হিন্দু ধর্ম প্রসঙ্গে ফরিদ ছিফাতুল্লাহ'র ফেসবুক পোস্ট

হিন্দু ধর্ম প্রসঙ্গে ফরিদ ছিফাতুল্লাহ'র ফেসবুক পোস্টের ছবি
হিন্দু ধর্ম প্রসঙ্গে ফরিদ ছিফাতুল্লাহ'র ফেসবুক পোস্টের ছবি


ইসলাম, খৃস্ট বা বৌদ্ধধর্মের মতো হিন্দু ধর্ম বিশেষ কোন ব্যক্তি দ্বারা প্রবর্তিত ধর্ম নয়। হিন্দু ধর্ম প্রাচীন এক ঐতিহ্যের নাম। যুগে যুগে নানান যোজন বিয়োজন সংযোজনের মধ্য দিয়ে এই ধর্মীয় সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে। আমি ধর্ম হিসেবে দেখি না হিন্দু ধর্মের উৎসব, প্রথা ও অনুষ্ঠানগুলিকে। বরং এগুলোকে দেখি এক প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বহমান ধারাস্রোত হিসেবে। নানান চরিত্রের বর্ণিল মূর্তি  বা ভাস্কর্য নির্মাণ; ফুল, মন্ত্র, সংগীত সহযোগে নৈবেদ্য প্রদান এই অঞ্চলের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য। যুগ যুগ ধরে এটা চর্চিত হয়ে আসছে এই ভূখণ্ডে। 


ভারতবর্ষ ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে  বহিঃশক্তির দ্বারা আক্রান্ত এবং বিজিত  হয়েছে।  অধিকাংশই বিভিন্ন রাজ রাজড়াদের ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য বিস্তারের অভিলাষ। কিন্তু কিছু কিছু আক্রমণকারী বা বিজয়ী নিজ ধর্মের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাও করেছে। ফলত ভূমিজ ধর্মের পাশাপাশি এই অঞ্চলে বহিরাগত ধর্মের প্রসারও ঘটেছে। সময়ে মিলন সময়ে সংঘাত - এর মধ্য দিয়ে এগিয়েছে ধর্মগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক। 


কোন কোন  ধর্ম এমন আগ্রাসী চরিত্রের যে সেটি অন্য কোন ধর্মের অস্তিত্ব স্বীকার করতে চায় না। পৃথিবীর অন্য সকল ধর্মের বিনাশ চায় তা রক্তপাতের মাধ্যমে হলেও। আর এটিই সময়ে সময়ে  উপ্ত করেছে অশান্তির বীজ। এটা নিয়ে স্বার্থবাদীরা রাজনীতি করেছে। এই স্বার্থবাদীদের মধ্যে রয়েছে ঔপনিবেশিক শক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এমনকি ব্যবসায়িক স্বার্থবাদীও।  ধর্মীয় স্বার্থবাদী যাদের বিলাস ব্যাসন, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, সামাজিক সম্মান ধর্মের উপর নির্ভরশীল তারা ধর্মের এই আগ্রাসী প্রবণতা ও শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েছে নিজেদের প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখতে। তা না করলে তাদের হেলিকপ্টার ভ্রমণ আর বিলাসবহুল অট্টালিকায় বসবাস অসম্ভব। কোন রকম উৎপাদনশীল কাজ না করেও শুধু ধর্মীয় বয়ান ঝেড়ে এমন বিলাস আর প্রতিপত্তির অধিকারী হওয়ার সহজ রাস্তা আর জানা নাই তাদের। 


এমন অসংখ্য অন্ধ অনুসারী আর কোন উপায়ে পাবে তারা? তাই তারা ধর্মের  শান্তির বাণী প্রচার না করে প্রচার করে সংঘাতের বাণী। অনুসারীদের অন্ধত্ব ও উন্মাদনা  যত বেশি গভীর, তত বেশি গভীর আনুগত্য অর্জন করবে তারা। এই অন্ধত্ব ও উন্মাদনা  বৃদ্ধিতে তারা কাজে লাগায় ধর্মীয় বিধি বিধানের নিজস্ব ব্যাখ্যা। আর এই সুযোগ করে দিয়েছে ধর্মীয় বাণীগুলি। কারণ সেই বাণীগুলির অধিকাংশই ধোঁয়াশা আর অস্পষ্টতায় ভরা। এগুলোর অর্থ নানান দিকে টেনে নেওয়া যায়। এই অস্পষ্টতা কেন? বাণীসমূহ   সরাসরি ও স্পষ্ট অর্থপূর্ণ নয় কেন? স্রষ্টা  কেন এসব দ্ব্যর্থকতা নিরসনের ব্যবস্থা এই যুগে করেন না? পাঁচ হাজার বছর আগে তিনি পাহাড়চূড়ায় দেখা দিতে পারেন। কিন্তু আজ কেন পারেন না? আজকের যুগে কি অশান্তি সংঘাতের কমতি আছে?


যেহেতু স্রষ্টা অবসরে গেছেন সেহেতু আজকের পৃথিবীতে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব মানুষের কাঁধে বর্তেছে। মানুষকেই আজ নতুন ভাবনা-চিন্তার অধিকারী হতে হবে। যে ভাবনার কেন্দ্রীয় বিষয় হবে পৃথিবীর সকল মানুষের কল্যাণ। 'সকল মানুষের কল্যাণ' সুবৃহৎ এবং সুপরিসর এক অর্থে ব্যবহার করলাম। এই 'সকল মানুষের কল্যাণ' ধারণায় অন্তর্ভুক্ত হবে - সকলের নিজ নিজ আচার অনুষ্ঠান ঐতিহ্য অনুসারে পালন করার অধিকার, নিজ চিন্তা বা মত প্রকাশের অধিকার, নিজ পছন্দমতো পোশাক পরার অধিকার, নিজ পছন্দমতো শিক্ষা ও পেশা গ্রহণের অধিকার ইত্যাদি। 

ধর্মসমূহকে তাই আমি শুধুই সাংস্কৃতিকভাবে দেখি। সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণ করি।



# Link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ