ভারতীয় সভ‍্যতায় রাম - রয় প্রো

আজ ২২শে জানুয়ারি ২০২৪। আজ উদ্বোধন হবে অযোধ‍্যার রামমন্দির --রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা। সারা পৃথিবীতে ভক্তগণ রামকে স্মরণ করছেন, দর্শন করছেন আর অনুভব করছেন।


সমগ্রভারতবর্ষে হিন্দুমুসলিম নির্বিশেষে যোগ দিচ্ছেন --অযোধ‍্যার মন্দিরে রাম দর্শনে।


বাল‍্যকালে আমি রামকে জানি রামলীলায়। সেই আমার রামকে প্রথম শোনা -- প্রথম পরিচয়। আর একটু বড় হয়ে শুনলুম -- তাঁর কীর্তন। কৈশোরে আমি ছিলুম রামভক্ত সত‍্যবাদী -- মিথ‍্যে বলতুম না।রামভক্ত মিথ‍্যে বলে না, যেমন মিথ‍্যে বলে না রামভক্ত হনুমান। সকল বিপদে তাঁকে স্মরণ করতুম।

আর একটু বড় হয়ে জানলুম প্রয়োজনে মিথ‍্যে বলা যায়। এটা ধর্ম থেকেই শিখলুম। আর একটু বড় হয়ে রামকে সমালোচনা করলুম -- রাম পরাভূত তাঁর ব‍্যক্তিসত্তায় -- সমাজসত্তার কাছে আপনাকে বলি দিয়েছেন নিজের স্ত্রীকে বিসর্জন দিয়ে। কিন্তু ছোট করেছেন স্ত্রীর ব‍্যক্তিসত্তাকে। কারণ সত্তামাত্রই ভিন্ন ও অনন্য। এ ছিল আমার প্রথম পাশ্চাত্য শিক্ষার ফল।


ভারতীয় দর্শনে পরলোকে বিশ্বাস করাকে বলে আস্তিকতা -- বেদে বিশ্বাস করাকে বলে আস্তিকতা -- যে এই সব বিশ্বাস করে না, সে নাস্তিক। আমি ক্রমে ক্রমে নাস্তিক হলুম পাশ্চাত্যধরনে -- দার্শনিক কান্টের অজ্ঞেয়বাদী -- হিউমের সন্দেহবাদী হয়ে উঠলুম।


আস্তে আস্তে রামকে ভুলে গেলুম।


ক্রমে জীবনজিজ্ঞাসা প্রবল হয়ে উঠল। বুঝতে শিখলুম সময় ও সমাজভেদে সত‍্যমিথ‍্যার প্রকৃতি। বুঝলুম সমাজ -সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব ও বিচ্ছিন্নতা। বুঝতে চেষ্টা করলুম আপন সংস্কৃতি ও তার উত্তরাধিকার।আপন অধিকারের উপর আপন সাধনায় নিজের ভবিষ্যৎ নির্মাণ। বহুযুগের বহুজটিলতার নিরসন করে ইতিহাসের ধারায় বহুকালের বহুপরিশ্রমে আপন সমাজকে দেখতে শিখলুম আপন বিশ্বাস দিয়ে।


জেগে উঠল আপন বোধ আর সেখানে  ধরা দিল সমাজের বহুকালের সঞ্চিত মানবচেতনার অর্থ।

ভারতবর্ষে God নেই, আছেন প্রকৃতি ও তার শক্তিরূপ দেবতা --যাদের আমরা বলেছি ভগবান। মানব চেতনা ও আকাঙ্ক্ষায় এই শক্তি সর্বদা  সুন্দর ও মঙ্গলময়। এইজন‍্য পবিত্র। তাই এই দেবতাকে আমরা  পবিত্র স্থানে স্থাপন করেছি -- যাকে বলেছি মন্দির। এই মন্দির আমরা দর্শন  করি, ভগবানের শক্তিকে অনুভব করি --আপনাকে উদ্বোধিত করি। দেবতার শক্তির কাছে চাওয়া যায় না কিন্তু শক্তির সঞ্চার ঘটানো যায়  -- এই শক্তিকে যিনি সম‍্যকরূপে অনুভব করেছেন --  যিনি ভগবানের শক্তিকে ধারণ করেন -- তিনিও ভগবান। রাম এই ভগবান। মানুষ ভগবান হয়ে ওঠে শক্তিকে ধারণ করে।সকল ক্ষুদ্রতাকে অতিক্রম করেই শক্তিলাভ করি। আমরা তাকেই শ্রদ্ধা করি-- যিনি এই শক্তিলাভ করেছেন। তিনি আমাদের সকলের উপরে -- তিনি ভগবান।


রাম


আমাদের সকলের চেয়ে যিনি বড় ---যিনি আমাদের সকলকে অতিক্রম করে আছেন --যিনি আমাদের আর সকলের নমস‍্য --তিনি ভগবান --তিনি রাম। এই রাম আমাদের বহু যুগের বহুকালের সমাজে রাষ্ট্রে বহু মানুষের চেতনায় যুগ যুগ ধরে চির  আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। আমাদের আকাঙ্ক্ষা আপন অলক্ষ‍্যে  নতুন ভাব ও চেতনাবোধে তাঁকে চিরমঙ্গলের আলোকে পেতে চেয়েছে।


প্রকৃতি আমাদের শক্তি -- প্রকৃতিই আমাদের দেবতা। একদিন আমরা যেমন প্রকৃতির শক্তির মধ‍্যে এই দেবত্বকে অনুভব করেছি, তেমনি মানুষের মধ‍্যেও এই দেবত্বকে অনুভব করেছি -- মানুষের মানবীয় শক্তিই এই দেবত্ব। যে মানুষ আর সকলকে আপন কর্মে শ্রদ্ধায় বিশ্বাসে অতিক্রম করে আছেন -- তিনি বরণীয় -- তাঁকে দর্শন করে আমরা উদ্দীপ্ত হই --মানবশক্তিকে অনুভব করি --- আপনার মধ‍্যে বিশ্বাসকে ফিরে পাই।


সবকিছু পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের মধ‍্যে মানুষ চিরকালের একটি সমাজের মধ‍্যে আপনাকে বেঁধে রেখেছে।যুগ যুগে সমাজের এই কাঠামোর রূপ বদলেছে মাত্র। মানুষই ভাবনার আলোকে এই কাঠামোর নব নব রূপ তৈরি করে চলেছে। এক ও বহু -- এককালে ছিল রাজা ও প্রজার সম্পর্ক। এক বহুকে ধরে রেখেছে,বহু এককে মান‍্য করেছে। এক-এর ত‍্যাগ বহুর অস্তিত্বকে বয়ে নিয়ে চলেছে  বহুকে টিকিয়ে রেখেছে সার্থক করে তুলেছে। এখানেই এক-এর মহত্ত আর বহুর সার্থকতা।


"হৈমন্তী"- র বিসর্জনে যেদিন বাড়ির সকলে যোগ দিয়েছিলেন, সীতার বিসর্জনে সেদিন সেই প্রজার দলে সেই প্রজাদের যে আমিও একজন ছিলাম'। কিন্তু এই দশ-কে রক্ষায় ঐ এক রাম আপনাকে এবং আপনার প্রাণপ্রতিম অঙ্গ সীতাকে ত‍্যাগ করে দশের আকাঙ্ক্ষা রক্ষা করেছিলেন। এই এক -- যিনি ত‍্যাগ- কর্তব‍্যবোধে  আর সকলের উপরে তিনি রাম-- তিনি  ভারতবর্ষের চিরকালের ভগবান।এই রামই নমস‍্য প্রণম‍্য।


আজ দূর থেকে শতকোটি ভারতবাসীর রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিনে -- ভগবান রামকে আমার প্রণাম ।


সূত্র: ফেসবুক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ