ইস্কনের প্রভু ভারতীয় টিভি চ্যানেলকে কী বলেছেন, সত্যতা কতটুকু??

ইস্কনের প্রভু ভারতীয় টিভি চ্যানেলকে কী বলেছেন, সত্যতা কতটুকু??

ইস্কনের এক প্রভুর দেয়া ভারতীয় একটি টিভি চ্যানেলে এক বক্তব্যের জের ধরে বাংলাদেশের মুসলিম ভাইবোনেদের মধ্যে কান্নার রোল উঠেছে


তাদের অনেকে দাবী করছেন ইস্কনের পরিচালক নাকি বলেছেন বাংলাদেশের হিন্দুরা আক্রমণের ভয়ে এবার জন্মাষ্টমী ছোটখাটো করে পালন করছে। তারা এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করছেন এবং হিন্দুরা বন্যার দুর্যোগে সমব্যাথী হয়েই বড়সড় করে জন্মাষ্টমী পালন করেনি এই সত্যটাকে প্রচার করছেন।


তাদের এই আপাত সত্যের ভক্ত হবার অভিনয়টি আগাগোড়া ভণ্ডামিতে পরিপূর্ণ। আসুন একে একে বিষয়টি দেখি।


প্রথমত ওই প্রভু ইস্কনের পরিচালক নন, তিনি মেহেরপুর ইস্কন মন্দিরের পরিচালক। এই বিষয়টি ভুল করার সুযোগ নেই। ইস্কন, বাংলাদেশের পরিচালক এমন কোন কথা বলেননি।


এখন বলুন তো, এই যে মেহেরপুর ইস্কন মন্দির এটি কোন মন্দির? হ্যাঁ এটি সেই মন্দির যেটিকে আগস্টের ৫ তারিখ রাতে এই কান্নারতদের সম্প্রদায়ের লোকেরাই পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছিল। তখন এই কান্নারতরা সেই মেহেরপুর ইস্কন মন্দিরের উপর চালানো এই ধ্বংসলীলা নিয়ে একটি শব্দও ব্যয় করেনি, একবারও ক্ষমা চায় নি, আজ ঘটনার পর ২২ দিন হয়ে গেলেও একটি মানুষও গ্রেফতার হয়নি এই ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক ঘটনার কারণে, বিচার তো অনেক দূরের কথা। এই সুমোহন মুকুন্দ দাসকে আজ যারা গালাগাল করছেন, সেই সুমোহন মুকুন্দ দাসের মন্দিরটি যখন আপনারা ছাই করে দিয়েছিলেন, তার আর্ত হৃদয়ের ক্রন্দন আপনাদের একটুও ভাবায় নি বরং মনে মনে আনন্দ করেছেন। এই কান্নারতরাই সেদিন আরেক হিন্দু গোবিন্দ প্রামাণিককে ব্যবহার করে বলেছিল বাংলাদেশে নাকি কোন সাম্প্রদায়িক হামলা হয়নি, সব গুজব। সেদিন এরকম নিদারুণ মিথ্যা কথা বলতে তাদের সীলগালা করা অন্তরে একটুও কাঁপন ধরেনি। আজ তারাই সত্যের মহান পূজারি হবার অভিনয় করে লোক হাসাচ্ছে।


মেহেরপুর ইস্কন মন্দিরের পরিচালক কি আসলে এরকম কিছু বলেছেন? একদমই না। পুরো ভিডিওটি দেখলে আপনারা যা দেখবেন তা হলো উনি বলেছেন-


"আপনারা জানেন যে গত ৫ ই আগস্ট আমাদের (মেহেরপুর) মন্দিরটি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ফলে এবার আমরা জন্মাষ্টমী পালন করতে পারছিনা। আমরা চুপচাপ ঘরে আছি এবং জন্মাষ্টমী পালন করছি। আমাদের এখানে সিকিউরিটি নিয়ে কিছু শংকা রয়েছে।"


খেয়াল করে দেখুন উনি কিন্তু বলেননি বাংলাদেশের সব হিন্দুরা মন্দির ধ্বংস করে দেয়ায় ভয়ে জন্মাষ্টমী পালন করতে পারছেনা। উনি বলেছেন মেহেরপুর মন্দির ধ্বং-স করে দেয়া হয়েছে তাই মেহেরপুর ইসকনের উনারা পালন করতে পারছেন না। কথাটা কিন্তু একদমই আলাদা এবং একদম সত্য।


এরপর তিনি বলেন,


"আর বাংলাদেশের সব মন্দিরে এখন একটা গম্ভীর অবস্থা রয়েছে, তারা Rally বা ধুমধাম না করে ছোটখাটোভাবে জন্মাষ্টমী পালন করছে।"


তখন তাকে উপস্থাপক জিজ্ঞেস করলেন 


"সুমোহন মুকুন্দ দাস মন্দির কি ভক্তশূন্য? মন্দিরে কি সিকিউরিটির ব্যবস্থা নেই?"


তখন তিনি উত্তর দিলেন- 


"সিকিউরিটির ব্যবস্থা আছে তবে ভক্তদের মনে ভয়ও কাজ করছে, কিছু হয়নি তাও হতে পারে এই ভয় কাজ করছে। আর বাংলাদেশে এখন বন্যা চলছে, ফলে বাংলাদেশের সব মন্দিরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আমরা জন্মাষ্টমী উদযাপনের জন্য যে অর্থ সংগ্রহ করেছি তা বন্যা দুর্গতদের সেবায় খরচ করব। ইস্কনের তরফ থেকে লাখেরও বেশী মানুষকে খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে, অন্য সংগঠনগুলোও তাদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।"


অর্থাৎ সম্পূর্ণ সত্য কথাই সেই ইস্কনের প্রভু বলেছেন। বাংলাদেশে অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে গত ২২ দিনে সনাতনীদের উপর। স্বাভাবিকভাবেই সব মন্দিরে থমথমে একটি অবস্থা বিরাজ করছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে বন্যা। মহান শান্তির ধর্ম সনাতন ধর্মের শিক্ষায় আলোকিত সনাতনী ভাইবোনেরা তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই বন্যায় অতি ধুমধাম করে জন্মাষ্টমী পালন না করে তারা শান্তিপূর্ণভাবে ছোটখাটো করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূণ্য জন্মতিথি পালন করবে।


তখন উপস্থাপক বললেন 


"তার মানে আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে, ছোটখাটো করে, কোন ধরনের ধুমধাম না করে কেবল পূজারি, সেবায়েত নিয়ে জন্মাষ্টমী পালন করছেন তাই তো?"


অর্থাৎ দেখুন মেহেরপুর ইস্কন মন্দিরের পরিচালক সুমোহন মুকুন্দ দাস সম্পূর্ণ সুন্দর ভাবে যথাযথ সত্য কথা বলেছেন। কান্নারতদের সম্প্রদায়ের লোকজন এতগুলো হামলা করল তাতে দোষ নেই কিন্তু পরিস্থিতি গম্ভীর এই কথা বলাতেই দোষ হয়ে গেল! বাংলাদেশের একটি হিন্দুও কি এখন পাওয়া যাবে যারা প্রতিদিন নিজেদের মন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলার ভয়ে দিন পার করছেন না? এই কথা বললে কীভাবে তা মিথ্যা বলা হয়? অথচ তারাই লজ্জাহীনভাবে বাংলাদেশের সব সাম্প্রদায়িক হামলাকে লুকানোর চেষ্টা করেছিল কয়েকদিন আগেই। তখন ডানপন্থী ইসলামিক দলের সমর্থক মিথ্যাবাদী এক হিন্দু গোবিন্দ প্রামাণিকের মিথ্যা কথা নিয়েও তারা খুব আনন্দ উদযাপন করেছিল। আজ তারাই সত্যের জন্য মায়াকান্না করছে। এদের জন্যেই বোধহয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন-


আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোরে ঘটে –

তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!


বাংলাদেশ অগ্নিবীর

সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক


সূত্র: ফেসবুক

++++++++

আগ্রহীরা মেহেরপুরের ইস্কন মন্দিরের ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবেদনমূলক ভিডিওটি দেখুন এখান থেকে


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ