়তায় সেন দাঙ্গায় নিহত ব্যক্তিদের একটি তালিকা তৈরি করেন। তালিকা, তালিকাই রয়ে গেলো।


নোয়াখালী জেলা


১০ই ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী শহরে হিন্দুদের ওপর হামলা হয়। ১৩ই ফেব্রুয়ারি বিকেলে, ফেনীতে এস ডী ও, থানা এবং আদালত প্রাংগনের ২০০ গজের মধ্যে দিবালোকে হিন্দুদের উপর হামলা চালানো হয়। শহরের মাস্টারপাড়া, উকিলপাড়া, ডাকতারপাড়া, সহদেবপুর, বারাহাইপুর ও সুলতানপুরের মতো হিন্দু কোয়ার্টারে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন প্রভাবশালী সদস্য গুরুদাস কর নিহত হন। ফেনী শহরের হিন্দু এলাকাগুলো ধ্বংসের পর, সহিংসতা ফেনী ও ছাগলনাইয়া থানাধীন আশেপাশের গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে, যা প্রধানত নাথ সম্প্রদায় অধ্যুষিত একটি অন্চল ছিল।

বাঁশপাড়া, রামপুর, মধুপুর, শ্রীচন্দ্রপুর, বাসিকপুর, চকবস্তা, শিবপুর, বালিগাঁও গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে যায়। হামলায় ৪৫ জন হিন্দু নিহত হয়, ২০৫টি হিন্দু বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুট হয়।

হিন্দু নারীদের অপহরণ করে জোরপূর্বক মুসলমানদের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। বাবা, দাদা ও ছেলেকে হত্যার পর হরেন্দ্র করের কিশোরী কন্যা মিলা করকে জোরপূর্বক সিভিল সাপ্লাই ঠিকাদার সুলতান মিয়ার সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট বারিক মিয়ার ছেলে রহমত আলীর সঙ্গে রানুবালা নামে এক বিবাহিত হিন্দু মহিলাকে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া হয়।

২৩ শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এ আক্রমণ চলতে থাকে এবং ততক্ষণে ৪,৫০০ জন হিন্দু ফেনী কলেজের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করে। আরও ২,৫০০ জন হিন্দু নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশ্রয় নেয়।

যে যে হিন্দুরা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পালাতে চেয়েছিল তাদের পথে লুটপাট ও লাঞ্ছিত করা হয়। চাঁদপুর ও আখাউড়া রেলস্টেশনে হিন্দু নারী ও শিশুদের সমাবেশ করা হয়। আনসার, পুলিশ এবং মুসলিম জনতা তাদের আগরতলা বা কলকাতায় পালানোর অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। অমৃত বাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বেলোনিয়ায় প্রায় ৫,০০০ জন হিন্দু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।


সিলেট জেলা


সিলেটে ব্যাপকভাবে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ২০৩ টি গ্রাম ধ্বংস করা হয়েছিল এবং ৮০০ টিরও বেশি হিন্দু ধর্মীয় স্থান অপবিত্র করা হয়েছিল।

ধামাই, বড়ধামি, পূবঘাট ও বরইতলী গ্রামে প্রায় ৫০০ মণিপুরী পরিবার এঞদাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এমন কি সিলেটের গণভোটের পর থেকে হিন্দুরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে এবং তাই তারা পাকিস্তানের শত্রু বলে প্রচার করা হয়েছিল। ১৯৫০ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি বাগে ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা করা হয়। সিলেটের মুসলমানরা আশা করেছিল করিমগঞ্জ পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পরবে, কিন্তু তা ভারতের অভ্যন্তরে পরে যায়। এ নিয়ে তখন সিলেট আইনজীবী সমিতির কয়েকজন মুসলিম আইনজীবী ও করিমগঞ্জের মুসলিম মুখতাররা ভয়ানক সহিংসতার হুমকি দিতে থাকেন। 

১০ই ফেব্রুয়ারি সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থল বন্দর বাজারে একটি বিশাল পোস্টার টাঙানো হয়। হিন্দুস্থানে হিন্দুদের দ্বারা মুসলমানদের উপর অত্যাচার শিরোনামের পোস্টারটিতে দেখানো হয়েছে যে লাঠি ও অন্যান্য অস্ত্রে সজ্জিত হিন্দুরা মুসলমানদের গলায় দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ও মুসলিম হত্যার কারনে লুমডিং ও কলকাতায় রক্তের নদী বয়ে গেছে। স্থানীয় মুসলমানরা এ পোস্টারটি দেখে হিন্দুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে আরো মুসলমানদের উস্কানি দিচ্ছিলো। 

১১ই ফেব্রুয়ারি, গোবিন্দ পার্কে একটি সমাবেশে, হিন্দুদের রক্ত দিয়ে এর প্রতিশোধ নেবার আর্তনাদ উঠে। এ দিকে আবার ফজলুল হককে কলকাতায় খুন করা হয়েছে বলে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

শীঘ্রই সিলেটে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়। ১৩ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিবদের যোথ সিদ্ধান্তে সিলেটে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। জিন্দা বাজারে পৃথ্বীশ দাস নামে এক হিন্দু যুবককে ছুরিকাঘাত করা হয়। ১৪ই ফেব্রুয়ারি, আরো একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে করিমগঞ্জে মুসলমানদের গণহত্যা করা হচ্ছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক আইনজীবীদের এক সভায় বক্তৃতা করে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেন যে করিমগঞ্জে ৫,০০০ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে এবং মুসলমানরা করিমগঞ্জ থেকে বিপুল সংখ্যায় সিলেটে চলে এসেছে। তাতে সন্ধ্যায় জল্লাপাড়ের কাছে মতি দাস নামে এক বাঙালি হিন্দু যুবককে হত্যা করা হয়। তিনজন মণিপুরীকে ছুরিকাঘাত করা হয়, যাদের মধ্যে দুজন পরে মারা যায়।

১৪ই ফেব্রুয়ারি বিকেলে নামাবাজার বাজারে লুটপাট করে মুসলিম জনতা। ১৫ই ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে গ্রামে গ্রামে লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। সকাল ৯টায় মূর্তি গ্রামে হামলা হয়। শত শত বহিরাগত মুসলমান হিন্দু বিরোধী স্লোগান তুলে দত্ত সেনাপতি পরিবারের উপর হামলা চালায়। তারা নগদ টাকা, গয়না, বাসন-পত্র ও আসবাবপত্র লুট করে। পারিবারিক উপাসনালয় এবং মন্দিরের ছবিগুলি ধ্বংস করে বা তা জলাশয়ে ফেলে দেয়। এরপর জনতা আজমতপুর, দাসপাড়া, নাসিয়ানজি ও মহেশপুর গ্রামে চলে যায়।

রাত ৮টার দিকে সিলেট থেকে মাত্র ছয় মাইল দূরে নোয়াগ্রাম গ্রামে গুরুচরণ ধরের বাড়িতে হামলা হয়। পরের দিন সকাল ৭টায়, একটি ভারী সশস্ত্র মুসলিম জনতা গ্রামটি ঘিরে ফেলে। গ্রামে বসবাসকারী প্রায় ১,৫০০ হিন্দু পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে পালিয়ে যায়। জনতা পুরো গ্রাম লুট করে, তুলসী মঞ্চ এবং পারিবারিক মন্দিরগুলিকে অপবিত্র করে ও কয়েকটি বাড়িতে আগুন জ্বালীয়ে দেয়। 

পার্শ্ববর্তী মমরথপুর গ্রামে মহেন্দ্র চন্দ্র দে, কামাকান্ত ধর এবং অশ্বিনী কুমার দে সহ বহু হিন্দুর বাড়ি লুট করা হয়। জনতা অশ্বিনী কুমার দে-র এক মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরের দিন সে বিহ্বল মেয়ের অজ্ঞান দেহটি বাড়িতে ফিরে আসে। 

ঢাকাদক্ষিণে, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ভারত দত্তের দুই অবিবাহিত কন্যাকে অপহরণ করে উত্তেজিত জনতা। ১৮ই ফেব্রুয়ারি সকালে, তারা হতবাক অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসে। পরিবার পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ এক হাজার টাকার বিনিময়ে আদালতের বাইরে তা নিষ্পত্তির পরামর্শ দেয়।

সিলেট সদর থানাধীন গ্রামের অসংখ্য হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। ১৫ই ফেব্রুয়ারি, গঙ্গাজল গ্রামে দিনেন্দ্র চন্দ্র দেব পুরকায়স্থের বাড়ি লুট করে ও জোরপূর্বক তা দখল করে নেয় মুসলিম দুর্বৃত্তরা। সকাল ৯টায়, পূর্বের করিমগঞ্জ মহকুমার বাহুবল থানার অন্তর্গত সিলানি গ্রামে হামলা হয়। জনতা উস্কানিমূলক স্লোগান দেয় এবং হিন্দুদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বহু হিন্দুরা তাদের জীবন বাঁচাতে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে পালিয়ে যায় ও যারা যেতে পারেনি তাদেরকে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়। যারা ধর্মান্তরিত হতে অস্বীকার করেছিল তাদের হত্যা করা হয়। ঢাকাদক্ষিণ ও কচুয়াদীতে বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়েদের অপহরণ করা হয়।

হবিগঞ্জ মহকুমার চুনারুঘাট থানা এলাকায় কেতন দাস, অশ্বিনী নাথ ও বীরেন্দ্র নাথ সহ অনেক হিন্দু পরিবারকে জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়। ফেঞ্চুগঞ্জে স্টিমার কোম্পানির কারখানায় লুটপাট ও আগুন দেওয়া হয়।

পুলিন দে নামে একজন হিন্দুকে ইলাসপুরের কাছে খুন করা হয়। ফেঞ্চুগঞ্জ থানাধীন মাঝিগাঁওয়ে অম্বিকা কবিরাজ ও মাখন সেনের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বালাগঞ্জ থানা এলাকার রুকনপুর গ্রামে দিজেন্দ্র সেন, গোপেশ সেন ও শিবচরণ দাসের বাড়ি লুটপাট করা হয় ও সদস্যদের মারধর করা হয়।

মধুরাই ও কাঠালখোইতে হিন্দুদের মারধর করে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়। গোলাপগঞ্জ থানা এলাকায় ফুলসাইন গ্রামে বৈকুণ্ঠ রায় ও রাসবিহারী রায়ের বাড়িতে লুটপাট হয়। বিশ্বনাথ থানা এলাকায় দণ্ডপানিপুর গ্রামে হিন্দুদের সব বাড়ি লুট করা হয়।

সেখানে একটি গরু জবাই করে হিন্দুদের জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়। টুকেরকান্দি গ্রামে ঘোষ বাড়িতে লুটপাট করা হয়, যোগেন্দ্র ঘোষকে হত্যা করা হয়, ও বহু হিন্দুকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

সিজেরকাছে, পাল চৌধুরী এবং ব্রাহ্মণদের বাড়ি লুট করা হয়, এবং প্রত্যেককে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা হয়। বিমলা স্মৃতিতীর্থ নামে একজন হিন্দু পণ্ডিত ধর্মান্তরিত হতে অস্বীকার করেন। তার পবিত্র সুতো ছিঁড়ে তার উপর স্ট্যাম্প লাগানো হয়েছিল এবং তাকে বারবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। বলপ্রয়োগে ব্রাহ্মণদের শিখা ছিঁড়ে ফেলা হয়। প্রতিমা ভেঙে পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।

১৬ই ফেব্রুয়ারি, একটি ৩০০ জন শক্তিশালী মুসলিম জনতা আখরা গ্রামে আক্রমণ করে। তারা মূর্তিগুলি ধ্বংস করে এবং পালিয়ে যাওয়া পুরোহিতের পিছনে ধাওয়া করে। এরপর জনতা হরিপদ চৌধুরী ও বিমলা ভট্টাচার্যের বাড়িসহ পুরো গ্রাম লুট করে। ১৭ই ফেব্রুয়ারি, গুন্ডারা ঘরে ঘরে গিয়ে ব্রাহ্মণদের আক্রমণ করে। তাদের পবিত্র সুতো ছিঁড়ে তার উপর স্ট্যাম্প লাগায় এবং তাদের জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করে।

সুনাইতা ও কুরমা গ্রামে হিন্দু নারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। তাদের সিঁদুর ও শাঁখার চুড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। রাজাগঞ্জ আখড়া গ্রামে নীর ভট্ট ও রাম চন্দ্র ভট্টের বাড়ি লুট করা হয়। ১৭ই ফেব্রুয়ারি,  ৫০০ থেকে ৬০০ জনের একটি শক্তিশালী সশস্ত্র জনতা ছাতক থানার অন্তর্গত লাকেশ্বর গ্রামে আক্রমণ করে।

ব্রাহ্মণদের বাড়িঘর লুট করা হয়। তাদের মধ্যে দুজনকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ব্রাহ্মণদের পবিত্র সুতো ছিঁড়ে ফেলা হয়, তাদের শিখা কেটে ফেলা হয়। তাদের জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়। মারকুলে পুরো গ্রাম লুট করে জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়।

১৯শে ফেব্রুয়ারি জকিগঞ্জ থানার সদরপুর গ্রামে হামলা হয়। শুকলাল নমশূদ্রের বাড়ি লুট করা হয়। তার ভাই থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তাকে লাঠিচার্জ করে, পরে বেয়নেট দিয়ে আহত করে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে থানা থেকে বেড় করে দেয়া হয়।

রাতের বেলা গ্রামবাসীরা নিরাপত্তার জন্য সাঁতরে নদী পাড় হয়ে ওপারে আশ্রয় নেয়। পারগ্রামে অক্রুর নমশূদ্র ও রমেশ নমশূদ্রের বাড়িঘর লুটপাট ও জোরপূর্বক দখল করে নেয় মুসলমানরা।


রাজশাহী জেলা


২৮শে ফেব্রুয়ারি কলকাতাগামী আসাম মেইলে হামলা হয়।

তাছাড়াও ২৮শে ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলায় আবারো অশান্তি শুরু হয়। তানোর, নাচোল ও গোমস্তাপুর থানাধীন গ্রামে ব্যাপক হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

জোরপূর্বক হিন্দু বাড়ি দখল এবং হিন্দু নারীদের ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানিতে মালদহ জেলায় হিন্দুরা ভারতীয় ইউনিয়নে যাত্রা শুরু করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিহারি মুসলমানরা জোরপূর্বক বাঙালী হিন্দুদের বাড়িঘর থেকে বেড় করে দিয়ে দখল করে নেয়।

ভারত যাত্রার সময় হিন্দুরা সব ধরনের হয়রানির শিকার হয়। আনসাররা উদ্বাস্তুদের কাছে থাকা প্রায় সব জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করে। তল্লাশির অজুহাতে তারা হিন্দু নারীদের চরম ভাবে অপদস্থ করে।

১৭ই মার্চ, পাকিস্তান পুলিশ এবং আনসাররা বালুরঘাটের কাছে ভারতে পাড়ি জমানো সাঁওতাল উদ্বাস্তুদের উপর গুলি চালায়। এ গুলিতে ১৭ জন নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়।

পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী এবং আনসাররা সীমান্তের খুব কাছে এবং ভারতীয় ইউনিয়নের বালুরঘাট সংলগ্ন হরিহরপুর গ্রাম থেকে ২০টি হিন্দু পরিবারকে তাড়িয়ে দেয়। তারা ঘরের ছাদ ভেঙ্গে টিনের চালা, বিপুল পরিমাণ চাল, ধান, সরিষা, পাট ও বাসনপত্র নিয়ে যায়।

জাহানপুর গ্রামে হিন্দু উদ্বাস্তু নারীদের অলংকার জোরপূর্বক দখল করে নেয়। পূর্ববঙ্গের অভ্যন্তরে ফর্শিপাড়ায় অনুষ্ঠিত পশ্চিম দিনাজপুর জেলা এবং রাজশাহী জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সুপারদের মধ্যে বৈঠকে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বাঙালি হিন্দু, সাঁওতাল এবং অন্যান্য উপজাতিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাদের দৃঢ় সংকল্প প্রদর্শন করে। সে সময় বালুরঘাটের কাছে সীমান্তে বিপুল সংখ্যক বেলুচ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল।


ময়মনসিংহ জেলা


ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর ও কিশোরগঞ্জ মহকুমায় দাঙ্গা শুরু হয় ১১ই ফেব্রুয়ারি এবং তা ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে।

শেরপুরের আশেপাশের হিন্দু গ্রাম, যেমন লক্ষ্মণপুর, মুছেরের চর, চর শেরপুর ঝাঁকাটা, ভাতসানা এবং সাপমারীতে হিন্দুদের উপর আক্রমণ চলে ও তাদের বাড়িঘর লুট করা হয় ও তা পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

তাছাড়াও আটকাপাড়া, ফিরোজপুর ও বুড্ডা গ্রামের হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। জুমপুর গ্রামে তারক সাহার পরিবারের তিন সদস্যকে হত্যা করে তাদের বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

১২ই ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের মধ্যে আখাউড়া-ভৈরববাজার রেলপথে হিন্দু যাত্রীদের গণহত্যা করা হয়। লন্ডন ইকোনমিস্ট ও ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানের প্রতিবেদক টয়া জিনকিন জানিয়েছেন, আশুগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহগামী ট্রেনগুলো মেঘনার ওপর ভৈরব সেতুতে থামিয়ে দেওয়া হতো ও মুসলিম জনতা ব্রিজের দুই পাশ থেকে হিন্দু যাত্রীদের ওপর হামলা চালাতো।

যারা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে তীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল তাদের ইটপাটকেল দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল এবং জোর করে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শী পিয়েরে দিলানির মতে ভৈরব সেতুতে প্রায় ২,০০০ হিন্দু সেদিন গণহত্যার শিকার হয়েছিল।

একই দিন ভৈরব বাজার ও কিশোরগঞ্জের মধ্যবর্তী রেলস্টেশন সরারচরের কাছে ট্রেইনে থাকা হিন্দু যাত্রীদের ওপর হামলা করা হয়।


যশোহর জেলা


১০ই মার্চ, আনসারদের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা মুসলিম উদ্বাস্তুরা হিন্দুদের ভয় দেখাতে শুরু করে। তারা ঝিনাইদহ মহকুমায় হিন্দুদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে জোরপূর্বক তাদের বাড়িঘর দখল করে নেয়।

তেঘরি গ্রামের সমগ্র হিন্দু জনগোষ্ঠী কলকাতায় চলে আসে। পথিমধ্যে আনসার ও পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম উদ্বাস্তুরা তাদের সমস্ত জিনিসপত্র জোরপূর্বক কেড়ে নেয়।

১৯শে মার্চ, মহেশপুর থানার অন্তর্গত জিনজিরা গ্রাম থেকে প্রায় ৪০০ হিন্দু উদ্বাস্তুর একটি দল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার হাঁসখালি থানার অন্তর্গত হাজারখাল গ্রামে পৌঁচেছিল। দলটি ইছামতি নদী পার হওয়ার সময় তিনজন সশস্ত্র পাকিস্তানি পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়, এতে একজন মারা যায়।

হিন্দু নেতাদের কারাবরণ

যখন গণহত্যা চলছিল, তখন বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সতীন্দ্রনাথ সেন, মুক্তিযোদ্ধা এবং বরিশালের পূর্ব বাংলার আইনসভার সদস্য (M.L.A) কে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে বলেন যে জেলায় শান্তি ও স্বাভাবিকতা রয়েছে।

সেন ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন।

১৫ই ফেব্রুয়ারি, সতীন্দ্রনাথ সেন, 307 C.C.P ও B.S.P.O. 1946 ধারায় গ্রেফতার হন এবং একজন সাধারণ বন্দী হিসাবে বন্দী হোন।  ১৮ই ফেব্রুয়ারি, সেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে একটি চিঠি লিখে বরিশালের পরিস্থিতি বর্ননা করেন কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি।

১১ই মার্চ, সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, সিলেট থেকে পূর্ব বাংলার আইনসভার সদস্য (M.L.A.) একটি জনসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার জন্য গ্রেফতার হন যেখানে তিনি হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন।

বিশ্বাসকে হাতকড়া পরিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ানো হয় ও পরে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয় ও তাকে কারারুদ্ধ করা হয়।

১৬ই মার্চ কালশিরা হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী সাত সদস্যের বেসরকারি তদন্ত কমিটির পাঁচ হিন্দু সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। কমিটি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল, যার বেশিরভাগই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট করা সহিংসতার উত্স এবং তার পরিমাণকে সমর্থন করে।

২৩শে মার্চ, কুলাউড়ার জমিদার ৭২ বছর বয়সী মোহিনী মোহন কর এবং কৃপেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের মতো বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতাসহ ৩০ জন নেতৃস্থানীয় হিন্দুকে সিলেট জেলার মৌলভীবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়।


পত্রিকা নিয়ন্ত্রণ বা প্রেস সেন্সরশিপ


ফেব্রুয়ারি মাসে নোয়াখালীর ফেনী মহকুমায় ভারতীয় সংবাদপত্রের সংবাদদাতাদের ওপর একাধিকবার হামলা চালানো হয়। পিটিআই সংবাদদাতা যাদুগোপাল দত্তের ছোট ভাই ডাঃ ধীরেন্দ্র কুমার দত্তকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

২রা শে মার্চ ১৯৫০ সালে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, পার্লামেন্টের একটি অধিবেশনে স্বীকার করেন যে পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত ভারতীয় সংবাদপত্র এবং পিটিআই-এর সাথে যুক্ত সমস্ত সংবাদদাতাদের অপমানিত ও অসম্মানিত করে  সংবাদ পাঠাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।


বাঙালি হিন্দুদের দেশত্যাগ: ১৯৫০ এর কালে


পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরা সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ হিন্দুরা আশ্রয় প্রার্থনা করে। কালশিরা হত্যাকাণ্ডের পর পশ্চিমবঙ্গে বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের একটি বড় আগমন ঘটে।

হাজার হাজার হিন্দু উদ্বাস্তু রেলস্টেশন, স্টিমার স্টেশন এবং ঢাকা বিমানবন্দরে আটকা পড়েছিল। শরণার্থীদের ভারতে আনার দায়িত্ব নেন ডঃ বিধান চন্দ্র রায়। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আটকে পড়াদের এয়ারলিফট করার জন্য তিনি ১৬টি চার্টার্ড প্লেনের ব্যবস্থা করেছিলেন।  তিনি ফরিদপুর ও বরিশাল থেকে আটকে পড়া শরণার্থীদের উদ্ধারের জন্য আরও ১৫টি বড় যাত্রীবাহী স্টিমারের ব্যবস্থা করেন।

১৯৫০ সালের মার্চ মাসে, পূর্ববঙ্গ থেকে আনুমানিক ৭৫,০০০ বাঙালি হিন্দু শরণার্থীকে পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী শিবিরে ভর্তি করা হয়েছিল। একই সময়ে প্রায় ২,০০,০০০ উদ্বাস্তু ত্রিপুরায় আসে।

আনুমানিক ১,১০,০০০ উদ্বাস্তু ১৯৫০ সালের ২রা এপ্রিল পর্যন্ত সিলেট জেলা থেকে আসামের করিমগঞ্জ জেলায় এসেছিলো।

১১ই এপ্রিল ১৯৫০ সালে, ২,৫০০ হিন্দু উদ্বাস্তু চারটি চার্টার্ড স্টিমারে বরিশাল থেকে হাওড়ার শালিমারে এসে পৌঁছায়। বরিশালে তখনও আরো ২০ হাজার শরণার্থী ভারতে যাবার জন্য অপেক্ষায় ছিল।

১৯৫০ সালের ১২ই এপ্রিল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম দিনাজপুর জেলায় পূর্ববঙ্গ থেকে ১,২০,০০০ শরণার্থী চলে আসে। এইভাবে ১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে দেশত্যাগ শুরু হওয়ার পর থেকে ৫,০০,০০০ এরও বেশি উদ্বাস্তু পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসে।

উদ্বাস্তুদের মোট সংখ্যা ছিলো বহু লক্ষাধিক। ১৯৫০ সালের ৪ঠা এপ্রিল, বিধান চন্দ্র রায় বলেছিলেন যে পূর্ববঙ্গ থেকে প্রায় দুই মিলিয়ন উদ্বাস্তু ইতিমধ্যে ইতিমধ্যেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর ভাষ্যমতে, ১৯৫০ সালে মোট ৩.৫ মিলিয়ন হিন্দু উদ্বাস্তু পূর্ববঙ্গ থেকে ভারতে এসেছিলো।

গবেষক এ. রায়ের মতে, প্রায় ৫,০০,০০০ হিন্দু হত্যাকাণ্ডে নিহত হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ ৪.৫ মিলিয়ন হিন্দু পূর্ববঙ্গ থেকে ভারতে চলে যায়।

অন্য দিকে সিন্ধু থেকেও প্রায় এক মিলিয়ন হিন্দু উদ্বাস্তু ভারতে চলে আসে।


ভারতের প্রটেষ্ট বা বিক্ষোভ


পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পাকিস্তান সরকারের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ৬ই মার্চ এবং পরে ১৬ই মার্চ কলকাতা আসেন ও তিনি বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের দুর্দশা দেখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের উপর জরুরী ভিত্তিতে এ নৃশংসতা বন্ধের আবেদন জানান।


--------- --------- --------- --------- 


ধর্মের এ অত্যাচারের শেষ নেই।  ধর্ম বিক্রি করে কিছু লোক পাকিস্তানের শাসক ও শোষক হয়ছে আর তা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতালোভী অদূরদর্শী পূর্ববঙ্গের নেতা-নেত্রীগন ও পাকিস্তানের জিন্নাহ, লিয়াকত, ইকবাল সহ আরো অনেকে ভারত ভাগ করে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আমাদেরকে এ জঘন্যতম হত্যাকান্ড,ধর্ষণ, অপহরণ,লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মত পাশবিক ও পৈশাচিক বর্বরতার শিকার হতে হয়েছে। তারা মুসলিমদেরকে ভুল বুঝিয়ে "লড়কে লেইংগে পাকিস্তান" এর ছলনায় মোহগ্রস্থ করেছিলো। আজকেও ভারতবর্ষের জনগন সেই অভিশাপে অভিশপ্ত। 


উৎস: 1950 East Pakistan riots - Wikipedia


সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ