‘তমদ্দুন মজলিস’ নামের পূর্ব পাকিস্তানে গঠিন মুসলমানদের নিজস্ব সংস্কৃতি সুরক্ষার সংগঠনটি রাষ্ট্রভাষা বাংলা আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। অথচ ‘তমদ্দুন মজলিস’ শব্দ দুটি আরবী!
ভাষা আন্দোলনে রফিক জব্বারদের আত্মত্যাগ এখানে বাঙালি মুসলমানদের বাংলা ভাষার প্রতি অনুরাগ যা কোলকাতার প্রভাব মুক্ত হয়ে নতুন এক দিগন্ত হিসেবে দেখাতে ‘বাঙালি মুসলমান’ জাতীয়তাবাদীরা তত্পর। যে কারণে সর্বপ্রথম পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলার ডাক দেয়া ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাম প্রায় বিস্মৃত করে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তানের এ্যাসেম্বলিতে তিনিই বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবী করেন।
পূর্ব পাকিস্তান হওয়ার পর বাঙালি মুসলমান হিন্দুদের থেকে পৃথক হয়ে তাদের সমস্ত পত্রিকা প্রকাশনার নাম উর্দু না হয় আরবীতে রেখেছিলো কারণ ওগুলো মুসলমান হিসেবে আলাদা আইডেন্টি তৈরি করে হিন্দুদের থেকে! পূর্ব পাকিস্তানের পত্রিকার নাম- ইত্তেফাক, জিন্দেগী, সওগাত, মোহাম্মদী...। এসব কাগজেরই অনেকগুলি বাংলা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে ছিলো!
বাঙালি মুসলমানদের নাম আরবী না্ হয় উর্দুতে রাখা আজো একটি ট্রেডিশান কিন্তু উনারাই বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন!
বাংলাদেশী বাঙালি মুসলমানরাই একমাত্র ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন এটি চরম একটি মিথ্যাচার। এটি স্কুলেও পড়ানো হয় যা একটি ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী কট্টর মনোভাব। প্রকৃত ইতিহাস হচ্ছে, আসামে ১৯৬১ সালে ও ১৯৯৬ সালে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার জন্য নিজেদের প্রাণ উত্সর্গ করেছেন স্ব স্ব ভাষাভাষীরা।
বাঙালি মুসলমান একদিকে তার প্রত্যহ জীবনের স্বম্ভাষণে দ্রুত আরবীতে শর্টকার্ট করে ফেলছে। অন্যদিকে বাংলা ভাষা থেকে হিন্দুত্ব বাদ দিতে আরবী ফার্সি আমদানী করে সেটাকে মুসলমানদের বাংলা ভাষা হিসেবে হিন্দুদের থেকে আলাদা করে ফেলেছে। আর্য বামুনদের বাংলা ভাষা না হয় মুসলমানদের পছন্দ নয় কিন্তু বাংলা ভাষার আদি উত্স যে চর্যাপদ সে তো বৌদ্ধদের ধর্মগাথা! তাকে অস্বীকার করলে তো নিজেদের জন্য উর্দু ভাষাই বেস্ট!
সূত্র: সুষুপ্ত পাঠক
0 মন্তব্যসমূহ