জন্মাষ্টমী তিথির মাহাত্ম্য - কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী

জন্মাষ্টমী তিথির মাহাত্ম্য - কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী


ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মের মহাপবিত্র তিথির নামই জন্মাষ্টমী। এ জন্মাষ্টমী তিথিতেই উদযাপিত হয় জন্মাষ্টমী ব্রত। এ ব্রত সম্পর্কে স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে, জন্মাষ্টমী ব্রত স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে সকল মানবেরই প্রতিবছর করা একান্ত কর্তব্য। এই ব্রত করিলে সন্তান, সৌভাগ্য, আরোগ্য, অতুল আনন্দ এবং ধার্মিকতা প্রভৃতি ইহকালে লাভ করে পরকালে স্বর্গপ্রাপ্তি হয়ে থাকে। স্কন্দপুরাণে আরো লিখিত আছে জন্মাষ্টমী ব্রতে চতুর্বর্গ ফল লাভ হয়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রকৃতিখণ্ডে সাবধান করে বলা হয়েছে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথি জন্মাষ্টমী পালন না করলেন  মনুষ্যের ব্রহ্মহত্যা জনিত পাপ স্পর্শ করে ।


কৃষ্ণজন্মাষ্টমীং রামনবমীং পুণ্যদাং পরাম্ । 

শিবরাত্রিং তথা চৈকাদশীং বারং রবেস্তথা॥

 পঞ্চ পৰ্ব্বাণি পুণ্যানি যে ন কুৰ্বন্তি মানবাঃ।

 লভতে ব্রহ্মহত্যাং তে চাণ্ডালাধিকপাপিনঃ ॥

( ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ: প্রকৃতিখণ্ড,৩০.১৬০-১৬১)


"যে সকল ব্যক্তি পুণ্যদায়ক শ্রীকৃষ্ণজন্মাষ্টমী, শ্রীরামনবমী, শ্রীশিবরাত্রি, একাদশী ও রবিবার এ পঞ্চপর্বদিনের নিয়ম কর্তব্য পালন করেন না, তারা চণ্ডাল অপেক্ষা অধিক পাপী; তাদের ব্রহ্মহত্যা জনিত পাপ স্পর্শ করে ।"


স্মার্ত অর্থাৎ স্মৃতিশাস্ত্রের অনুসারীগণ এবং বৈষ্ণব পঞ্জিকা অনুসরণকারীদের মধ্যে জন্মাষ্টমী নিয়ে সামান্য মত পার্থক্য দেখা যায়। অধিকাংশ বাঙালির শাস্ত্রীয় কৃত্যাদি শ্রীরঘুনন্দন ভট্টাচার্যকে অনুসরণ করেই সম্পন্ন হয়। জন্মাষ্টমী বিষয়ে শ্রীরঘুনন্দনের মতামত হল, যেদিন জয়ন্তীযোগ (নিশীথ সময়ের পূর্বদণ্ডে বা পরদণ্ডে কলামাত্রও রোহিণী নক্ষত্রের যুক্ত হওয়া) হয়, সেই দিনই জন্মাষ্টমী ব্রত করিতে হয়, কিন্তু দুইদিনব্যাপী ঐ যোগ হলে পরের দিনে জন্মাষ্টমী ব্রত হয়ে থাকে। জয়ন্তীযোগ না হলে রোহিণীযুক্ত অষ্টমীতে জন্মাষ্টমী ব্রত অনুষ্ঠিত হয়। দুইদিনেই যদি রোহিণী নক্ষত্রযুক্ত অষ্টমী হয়, তা হলে পরদিনে, রোহিণী যোগ না হলে যেদিন নিশীথ সময়ে অষ্টমী থাকবে, সেই দিনেই জন্মাষ্টমী ব্রত করতে হবে। উভয় দিনে নিশীথ সময়ে অষ্টমী স্পর্শ করলে বা একদিনেও স্পর্শ না করলে পরের দিন জন্মাষ্টমী ব্রত করা কর্তব্য।


অথ ব্ৰতকালব্যবস্থা।। তত্রার্দ্ধরাত্রে রোহিণীকৃষ্ণাষ্টম্যোর্লাভে জন্মাষ্টমী ব্রতায় স এব 

কালস্তস্য মুখ্যত্বেনাভিধানাৎ। তথা চ বশিষ্ঠঃ। 

'অষ্টমী রোহিণীযুক্তা নিশ্যৰ্দ্ধে দৃশ্যতে যদি।

মুখ্যঃ কালঃ স বিজ্ঞেয়স্তত্র জাতো হরিঃ স্বয়ং’।

ভবিষ্যপুরাণবিষ্ণুধর্ম্মোত্তরয়োঃ। 

'অর্দ্ধরাত্রে তু রোহিণ্যাং যদা কৃষ্ণাষ্টমী ভবেৎ। 

তস্যামভ্যর্চ্চনং শৌরের্হন্তি পাপং ত্রিজন্মজং।. 

সোপবাসো হরেঃ পূজাং কৃত্বা তত্র ন সীদতি'। 

অয়মের জয়ন্ত্যাখ্যযোগঃ। তথা চ বরাহসংহিতায়াৎ।

'সিংহার্কে রোহিণীযুক্তা নরাঃ কৃষ্ণাষ্টমী যদি। রাত্রর্দ্ধপূর্ব্বাপরগা জয়ন্তী কলয়াপি চ'। 

বিষ্ণুধর্ম্মোত্তরাদিপুরাণয়োঃ।

'রোহিণীসহিতা কৃষ্ণা মাসি ভাদ্রপদেঽষ্টমী। সপ্তম্যামর্দ্ধরাত্রাধঃ কলয়াপি যদা ভবেৎ। 

অত্র জাতো জগন্নাথঃ কৌস্তুভী হরিরীশ্বরঃ। 

তমেবোপবসেৎ কালং তত্র কুর্য্যাচ্চ জাগরং'।। 

(তিথিতত্ত্ব: জন্মাষ্টমীতত্ত্ব, ১০১)


"অর্দ্ধরাত্রে রোহিণীনক্ষত্র, এবং ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষীয় অষ্টমী, এই উভয়ের যোগঘটিলে, তাই জন্মাষ্টমী ব্রতের কাল। ঐরূপ কালকেই জন্মাষ্টমী ব্রতের পক্ষে মূল কাল বলে অভিধান করা হয়েছে। এ বিষয় ঋষি বশিষ্ঠ বলেছেন, 'অৰ্দ্ধ রাত্রে অষ্টমী যদি রোহিণী যুক্ত দৃষ্ট হয়, তবে সে সময়কেই জন্মাষ্টমী ব্রতের মুখ্য কাল বলে জানবে। কারণ ঐরূপ কালেই স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতার রূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছেন'। ভবিষ্যপুরাণ এবং বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণে বলা হয়েছে, 'যৎ কালে অর্দ্ধরাত্রে রোহিণীতে কৃষ্ণাষ্টমীর যোগ হবে। সেই সময়েই শৌরি শ্রীকৃষ্ণের উপাসনায় ত্রিজন্ম সঞ্চিত মহাপাপকে বিনষ্ট করে। সেই সময় উপবাসী হয়ে হরির পূজা করলে, সকল প্রকার অবসাদ বিদূরিত হয়'। অর্দ্ধরাত্রে রোহিণী ও অষ্টমীর যোগই ‘জয়ন্তী যোগ' নামে বিখ্যাত। এ প্রসঙ্গে বরাহসংহিতায় বলা হয়েছে,— 


'হে নরসকল, সূর্যের সিংহরাশিতে অবস্থানের সময় কৃষ্ণপক্ষীয় অষ্টমী, যদি দুই দণ্ডসময়াত্মক অর্দ্ধ রাত্রের পূর্ব বা দণ্ড মাত্রে রোহিণী নক্ষত্রযুক্তা হয়, তবে জয়ন্তী নামক যোগ হয়'।


 বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ এবং আদি পুরাণেও বলা হয়েছে, 


'ভাদ্র মাসে কৃষ্ণাষ্টমী যদি বরাবর সপ্তমীর পর অর্দ্ধরাত্রের এক দণ্ডমাত্র পূর্বেও রোহিণীযুক্ত হয়, তাহলে সেই কালকে জগন্নাথ ঈশ্বর হরির জগতে অবতাররূপে অবতীর্ণ হওয়ার কাল বলে জানবে। সেইরূপ কাল যেদিন হবে, সেই দিনই উপবাস করবে এবং উপবাস করে সেই দিনই রাত্রি জাগরণ করিবে'।"


তবে বৈষ্ণব পঞ্জিকা মতে, বিশেষ করে হরিভক্তিবিলাস অনুসারে - যে দিন পলমাত্র সপ্তমী, সেদিন জন্মাষ্টমী ব্রত হয় না। নক্ষত্রের যোগ না থাকিলেও নবমীযুক্ত অষ্টমী গ্রাহ্য, কিন্তু সপ্তমীবিদ্ধা অষ্টমী নক্ষত্রযুক্ত হলেও অগ্রাহ্য। জন্মাষ্টমীর উপবাস তিথি বা নক্ষত্রের তারতম্যে অষ্টমী বা নবমীতে পালন নিয়ে মতানৈক্য হলেও শ্রীকৃষ্ণের জন্মের তিথি অষ্টমী নিয়ে কোন মতানৈক্য নেই। শ্রীকৃষ্ণের জন্ম রোহিনী নক্ষত্র যুক্ত অষ্টমীতে এটা সর্বশাস্ত্র এবং সর্বজন সম্মত। অগ্নিপুরাণে জন্মাষ্টমী ব্রতের মাহাত্ম্য এবং ব্রত উদযাপনের পদ্ধতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:


অগ্নিরুবাচ।

বক্ষ্যে ব্রতানি চাষ্টম্যাং রোহিণ্যাং প্রথমং ব্রতম্। 

মাসি ভাদ্রপদেঽষ্টম্যাং রোহিণ্যামৰ্দ্ধরাত্রকে ॥

 কৃষ্ণো জাতো যতস্তস্যাং জয়ন্তী স্ব্যাৎ ততোঽষ্টমী। 

সপ্তজন্মকৃতাং পাপামুচ্যতে চোপবাসতঃ ॥

কৃষ্ণপক্ষে ভাদ্রপদে অষ্টম্যাং রোহিণীযুতে ।  

উপোষিতোঽর্চয়েৎ কৃষ্ণং ভুক্তি মুক্তিপ্রদায়কম্।।

(অগ্নিপুরাণ:১৮৩.১-৩)


"অগ্নি বললেন, অষ্টমীব্রত মাহাত্ম্য কীৰ্ত্তন করছি। রোহিণীনক্ষত্রে প্রথম ব্রত করিতে হয়। ভাদ্র মাসের অষ্টমীতে রোহিণীনক্ষত্রে অর্দ্ধরাত্র সময়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতাররূপে অবতীর্ণ হন। এ মহাপবিত্র তিথিকে 'জয়ন্তী অষ্টমী' নামেও অবিহিত করা হয়। এই অষ্টমী তিথিতে উপবাস করলে, পূর্ববর্তী সাত জন্মের পাপ হতে মুক্ত হওতা যায়। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষে অষ্টমীতিথির রোহিণী নক্ষত্রে উপবাসী হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজার্চনা করলে, ভুক্তি (ভোজন, উপভোগ) এবং মুক্তি লাভ হয়। 


আবাহয়াম্যহং কৃষ্ণং বলভদ্রঞ্চ দেবকীম্।। 

বসুদেবং যশোদাং গাঃ পূজয়ামি নমোঽস্ত তে ॥ 

যোগায় যোগপতয়ে যোগেশায় নমো নমঃ ।  

যোগাদিসম্ভবায়ৈব গোবিন্দায় নমো নমঃ ॥ 

স্নানং কৃষ্ণায় দদ্যাং তু অর্ঘ্যঞ্চানেন দাপয়েৎ ॥

(অগ্নিপুরাণ:১৮৩.৪-৬)

"আমি শ্রীকৃষ্ণ, বলভদ্র, দেবকী, বসুদেব ও যশোদাকে আবাহন ও পূজা করছি। হে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ! তোমাকে নমস্কার। তুমি যোগস্বরূপ, যোগপতি ও যোগেশ, তোমাকে নমস্কার, বারবার নমস্কার। তুমি যোগাদিসম্ভব গোবিন্দ, তোমাকে নমস্কার, বার বার নমস্কার।- এই বলিয়া শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহকে স্নান বা অভিষেক করে পরম নিষ্ঠার সাথে পূজা করবে।"


শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহকে স্নান বা অভিষেক করিয়ে ধুপ, দীপ, গন্ধ, পুষ্পসহ দশোপচারে পূজা করতে হবে। 


যজ্ঞায় যজ্ঞেশ্বরায় যজ্ঞানাং পতয়ে নমঃ । যজ্ঞাদিসম্ভবায়ৈব গোবিন্দায় নমো নমঃ ॥ 

গৃহাণ দেব পুষ্পাণি সুগন্ধীনি প্রিয়াণি তে। 

সৰ্বকাম প্রদো দেব ভব মে দেববন্দিত ॥

ধূপধূপিত ধূপং তং ধূপিতৈত্ত্বং গৃহাণ মে। 

সুগন্ধ-ধূপগন্ধাঢ্যং কুরু মাং সর্ব্বদা হরে ॥

দীপদীপ্ত মহাদীপং দীপদীপ্তিদ সৰ্বদা। 

ময়া দত্তং গৃহাণ ত্বং কুরু চোৰ্দ্ধগতিঞ্চ মাম্ ॥

(অগ্নিপুরাণ:১৮৩.৭-১০)


"তুমি যজ্ঞ, যজ্ঞেশ্বর ও যজ্ঞসকলের পতি। তোমাকে নমস্কার। তুমি যজ্ঞাদি সম্ভব গোবিন্দ, তোমাকে বার বার নমস্কার। হে দেব! তোমার প্রিয় এই সকল সুগন্ধি পুষ্প গ্রহণ কর। হে দেববন্দিত আদিদেব! আমার সকল কামনা পূর্ণ কর হে ধূপধূপিত ! তুমি ধূপস্বরূপ, এই ধূপ গ্রহণ কর। হে সুগন্ধ ! হে হরে! আমাকে সর্বদা ধূপগন্ধসম্পন্ন কর। হে দীপদীপ্ত! তুমি মহাদীপস্বরূপ । তুমি সর্বদা দীপদীপ্তি প্রদান কর, তোমাকে নমস্কার। আমার প্রদত্ত এই জ্যোতির্ময় প্রদীপ গ্রহণ করে আমার ঊর্দ্ধগতি বিধান কর।"


ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রধান মন্ত্র 


"ওঁ ক্লীং শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ"। 


এই মন্ত্র উচ্চারণ করে ধুপ, দীপ, গন্ধ, পুষ্পসহ দশোপচারের প্রত্যেকটি উপাচারের সহযোগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পূজা করতে হবে। দৃষ্টান্ত দিলে বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে।


  • ১. এতৎ পাদ্যং ওঁ ক্লীং শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ।
  • ২. ইদমর্ঘ্যং ওঁ ক্লীং শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ।
  • ৩. ইদং আচমনীয় জলং ওঁ ক্লীং শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ।
  • ৪. ইদং স্নানীয়জলং ওঁ ক্লীং শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ।
  • ৫. ইদং পুনরাচমনীয় জলং ওঁ ক্লীং শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ।
  • ৬. এষ গন্ধঃ ওঁ ক্লীং শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ।
  • ৭. এতৎ পুষ্পং ওঁ ক্লীং শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ।
  • ৮. এষ ধূপঃ ওঁ ক্লীং শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ।
  • ৯. এষ দীপঃ ওঁ ক্লীং শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ।
  • ১০. এতৎ নৈবেদ্যং ওঁ ক্লীং শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ।


দশোপচারে পূজা শেষে প্রণাম মন্ত্র পাঠ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে শয্যা গ্রহণের আহ্বান করতে হবে।


বিশ্বায় বিশ্বপতয়ে বিশ্বেশায় নমো নমঃ ।  

বিশ্বাদিসম্ভায়ৈব গোবিন্দায় নিবেদিতম্ ॥

ধর্মায় ধৰ্মপতয়ে ধর্মেশায় নমো নমঃ। 

ধর্মাদিসম্ভবায়ৈব গোবিন্দ শয়নং কুরু ॥

সর্বায় সর্বপতয়ে সর্বেশায় নমো নমঃ।

 সর্বাদিসম্ভবায়ৈব গোবিন্দায় চ পাবনম্ ॥ 

(অগ্নিপুরাণ:১৮৩.১১-১৩)


"তুমি বিশ্ব, বিশ্বপতি ও বিশ্বেশ্বর, তোমাকে বার বার নমস্কার। তুমি বিশ্বাদিসম্ভব গোবিন্দ, তোমাকে আত্মনিবেদন করলাম, আমাকে ভবসমুদ্র থেকে উদ্ধার কর, উদ্ধার কর। তুমি ধৰ্ম, ধৰ্মপতি, তুমিই ধর্মেশ তোমাকে নমস্কার, বারবার নমস্কার। তুমি ধর্ম্মাদি সম্ভব গোবিন্দ, ভক্তের প্রদত্ত শয্যা গ্রহণ কর। তুমি সর্ব, সৰ্বপতি ও সর্বেশ্বর, তোমাকে নমস্কার, বারবার নমস্কার। তুমি সর্বাদিসম্ভব গোবিন্দ ।আমাকে পবিত্র কর।"


বিবিধ উপাচারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পূজা করে, রোহিনী নক্ষত্রের কারণে চন্দ্র এবং তাঁর শক্তি রোহিনীকে বিবিধ অর্ঘ্যদান করতে হবে।


ক্ষীরোদার্ণব সম্ভৃত অত্রিনেত্রসমুদ্ভব।

গৃহাণার্ঘ্যং শশাঙ্কেদং রোহিণ্যা সহিতো মম ॥

(অগ্নিপুরাণ:১৮৩.১৪)


"হে শশাঙ্ক! তুমি ক্ষীরোদসাগরে জন্ম নিয়ে এবং অত্রিনেত্র হতে জান্মগ্রহণ করেছ, এক্ষণে রোহিণীর সহিত মিলিত হয়ে আমার অর্ঘ্য গ্রহণ কর।"


স্থণ্ডিলে স্থাপয়েদ্দেবং সচন্দ্রাং রোহিণীং যজেং । 

দেবকীং বসুদেবঞ্চ যশোদাং নন্দকং বলম্ ॥ 

অর্দ্ধরাত্রে পয়োধারাঃ পাতয়েদ্ গুড়সর্পিষা।  

বস্ত্রহেমাদিকং দদ্যাদ্ ব্রাহ্মণান্ ভোজয়েদ্ ব্ৰতী ॥

(অগ্নিপুরাণ:১৮৩.১৫-১৬)


"দেবদেব বাসুদেব, চন্দ্রসহিত রোহিণী, দেবকী, বসুদেব, যশোদা, নন্দ ও বলভদ্রকে স্থণ্ডিলে স্থাপন করে পূজা করবে। অর্দ্ধরাত্র সময়ে গুড়সর্পিঃসমেত সকল বিগ্রহকে অভিষেক করবে। ব্রতী ব্যক্তি বস্ত্র ও হেমাদি করে দান এবং ব্রাহ্মণ ভোজন করাবে।"


জন্মাষ্টমী ব্রতের মাহাত্ম্য এবং ফলাফল:


জন্মাষ্টমীব্রতকরঃ পুত্রবান্ বিষ্ণুলোকভাক্‌। 

বর্ষে বর্ষে তু যঃ কুর্য্যাৎ পুত্ৰার্থী বেত্তি নো ভয়ম্ ॥ 

(অগ্নিপুরাণ:১৮৩.১৭)


জন্মাষ্টমী ব্রত করলে, পুত্রবান হয়ে বিষ্ণুলোক প্রাপ্তি হয়। পুত্রার্থী হইয়া, বর্ষে বর্ষে এই ব্রত করলে, জীবের কোন প্রকারের ত্রিতাপভয় থাকে না। 

জন্মাষ্টমী ব্রত সমাপনান্তে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা:


পুত্ৰান্ দেহি ধনং দেহি আয়ুরারোগ্যসন্ততিম্। 

ধর্মং কামঞ্চ সৌভাগ্যং স্বৰ্গং মোক্ষঞ্চ দেহি মে।। 

(অগ্নিপুরাণ:১৮৩.১৮)


"হে দেব ! আমায় পুত্র দাও, ধন দাও, আয়ু দাও, আরোগ্য দাও, সন্ততি দাও, ধৰ্ম্ম দাও, কাম দাও, সৌভাগ্য দাও, স্বর্গ দাও ও মোক্ষ দাও।"

পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে, মহাপাতক মানবও  যদি  মহা পবিত্র জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করেন, তবে সেই মহাপাতক ব্যক্তিও সর্বপাপ হতে  মুক্ত হয়ে ভগবানের পরমধাম লাভ করেন। জন্মাষ্টমী ব্রতের মাহাত্ম্যকথার সাথে সাথে পদ্মপুরাণে, যারা এই অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করেন না, তাদের উদ্দেশ্যেও সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যে সকল মনুষ্য মহাপবিত্র জন্মাষ্টমীব্রত পালন করেন না, তারা অধম। সে সকল ব্যক্তি ইহকাল ও পরকালে অত্যন্ত দুঃখ প্রাপ্ত হয়ে অবশেষে নরকে গমন করেন। পদ্মপুরাণে গৃহের লক্ষ্মীস্বরূপা নারীদের জন্মাষ্টমী ব্রতের পালন না করা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যে সকল নারী বর্ষে বর্ষে কৃষ্ণজন্মাষ্টমীব্রত পালন করে না, তারা অত্যন্ত মূঢ়া স্বভাবের। অন্তে তারা নিদারুণ নরকে নিপতিত হয়ে ভয়াবহ যমযন্ত্রণা ভোগ করে। এবং শুধু নারীই নয়, গৃহের যে মূঢ়বুদ্ধি ব্যক্তি জন্মাষ্টমীর পবিত্র দিনে ব্রতের নিয়ম ভঙ্গ করে ভোজন করে, তারাও ভয়াবহ মহানরকে যমযন্ত্রণা ভোগ করে।


মহাপাতকসংযুক্তঃ করোতি ব্রতমুত্তমম।      

 সর্বপাপবিনির্মুক্তশ্চান্তে যাতি হরের্গৃহম॥

কৃষ্ণজন্মাষ্টমী ব্ৰহ্মন্ ন করোতি নরাধমঃ। 

 ইহদুঃখমবাপ্নোতি স প্রেত্য নরকং ব্রজেৎ॥

ন করোতি চ যা নারী কৃষ্ণজন্মাষ্টমীব্রতম্।

বর্ষে বর্ষে তু সা মূঢা নরকং যাতি দারুণম্।।

জন্মাষ্টমীদিনে যো বৈ নরোঽশ্নাতি বিমূঢ়ধীঃ।

মহানরকমশ্নাতি সত্যং সত্যং বদাম্যহম।।

(পদ্মপুরাণ:ব্রহ্মখণ্ড, ১৩.৪-৭)


"মহাপাতকযুক্ত মানব যদি এই উত্তম জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করে, তাহলে সেই মহাপাতকীও সর্বপাপ থেকে মুক্ত হয়ে হরিগৃহ তথা ভগবানের ধাম প্রাপ্ত হয়। মানুষের মধ্যে যারা অধম তারাই এই কৃষ্ণজন্মাষ্টমী পালন করেন না। তারা ইহ ও পরকালে দুঃখ প্রাপ্ত হয়ে অবশেষে নরকে গমন করেন।

যে মূঢ়া নারী বর্ষে বর্ষে কৃষ্ণজন্মাষ্টমীব্রত পালন করে না, সে নিদারুণ নরকে নিপতিত হয়। যে মূঢ়বুদ্ধি ব্যক্তি জন্মাষ্টমীর পবিত্র দিনে ব্রতের নিয়ম ভঙ্গ করে ভোজন করে, আমি সত্য সত্যই বলছি সে মহানরক ভোগ করে।"



কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী 

সহকারী অধ্যাপক, 

সংস্কৃত বিভাগ, 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শুভ জন্মাষ্টমী!

সবাইকে শ্রীকৃষ্ণসম্বৎ ৫২৪৮ এর শুভেচ্ছা!


https://www.facebook.com/KushalBaranBD/posts/pfbid0PcBCddDx8imKQad4WuZMTwj8CHUAzsVyKYppgJBVnjuuNH9DrPaKChN83c6f3khul


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ