রাজশাহীর এক মেয়ের অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করি, যে কিনা লাভ জিহাদে আস্তে আস্তে জড়িয়ে গেছিলো। তার কথাতেই,
“বেশ ভালো রেজাল্ট করে ঢাকার এক নামকরা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। পূর্ব পরিচিত এক আপুর মাধ্যমেই ইউনিভার্সিটির পাশে একটা এপার্টমেন্টে উঠি। তিনটে বেডরুম আর সেখানে দুজন-দুজন করে মোট ৬ জন মেয়ে থাকি। কপাল জোরে চারজন হিন্দু আর দুজন মুসলিম। মুসলিম দুজন ধর্ম চর্চার জন্যে এক ঘরেই থাকতো। প্রথম প্রথম খারাপ কিছু বুঝি নি। এক সাথে ঘুরতে যাওয়া, খেতে যাওয়া, শপিং বা বেশ বন্ধুত্ব। সবাইকে বেশ বড় মুখ করেই বলতাম, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ। এই দেশে হিন্দু-মুসলিম মিলে-মিশে থাকে। এখানে কোনো বিভেদ নেই সাম্প্রদায়িক ভারতবর্ষের মতো।
এর মধ্যেই এক আপু একদিন বলে, আমার কাজিন আরফিন আমাদের একটা গ্রুপ ফটো দেখে তোকে খুব পছন্দ করেছে, তোর সাথে জাস্ট একটু ফ্রেন্ডশিপ করতে চায়। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করিস। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে ফেলেই রেখেছিলাম তার মেসেজে এক প্রকার বিরক্ত হয়ে। কিন্তু সিনিয়র আপু মাঝে-মধ্যে জোর করে ফোন ধরিয়ে দিয়ে তার সাথে কথা বলতে জোর করতো। নতুন শহর, নতুন পরিবেশ, জানি প্রতিবাদ করা উচিত ছিল কিন্তু সাহস করে উঠতে পারিনি। আস্তে আস্তে কথা বলার একটা হ্যাবিট গ্রো করে। ভুল কোথাও একটা হচ্ছে বুঝতে পেরে অন্য হিন্দু মেয়েদের কাছে হেল্প চাই। তারাও বুদ্ধি দেয়, ঢাকার মতো শহরে আরেফিনের মতো পরোপকারী একজন বন্ধু থাকা ভালো। শরীর খারাপ বা বিপদে-আপদে কাজে আসে। আর এই বয়সে বাড়ির বাইরে থাকলে একটু এডভেঞ্চার করা ভালো। হোস্টেলের মেয়েদের মধ্যে এডভেঞ্চার এর এই নেশা বেশ কমন। মুসলিম দুই আপুর পাশাপাশি হিন্দু রুমমেটরাও সব সময় আরফিন ভাইয়াকে নিয়ে ঠাট্টা -ইয়ার্কি করে, অনেক সময়ে এক প্রকার ঠেলে ঘুরতে পাঠিয়ে এই সম্পর্কে আমায় জড়িয়ে ফেলে। হ্যাঁ, আমার কিছু দোষ ছিল মানি। কিন্তু কথা বলতে না চাইলে বা ঘুরতে যেতে না চাইলে আমায় Unsmart Unsocial , গেঁয়ো, dumb বহু কথা শুনতে হতো। আমি চাইতাম না এমন কথা গুলো শুনতে। বয়স তখন হার্ডলি উনিশ-কুড়ি, কতটুকুই বা বিচার-বুদ্ধি! ভুল করে বসি। আসলে অনেক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মুসলিম বন্ধুদের পাশাপাশি হিন্দু বন্ধুরাও স্বজ্ঞানে বা অজ্ঞানে সমান দোষী থাকে নতুন শহরে আসা কোনো হিন্দু মেয়েকে ভুল করতে প্ররোচিত করতে।
যাইহোক, ভুল বেশি দূর এগোয় নি। আমাদের পরিবারে ধর্মীয় শিক্ষার একটা পরিবেশ ছোট থেকেই ছিল। তাই অপরাধবোধ থেকে বাড়িকে সবটা জানাই এবং বাড়ির লোকই এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হেল্প করে। কিন্তু সবার পরিস্থিতি আমার মতো থাকেনা, বাড়িতে বলতে সাহস করেনা বা Ultimate ভুল করে বসে। আর এই ভুল এমন যা মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত কাউকে নরক যন্ত্রনা দেয় আমি বিশ্বাস করি।
আমি জানি যে আমার মতো হাজারো মেয়ে আছে সারা বাংলাদেশে, যারা ঢাকা শহরে হঠাৎ এসে কুচক্রী সিনিয়র আপু বা মুসলিম বন্ধু-বান্ধবীদের ফাঁদে পা দিয়ে এমন আরফিন ইসলামের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে এবং হিন্দু বন্ধুরাও সব জেনে মজা নিচ্ছে বা এডভেঞ্চার কর বলে কাটিয়ে দিচ্ছে। তাদের বলবো, সমস্ত ভয় জয় করে বাড়ির লোক তথা মা-বাবা-পরিবারকে সবকিছু খুলে বলো। কেউ পাশে থাকুক বা না থাকুক ওই দুটো মানুষ আজীবন থাকবে। হয়তো সব শুনে দুদিন-তিনদিন মারবে, বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেলে পড়া শেষ হবে না। কিন্তু চারদিনের দিন ঠিক বুকে জড়িয়ে ধরবে। নিজের জীবন তো শুধু না, একটা পুরো পরিবার অসম্মান-গ্লানি তথা ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যাবে।
* লাভ জিহাদ নিয়ে সামান্য কাজ করার সুবাদে অনেকের অনেক অভিজ্ঞতা শুনি। শুনতে শুনতে রাগ-দুঃখ-কষ্ট বা কিছু ক্ষেত্রে ঘৃণা সব হয়, কিন্তু আজ বিপদ বুঝে অতি-দ্রুত মা-বাবাকে সব ভয় জয় করে জানানোর এই ভাবনাতে বেশ ভালো লাগছে। এটাই স্মার্ট মুভ। শেষে একটা কথাই বলবো, দুটো বকুক-মারুক কিন্তু মা-বাবার বা পরিবারের অল্টারনেটিভ নেই। যদি এমন অবস্থায় এই মুহূর্তে কেউ থেকে থাকেন, প্লিজ এই লেখা পড়া শেষে হতে-হতেই বাড়িতে ফোন করে সব জানান আর নরক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পান। নমস্কার।
সংগৃহিত
0 মন্তব্যসমূহ