**গয়া’তে পিন্ড দান সম্পর্কিত তথ্যাবলী**
অনেকেরই গয়া তে পিন্ডদান নিয়ে জানার আগ্রহ আছে। অনেকের আগ্রহ থাকলেও শুধুমাত্র দুরের পথ, কেমন খরচ হবে তা না জানা এবং পান্ডা দের নিয়ে ভয়ংকর গল্প সকল ইচ্ছা শক্তি কে নষ্ট করে দেয়। আজ আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। আশা করি সকলের কাজে লাগবে।
**কত দিন লাগবে ?**
কমপক্ষে তিন দিন লাগবে। ধরুন আপনি বৃহষ্পিতিবার রাতে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে শুক্রবার দুপুরে কলকাতা পৌছাবেন, কলকাতা থেকে শুক্রবার রাতের ট্রেনে রওনা হয়ে গয়া পৌছে যাবেন শনিবার ভোরে। ষ্টেশন থেকে ভোরেই চলে যাবেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের আশ্রমে। সেখানে স্নান সেরে মন্দিরের পুরোহিত নিয়ে দুপুরের মধ্যে পিন্ডদান শেষ করে মন্দিরে ফিরে দুপুরে প্রসাদ নেবেন। বিকেলে বুদ্ধ গয়া ভ্রমন করে শনিবার রাতের ট্রেনে রওনা হয়ে রবিবার ভোরেই কলকাতা ফিরতে পারবেন। রবিবারেই বেনাপোল হয়ে রবিবার রাতের মধ্যেই ঢাকা উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে পরিকল্পনা ৪/৫ দিনের জন্য করাই ভাল।
**ভ্রমণ পরিকল্পনা :**
ভ্রমন নিরাপদ, আড়ামদায়ক ও নিশ্চিন্তে করতে চাইলে কমপক্ষে ৩০-৪৫ দিন আগে অবশ্যই হাওড়া-গয়া ও গয়া-হাওড়া ট্রেন এর টিকেট নিশ্চিত করুন। স্লিপার কোচ (নন এসি) জন প্রতি ভাড়া ৩০০ রুপি, থ্রি-টায়ার (এসি) জন প্রতি ভাড়া ৮০০ রুপি। ট্রেন টিকিট নিশ্চিত হওয়ার পরে ঢাকা-কলকাতা ও কলকাতা- ঢাকা আসা-যাওয়ার পরিকল্পনা নিশ্চিত করবেন।ঢাকা থেকে বাসে গেলে শ্যামলি সৌহার্দ্য সার্ভিসে যাবেন, নয়ত বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এ অনেক সময় লাগবে।
**কি কি নিতে হবে ?**
- ০১. পুর্ব পুরুষদের নামের তালিকা (যতটুকু জানেন)।
- ০২. পরিষ্কার ধূতি, পাঞ্জাবি/গেঞ্জি, পরিষ্কার প্যান্ট ও শার্ট পড়েও পিন্ডদান করা যায়।
**মস্তক মুন্ডন করতে হয় ?**
গয়া’তে পিন্ডদানে মস্তক মুন্ডনের নিয়ম নেই। পিন্ডদানের দিন রক্তপাত কাম্য নয়, মস্তক মুন্ডনে রক্তপাত হলে পিন্ডদান হবে না। কারো ইচ্ছে হলে মস্তক মুন্ডন করতে পারেন।
**পান্ডা কে এবং কেন সঠিক পান্ডার কাছে যাবেন ?**
যে স্থানে অথবা যে মন্দিরে পিন্ডদান করতে হয় সেই স্থানের/মন্দিরের স্থানীয় পুরোহিতরাই পান্ডা নামে পরিচিত। তারা বংশানুক্রমে বিভিন্ন ভৌগলিক অঞ্চল কে ভাগ করে একেক পান্ডা একেক অঞ্চলের দক্ষিনা পেয়ে থাকেন, যেমন কুমিল্লা অঞ্চলের পান্ডা আর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পান্ড এক নয়। গয়া পৌছালে আপনাকে বার-বার যে প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হবে তা হলো ”বাড়ি কোথায়?” আপনাকে যে যতবারই জিজ্ঞেস করুক না কেন আপনি বিরক্ত না হয়ে আপনার বাড়ির ঠিকানা বলবেন। প্রথমে আপনার জেলা পরে উপজেলা এবং পরে গ্রামের নাম বলবেন। কখনই দুরকমের ঠিকানা বলবেন না। সাধারন নিয়ম হচ্ছে নিজের স্থায়ী ঠিকানা বলা। ঠিকানা বলার পরে এক সময় আপনার সঠিক পান্ডা আপনার কাছে চলে আসবে। আমার সাথে একজন পিন্ডদান করেছিলেন যার স্থায়ী ঠিকানা কলকাতা কিন্তু তিনি পিন্ডদান করেছেন তার পুর্ব-পুরুষের ভিটা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ঠিকানায়। যদি আপনার বসত বাড়ি স্তানান্তরিত হয়ে থাকে তাহলে পুর্ব ঠিকানা অনুযায়ি পিন্ডদান উত্তম কারন তাহলে গয়াতে আপনি কুল পুরোহিত পান্ডার সন্ধান পাবেন শুধু তাই না, আরও ভাল যে বিষয় তা হচ্ছে পান্ডারা পিন্ডদানকারীদের বংশলতিকা সংরক্ষন করেন। যদি আপনি সঠিক পান্ডার কাছে পৌছান তবে আপনার নামও আপনার পুর্ব পুরুষদের নামের নিচে থাকবে। আপনি যদি আপনার কয়েক পুরুষের নাম জানেন এবং তাদের কেউ যদি গয়াতে পিন্ডদান করে থাকে তাহলে আপনি তাদের খাতায় আপনার পুর্ব পুরুষদের নাম ও পিন্ডদানের তারিখ দেখতে পারবেন। যাদের পরিবার কখনই মাইগ্রেট হয়নি তাদের এই সমস্যা নেই। যদি তীর্থ যাত্রীদের সাথে যেয়ে পিন্ডদান করেন তাহলেও নিজের ঠিকানা অনুসারে পিন্ডদান করবেন। দলনেতার বুদ্ধিতে তার দেওয়া ঠিকানা অনুসারে পিন্ডদান করবেন না।
**ভাষা**
গয়া তে সাধারনত হিন্দি ভাষাতে সবাই কথা বলে । তবে পিন্ডদান করতে গেলে আমাদের যে সকল এলাকাতে থাকতে ও ভ্রমন করতে হয় তারা সবাই বাংলা বোঝে। যে পান্ডাদের অধীনে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে সে সকল পান্ডা’রা বাংলা বলতেও পারেন। ভারত সেবাশ্রম সংঘের মহারাজ ও পুরোহিতরাও বাংলা বলতে পারেন। সুতরাং ভাষা নিয়ে সমস্যা নেই।
**কে পিন্ডদান করতে পারেন ?**
সবার বড়, মেঝ সবার ছোট ছেলে সন্তান একসাথে অথবা যারা যার সুবিধাজনক সময়ে তার পুর্ব পুরুষদের পিন্ড দান করতে পারবেন। তবে যার বাবা জীবিত রয়েছেন তিনি তার পিতামহ কিংবা প্রপিতামহের পিন্ডদান করতে পারবেন না। পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় অন্য কারো পিন্ডদান করা পিতৃ হত্যার শামিল।
ছেলে সন্তান না থাকেলে কুমারী কণ্যা সন্তান পিন্ডদান করতে পারবেন, কণ্যা বিবাহিত হলে কণ্যার বর পুত্র রুপে পিন্ডদান করতে পারবেন (যদি বর পিতৃহীন হন)। যদি কণ্রার বর পিতৃহীন না হন অথবা বর শশুড়ের পিন্ডদানে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন তবে কণ্যার প্রতিনিধি হয়ে যেকোন ব্রাহ্মন পিন্ডদান করতে পারবেন, সেক্ষেত্রে ব্রাহ্মন কেও পিতৃহীন হতে হবে। কণ্যা ও পুত্র জীবিত না থকেলে পুত্রবধূ পিন্ডদান করতে পারেন। কেহই না থাকলে পিতৃহীন যে-কেউ ভাই/ ভাতিজা/ ভাগ্নে /প্রতিবেশি এমন কি বন্ধুও পিন্ডদান করতে পারেন।
**কোথায় পিন্ডদান করতে হয় ?**
- ১: ফল্গু নদীর তীরে।
- ২: বিষ্ণুপদ মন্দিরে।
- ৩: অক্ষয় বটের নিচে।
স্বাভাবিক মৃত্যু হলে উপরের তিনটি স্থানে পিন্ডদান করতে হয়। যদি অ-স্বাভাবিক মৃত্যু (দুর্ঘটনা/ পানিতে ডোবা/ আগুনে পোড়া/ হত্যার শিকার/ আত্ম-হত্যা) হলে উপরের তিনটি স্থানে পিন্ডদান শেষে গয়া শহর থেকে আট কিলোমিটার দুরে প্রেতশিলা পাহাড়ের চুড়ায় পিন্ডদান করতে হয়।
**ভারত সেবাশ্রম সংঘ**
সমগ্র ভারতের অন্যান্য স্থানের মতো গয়া’তেও রয়েছে স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ভারত সেবাশ্রম সংঘের আশ্রম যেখানে ভক্তবৃন্দ রাত্রিযাপন করতে পারেন। যে কেউ সংঘ থেকে নির্ধারিত পুরোহিত নিয়ে পিন্ডদান করতে পারেন। মনে রাখবেন ভারত সেবাশ্রম সংঘ রাত দশ টা থেকে ভোর পর্যন্ত বন্ধ থাকে । এই সময়ে আপনি সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না।
**আসুন শুরু করা যাক :**
**০১. ভারত সেবাশ্রম সংঘ:**
আপনি যদি রাত দশটার আগে পৌছান তবে রেল স্টেশনের সামনে থাকা ভারত সেবাশ্রম সংঘের শাখা অফিসে পৌছে নিবন্ধন শেষ করবেন। সেখান থেকে অটো নিয়ে মূল আশ্রমে চলে আসবেন। আশ্রমের মহারাজের সাথে কথা বলে রুম/ডরমেটরি নিশ্চিত করুন। আশ্রম রুমের দরজায় তালা থাকেনা, তাই গেইটের বাইরে থেকে তালা ক্রয় করুন। পরে রুম ছেড়ে দিলে তালা ফেরৎ দিয়ে কিছু টাকা ফেরৎ পাওয়া যায়। আশ্রমের পরিবেশ খুব ভাল হলেও রুমের পরিবেশ আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি স্টেশনের পাশের হোটেলে থাকতে পারেন। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান শেষে পরিষ্কার কাপড় পরিধান করে ভারত সেবাশ্রম সংঘের অফিসে চলে আসবেন। সকাল সাতটার মধ্যে অফিসে যোগাযোগ করে উপবাসরত অবস্থায় লাইনে দাড়াবেন, তবে পুরোহিতরা জল পান করতে পারার কথা বলেন। মস্তক মুন্ডন করার নিয়ম নাই, তাও যদি করতে চান তবে সংঘের গেইটে অনেক নরসুন্দর (নাপিত) পাবেন সেক্ষেত্রে মুন্ডন করে স্নান শেষে লাইনে দাড়াবেন। আপনি যত আগে লাইনে দাড়াবেন তত দ্রুত পুরোহিত পাবেন এবং দ্রুত পিন্ডদান শেষ করতে পারবেন। লাইনে দাড়ানো অবস্থায় মহারাজ কিছুক্ষন পরামর্শ ও উপদেশমুলক বক্তব্য রাখবেন। আপনি অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে শুনবেন।
লাইন এগোতে এগোতে শেষে যখন আপনার পালা আসবে আপনি মহারাজ কে জানাবেন আপনারা কত জন অর্থাৎ একাধিক ভাই হলে সংখ্যা বলবেন। সাধারনত চারজন পিন্ডদান কারীর জন্য একজন পুরোহিত দেওয়া হয়। আপনি একা হলে আপনার সাথে আপনার আগের বা পরের তিন জন কে যুক্ত করে দওেয়া হবে। আপনি একা একজন পুরোহিত চাইলে তাও মহারাজ কে বলবেন। যদি অপমৃত্যু হয় তা হলে অবশ্যই মহারাজ কে বলবেন ।
ধরুন আপনি পুরোহিত পেয়ে গেলেন, পুরোহিত আপনাদেরকে নিয়ে আলাদা এক জায়গায় দাড়িয়ে কিছুক্ষন নিয়মকানুন বলবেন, কোথায় কত খরচ দিতে হবে সব বলে দেবেন। তারপর আপনি পুরোহিত কে প্রায় ২৫০ রুপি দিবেন । এই টাকা দিয়ে পুরোহিত পিন্ডদানের জন্য সকল সরঞ্জাম ও ফুল কিনবেন।
আশ্রমের গেইট থেকে পুরোহিতসহ বের হওয়ার সময় গেইটের বাইরে পান্ডাদের একজন প্রতিনিধি আপনাদের নাম ঠিকানা জেনে খাতায় লিখে রাখবেন, আপনি পরবর্তিতে এই ঠিকানাই সবাইকে বলবেন। [এখানে কোন টাকা দিতে হবে না]।
পুরোহিত আপনাদের সবাইকে নিয়ে অটো রিজার্ভ করে নিয়ে রওনা হবেন। এই অটো আপনাদের সবাইকে নিয়ে সব জায়গায় নিয়ে যাবেন এবং পিন্ডদান শেষে আশ্রমে ফেরৎ নিয়ে আসবেন। জন প্রতি অটো ভাড়া ৮০ রুপি।
**০২: ফল্গু নদী :**
ফল্গু নদী হচ্ছে অন্তঃসলিলা অর্থাৎ এই নদীর জল নদী-তলের অল্প নিচ দিয়েই প্রবাহিত হয়। একটু বালু খুড়লেই জল পাওয়া যায়। ফল্গু নদী এখন আগের মত নেই। কিছুদিন আগে নদীতে ড্যাম তৈরির কারনে এখন নদীতে সবসময় জল থাকে।
প্রথমে অটো যেয়ে দাড়াবে ফল্গু নদীর তীরে । সেখানে পৌছানোর কিছুক্ষন পর পর একজন পান্ডা এসে আপনার ঠিকানা জানতে চাইবে। আপনি কখনই বিরক্ত হবেন না। ভারত সেবাশ্রম সংঘের গেইটে যে ঠিকানা বলেছিলেন সবাই কে তাই বলবেন। যদি আপনি বলেন এখন বাড়ি কলকাতা আগে ছিল ফরিদপুর কিংবা এখন কুমিল্লা আগে ছিল চট্টগ্রাম, আর যদি দুই ঠিকানা দুই পান্ডার অধীনে হয় তবে আপনাকে নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হবে। আপনি পরবেন অনাকাঙ্খিত ঝামেলায়। যাই হোক অবশেষে সঠিক পান্ডা আপনাকে ঠিকই খুজে নেবে, আপনার টেনশন নেই।
পুরোহিত এই ফাঁকে পিন্ডদানের সকল কেনাকাটা সেরে নিবেন। সকল জিনিস ও আপনাদের সাথে নিয়ে নির্ধারিত স্থানে পিন্ডদান এর কার্যক্রম শুরু করবেন। আপনার সাথে দশ/বিশ টাকার [মোট ২/৩ শত টাকার] কিছু ভাংতি রাখবেন। তিন জায়গায় পিন্ডদানের সময় মন্ত্র পাঠের মাঝে মাঝে কিছু দক্ষিনা দিতে হবে।
ফল্গু নদীর তীরে পিন্ডদান চলাকালীন বা শেষে আপনার কুল পুরোহিত পান্ডার সাথে দেখা হবে। তিনি আপনার সাথে পিন্ডদান নিয়ে মিনিট খানেক কথা বলে দক্ষিনা প্রদানের জন্য বলবেন। আপনি আপনার সাধ্যমত পরিমান বলবেন, পান্ডা আপনার কাছে আরও আবদার করবেন, আপনি বিনয়ের সাথে কথা বলে সম্ভব হলে কিছুটা বাড়িয়ে তার হাতে প্রণামের সাথে প্রদান করবেন। এই পান্ডা আপনার নাম, পিতার নাম ও আপনার পিতামহের নাম লিথে রাখবেন। আপনি বিনয়ী থাকলে পান্ডারা কখনই আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না। এখানে উল্লেখ্য যে অনেকে পান্ডার প্রণামী হিসাবে ২০০/৩০০ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকাও প্রদান করেন।
**০৩: বিষ্ণুপদ মন্দির **
এখানে ভগবান বিষ্ণুর পা’য়ের চিহ্ন রয়েছে। ফল্গু নদীর তীরে কাজ শেষে আপনার পুরোহিত আপনাকে পাশেই অবস্থিত বিষ্ণুপদ মন্দিরে নিয়ে যাবেন। মন্দির চত্তরে প্রবেশের আগে আপনাকে সাথে খাকা মোবাইল ফোন গেইটে সিকিউরিটি ক্লক রুমে রেখে যেতে হবে। মন্দির চত্তরের ভেতরে পিন্ডদানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। চত্তরে কাজ শেষে পুরোহিত আপনাকে মুল মন্দিরের দরজায় নিয়ে যাবেন। সেখানে একজন পান্ডা্ আপনাকে কিছু মন্ত্র উচ্চারন শেষে কিছু প্রণামী চাইবেন। প্রণামীর পরিমান শুনে ভড়কাবেন না/ বিরক্ত হবেন না। আপনি বিনয়ের সাথে আপনার সাধ্যের কথা বলবেন এবং শ্রদ্ধার সাথে প্রণামী প্রদান করে হাতে রাখা পিন্ড নিয়ে মুল মন্দিরে প্রবেশ করবেন। এখানে উল্লেখ্য যে অনেকে পান্ডার প্রণামী হিসাবে ৫০/১০০ টাকা প্রদান করেন। মন্দিরের ভেতরের দেয়ালে চতুর্দিকের দেয়ালে পাথরের প্রতীমা রয়েছে। আপনি ঘুরে ঘুরে প্রণাম করে মন্দিরের মাঝখানে থাকা পাথরের উপর ভগবান বিষ্ণুর পদচিহ্নের উপর পিন্ডদান করে ”পা” স্পর্শ করে প্রণাম করে বেরিয়ে আসবেন।
**০৪: অক্ষয় বট **
পুরোহিত আপনাদের সবাইকে নিয়ে মন্দির থেকে বের হয়ে মেইন রাস্তায় চলে আসবেন। রাস্তায় আসার আগে গেইটে জমা রাখা ফোন অবশ্যই নিবেন। সেখানে দেখবেন সকালের সেই অটো যাকে নিয়ে আসছিলেন সে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে। অটোতে করে চলে আসবেন অক্ষয় বটের ছায়া তলের মন্দিরে। আপনার পুরোহিত পিন্ডদানের তৃতীয় কার্যক্রম শুরু করবেন। এখানকার কাজ শেষ পর্যায়ে এসে এবার পুরোহিত তার নিজের প্রণামী চাইবেন। একটা বিষয় মাথায় রাখবেন এই পুরোহিত আপনাকে নিয়ে পিন্ডদানের সকল কাজ সুষ্ঠভাবে করেছেন তাই তার প্রণামী যেন অবশ্যই সম্মানজনক হয়। পুরোহিত কে সধারনত ৮০০/১০০০ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকা প্রদান করে অনেকেই। এই পর্ব শেষ করে অক্ষয় বট কে সাতপাক ঘুড়ে প্রণাম করার সময় সেখানে থাকা পান্ডা আপনার কাছে প্রণামী চাইবেন, এখানে সধারনত ৫০/১০০ টাকা প্রদান করে অনেকে।
**০৫: প্রেতশিলা পাহাড় **
অপমৃত্যু হলে আপনাকে এখন যেতে হবে আট কিলোমিটার দুরে প্রেতশিলা পাহাড়ে। সেখানে হবে পিন্ডদানের চতুর্থ ও শেষ পর্ব। সেখানকার পান্ডাকেও দিতে হবে প্রণামী যা অনেকে ২০০/৩০০ টাকা প্রদান করে । তারপর উঠে যাবেন খাড়া ও নিস্তব্ধ পাহাড় বেয়ে চুড়ায়। চুড়ায় রয়েছে মৃত্যুর দেবতা যমের মন্দির, বিশাল প্রেতশিলা পাথর ও কালী মন্দির। যমের মন্দিরে মিনিট কয়েকের পুজো শেষ করে যৎসামান্য প্রণামী দিয়ে পাহাড় চুড়ায় কিছুক্ষন সময় কাটাবেন, ভাল লাগবে।
**সংক্ষেপে আনুমানিক খরচ (জন প্রতি) **
সকল খরচ রুপিতে।
- ক) হাওড়া থেকে গয়া স্টেশন (এসএল) : ৩০০.০০
- খ) স্টেশন থেকে ভারত সেবাশ্রম সংঘ : ১০.০০
- গ) রুম ভাড়া (নন এসি) এক রাত্র : ৬০০.০০
- ঘ) মস্তক মুন্ডন : ৫০.০০
- ঙ) পিন্ডদানের কেনাকাটা : ২৫০.০০
- চ) ফল্গু নদী তীরে পান্ডার প্রণামী : ৩০০.০০
- ছ) বিষ্ণুপদ মন্দিরে পান্ডার প্রণামী : ১০০.০০
- জ) অক্ষয় বটে পান্ডার প্রণামী : ১০০.০০
- ঝ) পুরোহিত প্রণামী : ১০০০.০০
- ঞ) অটো ভাড়া : ৮০.০০
- ট) অতিরিক্ত খুচরো (দক্ষিনার জন্য) : ৩০০.০০
- ঠ) প্রেতশিলা পাহাড়ে পান্ডা ও যমের মন্দির : ৫০০.০০
- ড) গয়া স্টেশন থেকে হাওড়া (এসএল) : ৩০০.০০
প্রেতশিলা পাহাড়ে যেতে হলে অটোভাড়া অতিরিক্ত ৬০০ টাকা এবং পুরোহিত প্রণামী ৫০০.০০ টাকা বাড়বে।
উপরের খরচ গুলি ধারনা দেওযার জন্য। সব খরচ রুপিতে । ধন্যবাদ সবাইকে।
Collected from Priya Sen
0 মন্তব্যসমূহ