সোনালী ব্যাংকের ২০১৫ সালের ক্যালেন্ডারের ছবি নিয়ে বিতর্ক চলছে। ওই ক্যালেন্ডারে রমজান, মহররম এবং পবিত্র হজ ও ঈদুল আজহার (জিলহজ) মাসের পাতায় মন্দিরের ছবি দেয়াকে কেন্দ্র করে এ বিতর্কের সূত্রপাত হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পর্ষদের তোপের মুখে পড়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পরিচালনা পর্ষদ সোনালী ব্যাংকের নতুন বছরের জন্য ছাপানো ছয় লাখ ক্যালেন্ডার বিতরণ বাতিল করেছে। একই সাথে নতুন করে ক্যালেন্ডার ছাপানোর নির্দেশ দেয়া হয়। সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের মতে, এ জন্য ব্যাংকটির গচ্চা দিতে হবে প্রায় দুই কোটি টাকা।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের ক্যালেন্ডারে মে-জুন/রজব-শাবান-রমজান মাসের পাতায় দেয়া হয়েছে বান্দরবনের যুদ্ধ ধাতু জাদি (স্বর্ণ মন্দির) মন্দিরের ছবি। এ সময়ে রমজান মাস হওয়ায় আপত্তি উঠেছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের পাতায় দেয়া হয়েছে দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দিরের ছবি। সেপ্টেম্বর মাসে জিলকদ ও জিলহজ মাসের ১৫ দিন পড়েছে। আর অক্টোবর মাসে জিলহজ মাসের ১৫ দিন ও মহররম মাসের ১৫ দিন রয়েছে। জিলহজ মাসে পবিত্র হজ ও ঈদুল আজহা। আর মহররম মাসের ১০ তারিখে পবিত্র আশুরা। ইসলাম ধর্মের এ পবিত্র দিবসগুলোর মাসে মন্দিরের ছবি ছাপা হওয়ায় ব্যাংকটির কর্মকর্তারা আপত্তি তুলেছেন।
এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ব্যাংকটিতে তুলকালাম চলছে। এ জন্য কর্মকর্তারা দায়ী করছেন ব্যাংকটির এমডি প্রদীপ কুমার দত্তকে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা পর্ষদের কাছে অভিযোগ করেন, এমডি ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন মাসে মন্দিরের ছবি দিয়েছেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে তিনি এটি করেছেন।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার পর্ষদের বৈঠকে এ নিয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও মহাব্যবস্থাপকদের (জিএম) তুলোধুনো করেছেন পর্ষদ সদস্যরা। ব্যাংক পরিচালনায় তাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নির্বাহীরা এ ঘটনায় নীরব থেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ব্যাংকের একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, সোম ও মঙ্গলবার ছিল ব্যাংকের নিয়মিত পর্ষদ সভা। বছর শেষ হওয়ার আগে খেলাপি ঋণ নবায়ন ও অবলোপনের জন্য পর্ষদের বৈঠকে বিশেষ আলোচ্যসূচি রাখা হয়। কিন্তু এই ঘটনা ধরার পর পর্ষদের বৈঠকে এটিই হয়ে উঠে অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
সভায় এমডির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা নতুন বছরের ছাপানো ক্যালেন্ডার বিতরণ বাতিল করার নির্দেশ দেন। একই সাথে যেসব ক্যালেন্ডার এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে তা তুলে আনতে এবং নতুন করে ক্যালেন্ডার ছাপানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
সোনালী ব্যাংক ২০১৫ সালের জন্য ছয় লাখ ক্যালেন্ডার তৈরি করেছে। প্রতি ক্যালেন্ডার ছাপাতে ব্যয় হয়েছে ৩৩ টাকা। সে মতে, ছয় লাখ ক্যালেন্ডারের জন্য মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। এরই মধ্যে প্রায় তিন লাখ ক্যালেন্ডার ব্যাংকটি বিতরণের জন্য রাজধানীর বাইরে পাঠিয়েছে। তিন লাখ ক্যালেন্ডার প্রধান কার্যালয়ে রতি আছে। পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন বিতরণকৃত তিন লাখ ক্যালেন্ডার তুলে আনতে হবে। নতুন করে ছয় লাখ ক্যালেন্ডার ছাপাতে আরো প্রায় দুই কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে। যারা এই ভুলের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের এমডি প্রদীপ কুমার দত্তের সাথে মোবাইলে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্রঃ নয়াদিগন্ত
সংগ্রহসূত্র: নীড়পাতা
0 মন্তব্যসমূহ