কথায় বলে— একজন প্রকৃত বন্ধু এক হাজার আত্মীয়ের সমান। তাই প্রচলিত— বন্ধুত্বে কোনো ধর্ম হয় না, বর্ণ হয় না। আমরা যারা ইউনিভার্সিটি বা কলেজে পড়ি, তাদের এই বন্ধুত্ব ব্যাপারটাও ইউনিভার্সাল কনসেপ্টের হয়ে যায়। তাই— কথায় কথায় "দোস্ত" বলাটা খুবই কমন। নিজস্ব পরিচিত বন্ধু বা, বন্ধুর বন্ধু সার্কেলে ঘুরতে বা আড্ডা দিতে গিয়ে ফটো বা ছবি তোলাটাও নিত্যদিনের ঘটনা আমাদের সবারই প্রায়। কিন্তু বন্ধুত্বের মুখোশ পড়া এক মুসলিম ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে একটা সামান্য ফটো বা ছবি— কিভাবে সব প্রায় নোংরা করে দেয়, সেই অভিজ্ঞতার কথা বলি আজ।
ঘটনাটা যে মেয়ের সঙ্গে, সে আমার পরিচিত, তার মুখেই শোনা। একটা নরমাল গ্রুপ ফটো, তোলা হয়েছিল একটা অনুষ্ঠানে। তার বন্ধু সার্কেলে যে মুসলিম ছেলেটাকে সে নিতান্ত বন্ধু ছাড়া অন্য কিছুই কখনো ভাবেনি, সেই ছেলেটাও যে হিন্দু মেয়েটার প্রতি একটা কামুক দৃষ্টি দিতো— তা কে জানতো! সেদিন গ্রুপ ফটোটা তোলার সময় দূর্ভাগ্যবশতই মেয়েটা একটা কোণায় দাঁড়ায়, আর মুসলিম সেই মুখোশ পড়া ছেলে বন্ধুটিও সুযোগ বুঝে দাঁড়িয়ে পড়ে হিন্দু মেয়েটির পাশে। এখানে আরেকটা ব্যাপার, ফটোটা যেহেতু গ্রুপ ফটো, তাই ক্যামেরায় সবাইকে আনতে সবাই একটু কাছাকাছিই দাঁড়ায়। মোক্ষম সুযোগ পেয়ে যায় মুসলিম ছেলেটা, সেও এমনভাবে হিন্দু মেয়েটার পাশে দাঁড়ায়, যেন গ্রুপ ফটোটা থেকে তাদের দুজনের ফটো ক্রপ করে নিলে মনে হয়— নির্ঘাত গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড। নয়তো এমন গা ঘেঁষে কেউ ফটো তোলে!
সেই একটা ফটোই মেয়েটার কাল হলো। সেই মুসলিম তথাকথিত বন্ধুটি সেই ছবি শেষ পর্যন্ত ক্রপ করেই, আরো অনেককে এটা ওটা বলতে শুরু করলো। সেই কথা শেষ পর্যন্ত ছড়িয়ে হিন্দু মেয়েটার বাবা, মা, পরিবার পর্যন্ত গেল।
গ্রামের একজন হিন্দু-সাধারণ-মধ্যবিত্ত বাবা, যিনি তার মেয়েকে সহায় সম্বল সবটা দিয়ে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত পড়ার খরচ চালালেন, সে শেষে গিয়ে লোকমুখে শুনলো— তার মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে এক মুসলিম ছেলের সঙ্গে প্রেম করছে, তার প্রমাণও নাকি আছে।
এর মধ্যে আরেক দুঃখের কথা— এই বাবা তার মেয়ের বিয়েও ঠিক করেছেন এই ঘটনা ঘটার কিছুদিন আগে। সেই বাবার লজ্জায় মাথা কাটা যায়, এই ভেবে যে— তিনি তার মেয়েকে এই শিক্ষা দিলেন!
আর অন্যদিকে সম্পূর্ণ নিরীহ, নিরপরাধী মেয়েটি তার বাড়িতে বাবা, মা, এমনকি পরিবারের কাউকেই বিশ্বাসও করাতে পারছে না— এই মুসলিম ছেলেটির সাথে তার কোনো সম্পর্কই নেই। কারণ— সেই প্রমাণ হিসেবে ফটো তো রয়েই গেলো, আর একটা ফটোকে এখনকার দিনে অনেকে অনেকভাবেই ব্যবহার করতে পারে।
এখানে আমাদের সমাজের আরেকটা সমস্যা হলো— ঐ যে, "কান নিয়েছে চিলে!" আর এই কথা যদি হয় কোনো হিন্দু মেয়ে সম্পর্কে এবং তা যদি ছড়ায় কোনো মুসলিম ছেলে, তাহলে তো কথাই নেই! আর মুসলিম ছেলেটি তো রইলোই ঘৃতাহুতি দেওয়ার জন্য!
হ্যাঁ, এই ঘটনা জানার পর আমি নিশ্চিতভাবেই সতর্ক থাকবো। কারণ কার মনে কি দুষ্ট অভিসন্ধি চলছে, সে সম্পর্কে আমরা কেউই ওয়াকিবহাল না।
কিন্তু, এই যে আমরা যারা সরল মনে কখনো না কখনো গ্রুপ ফটো তুলছি তথাকথিত বন্ধুদের সাথে, তারা নিজের অজান্তেই বিপদ ডেকে আনছি তো?
ধন্যবাদ। নমস্কার। 🌸🙏
0 মন্তব্যসমূহ