প্রতিমা বিসর্জন কেন করা হয়? তাৎপর্য্য কি?

 

প্রতিমা বিসর্জন কেন করা হয়? তাৎপর্য্য কি?

আপনাদের সনাতন সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে মানুষের সর্বজনীন উপলব্ধির সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে। তাই আমাদের প্রতিটি আচার অনুষ্ঠান, উপাসনা পদ্ধতি এবং তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ সবই বাস্তব জীবনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। সনাতনের কোন আচার অনুষ্ঠানকে বাহ্য বিশ্লেষণে নয়, বরং তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য্যকে উপলব্ধি করে গুহ্যতত্ত্বসহ বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। 


জীবের দেহ গঠিত হয় পঞ্চভূতে। পঞ্চভূতে গড়া এই স্থুল দেহ জড়বস্তুর ন্যায়। এই জড়দেহে যখন আত্মা প্রবেশ করে তখন প্রাণের সঞ্চার হয়৷ একটি শিশুর যখন জন্ম হয় তখন পরিবারে আনন্দের উপলক্ষ তৈরি হয়, তারপর এই দেহকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় নানারকম সম্পর্ক। এই দেহের সাথে জড়িয়ে থাকে শত শত মানুষের ভালোবাসা-ঘৃণা, বন্ধুত্ব-শত্রুর সম্পর্ক। কিন্তু এই দেহটাই যখন প্রাণহীন হয়ে যায় তখন এই জড়দেহের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয় এবং এই দেহকে আগুনে পুড়িয়ে পুনরায় পঞ্চভূতে বিলীন করে দেওয়া হয়। 


একইভাবে এই জগতও পঞ্চভূতে গঠিত। পঞ্চভূতের এই পঞ্চ উপাদানে ঈশ্বরের মৃন্ময় প্রতিমা বা শ্রীবিগ্রহ তৈরি করা হয়৷ এই মৃন্ময়ী প্রতিমাও জড়বস্তুর ন্যায়। কিন্তু যখন পূজা শুরু হয় তখন ধ্যানমন্ত্রের মাধ্যমে সেই অনাদি ও অনন্ত চিন্ময় সত্ত্বাকে এই প্রতিমায় আহবান করা হয়। এই আচারকে বলা হয় প্রতিমায় প্রাণপ্রতিষ্ঠা। তখন আর এটা কেবল মৃন্ময়ী প্রতিমা নয়, সে প্রতিমায় অবস্থান করে ঈশ্বরের চিন্ময় সত্ত্বা। অতঃপর শাস্ত্রীয় বিধিপূর্বক পূজা অন্তে যথাযথ মন্ত্র উচ্চারণে সেই চিন্ময় সত্ত্বাকে দর্পনে (জলে প্রতিচ্ছবি) বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জন শেষে এই প্রতিমা আবারও প্রাণহীন জড়বস্তু। তাই আমরা এই প্রতিমাকে জলে ভাসিয়ে দিয়ে মৃন্ময়ী প্রতিকৃতিকে পঞ্চভূতে মিলিয়ে দেই। 


এই বিসর্জনে মা কিন্তু আমাদের ছেড়ে চলে যান না। তিনি কেবল বাহ্যিক উপস্থিতি ত্যাগ করে আমাদের অন্তরে গমন করেন। 


"তিষ্ঠ তিষ্ঠ পরে স্থানে স্বস্থানে পরমেশ্বরী। 

যত্র ব্রহ্মাদয় সর্বে সুরাস্তিষ্ঠন্তি মে হূদি।।"


অর্থাৎ; হে মা! তুমি আমার হৃদয়েই থাকো, যেখানে ব্রহ্মা এবং সব দেবতা বিরাজ করেন। 


এই বিষয়ে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের একটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়। রানী রাসমনির জামাতা মথুরবাবু একদা আবেগ-বশীভূত হয়ে বিজয়ার দিনেও দেবীকে বিসর্জন দেবেন না বলে জেদ ধরে বসেন। তখন ঠাকুর রামকৃষ্ণ তাঁকে বোঝান যে, বিজয়ার অর্থ দেবী-মা এবং সন্তানের বিচ্ছেদ নয়। মা কখনই সন্তান ছেড়ে থাকতে পারেন না।


ঠাকুর বলেন, ‘একদিন বাইরের দালানে বসে মা পূজা নিয়েছেন, আজ থেকে মা হৃদয়মন্দিরে বসে পূজা নেবেন।’ এই ব্যাখ্যায় মথুরবাবুর মনের আঁধার দূরীভূত হয়।


যাইহোক মায়ের বিসর্জনে সবাই বলি, "সংবৎ্সর ব্যতিতে তু পুনরাগমনায় চ:.." অর্থাৎ আসছে বছর আবার হবে। 


©Swastika-স্বস্তিকা 


সত্য ও সুন্দরের পথে স্বাগতম।।


# Link

++++++++++

আরও পড়ুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ