একটি লজ্জাজনক ইতিহাস | আওয়ামীলীগের অধীনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় (২০০৯-২০২৩)

একটি লজ্জাজনক ইতিহাস  | আওয়ামীলীগের অধীনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় (২০০৯-২০২৩)

সম্প্রতি বিএনপি এর মিডিয়া সেল যার নাম 'দ্যা রোড টু ডেমোক্রেসি' থেকে একটি পিডিএফ দলিল বই প্রকাশ করা হয়েছে। ২৬ পৃষ্ঠার এই পুস্তিকায় আওয়ামী লীগের শাসনামলে অর্থাৎ ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে হিন্দুদের উপর আক্রমণের তথ্যাবলী ও তার বিশ্লেষণ প্রকাশ পেয়েছে। সূচিপত্রের সাতটি শিরোনাম ভুক্ত রচনায় প্রমাণ করা গেছে যে আওয়ামী লীগের সদস্যরা হিন্দুদের বাড়িঘর মন্দির ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ড, হামলা, খুন, জখম, দখলে কোন অংশ পিছিয়ে নেই। তাদের হিন্দুবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের এই গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি প্রকাশ করার জন্য বিএনপিকে অশেষ ধন্যবাদ।


পুস্তিকা থেকে ভূমিকাপটভূমি অংশ পাঠকদের অনলাইন পাঠের সুবিধার্থে প্রকাশ করা হল। নিচে সম্পূর্ণ পিডিএফ ফাইলের দুইটি লিংক দেয়া হল। যে কোন লিংক থেকে পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারেন। 



-০-০-০-০-০-


ভূমিকা


এই প্রতিবেদন দৈনিক সংবাদপত্র, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য, ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের ভিত্তিতে আওয়ামীলীগ শাসনামলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত হামলার প্রধানতম ঘটনাগুলো অনুসন্ধান করে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। এতে দেখা যায় যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নেতারা হয় সরাসরি জড়িত ছিলেন, অথবা হামলাতে সহায়তা করেছেন। প্রশাসনের ভূমিকাও ছিল বিতর্কিত। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও আমলারা কেবল হামলা ঠেকাতেই ব্যর্থ হননি, কখনো কখনো তাদের সহায়তায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা হামলা চালিয়েছেন।


২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশে বিক্ষুদ্ধ উন্মত্ত জনতা কর্তৃক প্রায় অর্ধশতাধিক মন্দির ও পূজা মন্ডপ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই সহিংসতায় চারজন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক সহ প্রায় নয়জন প্রাণ হারান এবং অনেকেই হতাহত হন। ভারতীয় উপহাদেশে দীর্ঘদিন যাবত বিশেষত হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে - যদিও একচেটিয়াভাবে কেবল তারাই নয় – বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত উত্তেজনার ইতিহাস রয়েছে। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভারত ও পাকিস্তান নামে দুই দেশে বিভক্ত হয়, যেখানে ভারত হয়ে উঠে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মুসলমান বাসিন্দা সহ একটি বৃহৎ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের রাষ্ট্র এবং পাকিস্তান প্রধানত মুসলমান অধ্যুষিত রাষ্ট্র। পার্টিশনের ফলে দুই অংশে যে দাঙ্গা দেখা যায় তাতে নতুন দুই রাষ্ট্রের প্রায় লক্ষাধিক লোক প্রাণ হারান।



পূর্ব পাকিস্তান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গঠন করে, যে অঞ্চলে মুসলমানদের স্থানীয় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য গোষ্ঠীর সাথে হাজার বছরের একত্রে বসবাসের ইতিহাস রয়েছে। অজস্র সাহসী মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই মুক্তি অর্জিত হয়েছিল। তদপুরি, তিন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে যেমন স্থায়ী যোগাযোগ রয়েছে, তেমনি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও বিরাজ করে। উপমহাদেশের মানুষের মধ্যে গভীর বন্ধনের কারণে এই তিন রাষ্ট্রের মধ্যে একের দ্বন্দ্বের প্রভাব অন্যের ওপর পড়ে। যেমন, ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও স্থানীয় মুসলমানদের ওপর হামলার প্রভাবে বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক উত্তজেনা ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে, এই সংঘাতগুলো স্থানীয় পর্যায়েই সীমাবদ্ধ ছিল, দেশব্যাপী ছড়িয়ে যেতে পারেনি।


সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে ধর্মীয়সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর প্রচন্ড সংঘটিত হামলার ঘটনা ঘটছে। কখনো কখনো হামলাগুলো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। এই ধরনের ঘটনার জন্য প্রধানত সরকারের জবাবদিহিতার অভাবকে দায়ী করা যেতে পারে। এই জবাবদিহিতার অভাব বিগত ১৫ বছর যাবত গণতন্ত্রহীনতার সাথে যুক্ত। এই প্রতিবেদনটির উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্মীয় সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলাগুলোকে আলোকপাত করা এবং এই ধরনের সহিংস ঘটনা রোধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোরারোপ করা।



পটভূমি


২০১১ সালে, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার দুই বছর পরে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯.৬১% ছিল ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তাদের মধ্যে ৮.৫৪% ছিল হিন্দু, বৌদ্ধ ০.৬২%, খ্রিষ্টান ০.৩১% এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু ০.১৪%। বাংলাদেশের বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দৃশ্যপটে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং জাতীয় পরিচয়ে বিচিত্রতা ও সমৃদ্ধি যুক্ত করেন। বাংলাদেশে শিয়া মুসলমানরা একটি স্বতন্ত্র ধারার ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করেন, যা দেশের ধর্মীয় বৈচিত্র ও সাংস্কৃতিক নকশা তুলে ধরে। সাম্প্রতিক ২০২২ সালের আদমশুমারি দেখাচ্ছে যে, ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যা ৮.৫৪% থেকে ৭.৯৫%–তে নেমে এসেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই হ্রাস আওয়ামীলীগের বিগত ১৪ বছরের শাসনামলেই ঘটেছে, যারা কিনা সর্বদা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রচারের দাবি করে।


২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর, বিশেষত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশী হিন্দুদের একটি সংগঠন হিন্দু মহাজোটের মতে, কেবল ২০২২ সালেই ১৫৪ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছিল। ২০২০ সালে ১৪৯ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছিল এবং তার আগের বছর ১০৮ জন নিহত হয়েছিলেন। অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র ২০১৩ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিন্দুদের উপর হামলার ৩৬৭৯টি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৫৫৯টি বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা, ১৬৭৮টি মূর্তি ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা এবং এর ফলে ১১ জন হিন্দুর মৃত্যুর ঘটনা (BD News 24 2021 ) ।


সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন হতে জানা যায় যে, এই হামলাগুলোর সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদের একটা বড় অংশই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ২০১২ সাথে কক্সবাজারে একটি নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে যেখানে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের নেতৃত্বে উন্মত্ত জনতা বৌদ্ধ মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে (Ahmed et al., 2012)। পরবর্তী এক দশকেও দোষীদের বিরুদ্ধে বিচারের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি, যেহেতু অভিযুক্তরা নানাভাবে আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত। পরবর্তী বছরগুলোতে সংঘটিত হামলাতেও আওয়ামীলীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা যায় (Azad & Hasan, 2016)।


হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণের ঘটনা ঘটে ২০২১ সালের দুর্গা পূজার সময়। প্রায় দশদিন যাবত চলা এই পরিকল্পিত হামলার সময় আওয়ামীলীগ নেতাদের স্থানীয় মুসলমানদের হিন্দু মন্দিরে আক্রমণ করার জন্য আহ্বান করতে দেখা যায় ( Shuvo & Palash, 2021)। এসব ঘটনা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতনে নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে এবং দাবি করে যে, তাদের অধীনে হিন্দু সম্প্রদায় নিরাপদে রয়েছেন। যদিও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। (Prothom Alo, 2021)


======

সম্পূর্ণ পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করুন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ