ইসলামের সুফিবাদ নাকি শান্তিবাদী একটা শাখা। অনেক মডারেট মুসলমান এটাকেই আসল ইসলাম পর্যন্ত বলে দাবী করেন। যখন অন্য ধর্মের সঙ্গে ইসলামের তুলনা করা হয় তখন ইসলামকে শান্তিবাদী ধর্ম প্রমাণ করতে মডারেট মুসলমান ও মার্কসবাদী হিন্দুরা সুফিবাদকে টেনে এনে ইসলামের মুখরক্ষা করার একটা চেষ্টা করেন। প্রকৃতপক্ষে তারা যে সুফিবাদ সম্পর্কে গল্পগুজব ছাড়া কিছুই জানে না তাদের এই দাবী থেকে সেটা স্পষ্ট। আসুন দেখি ভারতবর্ষ তথা বাংলার সুফিদের চরিত্র কার কি রকম ছিলো।
মূলত পারস্যের সুফিবাদের হাত ধরে এখানে ইসলাম তার সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার করেছিলো। ফলে এখানকার মানুষ ‘নামাজ’ ‘রোজা’ ‘খোদা হাফেজ’ জাতীয় ইরানী অনুবাদের ইসলামী ভাবধারায় পরিচিত হয়। তখনো আরবী সালাফিপন্থি ইসলাম প্রচারকরা এদেশে আসেনি। হাজি শরীয়তুল্লাহ তীতুমীর সৌদি আরব হজ করতে গিয়ে আরবী জিহাদের ফর্মূলা নিয়ে আসে এদেশে। তার আগে ভারতে যত জিহাদ হয়েছে তার সবটাই পারস্য ঘরোনার সুফিদের হাত ধরে। এই যে ভারতবর্ষে ‘শবে বরাত’ অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ইসলামী ইবাদত সেটি কিন্তু সৌদি মুসলমানরা জানে না। ইরানে আবার এটি ঘটা করে পালিত হয়। শবে বরাতে ইমাম মাহদির জন্মদিন উপলক্ষ্যে হালুয়া রুটি খেয়ে, বিতরণ করে, বাজি পটকা পুড়িয়ে উদযাপন করত সুফিরা। কে ইমাম মাহদি? যে কিনা কাফেরদের এমনভাবে মারবে যার ফলে তার ঘোড়ার সিনা কাফেরদের রক্তে ডুবে থাকবে! ইমাম মাহদি বাইতুল মোকাদ্দেস দখল করে ইহুদীদের বন্দি করে দাস বানাবে, ভারতের গজওয়াতুল হিন্দ করে হিন্দুদের দাস বানাবে। এহেন এক মাহদির জন্মদিন যারা রুটি হালুয়া খেয়ে উদযাপন করে তারা নাকি শান্তিবাদী!
এবার কিছু বিখ্যাত শান্তির পায়রা সুফিদের তরোয়াল হাতে জিহাদ করে হিন্দু রাজাদের পরাজিত করে 'ইসলামী আমিরাত' প্রতিষ্ঠার তথ্য জানাই। সিলেটে হযরত শাহ জালাল ও শাহ পরাণ গৌর গোবিন্দকে পরাজিত করে দখল করেছিলেন। আধ্যাবিত্মক ইসলামের সাধু দরবেশ হলে এই রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের কারণ কি? দিনাজপুরের সুফি পীর বদরদ্দীন রাজা মহেশকে পরাজিত করে তার রাজ্য দখল করেন। ভারতের বিখ্যাত দরবার শরীফ ফুরফুরা শরীফের সুফি পীরসাহেব বাগদি রাজাকে রীতিমত প্রতারণা করে তার রাজ প্রাসাদে ঢুকে তাকে হত্যা করে দখল করে নেয়। ফুরফুরা শরীফের নিজস্ব প্রকাশনীতে তাদের পীরবাবার গৌরব কীর্তি এভাবেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছে। এটা নিয়ে আলাদা একটি দীর্ঘ লেখা আমি কয়েকবছর আগে লিখেছি তাই এখানে আর কিছু বললাম না। এদিকে বিখ্যাত সুফি সাধক সুলতান বলখী হরিরামপুর দখল করেন রাজা বলরামের বিরুদ্ধে জিহাদ করে। আরেক বিখ্যাত সফি সাধক জাফর খাঁ গাজি পরাজিত করেন রাজা মান নৃপতিকে। শাহ বদরুদ্দীন চট্টগ্রামে মগদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে জয়ী হয়েছিলেন। ‘কত্তাল পীর’ চট্টগ্রামের অনুরূপ মগদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা করেছিলেন। সুলতান বলখী বগুড়ার পরশুরামকে জিহাদের মাধ্যমে পরাজিত করেছিলেন। যশোরের মুকুট রায়কে জিহাদে পরাজিত করেছিলেন সুফি সাধক বড়খা গাজী। আজমির শরীফের সবিখ্যাত পীর সাহেবের জিহাদের ইতিহাস একটু গুগল করলেই পেয়ে যাবেন কেননা এটা এখন সবাই জানে। সিন্ধুতে মুহাম্মদ বিন কাশিম যখন দখল করে নেয় তখন এই সুফিরাই সমস্ত হিন্দুদের কুরআন অনুসারে হত্যা করতে কাশিমকে চাপ দিতে থাকে। বলা বাহুল্য মুসলিম প্রতিটি অভিযানে মুসলিম শাসকদের সফর সঙ্গী হতেন এই সুফিরা। সুফিরা শাসকদের হয়ে তরোয়াল হাতে যুদ্ধ করত। এমনকি অনেক শাসক স্থানীয় হিন্দু কাফেরদের প্রতি সদয় হলে সুফিরা পাশ্ববর্তী অন্য মুসলিম শাসকদের চিঠি লিখে ঐ শাসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অনুরোধ জানাতেন। এহেন সুফিবাদের কোথাও কোথাও নৃত্যের তালে তালে ইবাদাত, বাদ্য বাজিয়ে ওরস করা থেকে সুফিবাদকে উদার এক ইসলাম হিসেবে চিহিৃত করে থাকে। যেন বাজনা বাজালেই তারা উদার! নৃত্য করলেই শান্তির পায়রা!...
বাকী থাকে মুসলিম সুফিদের মাজারে হিন্দু ভক্তদের আনাগোনা। এটা থেকে সুফিবাদকে এক অসাম্প্রদায়িক চেতনা হিসেবে তুলে ধরা হয়। হিন্দুদের ভক্তিবাদই মূলত এই বিভ্রমের জন্য দায়ী। এই সব সুফিদের মৃত্যুর পর কালক্রমে তাদের নিয়ে নানা অলৌকিক কিংদন্তি গল্প ভক্তরা ছড়িয়েছে। এর ফলে রোগ শোক বিপদ থেকে নিস্তার পেতে হিন্দুরাও অন্যের প্ররচণায় এসব মাজারে মানত করতে গেছে। মাজারগুলি নগদ অর্থ লাভের একটি পুঁজিহীন লাভজনক ব্যবসা। ফলে ব্যবসায়ী স্বার্থে হিন্দুসহ অন্যান্য অমুসলিম সম্প্রদায়কে কাস্টমার বানাতে তারা আগ্রহী ছিলো। এদিকে হিন্দুদের ভক্তিবাদ প্রবল। তারা সুলতান মাহমুদ কিংবা তৈমুর লংয়ের মাজারও যদি এই দেশে থাকত তো তারা সে মাজারে সুতা বাধতে ছুটতো! হিন্দুদের আচরণ দিয়ে জিহাদী সুফিজমকে আড়াল করা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত! হিন্দু মার্কসবাদী জেনে ও না জেনে সে কাজটাই করে যাচ্ছে...।
©Susupto Pathok সুষুপ্ত পাঠক
সূত্র:
0 মন্তব্যসমূহ