রামমন্দির নিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে যে আবেগ উচ্ছ্বাস ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি, তারা যদি একবার দেখতো কিংবা অনুভব করত রাম মন্দির হওয়ার জন্য যখন বাবরি মসজিদের উপর আঘাত করা হয় তার প্রতিশোধে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপরে কি পরিমাণ ভয়াবহ বিভীষিকা, অত্যাচার নেমে এসেছিল।
কত মা বোনকে সেসময় ধর্ষণ করা হয়েছে, লক্ষ লক্ষ হিন্দুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, আর দেশান্তরী গল্পটা তো আর বিভৎস।
ভারতবাসীরা কি সেই ইতিহাস জানে!
তসলিমা নাসরিনের লজ্জা বইতে সে সময় হিন্দুদের উপরে নেমে আসা অত্যাচারের যে বর্ণনা করেছেন তার চেয়ে আরো হাজার গুণ বেশি অত্যাচার হয়েছে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর কিন্তু কিছু জামাতপন্থী কমিউনিস্টরা বলে সে সময় তসলিমা নাসরিন বিজেপির টাকা খেয়ে সে বই লিখেছে, কিন্তু আমার ওই ছোট বয়সে আমি সাক্ষী, আরও বহু হিন্দু সাক্ষী অত্যাচারের ভয়াবহ রূপ আমরা দেখেছি।
ভারতীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর বাবরি মসজিদ ভাঙার বিপরীতে বাংলাদেশের সে সময় লক্ষ লক্ষ মন্দির ভাঙ্গা হয়, পাঁচ লাখের উপরে হিন্দু দেশান্তরি হয়। বহু নারীকে ধর্ষণ করা হয়। সে সময় চট্টগ্রামের চাকরিজীবী হিন্দু নারীরা শাঁখা-সিন্দুর খুলতে পর্যন্ত বাধ্য হয়েছে। নোয়াখালীতে আমরা যে দুই কামরার কলোনিতে থাকতাম সেখানে শয়ে শয়ে হিন্দু নারী গিজগিজ করছিল। সীতাকুণ্ড হাজার হাজার হিন্দুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। চট্টগ্রামে কৈবল্য ধাম মন্দিরে কামধেনু গরুগুলোকে কেটে টুকরা টুকরা করে মন্দিরে বেদীতে রক্তের বন্যা করে দেয়া হয়েছিলো।
আফসোস, এই প্রজন্মের বাংলাদেশের হিন্দু ছেলেরা যারা রাম মন্দিরের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে তারা জানে না, তাদের একবার হলেও জানা উচিত এ রাম মন্দিরের পেছনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর কত রক্তাক্ত, কত চোখের জলের, কতো দেশান্তরীর ইতিহাস জমা আছে।
আমার কথা হচ্ছে মসজিদ ভেঙ্গে যেমন মন্দির করা ঠিক না, মন্দির ভেঙে মসজিদ করা ঠিক না। পুরনো ইতিহাসকে টেনে এনে আরেকটা ইতিহাসকে ভাঙতে গেলে পাশের দেশের
সংখ্যালঘু মানুষের উপর যে আগুনের লেলিহান দাবালন নেমে আসে, তখন সেই ইতিহাস ভাঙতে যেওনা।
কারণ নিজের দেশ নিজের চৌদ্দপুরুষের ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার মতো কষ্ট পৃথিবীতে নেই। নিজের প্রতিবেশীদের দেয়া আগুনের ঘর পুড়তে দেখার মতো কষ্ট আর নেই, নিজের কন্যাকে প্রতিবেশীর ছেলেরা ধর্ষণ করার মত লজ্জা আর নেই!
পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে মৌলবাদ নিষিদ্ধ হোক। এটাই চাই।
সূত্র: ফেসবুক
0 মন্তব্যসমূহ