নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের অবস্থার এক খণ্ডচিত্র- কুলদা রায়

নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের অবস্থার এক খণ্ডচিত্র- কুলদা রায়

এই শহরে যেসব দোকান এখনো অক্ষত রয়েছে তার মধ্যে যেগুলো হিন্দুদের সেখানে পাকিস্তানী সৈন্যরা হলুদ রঙে বড় হরফে লিখে রেখেছে 'H’ ।তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু এদেশের সংখ্যালঘিষ্ঠ হিন্দুদের সম্পত্তি গ্রাস করতেই এই কাজ। 


সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা আর্মির সন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই না পেলেও হিন্দুদের চেয়ে নিরাপদ অনুভব করে থাকে এবং তাঁরা তাঁদের বাড়িঘর দোকানে ‘মুসলমানের বাড়ি’ জাতীয় কথা লিখে রেখেছে। তুলনামূলকভাবে স্বল্প-সংখ্যক খৃস্টান  যাঁদের অধিকাংশ ব্যাপ্টিস্ট, দরজার উপর ক্রুশচিহ্ন এঁকেছে এবং জামায় লাল সুতো দিয়ে তা সেলাই করে নিয়েছে।


21 এপ্রিল পাক আর্মি ফরিদপুর এলে এক বৃদ্ধা ও তাঁর 84 বছরের স্বামী আশ্রয়ের জন্য তিন মাইল দূরের বদিবাঙ্গি গ্রামে যান।পরের দিন পাক আর্মি এই গ্রাম আক্রমণ করে এবং 300 জন হিন্দুদেরকে মেরে ফেলে। বৃদ্ধার ঘাড়ে গুলি লাগে। 


একাত্তরের জুন মাসের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ষাট লক্ষ মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে চলে যায়। এদের মধ্যে চল্লিশ লক্ষই হলো হিন্দু। 


একজন পাক কমান্ডার স্বীকার করেন, তাদের নীতি হলো বাঙালি সংস্কৃতি ধ্বংস করা, হিন্দু ও মুসলমান উভয়কে, বিশেষভাবে হিন্দুদের উৎখাত করা। 


এপ্রিল মাসে ফরিদপুর শহরে প্রকাশ্যে  দুইজন হিন্দুর মাথা কেটে তাদের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। কোনো কোনো হিন্দু যখন প্রাণ বাঁচাতে ইসলাম ধর্মান্তরের প্রার্থনা করে, তখন তাদেরকে কাফের গণ্য করে গুলি করে হত্যা করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ধর্মান্তর গৃহীত হয়। 


হিন্দুদের প্রতি সহানুভূতিশীল মুসলমানদেরকে পাক আর্মি বাধ্য করেছিল হিন্দুবাড়ি লুট করতে। তাদেরকে বলা হয় হিন্দুবাড়ি আক্রমণ না করলে তাদেরকেই হত্যা করা হবে। এর ফলে ফরিদপুর এলাকায় অধিকাংশ  হিন্দুবাড়ি-- কারো কারো মতে 90 শতাংশ হিন্দু বাড়িঘর লুটপাট করা হয়েছে। 

------

নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এই সংবাদটি প্রকাশিত হয় 1971 সালের 29 জুন। এই সংবাদটি প্রকাশ করায় এই সাংবাদিককে পাক সরকার বহিষ্কার করে।


সূত্র ফেসবুক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ