“মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সঙ্গে আয়েশার বিবাহের বয়স নৈতিক ছিল না কি অনৈতিক?”-এই শিরোনামে আজ ৩১শে আগস্ট ২০২৩ খ্রি. তারিখে আসাদ নূর এবং ব্রাদার রাহুলের লাইভ বিতর্ক চলাকালীন সময়ে ব্রাদার রাহুল সনাতন ধর্মগ্রন্থ থেকে বাল্যবিবাহ প্রমাণের চেষ্টা করেন। তার দেখানো রেফারেন্স খণ্ডন করা হলো।
ব্রাদার রাহুল প্রথমেই বিষ্ণু সংহিতার চতুর্বিংশ অধ্যায়ের একটি স্ক্রিনশট প্রদর্শন করেন। যেখানে উল্লেখ রয়েছে-
“তিন বার ঋতুদর্শন পর্যন্ত অপেক্ষা করে কন্যা স্বয়ংবর করবে। কেননা, তিনবার ঋতু দর্শন হয়ে গেলে কন্যা আপনার (অর্থাৎ নিজের) উপর প্রভুত্ব সম্পন্ন হয়।”
এই স্ক্রিনশট দেখিয়ে তিনি কী প্রমাণ দিতে চাইলেন সেটা তিনিই জানেন। মুহাম্মদের সাথে আয়েশার বাল্যবিবাহের সাথে উপর্যুক্ত বিষ্ণু সংহিতার প্রমাণের কী সম্পর্ক আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে আমার ধারণা এই যে, ব্রাদার রাহুল এটি বুঝাতে চেয়েছেন- সনাতন ধর্মে কন্যার তৃতীয় ঋতুর (পিরিয়ডের) পর বিবাহ বৈধ হলে ৬ বছর বয়সী আয়েশার বিবাহ কেন বৈধ নয়?
খণ্ডন: বিষ্ণুসংহিতায় মেয়েদের তিনবার পিরিয়ড হওয়ার পর স্বয়ংবরের উল্লেখ হয়েছে। অর্থাৎ তিনবার পিরিয়ডের পূর্বে মেয়ের বাবা মেয়ের বিবাহের চিন্তাও করতে পারবেন না এবং পাত্রও নির্বাচন করতে পারবেন না। মেয়ের তিনবার পিরিয়ডের পর মেয়েদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জ্ঞান প্রাপ্ত হয় বা অধিকার লাভ করে। তাই মেয়ের তিনবার পিরিয়ডে পর (অর্থাৎ চতুর্থ পিরিয়ড থেকে যখন ইচ্ছা তখন) মেয়ে নিজে নিজের বর নির্বাচন করতে পারবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিবাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মেয়ে যখন সিদ্ধান্ত নিবে তখনই বিবাহ হবে। তিনবার পিরিয়ডের আগে মেয়ের বাবা চাইলেই মেয়েকে বিবাহ দিতে পারবেন না। এই উদাহরণ ব্রাদার রাহুল কোন যুক্তিতে আয়েশার সাথে দেয় আমার বোধগম্য নয়। কেননা, আয়েশা নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে মুহাম্মদকে বিবাহ করেননি, আয়েশার বিবাহ তার বাবা দিয়েছিলেন, যখন আয়েশার বয়স ছিল ৬ বছর। সুতরাং ব্রাদার রাহুল ও আসাদ নূরের বিতর্কে ব্রাদার রাহুলের দেখানো বিষ্ণু সংহিতার এই রেফারেন্স সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
এরপর ব্রাদার রাহুল শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাম ও শিবকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সেইসব প্রশ্ন আমি বহুপূর্বেই খণ্ডন করেছিলাম। তা পুনরায় প্রদর্শন করলাম।
আমরা মোট তিনটি প্রশ্ন পেয়েছি। যথা:
- ১। রামচন্দ্র যখন সীতাকে বিয়ে করে তখন সীতার বয়স ছিল ৬ বছর (রেফারেন্স: বাল্মিকীর রামায়ণ: অরন্য খণ্ড: ৩.৪৭.৩-১০; স্কন্দ পুরাণ: ৩.২.৩০.৮-৯)।
- ২। শ্রীকৃষ্ণ যখন রুক্মিণীকে বিয়ে করে তখন তার বয়স ছিল ৮ বছর (রেফারেন্স: স্কন্দ পুরাণ: ৫.৩.১৪২.৮-৭৯)।
- শ্রীকৃষ্ণ যখন রুক্মিণীর সাথে যৌনক্রিয়া শুরু করে তখন সে পরিপূর্ণ ভাবে বেড়ে উঠিনি এবং যৌনতা সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞান ছিল না, ফলে শ্রীকৃষ্ণ যৌনক্রিয়া করায় রুক্মিণী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে (রেফারেন্স: ব্রাহ্ম, বৈবর্ত পুরাণ কৃষ্ণ জন্ম খন্ড ১১২,১-১০)।
- ৩। শিব যখন পার্বতীকে বিয়ে করে, তখন তার বয়স ছিল ৮ বছর (রেফারেন্স: শিব পুরাণ, রন্দ্র সংহিতা পার্বতী খন্ড ৩.১১,১-২)।
# ভূমিকা: মোহাম্মদের বাল্যবিবাহ ইস্যু নিয়ে মৌলবাদীরা প্রচার করছে সনাতন ধর্মেও বাল্যবিবাহে অনুমোদন রয়েছে। পোষ্টে রয়েছে বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থের রেফারেন্স। রেফারেন্স থাকার ফলে সাধারণ হিন্দুরাও সেই আর্টিকেল বিশ্বাস করা শুরু করেছে। কিন্তু এই রেফারেন্সেই রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। সাধারণ হিন্দুরা বিচারবিবেচনা না করে ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ায় এবং অধিকাংশ সাধারণ হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ না পড়ার ফায়দা লুটছে এসব মৌলবাদীরা। সমাজের যেকোনো ইস্যুকে নিয়ে তারা হিন্দুধর্মকে দিয়ে যাস্টিফাই করতে চায়। অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো অবস্থা। যাইহোক, আমরা তাদের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কথা বলব না। ধর্ম মানুষের সফট্ কর্ণার। সুতরাং এই সেন্সেটিভ বিষয়ে কথা বলে সমাজে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করা এই আর্টিকেলের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু সনাতন ধর্মের উপর যে কলঙ্ক তারা লাগাতে চেয়েছে সেটি নিয়ে অবশ্যই কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। কারণ ভাইরাল হওয়া আর্টিকেলের উত্তর না দিলে সমাজে সেই মিথ্যাচার প্রচার হতেই থাকবে। তাই আমরা তাদের সেই আর্টিকেলের রেফারেন্সগুলো বিশ্লেষণ করব।
প্রথমেই আপানাদেরকে একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিতে চাই, সনাতন ধর্মের মানুষদের নীতিনির্ধারণী গ্রন্থ অর্থাৎ ধর্মীয় মূল সিদ্ধান্ত গুলো বেদ থেকে নেওয়া হয়। সনাতন ধর্মশাস্ত্রে রয়েছে দুটো ভাগ, (১) শ্রুতি এবং (২) স্মৃতি। শ্রুতি হচ্ছে বেদ (বেদের ব্রহ্মবিদ্যা নিয়ে আলোচনা করে উপনিষদ, তাই এটিকে বলা হয় শ্রুতিপ্রস্থান) এবং অন্যসকল শাস্ত্র স্মৃতি। সনাতন ধর্মীয় সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয় শ্রুতি (বেদ)। অর্থাৎ যেকোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বেদের মীমাংসা অনুসরণ করে তারপর স্মৃতির তথ্য দেখতে হয়। স্মৃতি শাস্ত্রের কোনো বিষয় যদি শ্রুতির (বেদের) বিপরিতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে তা কালোক্রমে সেই গ্রন্থে মিশেছে এবং তা বর্জনীয় (মনুসংহিতা: অধ্যায় ২, শ্লোক: ১৩)।
এবার ইতিহাস গ্রন্থ এবং পুরাণ নিয়ে দুটো কথা। রামায়ণ এবং মহাভারত হচ্ছে হিন্দুদের ইতিহাস গ্রন্থ। এই গ্রন্থগুলো থেকে আমরা সেই সময়ের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পারি। মহাপুরুষদের আচরণ থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। এগুলো কিন্তু ধর্মের নীতিনির্ধারণী শাস্ত্র নয় (ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা বেদাদি শাস্ত্রের সারাংশ, তাই এটি মান্যতা পেয়েছে।)। কালক্রমে রামায়ণ ও মহাভারত গ্রন্থে প্রচুর প্রক্ষিপ্ততা মিশেছে, তাই সবকিছুই গ্রহণযোগ্য নয়, বিচারবিশ্লেষণপূর্বক গ্রহণযোগ্য। এবিষয়ে নিন্মের মীমাংসায় আমরা বিস্তারিত দেখব। আর পুরাণের অধিকাংশ গল্পই রূপক, এগুলো ঐতিহাসিক নয়। প্রায় সকল গবেষকদের মতেই পুরাণ গ্রন্থগুলো কয়েক হাজারবার এডিট করা হয়েছে এবং বিভিন্ন মনোরঞ্জন বা অলৌকিক গল্প প্রবেশ করানো হয়েছে। তাই যেখানে বেদ প্রধান এবং সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত, সেখানে পুরাণের কোনো রূপক গল্প যদি বেদের সিদ্ধান্তের বিপরীতে যায় তাহলে তা অবশ্যই বর্জনীয়। আশাকরি শাস্ত্র সম্পর্কে কনসেপ্ট মোটামুটি ক্লিয়ার হয়েছেন।
এবার বাল্যবিবাহ নিয়ে বেদ কী সিদ্ধান্ত দিচ্ছে তা আমরা জানব।
“ব্রহ্মচর্যেণ কন্যা যুবানং বিন্দতে পতিম। অনডৃবান্ ব্রহ্মচর্যেনাশ্বো ঘাসং জিগীর্ষতি॥” (অথর্ববেদ: কাণ্ড-১১/ বর্গ-৫/ মন্ত্র-১৮)
অনুবাদ: ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করার পর কুমারী কন্যা যুবা পতিকে লাভ করবে। বলবান্ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিই ভোগ্য পদার্থকে সম্যক ভোগ করতে পারে। (লিংক)
“য়ুবা সুবাসাঃ পরিবীত আগাৎ স উ শ্রেয়ান ভবতি জায়মানঃ। তং ধীরাসঃ কবয় উন্নয়ন্তি স্বাধ্যো মনসা দেবয়ন্তঃ॥” (ঋগ্বেদ: মণ্ডল-৩/ সূক্ত-৮/ মন্ত্র-৪)
অনুবাদ: যে পুরুষ সর্বতােভাবে যজ্ঞােপবীত ধারণ ও ব্রহ্মচর্য সেবন দ্বারা বিদ্বান্ এবং সুশিক্ষিত হয়ে, সুন্দর বস্ত্র পরিধানপূর্বক, ব্রহ্মচর্যযুক্ত পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হয়ে, বিদ্যাগ্রহণ করে গৃহাশ্রমে প্রবেশ করেন, তিনিই দ্বিতীয় বিদ্যাজন্মে প্রসিদ্ধি লাভ করে অতিশয় শােভাযুক্ত ও মঙ্গলকারী হন। উত্তম ধ্যানযুক্ত বিজ্ঞান দ্বারা বিদ্বানেরা সেই পুরুষকে উন্নতিশীল করে প্রতিষ্ঠিত করেন। আর যে স্ত্রী পুরুষ ব্রহ্মচর্য ধারণ, বিদ্যা এবং সুশিক্ষা গ্রহণ না করে বাল্যাবস্থায় বিবাহ করে তারা নষ্ট ও ভ্রষ্ট হয়ে বিদ্বান্ ব্যাক্তিদের মধ্যে সম্মান লাভ করে না। (লিংক)
অর্থাৎ আমরা বেদে পেলাম বিদ্যা গ্রহণ এবং ব্রহ্মচর্য পালনপূর্বক পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হলে তবেই পুরুষ এবং স্ত্রী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। এখানে বাল্যবিবাহের কোনো উপদেশ নেই। এবার আমরা উত্থাপিত প্রশ্ন মীমাংসা করব।
রাম-সীতা বিবাহ
শঙ্কা: রামচন্দ্র যখন সীতাকে বিয়ে করে তখন সীতার বয়স ছিল ৬ বছর (রেফারেন্স: বাল্মিকীর রামায়ণ: অরন্য খণ্ড: ৩.৪৭.৩-১০; স্কন্দ পুরাণ, ৩.২.৩০.৮-৯)।
মীমাংসা: এই শঙ্কার সমাধান পূর্বেও দেওয়া হয়েছিল। যারা পড়েছিলেন তারা এই অংশ স্কিপ করে নিচে চলে যেতে পারেন।
তাদের দেওয়া রেফারেন্সটি সঠিক নয়। এটি হবে অরণ্যকাণ্ড: ৪৭/১০। এই রেফারেন্স অনুসারে রামায়ণে আমরা পাই, রাবণ মাতা সীতাকে হরণ করার পূর্বে উনার পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। মাতা সীতা নিজেই আত্মপরিচয় দিতে শুরু করেন। কারণ মাতা সীতার ধারণা ছিল, রাবণ ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণকে আত্মপরিচয় না দিলে অভিশাপ দিতে পারেন। তাই রাবণকে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন এভাবে...
“আমি মহাত্মা জনকের কন্যা এবং শ্রীরামের প্রিয়া, আমার নাম সীতা। ইক্ষ্বাকুবংশীয় (রামচন্দ্রের) রাজভবনে ১২ বছর ভোগ্য বিষয়সমূহ ভোগ করার পর যখন শ্রীরামচন্দ্রকে রাজ্যে অভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন কৈকেয়ী রাজা দশরথের কাছে শ্রীরামের বনবাস চাইলেন এবং আমাদের বনবাস হয়। বনবাসের সময় আমার পতির বয়স ২৫ এবং আমার বয়স ছিল ১৮।”
অর্থাৎ বর্তমান বয়স থেকে রাজ্যভোগের ১২ বছর বাদ দিলে বিবাহের সময় সীতার বয়স: ১৮-১২=৬ এবং শ্রীরামচন্দ্রের বয়স ২৫-১২=১৩ বছর।
এবার এই শ্লোকের (অরণ্যকাণ্ড: ৪৭/১০) বিচার করার পূর্বে রামায়ণ থেকে আরো কিছু তথ্য জানা প্রয়োজন।
মাতা সীতার স্বয়ংম্বরে বিশ্বামিত্র রাম ও লক্ষণকে নিয়ে জনকপুরীতে উপস্থিত হলে রাজা জনক তাদের দেখে জিজ্ঞাসা করেন...
“হে মুনিবর! দেবতুল্য পরাক্রমশালী, হস্তির ন্যায় দৃঢ় অথচ ধীর গতিসম্পন্ন, শ্রেষ্ঠ অস্ত্রসকল, ধনুর্ধারী বীর, যৌবনপ্রাপ্ত এবং পদ্মপত্রের ন্যায় নয়নযুক্ত, এদের দেখে মনেহচ্ছে দেবতা মর্ত্যে অবতীর্ণ হয়েছেন। এরা কারা?”
এই প্রশ্নের জবাবে বিশ্বামিত্র রাম-লক্ষনের সিদ্ধাশ্রমে বাস, রাক্ষস নিধন, অহল্যাকে দর্শন ইত্যাদি বর্ণনা করলেন।
সুতরাং এখানে শ্রীরামচন্দ্র বীর যুবক। এবার সীতা মায়ের বিষয়ে জানা যাক। বিশ্বামিত্র রাজকুমারী সীতার ধনুক দেখতে চাইলেন। তখন রাজা জনক ধনুক ভঙ্গের বিষয়ে বললেন...
“যখন আমার কন্যা প্রাপ্তযৌবনা হয়, তখন বিভিন্ন রাজাগণ এসে সীতাকে বিবাহ করতে চাইলেন। কিন্তু কাউকে আমি আমার কন্যা দান করিনি। তখন বিভিন্ন রাজাগণ একত্রিত হয়ে বীরত্ব প্রদর্শনের উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর এই ধনুক নিয়ে আসা হলো। কিন্তু সকলেই ধনুক উত্তোলনে অসমর্থতার কারণে অসফল হন (বালকাণ্ড: ৬৬/১৫)।”
সুতরাং এখানে মাতা সীতা যুবতী নারী।
আরো একটি শ্লোকে স্পষ্ট প্রমান রয়েছে, মাতা সীতা অনসূয়ার কাছে নিজের স্বয়ংবর বর্ণনা করে বলছেন...
“পিতা যখন আমাকে পতিসংযোগসুলভ লক্ষ্য করলেন, তখন উনি চিন্তিত হলেন (অযোধ্যাকাণ্ড: ১১৮/৩৪)।”
এখানে পতিসংযোগসুলভ বয়সের বিষয়ে উল্লেখ করলেন, অর্থাৎ সয়ংবরের পূর্বে মাতা সীতা গর্ভাধান সমর্থ বয়সী ছিলেন।
তাহলে অরণ্যকাণ্ড ৪৭/১০ অনুসারে মাতা সীতার বয়স ৬-এর মীমাংসা কী?
- কালক্রমে ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে প্রচুর প্রক্ষিপ্ততা মিশেছে, তা আমরা সবাই অবগত। বাল্মীকি রামায়ণের প্রাচীন পাণ্ডুলিপি শুদ্ধরূপে পাওয়া সম্ভব না হলেও বর্তমানে প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপিসমূহের সাহায্যে যতটা সম্ভব শুদ্ধরূপে প্রকাশ করা সম্ভব ততটা করার লক্ষ্যেই বিগত শতকের ৬০ এর দশকে ভারতশ্রেষ্ঠ সকল গবেষকগণ প্রাচ্যবিদ্যা গবেষণা সংস্থা Oriental Research Institute, Baroda (BOI) থেকে প্রকাশ করে বাল্মিকী রামায়ণের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপি Critical Edition Of Ramayana. ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয় অরণ্যকাণ্ড সংবলিত ৩য় খণ্ড। সেই অরণ্যকাণ্ডের ৪২টি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গবেষকরা সংগ্রহ করতে থাকেন এক যুগ ধরে। সেগুলোর পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ শেষে দেখা যায় তুলনামূলক বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিগুলো যেমন নেপালি লিপি, সারদা লিপি, মৈথিলী ও দেবনাগরী লিপিতে পূর্বে উল্লেখিত ৪৭ নং সর্গের ৪নং শ্লোক উষিত্বা দ্বাদশ সমা ইক্ষ্বাকুণাং নিবেশনে বা আমি এখানে আসার আগে ১২ বছর ইক্ষাকু কূলে (শ্বশুরালয়ে) কাটিয়ে এসেছি অংশটি নেই, নেই প্রাচ্যবিদ গ্যাস্পার গোরেসিও এর অষ্টাদশ শতকের রামায়ণ পাণ্ডুলিপিতেও। বরং সেই শ্লোকের স্থানে বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিসমূহ অনুযায়ী BOI এর প্রকাশিত বাল্মীকি রামায়ণ (৩য় খণ্ড) ৩.৪৫.৪ নং শ্লোকে রয়েছে-
संवत्सरं चाध्युषिता राघवस्य निवेशने |
সংবৎসরং চাধ্যুপিতা রাঘবস্য নিবেশনে।
অর্থাৎ রাঘবালয়ে (শ্বশুরবাড়িতে) সীতা ১ বছর ছিলেন, তারপর বনবাসে এলেন। এখান থেকে দেখে নিতে পারেন।
অর্থাৎ ১২ বছর শ্বশুরালয়ে ছিলেন- এই শ্লোকটি বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিতে নেই, আছে ১ বছর শ্বশুরালয়ে ছিলেন, তারপরই বনবাস হয়।
বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিতে নেই ইক্ষাকুণাং শব্দটিও, আছে রাঘবস্য। তাহলে বনবাসকালে রাবণকে মা সীতার বলা উক্ত শ্লোকটি দিয়ে আমরা হিসাব করলে পাই, বিয়ের সময় শ্রীরাম ও মাতা সীতার বয়স ছিল যথাক্রমে- ২৫-১ = ২৪ বছর ও ১৮-১= ১৭ বছর।
তবে চমকপ্রদ বিষয় হলো ১০ নং শ্লোকটির দুইটি অংশ-
১) মম ভর্তামহাতেজা বযসা পঞ্চবিংশকঃ৷৷ (অর্থাৎ শ্রীরামের বয়স তখন ২৫) এবং
২) অষ্টাদশ হি বর্ষাণি মম জন্মনি গণ্যতে৷ (মাতা সীতার বয়স ১৮)।
এর মধ্যে 'অষ্টাদশ হি বর্ষাণি মম জন্মনি গণ্যতে' অংশটিও Baroda প্রকাশিত বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিতে নেই! অর্থাৎ বনবাসের সময় শ্রীরামের বয়স এই শ্লোক অনুযায়ী ২৫ হলেও মাতা সীতার বয়স যে ১৮ ছিল তার প্রমাণ নেই। আর এরপরেও শ্লোকাংশটিকে গণনা করা হলে বিয়ের সময় মাতা সীতার বয়স দাঁড়ায় ১৭।
তাহলে স্কন্ধ পুরাণের রেফারেন্স দিয়ে যে সীতার বয়স ৬ বছর উল্লেখ হয়েছে তার মীমাংসা কী?
- যেহেতু শ্রীরাম এবং সীতার প্রামাণ্য জীবনী গ্রন্থ রামায়ণ থেকে এটি প্রমাণিত যে সীতার বয়স ৬ বছর ছিল না, সেহেতু পুরাণে দৃষ্টি দেওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা পুরাণসমূহ প্রচুর পরিমানে এডিট হয়েছে এবং এগুলোর অধিকাংশই প্রামাণ্য নয়। যেমন উক্ত রেফারেন্সর টীকায় অনুবাদক নিজেই বলেছেন...
“এই পুরাণ লেখার সময়কালে বাল্যবিবাহের প্রথা এখানে প্রতিফলিত হয়েছে।”
অর্থাৎ এটি পরবর্তী সংযোজন। এখানে মূল শ্লোকের অনুবাদ এবং টীকা পাবেন।
সুতরাং উক্ত আলোচনা থেকে আমরা পেলাম মাতা সীতা বিবাহের সময় কখনোই ৬ বছরের বালিকা ছিলেন না, তিনি যুবতী কন্যা ছিলেন।
কৃষ্ণ-রুক্মিণী বিবাহ
শঙ্কা: শ্রীকৃষ্ণ যখন রুক্মিণীকে বিয়ে করে তখন তার বয়স ছিল ৮ বছর (রেফারেন্স: স্কন্দ পুরাণ: ৫.৩.১৪২.৮-৭৯)।
শ্রীকৃষ্ণ যখন রুক্মিণীর সাথে যৌনক্রিয়া শুরু করে তখন সে পরিপূর্ণ ভাবে বেড়ে উঠিনি এবং যৌনতা সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞান ছিল না, ফলে শ্রীকৃষ্ণ যৌনক্রিয়া করায় রুক্মিণী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে (রেফারেন্স: ব্রাহ্ম, বৈবর্ত পুরাণ কৃষ্ণ জন্ম খন্ড ১১২,১-১০)।
মীমাংসা: রুক্মিণীর বিবাহ ঠিক কত বছর বয়সে হয়েছিল তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কেননা, তাদের প্রামাণ্য গ্রন্থ মহাভারতে তাদের বিবাহের বয়সের উল্লেখ নেই। হরিবংশের বিষ্ণুপর্বের ৬০তম অধ্যায় অনুসারে রুক্মিণী ছিলেন পূর্ণ যুবতী নারী। ৩৫-৪০ তম শ্লোকে তার যৌবনপূর্ণ রূপের বর্ণনা করা হয়েছে। আপনারা এখান থেকে পড়ে নিতে পারেন।
আমরা জানি রুক্মিণীর পরিবার চেদিরাজ শিশুপালের সাথে রুক্মিণীর বিবাহ ঠিক করেছিলেন। কিন্তু রুক্মিণী শ্রীকৃষ্ণকে ভালোবাসতেন। তিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেম নিবেদন করে নিজের মেধা এবং সৌন্দর্য বর্ণনা করে একটি পত্র লিখেছিলেন, যা তিনি নিজেই শ্রীকৃষ্ণের নিকট শ্রীকৃষ্ণের অনুমতি নিয়ে পাঠ করেছিলেন। এই ঘটনার বিবরণ রয়েছে ভাগবতের ১০ম স্কন্ধের ৫২তম অধ্যায়ের ৩৭-৪৩ শ্লোকে। শ্রীকৃষ্ণকে রুক্মিণী পতি রূপে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন-একথাও উল্লেখ রয়েছে সেখানে। আপনারা এখান থেকে পড়ে নিতে পারেন।
প্রশ্ন হচ্ছে একটি ৮ বছরের বালিকার এভাবে প্রেম নিবেদনের বয়স হয়? কোনো পুরুষকে পতি হিসাবে স্বীকার করে নেওয়ার মতো জ্ঞান ৮ বছরের কোনো বালিকার হতে পারে? অবশ্যই নয়। অর্থাৎ হরিবংশ এবং ভাগবতে আমরা রুক্মিণীর বয়সের উল্লেখ না পেলেও এই দুই গ্রন্থের বিবরণ অনুসারে রুক্মিণী পূর্ণ যৌবনা ছিলেন এবং শ্রীকৃষ্ণকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছিলেন। এই হেতু স্কন্ধপুরাণের উক্ত রেফারেন্স পূর্বের ন্যায় প্রক্ষিপ্ত।
তাহলে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের যে শ্লোকের রেফারেন্স দিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সেটির মীমাংসা কী?
- ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড ১১২/১-১০ তে রুক্মিণী এবং শ্রীকৃষ্ণে যৌনক্রিয়া সম্পর্কে উল্লেখ হয়েছে-একথা সত্য। কিন্তু সেখানে ৪র্থ এবং ৫ম শ্লোকে স্পষ্ট বলা হয়েছে...
দদর্শ রুক্মিণীং দেবীমতীব নবযৌবনাম্। রত্নপর্ঘ্যঙ্কমারুহ্য শয়ানাং সস্মিতাং মুদা।। অপৌঢ়াঞ্চ নবোঢ়াং তাং নবসঙ্গমলজ্জিতাম্। অমূল্যরত্ননির্ম্মাণ-ভূষণেন বিভূযিতাম্।।
অনুবাদ: রুক্মিণী ছিলেন নবযৌবনসম্পন্না, তিনি শুয়েছিলেন রত্নময় পালঙ্কের উপর, তিনি অপৌঢ়া (যৌবনসম্পন্না কিন্তু মধ্যবয়সী নন) ছিলেন। নব বিবাহিত হওয়ায় নবসঙ্গমে লজ্জিত ছিলেন। তার শরীর অমূল্য রত্নভূষণে বিভূষিত ছিল।
অর্থাৎ এই দুই শ্লোক থেকে এটি প্রমাণিত হলো রুক্মিণী যুবতী নারী ছিলেন।
এখানে ১-১০ শ্লোকে কোথাও এই কথা বলা নেই যে রুক্মিণী নাবালিকা থাকায় এবং শ্রীকৃষ্ণ সেই নাবালিকা রুক্মিণীর সাথে যৌনক্রিয়া করায় রুক্মিণী জ্ঞান হারিয়েছিলেন।
তবে রুক্মিণী যৌনক্রিয়ায় সুখসম্ভোগমাত্রে আনন্দিত হয়ে মূর্ছিতা হয়েছিলেন-একথা উল্লেখ আছে অষ্টম শ্লোকে (সুখসম্ভোগমাত্রেণ মূর্চ্ছামাপ)। সাধারণত অধিকাংশ নববিবাহিতা কন্যার প্রথম যৌনক্রিয়ায় যেরূপ হয়ে থাকে। এই সম্পূর্ণ পাঠটি এখানে পাবেন।
সুতরাং আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, রুক্মিণী যৌবনসম্পন্না ছিলেন, কখনোই ৮ বছরের বালিকা ছিলেন না।
শিব-পার্বতী বিবাহ
শঙ্কা: শিব যখন পার্বতীকে বিয়ে করে, তখন তার বয়স ছিল ৮ বছর (রেফারেন্স: শিব পুরাণ, রন্দ্র সংহিতা পার্বতী খন্ড ৩.১১,১-২)।
মীমাংসা: প্রথমেই আমরা বলেছিলাম পুরাণসমূহে অধিকাংশ কাহিনী রূপকার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। বেদ সংহিতায় আমরা শিব নামে কাউকে পাই না। তবে গবেষকদের মতে বেদের পরমাত্মাবাচক রুদ্র শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে মঙ্গলময় শিব নামে রয়েছে। সেই শিবের ক্রমবিকাশ হয়ে পুরাণে শিব চরিত্র লিপিবদ্ধ হয়। শিবের এই ক্রমবিকাশ নিয়ে রণদীপম বসুর এই লেখাটা পড়তে পারেন।
এবার একটু শিব পুরাণের পরিচয় দেওয়া যাক। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড অনুসারে শিবপুরাণ অষ্টাদশ পুরাণের অন্তর্গত এবং এর শ্লোকসংখ্যা ২৪ হাজার (চতুর্বিংশতিসাহস্রং শৈবমত্র নিরূপিতম্)। কিন্তু নারদীয় পুরাণ, মার্কেণ্ডেয় পুরাণ ও মৎস পুরাণে যে অষ্টাদশ পুরাণের তালিকা রয়েছে সেখানে শিবপুরাণের নাম নেই, বায়ুপুরাণের নাম রয়েছে।
আবার শিব পুরাণের একাধিক ও বিভিন্ন সংস্করণ দেখা যায়। উল্লেখযোগ্য সংস্করণগুলোর মধ্যে দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত সাতটি অধ্যায়, অন্যস্থলে ছয়টি অধ্যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় পূর্বখণ্ড ও উত্তরখণ্ড নামক অধ্যায়বিহীন দুটি অংশ দেখা যায় (Hinduism: An Alphabetical Guide; Dalal, Roshen. ISBN: 978-8184752779)।
বাংলা অঞ্চলে যে শিবপুরাণ পাওয়া যায় তাতে রুদ্রসংহিতা নেই। মজার বিষয় হলো ২৪ হাজার শ্লোকে সমাপ্ত কোনো সংস্করণেই রুদ্রসংহিতা পাওয়া যায় না। শিবপুরাণের যে সংস্করণটির মধ্যে রুদ্রসংহিতা রয়েছে সেই সংস্করণের শ্লোকসংখ্যা ৮৫ হাজার। অর্থাৎ এই বাড়তি শ্লোকগুলো পরবর্তীকালের রচনা। এছাড়া গবেষকদের মতে শিব পুরাণের সবচেয়ে পুরোনো সংস্করণটি দশম-একাদশ শতকে রচিত (A Survey of Hinduism; Klostermaier, Klaus. ISBN: 978-0791470824)।
গবেষকদের মতে শিবপুরাণের কিছু অধ্যায়/সংহিতা চতুর্দশ শতকের পরবর্তীকালের রচনা (Epic and Puranic Bibliography Up to 1985 Annoted and With Indexes: A-r and S-z; K P Gietz. ISBN: 3-447-03028-3)
শিবপুরাণের বাংলা সংস্করণে পার্বতীর বিবাহের সময় তাঁর বয়স কত ছিল তা উল্লেখ নেই। কিন্তু শিবপুরাণের বিভিন্ন ঘটনা থেকে প্রতিয়মান হয় পার্বতী যুবতী কন্যা ছিলেন। তিনি বহু বছর তপস্যাও করেছিলেন। বিস্তারিত পড়তে শিবপুরাণটি ডাউনলোড করে পড়ে নিতে পারেন (ডাউনলোড লিংক)
সুতরাং এখান থেকে ৩টি মীমাংসা পাওয়া যাচ্ছে।
- ১। শিব নামটি মঙ্গলময় পরমাত্মা হিসাবে শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে পাওয়া যায়, কিন্তু পুরাণে এসে একটি চরিত্রের মাধ্যমে তাঁকে উপস্থাপন করা হয়। অর্থাৎ পুরাণের এই সমস্ত আলোচনা কেবলই রূপকার্থে ব্যবহৃত।
- ২। যদি আমরা পুরাণকে পৌরানিক কাহিনী হিসাবে বিবেচনা না করে আক্ষরিক হিসাবেও নিই তাহলেও রুদ্রসংহিতা অংশ বিতর্কিত, এটি পরবর্তীকালের সংযোজন। আমরা যদি গবেষকদের মত প্রধান্য দিয়ে বিচার করি তাহলে দেখতে পাচ্ছি এটি চতুর্দশ শতকের রচনা। ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি ঠিক এই সময়টাতেই সমাজে বাল্যবিবাহের অধিক প্রচলন ছিল। অর্থাৎ সমাজের প্রচলিত নিয়মটিই রুদ্রসংহিতার লেখক শিবপুরাণে ঢুকিয়ে দেন।
- ৩। ২৪ হাজার শ্লোকের শিবপুরাণ পাঠ করলে পার্বতীর যে চরিত্র বা কর্মকাণ্ড আমরা পাই তা একজন যুবতী নারীর ক্ষেত্রেই সম্ভব, কখনোই ৮ বছরের বালিকার দ্বারা সম্ভব নয়।
উপসংহার:
রাম-সীতা, কৃষ্ণ-রুক্মিণী, শিব-পার্বতীর বিবাহ নিয়ে বর্তমানে মৌলবাদীরা যে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে তার মীমাংসা সম্পূর্ণ হলো। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ বা বঙ্কিমচন্দ্রের বিবাহের বিষয়েও মৌলবাদীরা উল্লেখ করেছে। এখানে সনাতন ধর্মীয় নীতিনির্ধারণ নিয়ে দুটো কথা বলার প্রয়োজন মনে করছি। সনাতন ধর্মের কোনো নির্দিষ্ট প্রবর্তক নেই। এই ধর্মের মূল ভিত্তি শাশ্বত জ্ঞান তথা বেদ। সনাতন ধর্ম কারো জীবনের অনুসরণ করে জীবন গঠন করতে বলে না। কোনো ব্যক্তিবিশেষ নিজ জীবনে যা যা করেছে, সেটিই আমাদেরকে করতে হবে-এমন কোনো বাধ্যবাধকতা সনাতন ধর্মে নেই। কারণ, সময়ের পরিক্রমায় মানুষের জীবন ধারণে পরিবর্তন আসে, সমাজে পরিবর্তন আসে। তাই চতুর্দশ শতকে মানুষ যেভাবে জীবন পরিচালনা করেছে, আমাদেরকেও সেভাবেই জীবন পরিচালনা করতে হবে-এমন আইন বেদে উল্লিখিত হয়নি। সনাতন ধর্মে বেদের আইন সর্বোচ্চ।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মহাপুরুষগণের উত্তম কর্মসমূহ আমরা অনুসরণ করতেই পারি, কিন্তু কারো মন্দকর্ম কখনোই অনুসরণযোগ্য নয়। যেহেতু বেদে বাল্যবিবাহ নেই অর্থাৎ সনাতন ধর্মের মূল ভিত্তি এটিকে সাপোর্ট করছে না, তাই সনাতন ধর্মীয় দৃষ্টিতে এটি ঘৃণ্যকর্ম এবং এই আর্টিকেলের মাধ্যমে প্রমাণিত যে, কোনো অবতারপুরুষ নাবালিকাকে বিবাহ করেনি, তাই বাল্যবিবাহ কখনোই কাম্য নয়। ধন্যবাদ।
[বি: দ্র: এই আর্টিকেল কেবল ব্রাদার রাহুলের অপপ্রচারের জবাব। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। পৃথিবীতে ৪৫০০+ ধর্মমত রয়েছে। সকলেই নিজ নিজ ধর্মের নৈতিকতা মেনে চলুক, সকলেই সুস্থ থাকুক, এই কামনায় শেষ করলাম।]
- অগ্নিবীর
0 মন্তব্যসমূহ