আমরা যারা মেসে থাকি তাদের রুমমেট এবং মেসমেটরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুসলিম হয়। এই মুসলিমরা বন্ধুবেশে অনেক সময় তাদের ইসলামের গুণগান করে। সহজ সরল হিন্দু ছেলেমেয়েদেরকে তাদের হিন্দুধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবের কারণে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। তাদের সাথে কীভাবে কথা বলা উচিত, তাদের প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দেয়া উচিত সেই সম্পর্কিত এই রচনা। অর্থাৎ, কোন মুসলিম যদি আপনার কাছে ইসলাম প্রচার করতে চায় তাহলে কি বলবেন। যা বলবেন সে বিষয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত এই আলাপচারিতার লেখক বলেন-
আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব ব্রেন ওয়াশের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং কিভাবে ব্রেন ওয়াশকারী ধর্মান্তর করতে এসে উল্টো লেজ গুটিয়ে পালালো
আমাকে গত কিছুদিন ধরে একজন মাদ্রাসার ডিগ্রিধারী ব্যক্তি কিছু কথা বলছে। লোকটার বাড়ি আমাদের পাশের এলাকায়। তিনি আমায় কুশলাদি বিনিময়ের পর প্রথম জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোন জাতের?
আমি বললাম, আমি মালাকার ও বৈশ্য.
তিনি বললেন, আপনাদের তো উচ্চবর্ণের লোকেরা খুব একটা সম্মান দেয় না তাই না?
আমি বললাম, কেন দিবে না? আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী আমি সম্মান পাই। তবে অনেকে অন্য চোখে দেখে কিন্তু তাই বলে সবাই এক নয়।
তিনি বললেন, ইসলামের চোখে সবাই এক। ইসলামে সকল মুসলমানই সমান। কেউ বড় নয় কিংবা ছোটো নয়। ইসলাম সাম্যাবস্থা বজায় রাখে প্রতিটি ক্ষেত্রে। আপনি একটু ভেবে দেখবেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি ভাববো? আপনার ধর্মে কি হচ্ছে বা না হচ্ছে তা নিয়ে আমি কেন ভাবতে যাবো?
তিনি বললেন, ভাবলে আপনারই সুবিধা। সকলেই আপনাকে সম্মান করবে তখন।
আমি বললাম, সম্মান তো এখনো পাচ্ছি।
তিনি এক প্রকার জোর করেই বললেন, না পাচ্ছেন না। আপনি অনেক ভদ্রলোক। এলাকায় আপনাকে কারো সাথে বেয়াদবি করতে দেখিনি, পড়ালেখায়ও ভালো আপনি। কিন্তু আপনার সম্প্রদায়ের লোকজন আপনাকে কোনো মর্যাদাই দেয় না। আপনি কোনো মন্দিরের কমিটিতে আছেন? আমি জানি আপনি নেই।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। সে আমাকে তাহলে অনেক দিন ধরেই অনুসরণ করছে। আমি তাকে বললাম, এগুলো সম্মানের মানদণ্ড হিসেবে দেখি না। তাই আমি ভালোই আছি।
তিনি বললেন, আপনাদের জাতের মধ্যে অনেক রেষারেষি। অনেক ভিন্নতা। শত্রুতা অনেক বেশি।
আমি তখন বুঝেই গেলাম তার উদ্দেশ্য। তিনি চেষ্টা করছেন আমাকে ব্রেইনওয়াশ করতে। তাই তার আসল উদ্দেশ্য মুখ থেকে বের করার জন্য বললাম, আমার তাহলে এখন কি করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
তিনি বললেন, আপনি মুসলমান হয়ে যান। আপনার যা যা সহায়তা লাগে তা আমরা করবো।
আমি বললাম, 'আমরা' বলতে কি বোঝাচ্ছেন? আপনার সাথে কি আরো অনেকেই আমাকে সাহায্য করবেন?
তিনি বললেন, অবশ্যই। আমাদের নও-মুসলিম সংগঠন থেকে আপনার সব ব্যবস্থা করা হবে। আল-আমিন মিশন থেকে শুরু করে সকলেই আপনার পড়াশোনা ও অন্যান্য বিষয়গুলোতে যা সাহায্য লাগে তাই করবে।
আমি জানতে চাইলাম, বিনিময়ে আপনারা কি চাইছেন আমার কাছে?
উত্তর দিলেন, ইসলামের জন্য কাজ করতে হবে।
এরপর আমি তাকে দুই দিন পর কথা বলতে বললাম। কারণ আমি একটু প্রস্তুতি নিতে চাইছিলাম। তিনি যা বললেন এর বিপরীতে কিছু বলতে গেলে আমার কিছু কথা জানতে হতো?
দুইদিন পর বিকেলের দিকে আমার এলাকায় দিঘির পাড়ে তিনি এসে আমাকে ডাকলেন। বলে রাখা ভালো আমার বাড়িটা দিঘির কাছেই। আমি এলে তিনি জানতে চাইলেন আমি কি ভাবলাম?
আমি বললাম, দেখুন, আপনি যা যা বলেছিলেন সে বিষয়ে একটু জানার চেষ্টা করেছিলাম। আমার কিছু প্রশ্ন আছে। আপনি যদি সঠিক উত্তর দিতে পারেন তাহলে আপনার জন্য সুখবর আছে আর না পারলে আপনাকে আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে।
তিনি বললেন, আচ্ছা বলুন কি আপনার জিজ্ঞাসা?
এবার বললাম, আচ্ছা, আপনি বলেছিলেন ইসলামের চোখে সবাই এক তাহলে নবীজি আর আপনি তো ইসলামের চোখে এক তাই না? তার সম্মান আর আপনার সম্মান তো একই?
তিনি বললেন, আস্তাগফিরুল্লাহ কি বলছেন এসব? নবীজির সাথে কারো তুলনা হয় না। তিনি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা।
আমি বললাম,কেন?
তিনি বললেন, নবীজি তো ইসলামের জন্য সারাজীবন কাজ করে গেছেন তাই স্থান আমাদের মাঝে সবার উপরে।
আমি বললাম, তাহলে তো ইসলামের চোখে সবাই এক নয়। প্রত্যেকের কাজ নির্ণয় করে দেয় যে সে কতটুকু সম্মানের যোগ্য। আমাদের সনাতন ধর্মে তো একজন মুচির জন্য ঈশ্বর যা, একজন রাজার জন্যও ঈশ্বর তাই। তাদের মধ্যে যে ঈশ্বরকে ডাকবে সেই পাবে। কর্মই মুখ্য। এটা তো তাহলে সকল ধর্মেই আছে।
তিনি চুপ করে গেলেন। কিছু একটা বলতে চাইছিলেন কিন্তু আমি আবার বললাম, আচ্ছা আপনাদের মাঝে তো জাতের ভেদাভেদ নেই তাই না?
তিনি বললেন, না নেই। (অল্প করে রেগে গেছেন)
আমি বললাম, আচ্ছা তাহলে শিয়াদের মসজিদে সুন্নিরা নামাজ পড়ে না কেন? তারা তো সবাই মুসলমান এবং আল্লাহর উপাসনাই করে। আমাদের মত তো কেউ শৈব, কেউ বৈষ্ণব এমন ব্যাপার না তাই নয় কি?
তিনি বললেন, আপনি মুসলমান হলে এসব নিজেই বুঝে যাবেন।
আমি এবার আসল জায়গায় আঘাত করলাম। বললাম, আপনি তো আমায় বলেছিলেন আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে ভিন্নতা বেশি। তাহলে আপনাদের মাঝে যে ভিন্নতাগুলো আছে সেগুলো নিয়ে কেন কথা বলেন না?
তিনি জোর দাবি করে বললেন, আমাদের মাঝে আর কোনো ভেদাভেদ নেই। থাকলে আপনি বলুন।
আমি জানতে চাইলাম, যদি বলতে পারি তবে কি করবেন?
তিনি বললেন, আপনি বলেন তো আগে। (খুব তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন)
আমি বললাম, আচ্ছা আপনাদের জান্নাতে কে যাবে?
তিনি বললেন, শুধু মুসলমান।
আমি বললাম, কোন মুসলমান? শিয়া নাকি সুন্নি?
তিনি বললেন, অবশ্যই সুন্নি।
আমি জানতে চাইলাম, সুন্নি তো দুই ধরনের হয়। মুকল্লিদ আর গের-মুকল্লিদ। এর মধ্যে কে জান্নাত পাবে?
তিনি একটু অবাক হলেন। বললেন, মুকল্লিদরা জান্নাতে যাবে।
এবার আমি বললাম, মুকল্লিদরা তো চার ভাগ। কোন ভাগের লোকজন জান্নাতে যায়?
সে খুব বিরক্ত হয়ে গিয়ে বললো, আপনি এত জানেন তাহলে এটাও তো জানার কথা। শুধু শুধু ঝামেলা করছেন কেন?
আমি বললাম, আপনি কথা দিয়েছেন আমি যা জানতে চাই বো তাই জানাবেন। তাহলে আমার প্রশ্নে আপনার সমস্যা কোথায়?
তিনি এক প্রকার বাধ্য হয়েই বললেন, হানাফিরাই সবচেয়ে উত্তম। তাই তারা আগে জান্নাতে যাবে।
এবার আমি বললাম, হানাফিরা তো দুই ধরনের হয়। দেওবন্দি আর বরেলভী। তাহলে এদের মধ্যে কারা শ্রেষ্ঠ আর জান্নাতে যাবে?
তিনি কিছুক্ষন চুপ করে তাকিয়ে থেকে বললেন, দেওবন্দিরা আরো উচ্চ শ্রেণির। তাদের ধর্মজ্ঞান বেশি তাই তারাই যাবে।
আমি বললাম, আর দেওবন্দিদের যে দুই ভাগ। হায়াতি আর মমাতি। এদের মধ্যে কারা সচরাচর জান্নাত পায়?
তিনি বললেন, ভাই আপনার সাথে কথা বললে আমার ঈমান দুর্বল হবে। আমি আজ আসি।
আমি বললাম, এটা কেমন কথা? আপনি তো আমায় বলেছিলেন সব বলবেন। আর এতদিন আপনিই আমাকে ডেকে ডেকে কথা বলেছেন অথচ এখন বলছেন আমার সাথে কথাকথা বললে আপনার ঈমান দুর্বল হয়ে যাচ্ছে? আমি কি মেয়ে নাকি? মেয়েদের গলার শুনলে নাকি আপনাদের ঈমান দুর্বল হয়। তাদের মসজিদে যাবার নিয়ম নেই। তারা নাকি শয়তানের বাহন।
তিনি উঠে দাড়িয়ে হাটতে যাবেন। আমি বললাম, ধর্ম কখনো খারাপ হয় না, খারাপ হয় ধর্মের মানুষ। বই মুখস্ত করলেই কেউ ভালো মানুষ হয়ে যায় না। ভালো থাকবেন। আর সনাতন ধর্মকে জানতে হলে আসবেন একদিন আমার কাছে। আপনাকে নিয়ে আজকে যেখানে যাবার কথা ছিল সেখানে নিয়ে যাবো। সত্যিকারের শান্তি পাবেন। ভালো থাকবেন।
- মানুষ আমি এটাই আমার পরিচয়।।
আর সবাই এইভাবে ব্রেন ওয়াশকারীর কবলে না পরে উল্টো দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে ওদের মুখ বন্ধ করে দিন.
জয় শ্রী রাম 🙏🚩🚩🚩
জয় সনাতন🙏🚩🚩
সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ